স্বল্প সময়ের আড্ডা
কিছু সময় স্বল্প সময়ের জন্য হলেও, সেটার রেশ থেকে যায় বহুক্ষণ। আজ তেমন একটা সময়ের আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।
খুব যে বেশিদিন আগের ঘটনা, তা কিন্তু না। মাত্র কয়েকদিন আগের। যদিও আমার সকাল সাড়ে ১১ টার মধ্যেই এস কে এস শপিংমলের সামনে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে এই যান্ত্রিক শহরে প্রতিনিয়ত এতটাই যানজট আর এতোটাই পরিমাণ ট্রাফিক সিগনাল থাকে যে, সেই জ্যামে যদি কেউ একবার পড়ে যায়,তাহলে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া অনেকটাই মুশকিল হয়ে যায়।
এ শহরে এসে যতটুকু বুঝেছি, তা হচ্ছে কোন জায়গায় যাওয়ার আগে অবশ্যই সময় সম্পর্কে সচেতন হওয়া ভীষণ জরুরী এবং নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে এক ঘন্টা থেকে দুই ঘণ্টা আগে বের হওয়াই উচিত। গিয়েছিলাম মূলত @hafizullah ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য।
যেহেতু ট্র্যাফিক জ্যামে আটকা পড়ে আমার অনেকটা সময় আমার চলে গিয়েছিল, তাই মূলত যথা সময়ে পৌঁছাতে পারিনি। তার ভিতরে ভাই তার অফিসে মোটামুটি অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে আছে। যেহেতু আমি জোহরের নামাজের আগে গিয়েছিলাম,তারপরেও ভাই আমাকে বলেছিলেন, এস কে এস শপিংমলের সামনে থাকতে। ইতিমধ্যেই জোহরের আজান দিয়ে দিয়েছে। আমি বুঝতে পারলাম যে, ভাই এখন কোন অবস্থাতেই আসতে পারবে না ।
এমনিতেই এ শহরে আমি আগন্তুক, তার ভিতরে কোন কিছুই ঠিকঠাক মতো চিনি না। তাই খুব একটা বেশি এদিক-সেদিক ছোটাছুটি না করে, এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করলাম। যেহেতু ঘন্টা খানেক সময় অপেক্ষা করতে হবে, তাই রাস্তার পাশেই পায়চারি করার চেষ্টা করছিলাম।
অপেক্ষার সময় গুলো স্বল্প হলেও যে সেটা খুবই দীর্ঘতর লাগে, এটা তখনই উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। তবে দীর্ঘতর লেগে লাভ নেই কারণ আমি নিজেই সঠিক সময়ে এখানে আসতে পারিনি।
তবে একটা সময়ের পরে, ভাই ঠিকই চলে আসলো এবং বলল যে, চলেন পাশের যে শপিংমলটা আছে সেখানে গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসি। যদিও আমি প্রথমত শপিংমলে যেতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনি, তবে শপিংমলের ভিতরে ঢোকার পরে মোটামুটি আমার মানসিকতায় অনেকটাই পরিবর্তন চলে এসেছিল। ভিতরটা অনেক সুন্দর করে সাজানো-গোছানো, যা দেখে আমার ক্লান্তি এমনিতেই দূর হয়ে গিয়েছিল এবং অনেকটা প্রফুল্লতা কাজ করছিল নিজের মাঝে।
চলন্ত সিঁড়িগুলো দিয়ে ক্রমাগত উপরে উঠে যাচ্ছিলাম। তখন কেন যাচ্ছিলাম তা জানি না, পরে যখন সেখানকার একদম উপরে ফুডকোর্টে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন বুঝলাম যে ভাই এখানে আমাকে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে এসেছে। যদিও আমি বারবার বললাম যে, আমি আমার ব্যাচমেটের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় খেয়েই বের হয়েছি, তবে ভাই এটা মানতে নারাজ।
এই শহরে মূলত এসেছিলাম ডাক্তার দেখানোর জন্য, তাই রোজা ছিলাম না। ভাই যেহেতু রোজা ছিল, তাই তাকে রেখেই মোটামুটি আমাকে খাওয়ার সিদ্ধান্ত এক সময় নিতেই হলো। এখানকার ফুডকোর্টটা বেশ বড়, যেদিকেই তাকাচ্ছি শুধু খাবারের দোকান। অবশেষে একটা বিরিয়ানির দোকানের সামনে বসে পড়লাম, তারপরে ভাই আমাকে খাবারের মেনু বুকটা দিয়ে বলল, আপনার যেটা পছন্দ হয় সেটা অর্ডার করুন। যদিও আমার পেট ভরা ছিল, তারপরেও তার অনুরোধে বাধ্য হয়ে, অবশেষে চিকেন ভুনা খিচুড়ি অর্ডার করে দিলাম।
তবে ক্রমাগত চলছিল আমাদের দুজনের খোশগল্প। কতদিন পরে বাস্তবে দেখা তাই এমন গল্প হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক । যতটা সময় খাবার টেবিলে বসে থেকে খাচ্ছিলাম, ততোটা সময় শুধু ভাইয়ের মুখের দিকে বারবার দেখছিলাম আর তার কথা শুনছিলাম এবং তাকেও আমার কথা বলছিলাম।
এর মাঝেই হঠাৎ আমার ব্যাচমেটের ফোন চলে এসেছিল। কারণ আমার ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল একটু পরেই শুরু হয়ে যাবে। তাই এখান থেকে দ্রুত যেতে হবে ধানমন্ডি পপুলারে। যেহেতু পথের দ্রুত বেশ ভালোই আছে,তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই দ্রুত খাওয়া শেষ করতে বাধ্য হলাম।
একটা বিষয় ভেবে দেখবেন, সেটা হচ্ছে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে হঠাৎ সাক্ষাৎ হলে, সেই সময়টা খুব একটা দীর্ঘ হয় না। কেন জানি মুহূর্তেই সময়টা শেষ হয়ে যায়। তবে সেই স্বল্প সময়ের কাটানো যে স্মৃতিটুকু থেকে যায়, সেটার রেশ থাকে বহুদিন।
ভাই অবশ্য আমাকে উপহার দিয়েছে, সেটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তবে আমি ভাইকে কোন কিছুই দিতে পারিনি, এদিক থেকে নিজের কাছে নিজে আমি কিছুটা লজ্জিত বোধ করেছিলাম। তবে ভাই ব্যাপারটাকে ভীষণ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছে।
এমন মুহূর্ত আবারো কবে আসবে, কে জানে। তবে এমন মুহূর্ত যদি ঘুরে ফিরে কখনো আবারো আসে, সেটা হয়তো আমার জন্য অনেকটাই বড় প্রাপ্তি হবে। ভালো থাকুক প্রিয় মানুষগুলো, তাদের নিজ নিজ স্থানে । তাদের জন্য নিরন্তন ভালবাসা রইল।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
ঢাকা ডাক্তার দেখতে গিয়েছিলেন,ওখানে গিয়ে একটা বিষয় সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন যে,নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই রওনা দিতে হবে ঢাকা শহরে।আসলে ঢাকা শহর মানেই জ্যামের শহর।এটা কিন্তু ঠিক বলেছেন ভাইয়া প্রিয় মানুষদের সঙ্গে দেখা হলে সময় দ্রুত শেষ হয়ে যায়।আপনার ব্যাচমেট এর ফোন চলে আসায় আপনারা বেশিক্ষণ গল্প করতে পারলেন না।কারণ ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল দেওয়ার সময় হয়ে আসছিল।তবে হাফিজ ভাইয়ের সাথে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়েছিলেন।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর ব্লগটি শেয়ার করার জন্য।
সময় সম্পর্কে সচেতনতা দরকার সবারই, তবে মফস্বলে হয়তো এই গুরুত্ব খুব একটা বোঝা যায় না, তবে যান্ত্রিক শহরে গেলে বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায়। ধন্যবাদ আপু আমার অনুভূতি বুঝতে পারার জন্য।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সেই সময়টা খুব খুব দ্রুত পার হয়ে যায়। হয়তো সুন্দর মুহূর্তগুলো আমাদের জীবনে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাইতো মুহূর্তেই সময়টা শেষ হয়ে যায়। আমাদের সকলের প্রিয় হাফিজ ভাইয়ার সাথে দেখা করেছেন জেনে সত্যিই ভালো লাগলো। আসলে আমরা সবাইকে একই পরিবারের সদস্য মনে করি। অথচ তাদের সাথে দেখা হয় না। দোয়া করি আবারও যেন আপনার সেই প্রিয় মানুষটির সাথে আবার দেখা হয়।
ইচ্ছে আছে আপু আবারও দেখা করার সবার সঙ্গে, এমন সময় ফিরে আসুক বারবার।
জি ভাই এটা সত্যি যে যখন কোনো প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটাতে অনেক ভালো লাগে ৷ আর সময়টা যেন চোখের পলকে চলে যায় ৷ আপনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন ঢাকায় ৷ আর এরই ফাকে হাফিজ ভাইয়ের সাথে আড্ডা ৷ সত্যি হাফিজ ভাই একজন সুন্দর মনের মানুষ ৷ যদিও আড্ডা স্বল্প সময়ের তারপরেও এই নিচ চোখে দুজনের কথপোকথন এটাই বড় কিছু ৷ ভালো লাগলো ভাই সর্বোপরি আপনার সুস্থতা কামনা করি ৷
আপনার সাবলীল মন্তব্যের কাছে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ভাই।
ভাইয়া হাফিজ ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়ার মূহূর্ত গুলো আপনি আপনার পোস্টের মাধ্যমে বেশ সুন্দর করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সামনা সামনি দেখা হওয়ায় যে কি অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা আপনার পোস্টটি পড়ে আন্দাজ করতে পারছি। আর একটু সামনে আসলে কিন্তু আমার বাসা। ইস ভাগ্যটা খারাপ দেখাটা হলো না।