ফেরা || @shy-fox 10% beneficiary
মাঝে মাঝে নিজেকে নিয়ে কিছু কথা বলতে ইচ্ছা করে, হয়তো অনেক সময় বলা হয়ে ওঠে আবার অনেক সময় বলা হয়ে ওঠেনা। তবে এটার জন্য খুব একটা বেশি খারাপ লাগে না। আর কাউকে না বললেও, ইচ্ছা করেই কিবোর্ডটা চেপে নিজের কথা নিজে লিখে ফেলি । হয়তো সেটা স্মৃতি রাখার মতো করে বা মনের অব্যক্ত চাওয়া থেকে । কারণ মন আমার ভীষণ ভারী হয়ে যায়, যদি কথাগুলো হারিয়ে যায় এই ভেবে ।
ঘড়িতে তখন সাড়ে সাতটার মতো বাজে, এমনিতেই শীতের দিন আর শহর থেকে মোটামুটি আমার গ্রামের চেম্বারটা পনেরো কিলোমিটারের মতো দূরে । যাইহোক এই জায়গাটায় প্র্যাকটিস করতে এসে, খুব যে একটা আমার পয়সা কড়ি হয় তা কিন্তু না। শুধুমাত্র আসি হয়তো মানুষগুলোকে ভালোবাসি এই জন্য । আজ আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে, কারণ রাতে আবার ক্লাস নিতে হবে। কি যে একটা তাড়াহুড়ো কাজ করছে নিজের ভিতর ,এটা আমি বলে বোঝাতে পারবো না ।যদিও পথে খুব একটা ঝামেলা হয় না ,তবে যেহেতু শীতকাল চলছে মূলত ঝামেলাটা লেগে থাকে গাড়ি পাওয়াকে কেন্দ্র করে ।
যদিও প্রতিনিয়ত আমাকে এই পথেই যাতায়াত করতে হয়। তবে সন্ধ্যার পরে এই এলাকায় কেউ কাউকে যেন আর চিনতে চায় না, জানতেও চায় না । কারণ সবাই ফিরে যেতে চায়, আপন গন্তব্যে । যাইহোক এমনিতেই শীতকাল একদম প্রচুর কুয়াশা পড়ছে প্রতিনিয়ত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন হয়ে গিয়েছে অনেকটাই কষ্ট সাধ্য । চেম্বারের বাইরে এসে যখন রাস্তায় দাঁড়ালাম, তখন মনে হচ্ছে, আজ মনে হয় একটু আমার দেরি ই হয়ে গেল।
নিজের সঙ্গে নিজে বিড়বিড় করে কথা বলার চেষ্টা করলাম । নিজের কাছে নিজেকে অসহ্য লাগছে, কেন আমি দেরি করলাম । যাইহোক শেষ রোগীটা না দেখলেও পারতাম, আবার ভাবছি যে ভাবে ব্যথায় কান্নাকাটি করছিল, হয়তো যদি রোগীটা না দেখতাম, তাহলে হয়তো রোগীটার কষ্টের পরিমাণ আরো বেড়ে যেত এই রাতে । যাইহোক এদিক-ওদিক চিন্তা করে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
অটোওয়ালা ভাইকে তো বলেই ফেললাম ভাই পয়সা বাড়িয়ে দেবো, আমাকে একটু নিয়ে যাবেন । কথাটা শোনার পরে অটোওয়ালা ভদ্রলোক এমন ভাবে তাকালো, যেন আমি তাকে মনেহয় বিব্রত করছি । সে এমন একটা ভাব করলো যে, তার কাছে পয়সার থেকে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়া অনেকটাই শ্রেয় ।
এদিক সেদিক পায়চারী করে যখন কোন উপায় আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন বারবার চেষ্টা করছিলাম নিজেকে শান্ত করার জন্য। কারণ এ পরিবেশটাও আমার জন্য না । এমনিতেই ঠান্ডা লাগছে, তার ভিতর বাড়ি যাওয়ার চিন্তা ,তার সঙ্গে আবার ক্লাস আছে , যথা সময়ে আবার ক্লাসে উপস্থিত হতে হবে। সর্বোপরি একটা এলোমেলো অবস্থা নিজের ভিতর সৃষ্টি হয়ে গেলো। মোবাইল ফোনটা বের করে ,বারবার যখন ঘাঁটাঘাঁটি করার চেষ্টা করছি, মনে হচ্ছিল হিম শীতল বাতাস আমার নগ্ন হাতটাকে বারবার আঘাত করছিল ।
যখন দেখবেন আপনার ভিতর অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে যায়। তখন দেখবেন মাঝে মাঝে স্থির হতে চাইলেও, সহজে স্থির হওয়া যায় না। আমি জানি কোন না কোন একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে, যদিও হাটের প্রায় অধিকাংশ লোকই বাড়ি চলে গেছে, বলা যায় হাট পুরোটাই এখন ফাঁকা। তবে যেহেতু অটোওয়ালা ভাইকে আমি পেয়েছি , হয়তো তার একটা সময়ে গিয়ে মন গলতেই পারে। যাইহোক যেহেতু একই পথে বাড়ি আমাদের, হয়তো পুরোপুরি না যেতে পারলেও, অর্ধেক পথ তার সঙ্গে যেতে পারবো ।
