বেসরকারি ব্যাংক ও আমার অভিজ্ঞতা
কোন রকমে চায়ে চুমুক দিতেই বেশ সতেজ মনে হচ্ছিল। ইচ্ছে করেই জানার আগ্রহ প্রকাশ করলাম, এই চা কে বানিয়েছে। ভদ্রলোক বেশ বিনয়ের সঙ্গেই বলল, আমাদের আসাদ ভাই। আমি তাকে বললাম, সত্যিই উনি কিন্তু বেশ দারুন চা বানায়। একবার আমার পাঁচ তারকা মানের হোটেলে চা খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, এ চায়ের স্বাদটা ঠিক তেমনি।
খাদেমুল সাহেবের সঙ্গে আমার কয়েকদিন থেকেই সরাসরি বা মুঠোফোনে বেশ ভালই কথাবার্তা হচ্ছিল, যদিও ভদ্রলোক আমাকে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করেছিল দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, খুব দ্রুতই আপনার ফিক্সড ডিপোজিটের ব্যাপারটা সমাধান করা হবে, সত্যি তা আজ হয়েও গেল ।
সরকারি ব্যাংকগুলোর সেবার মান নিয়ে আমার তেমন কিছুই বলার নেই। তাও যদি বলতেই হয়, তাহলে হয়তো এক কথাতেই বলে দেবো, আমি ভীষণ বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট সরকারি ব্যাংকের সেবাতে।
এক্ষেত্রে সময়ের পরিক্রমায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে গ্রাহককে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে। তারা আসলে প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছে, গ্রাহকের একদম খুব কাছাকাছি থাকার এবং গ্রাহককে সেবা দেওয়ার ব্যাপারে তারা ভীষণ তৎপর।
যেহেতু দীর্ঘ কয়েক দিনের জন্য গ্রামে যাব আর তাছাড়া ব্যক্তিগত কিছু কাজ জমে আছে,
তাই মোটামুটি কিছুটা অর্থের প্রয়োজন। আমার মত ছোট মানুষের সঙ্গে ব্যাংকের লেনদেন খুব একটা থাকে না বললেই চলে। ঐ মাঝে মধ্যে সময় সুযোগ পেলে, কিছু বাড়তি টাকা সঞ্চয় করে রাখি, ব্যাপারটা শুধুমাত্র এতোটুকুই। যেহেতু হঠাৎই টাকার প্রয়োজন, তাই বাধ্য হয়েই ব্যাংকের দ্বারস্থ হলাম।
মূলত ফিক্সড ডিপোজিটটা ভেঙে ফেলবো নগদ অর্থের দরকারে। তবে সত্য কথা বলতে গেলে কি, এই ব্যাপারগুলো তাৎক্ষণিক চাইলেই হয় না। কারণ কিছু ব্যাংকিং নিয়মকানুন থাকেই। হয়তো সেই নিয়মকানুন মেনে দ্রুত সময়ে টাকা হাতে পেতেও কিছুটা তো অন্তত সময় লাগেই। তারপরেও ব্যাপারটা যেহেতু আমার একটু জরুরী আর আমি তাদেরকে আগে থেকেই জানানোর চেষ্টা করেছি, তাই তারাও চেষ্টা করেছে আমার ব্যাপারটা নিয়ে একটু আন্তরিক হওয়ার জন্য।
খাদেমুল সাহেব বিগত দিন আমাকে বলেই দিয়েছিল সকালের দিকে আসবেন, চেষ্টা করব খুবই দ্রুত আপনার কাজটা সমাধান করে দেওয়ার জন্য। ভদ্রলোক কে আমি ব্যক্তিগতভাবে তেমন চিনিও না, তবে সে যে তার কাজের প্রতি ভীষণ দায়িত্বশীল, তা তার বাহ্যিক অবস্থা দেখেই বোঝা গিয়েছে।
সকাল দশটার পরেই আমি ব্যাংকের সামনে গিয়ে হাজির। যখন ভিতরে প্রবেশ করবো, ঠিক সেই সময় ভিতর থেকে একজন দরজা খুলে দিল এবং অনেকটা হেসে অভ্যর্থনা জানালো। হালকা শীতল বাতাস শরীরে এসে স্পর্শ করলো। চারিদিকটা বেশ সাজানো গোছানো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আমার গন্তব্য সোজা খাদেমুল সাহেবের টেবিলে।
ভদ্রলোক কে দেখে বোঝার উপায় নেই, সে অনেকটা কাজের চাপের ভিতরে আছে। তারপরেও বেশ আন্তরিকভাবে কুশল বিনিময় করল এবং বসতেও দিল। মোটামুটি এই ব্যাংকের সবাই অনেক দক্ষ , তবে তারপরেও গ্রাহকদের সবার নজর যেন খাদেমুল সাহেবের দিকে। আমার মত আরও অনেকেই এসেছে খাদেমুল সাহেবের কাছে, ব্যাংকিং সেবা নেওয়ার জন্য।
ভদ্রলোক কে দীর্ঘ সময় থেকে দেখছিলাম, কোন বিরক্তির চিহ্ন তার ভিতরে নেই, ক্রমাগত সে কাজ করেই যাচ্ছে । তবে সেই তুলনায় অন্যান্য কর্তব্যরত অফিসারদের টেবিলে, গ্রাহকদের তেমন কোন ভিড় ছিল না বললেই চলে। তবে এতো কিছুর মাঝেও, ভদ্রলোক নিজের থেকে সবকিছু সামাল দিয়ে যাচ্ছিল, এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লেগেছে।
