সুখী মানুষ || @shy-fox 10% beneficiary
বয়স কত হবে সম্ভবত সত্তরের কাছাকাছি । জীবনের বেশ ভালই উত্থান-পতন দেখেছে এই বয়সের মাঝেই । আফজাল চাচার ব্যাপারটা একটু খোলাসা করে বলার চেষ্টা করছি । একদম নদীর তীরবর্তী এলাকায় তার বাড়ি । চতুর্দিকে যখন গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা তখন যেন সে একদম নির্বিঘ্নে বাড়ির পিছনে একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আরামছে প্রকৃতির নির্মল হাওয়া খাচ্ছে । আমি মনেকরি এর থেকে আর শান্তির কোন কিছু আপাত দৃষ্টিতে আমার চোখে পড়ছে না।
আমি আপনি যখন জীবনের হিসেব মিলাতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছি, হয়তো কেউ কর্মস্থলে বা কেউ নিজের মতো করে এলোমেলো চিন্তা করে সময় পার করে দিচ্ছি , ঠিক সেই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ হচ্ছে আফজাল চাচা । যার কোন চিন্তা নেই, ভাবনা নেই , শুধুই চেয়ে চেয়ে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করছেন ।
আমার এই জীবনগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখতে বেশ ভালোই লাগে । তার অবশ্য এমন সুখকর সময় খুব যে বেশি সময়ে ধরে থাকে তা কিন্তু না । বছরের এই সময়টাই সে বেশ আরামেই থাকে, কারণ এই সময় নদীতে বেশ পানি থাকে না এবং নদীর ওপারে অপরূপভাবে ফুটে ওঠা কাশফুলের সৌন্দর্য্য এবং নির্মল বাতাস এবং যেহেতু বাড়ির পিছনেই এই জায়গা যার কারণে সে প্রতিনিয়ত বাড়ির পিছনটাতে আসে , বসে আর প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করে ।
তার সঙ্গে কিভাবে দেখা হয়েছিল এবং কিভাবে কথা হয়েছিল , সেই বিষয়গুলো আমি পরবর্তী পর্বে জানাবো । তবে আপাত দৃষ্টিতে আমার কাছে যেটা মনে হয়েছিল, সে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবথেকে শান্ত ও নিরিবিলি একটা জায়গায় বসে আছে এবং সে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করছে ।
প্রতিদিন বিকাল করে বসে এখানে । একটা সময় মাঠে বেশ কাজ করত তবে এখন আর শরীর সেই ভাবে সাড়া দেয় না , তাই খুব একটা কাজ হাতে নেই। তাছাড়াও বাড়ির টুকটুক কাজ গুলো বাড়ির লোকজনই করে । আর সে শুধু খায় আর হিমেল হাওয়া খায় এখানে বসে ।
তবে ভারী বর্ষায় বা বন্যার সময় তাকে বেশ বেগ দেখতে হয় । কারণ তখন নদীর কানায় কানায় পানি ভর্তি থাকে এবং মাঝে মাঝে তো বাড়ির ভিতরে পানি ঢুকে যায় । তখন একটা অজানা আতঙ্ক, তখন যেন প্রকৃতির ভিন্ন চিত্র সে দেখতে পায় । যদিও সেই সময়টা বেশ ক্ষণিকের , তারপরেও আবারো প্রকৃতি নিজের মতো করে জেগে ওঠে , আবারো ঐ একই জায়গাতে বসে দিব্যি সময় কাটিয়ে দেয় ।
আগে যদিও নদী এত কাছাকাছি ছিল না, তবে নদীর এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে । হয়তো এই সূত্রেই এত কাছে নদী চলে এসেছে । যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন তারা ব্লক বেঁধে তার বাড়ির পিছনটা বেশ ভালোভাবে আটকে দিয়েছে । কারণ আরেকটু ভাঙলেই যে সামনে বড় রাস্তার ক্ষতি বেশ ক্ষতি হতে পারে , এজন্যই হয়তো তারা এমন কাজটা করেছে । এতে অবশ্য সুবিধাই হয়েছে একদিক থেকে । যেমন নিরাপত্তা পেয়েছে তেমন প্রশান্তি পূর্ণ একটা বসার জায়গাও হয়েছে ।