আধাঘন্টার মত অটোওয়ালা ভাই প্রায় চা খাইতেই সময় কাটিয়ে দিল । দেখলাম যে দোকানটাতে চা খাচ্ছিল , সেখানে বারবার চুলার আগুনের কাছে গিয়ে হাতগুলোকে সেঁকে নিচ্ছিলো । বুঝলাম তার ঠান্ডা লেগেছে, হয়তো একারণে প্রথমে যাইতে অনীহা প্রকাশ করেছে । ৫০ টাকার যখন একটা কচকচে নোট তার চোখের সামনে ধরলাম, তখন মনে হলো তার শীতের থেকে নোটের প্রতি আগ্রহ বেশি কাজ করছিল।
এদিক সেদিক না তাকিয়ে দুম করে বলে দিলো। আরে ডাক্তার ভাই, চলেন আজ না হয় একসঙ্গেই বাড়ি যাই। ব্যাপারটা ভালোই লাগলো, হয়তো তার আগ্রহ কাজ করেছে। যাইহোক আমি আর খুব একটা চিন্তা করলাম না, তাকে বললাম এগিয়ে চলুন । অতঃপর ঘন কুয়াশা ভেদ করে গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু ।।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
ভাইয়া আপনি একদম ঠিক বলেছেন কিছু কিছু কথা অনেক বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনা। আপনি সবসময় বাস্তব জীবনের চিত্র গুলো আপনার লেখনীর মাঝে উপস্থাপন করেন এটা আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আসলে দিন শেষে একটি কথাই সত্য আমাদের মনের অগোচরে কথাগুলো এলোমেলোভাবে ঘোরাঘুরি করে। হয়তো কাউকে বলে ওঠার সময় হয়ে ওঠে না। দিনশেষে আমরা শুধু নিজের মনের অজান্তেই কিছু কথা লিখে ফেলার চেষ্টা করি। আর আপনার লেখা পোস্ট মানেই অসাধারণ কিছু। যেমন আজ আপনি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু কথা আপনার লেখনীর মাঝে তুলে ধরেছেন। আপনি শীতের রাতে অনেক কষ্ট করে নিজের গন্তব্যে ফিরেছেন এটাই সবচেয়ে বড় কথা। সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই আপনার চলার পথ অনেক সুন্দর হোক এবং সারা জীবন এভাবেই একজন ভালো মানুষ হয়ে আমাদের সকলের পাশে থাকুন এই কামনাই করছি।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
ভাইয়া আপনি সবসময় আপনার বাস্তব জীবনের চিন্তা ভাবনাগুলো নিয়ে লেখালেখি করেন এজন্য আমার অনেক ভালো লাগে।আমরা আমাদের কর্ম জীবন শেষ করে যখন নিজের গন্তব্যস্থলে ফেরার জন্য রওনা দেই তখন ফেরার পথ অনেক বিশাল মনে হয়। মনে হয় যেন এই পথের মানুষ গুলো সবাই অনেক বেশি অচেনা। সেই চিরচেনা পথের ফাঁকে অচেনা মুখ গুলো দেখে নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয়। সবাই যে যার মতো করে নীড়ে ফেরার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে শীতের রাতে সবদিক থেকে মানুষজন একদম ব্যস্ত হয়ে পরে খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার জন্য। কারণ আমরা আমাদের সারাদিনের ব্যস্ততাকে শেষ করে আমাদের শেষ ঠিকানায় ফিরে আসার চেষ্টা করি। তখন হয়তো কারো সাথে কথা বলার মত কেউ থাকেনা। তাই নিজের সাথে নিজেই কথা বলি এবং নিজের আবেগগুলোকে মনে করি। এই কর্মব্যস্ততার জীবনে আমরা প্রতিনিয়তই ব্যস্ত সময় পার করছি। একটি সময় এসে যখন আমরা সব ব্যস্ততা ফেলে রেখে সেই ঘরে ফেরার পথে এগিয়ে যাই। অনেক সুন্দর ভাবে প্রতিটি কথা মনের আবেগ দিয়ে লিখে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
