মায়া

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

loneliness-g22daae77f_1920.jpg
source

২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় যা ঘটেছিল, সেটাই বলার চেষ্টা করছি। ছোটবেলায় যখন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়তাম সেই সময় আমার টুকটাক লেখাপড়ার হাতেখড়ি শুরু হয় মায়া আন্টির হাত ধরে।

তার জীবন নিয়ে আজ যখন আমি একটু আলোকপাত করার চেষ্টা করছি, তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। জেদ ও অহংকার থাকা ভালো, তবে সেটা সীমিত আকারে। কারণ কোন কিছুর অতিরিক্ত ভালো না।

এই তল্লাটে সবচেয়ে পুরনো ও বড় যে বাড়িটা আছে, সেটা হচ্ছে মায়া আন্টিদের বাড়ি। তারা ভাই বোন ছিল অনেকগুলো এবং বাবা যেহেতু অনেক আগে থেকেই ব্যবসায়ী ছিলেন, তাই মূলত মায়া আন্টিদের অর্থনৈতিক অবস্থা শুরু থেকেই বেশ ভাল ছিল ।

এমনিতেই পরিবারের সবার ছোট ছিল মায়া আন্টি আর সেই জন্য সে তার বাবার খুব আদরের ছিল।তবে সময়ের সঙ্গে যেন জীবনের পরিবর্তনগুলো খুব দ্রুতই চলে আসে।

একটা সময়ের পরে পরিবারের সবার নতুন করে সংসার জীবন শুরু হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখন থেকেই আসলে মুহূর্তেই বড় পরিবারটা ক্রমেই ছোট হয়ে যেতে লাগলো। ভাই বোনেরা যে যার মতো করে সংসার গোছানো শুরু করে দিল। আর ঐদিকে মায়া আন্টির বাবার চলে যাওয়াতে, মাঝখান থেকে বিপাকে পড়ে গিয়েছিল, মায়া আন্টি।

যাইহোক ভাই-বোনেরা চেষ্টা করল, পারিবারিকভাবেই তার একটা সম্বন্ধ তৈরি করে বিয়ে দেওয়ার জন্য। সময় খারাপ গেলে যা হয় আর কি। যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল, ভদ্রলোক বিয়ের পরেই দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিল এবং পরবর্তীতে মায়া আন্টির জীবনটা আরও অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।

এখানেও বেশি দিন সংসার হলো না তার। আবারো শুরু একাকী জীবন। ছোট বেলায় যখন তখন তার কাছে পড়তে যেতাম, তার পিছনে অবশ্য কারণ ছিল। সে যে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি নিয়েছিল আর ওখানেই আমি পড়তাম। সেই সুবাদেই মোটামুটি তার কাছে শুরুর দিকে লেখাপড়া করার সুযোগ হয়েছিল ।

মাঝে আর সেভাবে দেখা হয়নি আর দেখা হওয়ার কথাও না। কারণ ঐ যে বললাম, একাকী জীবনযাপন করতো। এই দিকে তার ভাইবোনেরা নিজেদের মতো করে তাদের জীবন সাজিয়ে নিয়েছিল। আর এদিকে মায়া আন্টি পড়ে গিয়েছিল একা। আসলে বাবা-মা বেঁচে না থাকলে, পৃথিবীটা অনেকটাই নিঃসঙ্গ হয়ে যায়।

যেহেতু অন্যত্র থাকতো, তাই তার সঙ্গে দেখা হতো না। তাছাড়া মায়া আন্টি ছোটবেলা থেকেই প্রচুর পরিমাণে জেদি ছিল। চেষ্টা করছিল নিজের থেকেই কিছু করার জন্য। তবে একটা সময়ের পরে তার নিজের জেদ আর অহংকার তাকে অনেকটাই ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।

বিশেষ করে সে অনেকগুলো ব্যবসার সঙ্গে একত্রে জড়িয়ে গিয়েছিল এবং যেগুলো সে বুঝে ওঠার আগেই তার ক্ষতি ডেকে এনে ছিল। তার যে জমানো পয়সা ও জমি ছিল, সেগুলো বিক্রি করে পরবর্তীতে কোনরকমে ঋণ মুক্ত হয়েছিল।

শেষ খবর পর্যন্ত এতোটুকুই জানতাম যে শহর থেকে অদূরে ভাড়া বাসায় থাকতো সে এবং চেষ্টা করছিল নতুন করে কিছু করার জন্য।

দীর্ঘদিন পরে সেদিন সন্ধ্যায় যখন চার রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, পিছন থেকে এক ভদ্রমহিলার উচ্চ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। অনেকটা উচ্চস্বরেই কথা বলছিল। অনেকটা আগ্রহ নিয়েই একটু দেখার চেষ্টা করলাম।

তবে যা দেখলাম, তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ আমি আগে যাকে দেখতাম,তার যেমন সাজসজ্জা ছিল, যেমন সৌখিন মনোভাব ছিল, তবে আজ যখন তাকে দেখছি তার এখন অবস্থা অনেকটা এলোমেলো ভাব।

তবে তাকে আমি মুহূর্তেই চিনতে পেরেছি, সে আমার মায়া আন্টি এবং তার মাধ্যমেই আমার প্রথম শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়েছিল। তাকে তো এতো সহজে ভোলা যায় না।

চেষ্টা করলাম এগিয়ে যাওয়ার জন্য, যদিও তিনি প্রথমে আমাকে চিনতে পারেন নি। তারপরেও নিজের সম্পর্কে খোলাসা করে বলার চেষ্টা করলাম। অবশেষে এবার সে চিনতে পেরেছে। অনেকটা সময় কুশল বিনিময় হয়ে গেল। তার কাছে জানার চেষ্টা করলাম, সে এখন কোথায় আছে এবং কি করছে ।

এক কথায় বলে দিল, থাকি এই শহরের শেষ প্রান্তে ছোট ভাড়া বাসাতে। এখন আর তেমন কিছু করি না। তুই যখন ছোট ছিলি, তোকে যেমন টুকটাক পড়াশোনা করাতাম। এখন ঠিক সেই কাজটাই করছি। অনেকগুলো বাচ্চাকাচ্চা আসে প্রতিদিন, তাদের টুকটাক পড়াই আর এভাবেই দিন চলে যায় ।

Banner-7.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

জীবন বৈচিত্র্যময়।কখন উঠবে,কখন নামবে তা সম্পর্কে কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়না।
মায়া আন্টির সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো।এখনো তিনি স্টুডেন্ট পড়ান,এটা বেশি ভালো লেগেছে।উপর ওয়ালা ভালো রাখুক তাকে।

 2 years ago 

এইটাই সবচাইতে চিরন্তন সত্য ভাই। কার কখন কি হয়ে যাবে তা বলা মুশকিল।

 2 years ago 

আহারে, পড়তে পড়তে নিজেকে মায়া আন্টির জায়গাতে বসিয়ে নিয়েছিলাম ভাইয়া।খুব কষ্ট লাগলো।জীবনটা এমন কেন?? ভাই- বোন গুলো কেন এত পর হয়ে গেল?? সবকিছুর পর জীবনটা আসলে এমনই। একা পথ চলা, একাই এগিয়ে চলা।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

একটা সময়ের পরে সবাই দূরে চলে যায় বা যেতে বাধ্য হয়, কিছুই করার থাকে না।

 2 years ago 

আপনার প্রথম শিক্ষিকা মায়া আন্টিকে সম্বন্ধে জানতে পেরে ভালো লাগছে। তিনি একদম নিঃসঙ্গ জীবন অতিক্রম করে আসছেন। অনেকের জীবন কতযে দুঃখে ভরা তা আমাদের অনেকেরই অজান।

 2 years ago 

এটাই তো জীবনের গোলকধাঁধা আপু। ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

জীবন বড্ড বৈচিত্র্যময়।মানুষের জীবনে কখন কি ঘটে যায় কিছুই ঠাওর করা যায় না।আর বাবা-মা না থাকলে অনেক নিঃসঙ্গ মনে হয় নিজেকে।আপনার মায়া আন্টির জীবন অনেকটাই কষ্টে কাটছে জেনে খারাপ লাগলো।বাস্তব জীবনে এমন ঘটনা অহরহ দেখা যায়, সুন্দরভাবে সেটা তুলে ধরেছেন।ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 68804.96
ETH 2441.52
USDT 1.00
SBD 2.33