আমাকে শুরুতেই বলে দিয়েছিল, ঘন্টা দুয়েক সময় লাগবে। সবকিছু প্রস্তুত করে হেড অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি, তারা অ্যাপ্রুভ করলেই আপনার কাজটা হয়ে যাবে। আপনি চাইলে এখানে থাকতে পারেন নতুবা বাহির থেকে ঘুরে আসতে পারেন। একদম ঠিক দুঘন্টা পরে গিয়ে যখন আমি হাজির হয়েছি, তখনো দেখছিলাম তার কাছে ভিড় লেগেই আছে। তবে সে আমাকে নিরাশ করেনি। বলল আপনার কাজ হয়ে গিয়েছে, এখন শুধু স্বাক্ষর দিয়ে টাকাটা সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
বেসরকারি ব্যাংক নিয়ে যদি কিছু কথা বলতেই হয়, তাহলে বলবো টপ রাঙ্কের যে ব্যাংকগুলো আছে, মোটামুটি কিছুটা তাদের সার্ভিস চার্জ বাড়তি, তবে সেবা কিন্তু একদম পরিপক্ক। মানে আপনাকে সেবা দেওয়ার জন্যই তারা অপেক্ষা করে আছে।
যদিও এখন আধুনিক ব্যাংকিং সেবা চালু হয়েছে , তাই ব্যাংকে সশরীরে যাতায়াতের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না বললেই চলে। নিজের টুকটাক ব্যাংকিং কাজগুলো তো ঘরে বসেই করা যাচ্ছে। তারপরেও যদি হঠাৎই ব্যাংকে গিয়ে খুব দ্রুত সেবা পাওয়া যায়, তাহলে তো বেসরকারি ব্যাংকের সেবার একটু প্রশংসা করতেই হয়।
আর খাদেমুলের মত যদি অফিসাররা সর্বত্র থাকে,তাহলে হয়তো যারা আমার মত হঠাৎ করেই অর্থনৈতিক ঝামেলায় পড়ে ব্যাংকের দারস্থ হবে ,তাদেরকে ঝটপট ঝামেলা থেকে উদ্ধার করার জন্য ওরাই যথেষ্ট।
ভালো থেকো ভাই খাদেমুল, তোমার দায়িত্বশীলতা ও কার্যকলাপ আমাকে অনেকটাই মুগ্ধ করেছে। কাজের সঙ্গে এভাবেই লেগে থেকো, কাজই তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, দূর থেকে বহুদূর।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1684861085705510914?s=19
জী ভাইয়া সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে না। ফাইল ফেলে রাখে,দায়িত্ব অবহেলা করে। যার ফলে গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হয়। তবে বসরকারি ব্যাংক সে দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে। তাদের সেবা অনেক ভাল। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমার কাছেও তো ব্যাপারটা তেমনই মনে হয় ভাই। এজন্যই নিজের অভিজ্ঞতা ঝটপট লিখে ফেলেছি।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি ব্যাংক হয়েছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকের সেবা গুলো অনেক ভালো লাগে আমার কাছে। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে যেরকম ভোগান্তির শিকার হতে হয় কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে হয় না। তবে তাৎক্ষণিকভাবে যেহেতু আপনার ডিপোজিট ভেঙ্গে ফেলতেছেন একটু সময়ের ব্যাপার তো হবে। যাক অবশেষে কাজটা সারাই নিলেন। কিন্তু চা টা দেখে লোভ লেগে গেল কালারটা সুন্দর হয়েছে। যে ভদ্রলোক চা তৈরি করেছেন ওনাকে ধন্যবাদ জানানো আসলেই উচিত।
চা টা আসলেই বেশ লোভনীয় ছিল এবং স্বাদটাও ছিল একদম পারফেক্ট। আমি অবশ্য যে ভদ্রলোক চা বানিয়েছিল, আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
ঠিকই বলেছেন সরকারি ব্যাংকগুলোতে গেলে বেশ অনেক ভোগান্তি ঘটতে হয়, এমনও হয়ে গেছে একটা কাজ করতে সকালে ঢুকেছি বিকেল হয়ে গেছে, কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলো কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সমাধান করে দেয়, সার্ভিস দেয়ার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক অনেকটাই এগিয়ে।
এটা মানতেই হবে যে, বেসরকারি ব্যাংক তাদের সার্ভিস অনুযায়ী এখন অনেকটাই এগিয়ে আছে।
সরকারি ব্যাংকগুলোর সেবার মান এতোটাই খারাপ যে, মাঝেমধ্যে মাথায় রক্ত উঠে যায়। তাই বেসরকারি ব্যাংকে চার্জ বেশি হলেও সমস্যা নেই। কারণ সেবার মান খুবই ভালো। কয়েকমাস আগে ৪০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙার জন্য ব্যাংকে গিয়েছিলাম। প্রথমে একটু দ্বিমত করলেও, একটু পরই ডিপোজিট ভেঙে টাকা দিয়ে দেয়। যাইহোক আপনার কাছ থেকে বেসরকারি ব্যাংকের এতো প্রশংসা শুনে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ভাই। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।