আসলে ভাইয়া যারা আমরা যারা কর্মব্যস্ত মানুষ তারা সব সময় বিভিন্ন ধরনের চিন্তায় জর্জরিত ফ্যামিলি থেকে শুরু করে কর্মস্থল, কর্মস্থল থেকে শুরু করে নিজের আত্মীয়-স্বজন সবদিকেই মোটামুটি খেয়াল রাখতে হয়। আবার আশেপাশের বন্ধু-বান্ধব গুলো থাকে তাদের কথা চিন্তা করতে হয়। আর আপনি পেশায় একজন ডাক্তার, মহৎ পেশার মানুষ। আর আপনি যদি ও বৃহস্পতিবার এর চেম্বার এ যান কিন্তু আপনার মন থাকে আমাদের কাছে। আমাদের কাছে বলতে আমার বাংলা ব্লগ কে আপনি এত বেশি ভালোবাসেন এবং আমার বাংলা ব্লগের প্রতিটা সদস্যকে। আপনি অনেক বেশি ভালবাসেন সেটা আমি জানি বুঝি হয়তো অনেক সময় কথা বলা হয়ে ওঠেনা। আপনার এই ঠান্ডার ভিতর আমার বাংলা ব্লগের হ্যাংআউটে অ্যাটেন্ড করার জন্য আপনি যে পরিমাণ ছটফট করছেন অনেকটা বন্দি খাঁচার পাখির মতো। এতো বিড়ম্বনা পরেও অবশেষে আপনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। এবং আপনাকে আমরা যথা সময় হাংআউট পেয়েছি সত্যি ভাইয়া আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও শেষ করা যাবেনা। আমাদের সাথে আপনার মনের ভাবগুলো প্রকাশ করার জন্য এবং কি ভালোবাসা গুলো শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
আপনার কাজকে আমি সম্মান করি।এত ব্যস্ততার মাঝেও আপনি আমাদের জন্য সময় দেন।আমাদের নিয়মিত ক্লাস গুলো নেন এইটা আমার খুব ভালো লাগে।ধন্যবাদ ভাই আপনাকে আমাদের প্রতি এতো সদয় হবার জন্য।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
আমরা যারা নিয়মিত লেখালেখি করি তাদের এই সুবিধা টা আছে। নিজের কথা অন্যকে বলতে না পারলেও এখানে লিখতে পারি। এবং সত্যি বলেছেন ভাই শীতের দিনে সন্ধ্যার পরে গ্রামের দিকে যানবাহন পাওয়াই যায় না। আমি নিজেও কয়েকদিন পূর্বে এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ছিলাম। যাইহোক শেষ পযর্ন্ত যে ঠিকভাবে বাড়ি আসতে পেরেছেন এটা জেনে ভালো লাগল।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
আমি আপনার লেখা পড়ে খুবই মুগ্ধ হয়ে যাই। আপনি সবসময় বাস্তব জীবন নিয়ে লিখতে চেষ্টা করেন।আপনার আজকের লেখাটি পড়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে। কিছু বাস্তব জীবন চিত্র তুলে ধরেছেন আপনি এই লেখার মাধ্যমে। যা সত্যি খুবই অসাধারণ ছিলো। আমার ও খুব ভালো লাগে বাস্তব জীবনকে তুলে ধরতে এবং সমাজ ব্যবস্থা কে তুলে ধরতে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
আপনার বাস্তব জীবনের গল্পটা অনেক সুন্দর লাগলো পড়ে। আমিতো প্রথমের অংশ পরে ঘাবড়ে গেছিলাম , যে কিছু একটা ঘটেছিল আপনার সাথে সেই রাতে। তো বাকি অংশ পরে বুঝলাম গল্পটি মূল হচ্ছে ফেরার আপেক্ষা ,যা আপনার ভিতর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। তবে শেষ দিকে যে ভালবাসা পেয়েছেন তার কোন মূল্য হয় না
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।
আপনি সত্যিই ভাইয়া অনকে মহৎ একজন মানুষ। আপনি যে মানুষদের ভালো বেশে এত কিছু করেন এটা যে কেউ পারে না ভাইয়া। এই থেকেই আমার মনে আপনার জন্য আলাদা রকম একটা সম্মান তৈরি হয়েছে ভাইয়া।
যাই হোক শেষমেষ যে অটোওয়ালা ভাই যেতে রাজি হয়েছিলো এটা শুনে ভালোই লাগলো। নাহলে এই শীতের মধ্যে অনেক সমস্যায় পরে যেতেন।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল ।