বৈদ্যনাথ তালুকদার

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

১৯৬২ সাল, সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া এক নবীন, সেই সময় অনেকটা দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই বাপ-দাদার পুরনো ব্যবসায় যোগদান করেছিল।

তখন তো আর জীবন এমন ছিল না। পড়াশোনার পাশাপাশি এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাকে বাপ-দাদার ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে হয়েছিল। যে বয়সে তার সহপাঠীরা প্রতিনিয়ত পড়াশোনা আর খেলাধুলায় নিজেদের ব্যস্ত রাখতো, সেই বয়সেই সে ব্যবসার মতো জটিল গোলকধাঁধায় পড়েছিল।

যেহেতু পারিবারিক সূত্রেই মোটামুটি ছোটবেলা থেকেই টুকটাক ব্যবসার হিসেব-নিকেশ মাথায় ঘুরপাক করতো, তাই পরবর্তীতে পুরোদমে যখন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছিল, হয়তো তখন ব্যবসার সূত্রের জটিল কাজটা কিছুটা হলেও তার জন্য সহজ হয়ে এসেছিল।

20230301_184234.jpg

ভদ্রলোক আমাকে বেশ ভালোভাবেই বলে দিল, তখন স্বর্ণের দাম ছিল ১২০ টাকা ভরি, যা আজ লাখ টাকা ছুঁইছুঁই।

কত পরিমাণ ঊর্ধ্বগতি হয়েছে স্বর্ণের দামের, তার হয়তো চাক্ষুষ প্রমাণ সে নিজেই। একদম মুখস্ত বিদ্যার মত গড়গড় করে বলে দিল, ১২০ টাকা থেকে দেখা শুরু তারপরে ২২০ টাকা। হঠাৎ তারমাঝেই আবার যুদ্ধের গন্ধ। তিলতিল করে গড়ে তোলা বাপ-দাদার ব্যবসা অনেকটাই গুটিয়ে অন্যত্র যেতে হল। এক প্রকার বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছিল। জীবন বাঁচানো যেখানে মুখ্য বিষয়, সেখানে ব্যবসার কথা না ভাবলেও চলে।

অনেকটা মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখার মত । সাজানো গোছানো ব্যবসাটা যেন চোখের নিমিষেই শেষ। অতঃপর যুদ্ধের অবসান। সৃষ্টি হল নতুন এক ভূখণ্ড। যার নাম স্বাধীন বাংলাদেশ। কৈশোর ছেলাটা তখন যৌবনে পা দিয়েছে।

মূলধন যা ছিল তা তো সব লুট করেছিল হায়নার দল। তারপরেও আবারো নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে। নতুন করে স্বপ্নবোনা এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবিরাম ছুটে চলা। যেহেতু ব্যবসাটা তার আগে থেকেই মাথায় ছিল, তাই সেদিকেই আবারও নিজেকে নিয়োজিত করে ফেলার তীব্র চেষ্টা।

যদিও সবকিছু সহজ ছিল না। তবে পারিপার্শ্বিক সহযোগিতা তাকে বেশ অনুপ্রেরণা যুগিয়ে ছিল। এবার অনেকটা নতুন আঙ্গিকে, স্বাধীন বাংলাদেশে। এখন আর পরাধীনতার ভয় নেই বললেই চলে। অনেকটা নিজের মতো করে বাঁচা যায়। যাইহোক সেই সময়ের কথা আর না বলি।

20230301_184217.jpg

তবে ততদিনে স্বর্ণের দামের পাশে ঊর্ধ্বগতির মাত্রাটা যুক্ত হয়েছিল। সবকিছু গুছিয়ে উঠতে না উঠতেই, আবারো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে গেল স্বর্ণের দাম। তবে এবার আর নিজের দেশে যুদ্ধ নয়। যুদ্ধ তখন বহির্বিশ্বে। তারপরে তো এক টানে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার স্বর্ণের ভরি ক্রমেই সাত থেকে আট হাজার টাকাতে গিয়ে ঠেকলো। তখন আশির দশক চলছিল।

সে সময় ক্রেতা ছিল মূলত সকল পেশার লোকজন। তবে গৃহস্থ মানুষের স্বর্ণ ক্রয় করার তালিকা তখন বেশ লম্বা ছিল। যদিও কালের বিবর্তনে সেই তালিকা ক্রমশ ছোট হয়ে এসেছে।

স্বর্ণের গহনার প্রতি সেই সময় মানুষের চাহিদা দেখে, অবশেষে ভদ্রলোক নিজেই, নিজের দোকানে থাকা কারিগরদের সঙ্গে মিশে গহনা বানানোর কাজটাও মোটামুটি শিখে নিয়েছিল।

এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম, তার নাম বৈদ্যনাথ তালুকদার। এ শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী।

কত লম্বা অতীত, তাই না। আসলে জীবন এমনি। আজ যখন তার সঙ্গে টুকটাক কথা হচ্ছিল, অনেকটা খোলামেলাভাবেই তথ্যগুলো আদান-প্রদান হলো। তার এই দীর্ঘ সময়ের পথ চলা এত সহজ ছিল না।