আমার তো তার জীবনটা দেখে বেশি হিংসে হচ্ছে এই মুহূর্তে । একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি আমি যখন সারাটা দিন কর্মস্থল থেকে ফিরে বা সারাদিন কর্ম করে যখন বেশ ক্লান্ত হয়ে যাই, তখন যদি এরকম একটা জায়গায় বসে প্রকৃতির নির্মল বাতাস শরীরের লাগাতে পারতাম, তাহলে কেমন লাগতো । আমি মনেকরি আমার ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে যেত । সেদিক থেকে তাকে দেখে বেশ হিংসে হচ্ছে । কারণ আমার কাছে মনেহচ্ছে সেই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ , যে কিনা প্রকৃতির এত কাছাকাছি থেকে প্রকৃতির আসল সৌন্দর্য্য কে নিজের মতো করে উপভোগ করছে ।
জীবনে আসলে বেঁচে থাকতে গেলে খুব যে আহামরি কিছুর দরকার হয়, তেমনটা কিন্তু না । আসলে তার এই দীর্ঘ জীবনে তেমন কোন আফসোস বা হতাশা নেই বললেই চলে । তার যখনই একাকীত্ব বোধ লাগে, তখনই একটা চেয়ার নিয়ে বসে থাকে এই নদীর পাড়ে আর বুক ভরে নিশ্বাস নেয় ।
খানিকটা সময় কাটিয়ে দিলাম বাপ-বেটা মিলে তার সঙ্গে বসে গল্প করে । যদিও সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় যতটুকু তথ্য পেয়েছি তাই দেওয়ার চেষ্টা করলাম , তাতেই বেশ ভালই লাগলো এই সহজ সরল মানুষটাকে । তার জীবনটাকে সংক্ষিপ্ত লেখার মাঝে বন্দি করে ফেললাম আমার ব্লগে ।
জীবনে সবকিছুর দরকার আছে, এটা যেমন সত্য কথা । তেমন ক্লান্তিকর দিন শেষে এমন একটা পরিবেশে সময় কাটানো কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ । তাতে হয়তো অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা লাভবান হওয়া যায় না, তবে মানসিকভাবে বেশ চাঙ্গা হওয়া যায় । এমনটাই তো বুঝলাম, আফজাল চাচার জীবনটাকে একটু পর্যবেক্ষণ করে ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
অনেকে শুধু এরকম একটা অবসরের কথা কল্পনাই করতে পারে।শেষ জীবনে এমন অবসর খুব কম মানুষই উপভোগ করতে পারে।সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্মা হয়ে যাওয়া।ধন্যবাদ ভাইয়া এরকম একটি মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
পাঠকের সন্তুষ্টি লেখকের আত্মতৃপ্তির বহিঃপ্রকাশ ভাই । শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
আসলে ভাই আমাদের সমাজে সুখী মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন। সেখানে আফজাল চাচার জীবনের গল্প জানতে পেরে ভালো লাগলো। সত্যিই আফজাল চাচা একজন সুখী মানুষ। তার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই নেই কোন টেনশন। প্রকৃতির মধ্যে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে হিমেল বাতাস খায়। সত্যিই এটা অনেক আনন্দের এবং সুখের। যাইহোক আজকে বিকেল বেলা আপনি এবং আপনার ছেলে মিলে তার সাথে গল্প করলেন এবং সুন্দর কিছু তথ্য আমাদের দিলেন। ভালো লাগলো। আসলে নদীর এলাকার মানুষদের বাঁধ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যার কারণে তার বাড়িটা রক্ষা পেয়েছে।
আসলে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করার মাঝে আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করে , সেই জায়গা থেকে আফজাল চাচা নিতান্তই সুখী মানুষ।
আগামী পোস্টে সেই জায়গার সৌন্দর্য্যটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো ভাই ।
শুনে অনেক খুশি হলাম ভাই।
নদীর এপার ভাঙে তো ওপার গড়ে একেবারেই বাস্তব সত্য একটি কথা ভাই। আফজাল চাচা নদীর শান্ত এবং অশান্ত দুটো রুপই কাছ থেকে দেখছে। সত্যি এইরকম শান্ত পরিবেশে বসে সময় কাটালে দিনের সব ক্লান্তি যেন মূহুর্তে দূর হয়ে যায়।
হুম একদম ঠিক বুঝতে পেরেছেন আপনি ভাই ।