দেখতে দেখতে কখন যে, সে সত্তরের বেশি বসন্ত অতিক্রম করে ফেলেছে, সেই খবর কে রাখে।

আমার মত সাধারন মানুষের অবশ্য স্বর্ণের দোকানে, তেমন খুব একটা কাজ নেই বললেই চলে। তবে গিন্নি আমার কিছুটা পয়সা জমিয়ে রেখেছিল, হয়তো সেই পয়সা দিয়েই ছোট্ট একটা স্বর্ণের গহনা সেদিন কিনতে গিয়েছিলাম আর তাতেই ভদ্রলোকের সঙ্গে দীর্ঘসময় গল্প হয়ে গেল।

20230301_185707.jpg

তাকে অবশ্য দুটো প্রশ্ন করেছিলাম, এই দীর্ঘ সময়ের পথ চলায় কোন মুহূর্তটাকে আপনি বেশি প্রাধান্য দিবেন। বেশ ঠান্ডা মাথায় উত্তর, আসলে অতীত মনে রেখে লাভ নেই । বর্তমানে যেভাবে আছি, বেশ আছি । এভাবে শেষ পর্যন্ত চলতে পারলেই হলো।

হয়তো কিছুদিন পরেই বিশ্রামে চলে যাব, তখন না হয় নাতিদের সঙ্গে হেসে খেলেই সময় কাটাবো। ছোট নাতির তো ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যৎ কর্ণধার হওয়ার।

আচ্ছা ক্রেতার পরিবর্তনটা, আপনি কেমন লক্ষ্য করেন। এই প্রশ্নের উত্তরটা ভদ্রলোক অনেকটা চিন্তা করেই দিয়েছিল, এখন তো খুব আফসোস হয়, গিনি সোনার যুগের ক্রেতা গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। হরেক রকমের ক্যারেট স্বর্ণের ভিড়ে, ক্রেতার পরিবর্তন বেশ লক্ষণীয় । যদিও তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। কারণ তা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাহিরে।

সহজ-সাবলীল উত্তর, বরাবরই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য। এ যাত্রায় তার সঙ্গে স্বল্প কথোপকথন হলেও, ভদ্রলোক বেশ ভালোই আন্তরিকতা দেখিয়েছে। যা হয়তো আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের জন্য অনেকটাই বেশি।

Banner-8.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

অতীতের ওই সময়টা এমন ছিল ভাই। কেউ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত আর কেউ বাবা এবং চাচাদের কথায় সংসারে কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকতে হতো। ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হতো না। তবে সেই সময়ের স্বর্ণের ভরির দাম শুনে আমি চমকে উঠলাম ভাই ১২০ টাকা মাত্র। বৈদ্যনাথ তালুকদার কাকার গল্পগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। একটা বিষয় খুব খারাপ লাগলো সেই সময় হানাদার বাহিনীরা তাদের সবকিছু লুণ্ঠন করে নিয়েছিল। আপনি যে প্রশ্ন করেছিলেন এবং উনি যে উত্তরটা দিয়েছেন উনার উত্তরের সাথে আমি একমত। প্রতিটা মানুষের চাই একটা সময় বিশ্রাম নিতে এবং নাতিপুতিদের সাথে বাকি জীবনটা পার করতে। খুবই ভালো লাগলো উনার জীবনের গল্পটা শুনে। আপনাকে ধন্যবাদ এবং আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাই।

 2 years ago 

প্রথম আমিও আপনার মতো দাম শুনে ধাক্কা খেয়ে ছিলাম ভাই। আর তাছাড়া সেই সময়ে ১২০ টাকা অনেক টাকা ছিল। ধন্যবাদ ভাই সময় নিয়ে লেখাটা পড়ে গঠনমূলক মতামত দেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

বৈদ‍্যনাথ তারুকদার স্বর্ণের একাল ওকাল দুটোই দেখেছে। অনেক বাঁধা বিপওির পরও যে বাপ দাদার ব‍্যবসা টা এখনো ধরে রেখেছে সেটা অনেক বড় বিষয়। এবং ভদ্রলোক যে আপনার সঙ্গে অনেক আন্তরিকতা দেখিয়েছে সেটা আপনার পোস্ট পড়ে বুঝলাম। কথা খুব একটা খারাপ বলেনি স্বর্ণের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্ষমতার বাইরেই বলা যায়। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই একটা ইতিহাস তুলে ধরার জন্য।।

 2 years ago 

সত্যি বলতে কি, ভদ্রলোকের আন্তরিকতার জন্যই তাকে নিয়ে লেখার উৎসাহ পেয়ে ছিলাম।

 2 years ago 

আপনার তুলে ধরা বাস্তব জীবনের ছোট ছোট অভিজ্ঞতার গল্পগুলো পড়তে আমার বেশ লাগে।তবে আগে সোনার দাম কম থাকলেও এখন আকাশ ছোঁয়া।যা অনেকটাই অকল্পনীয় ,তাছাড়া আপনি ভাবীর জন্য জমানো টাকা দিয়ে গহনা কিনতে গিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো।ভাবি বেশ খুশি হয়েছে আশা করি, ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68163.93
ETH 2639.01
USDT 1.00
SBD 2.70