আফজাল চাচার হয়তো অনেক কিছু নেই কিন্তু শান্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো একটি সুন্দর পরিবেশ আছে, বেঁচে থাকতে গেলে জীবনের টাকার প্রয়োজন আছে কিন্তু সুখী থাকার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়না। আফজাল চাচার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার হয়তো আহামরি কিছু নেই কিন্তু তারপরও সে নিজেকে সুখী মনে করে। খুব সুন্দর করে আফজাল চাচার গল্পটি শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাইয়া, জিবনে চলার জন্য বিভিন্ন কর্ম কতে হয় আর শেষ সময়ে মানুষ একটু শান্তি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে।তবে শান্তি কিন্তু টাকাপয়সা অথবা কোনো কিছু দিয়ে পাওয়া যায়না।প্রকৃতির নির্মল বাতাস প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে কিন্তু মনের আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।আসলে ভাইয়া,আপনার পুরোটা লেখা পড়ে সত্যি আমার খুব ভালো লেগেছে।আপনি আপনার লেখার মধ্যে বাস্তবিক চিত্র গুলো তোলে ধরেন।
ভাইয়া, আফজাল চাচাকে দেখে আমারও বড্ড হিংসে হচ্ছে, তার এখন কোনো চিন্তা ভাবনা নাই তিনি স্বর্গীয় সুখ অনুভব করছে প্রাকৃতিক মধ্যে থেকে। ভাইয়া, এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আসলে আমাদের প্রত্যেকের জীবন বড়ই বিচিত্র। কে কিভাবে সুখ খুঁজে নিচ্ছে তা বুঝতেই পারি না। যে যার মত করে নিজের সুখ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছে। হয়তো সবাই ভালো থাকার চেষ্টা করছে। আফজাল চাচার সাথে আপনার পরিচয় হয়তো ক্ষণিকের। তবে এই মানুষগুলো নিজের যা কিছু আছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট। আসলে সুখী মানুষ তারাই যারা নিজের এক টুকরো সুখ নিয়েই সুখে থাকার চেষ্টা করে। সত্যি ভাইয়া এরকম পরিবেশে সময় কাটাতে পারলে নিজেকে খুবই সুখী মনে করতাম। হয়তো আপনার মত আমারও হিংসা হচ্ছে ভাইয়া।
আসলে এই বয়সটাতে এসে মানুষের আর করার তেমন কিছুই থাকে না। শরীর ও সঙ্গ ছেড়ে দেয়। তারপরও তো উনি এই বয়সে চেয়ার নিয়ে নদীর পারে নির্মল হাওয়া খেতে পারছেন। তাতেই বা কম কিসের। ভাগ্যিস ওনার বাড়ির পিছনে রাস্তা পড়েছিল। তা না হলে তো নদী ভাঙতে ভাঙতে একসময় বাড়ি ভেঙে চলে যেত। এমন কত লোকের যে বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে তার কোন শেষ নেই। ভাইয়া আপনি যে মাঝে মাঝে একেকজনের জীবন কাহিনীর কিছু অংশ লিখেন পড়তে খুবই ভালো লাগে।
সুখ ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু এর ভিতরে থাকে অনেক কিছু ৷ যা আমাদের শরীর মন মানসিকতা সবকিছুকেই ভালো এবং আনন্দ লাগে৷ আপনি বলেছিলেন না জীবনে বেঁচে থাকলে খুব আহামরি প্রয়োজন নেই ৷ ঠিক তাই ৷
আফজাল চাচা একসময় তার পরিশ্রম ক্লান্তি সব ছিল ৷কিন্তু সে আজ এমন এক বয়সে এসে পড়েছে৷ যেখানে এখন তার শুধু বসে থাকা আর বিশ্রাম নেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই৷ সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছু ছেড়ে ঝুরে প্রকৃতির সানিধ্যে মিলন হই৷
তার বাড়ির সাথেই নদী সে বসে সুন্দর নির্মল ও নদীর বুকে বসে ৷ আপন মনে যেন তার সম্পূর্ণ সুখ লাভ করছেন৷
ভালো লাগলো
একদম ঠিক আফজাল চাচার মধ্যে আসলে তেমন কোন হতাশা নেই আপনি ঠিকই বলেছেন জীবনে বেঁচে থাকতে হলে আহামরি তেমন কিছু দরকার হয় না, নদীর পানি ঘরে ঢোকার বিষয়টি আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে তবে তার পরেও আফজাল চাচার মনে কোন দুঃখ নেই সে সময় পেলে নদীর পারে মাঝে মধ্য এসে সময় কাটায়। আপনার গল্পটি অনেক সুন্দর ছিল পড়ে অনেক ভালো লেগেছে, ধন্যবাদ আপনাকে 🥰🥰❤️