মিথিলা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

woman-g0a03fd5a9_1920.jpg
Source

তখন রোজ দেখা হতো হয়তো সেটা প্রাইভেট পড়াকে কেন্দ্র করেই। মিথিলা যে আমার খুব পরিচিত, তা বলবো না। তবে বেশ ভালোই খাতির ছিল। এ তল্লাটের সবচেয়ে বড় যে পুকুরটা আছে, সেটা ছিল তার কাকুর দায়িত্বে। ছোট বেলা থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরা অনেকটা আমার নেশা ছিল, হয়তো সেই জন্যই খাতির ছিল মিথিলার সঙ্গে।

যেহেতু এই তল্লাটেই বড় হয়েছি , তাই ঐ পুকুরেই মাছ ধরতে যেতাম । একবার তো হাতেনাতে তার কাকু আমাকে ধরেই ফেলেছিল , সেই যাত্রায় অবশ্যই বেঁচে গিয়েছিলাম । ভদ্রলোক আমাকে তেমন কিছুই বলেনি , আমি শুধু বলেছিলাম মিথিলা আমার বান্ধবী হয় । তবে ভদ্রলোক আমাকে বলেছিল, বাবা এরপর থেকে আর এভাবে মাছ ধরিও না । অনেকটা বলা যায়, তাদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল পুকুর লিজ নেওয়া আর সেই গুলোতে মাছ চাষ করা ।

এখন আর মিথিলার সঙ্গে দেখা হয় না বললেই চলে । কতগুলো সময় যে কেটে গেল, তাও তো কয়েকটা বছর হবেই ।

মৃত্যুর খবর প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে, এটা যদিও নতুন কোন ব্যাপার না । তবে তারপরেও যখন আশেপাশের পরিচিত মানুষগুলোর মৃত্যুর খবর শোনা যায়, তখন যেন একটু হৃদয়টা ভারাক্রান্ত হয়ে যায় ।

গত বছর তো আমার ছোট মা রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল । দেখতে দেখতে তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী হয়ে গেল । আর আজ যখন বিকেল বেলার দিকে, এই শহরের ব্যস্ত চায়ের দোকানে বসে, চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম , হুট করে মিথিলার বড় ভাই কে দেখলাম ।

এমনিতেই শীতের বিকেল, গায়ে কোন কাপড় নেই, পরনে শুধুমাত্র সাদা ধুতি । তার বেশভূষা আসলে আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে । আসলে হুটহাট করে কোন কিছু নিয়ে, মন্তব্য করা যায় না । তবে তাকে দেখে আমি ভীষণ চিন্তিত ।

মিথিলার চাচাতো ভাই, যখন আমার সামনে দিয়ে চলে গেল, তখন চায়ের দোকানদার কে বললাম, আচ্ছা মিথুন ভাইয়ের এই অবস্থা কেন । তখন চায়ের দোকানদার বলল , গত দুদিন আগে তার বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে ।

মিথিলার মুখটা যেন ক্রমশ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল । কারণ আমি যেটা সন্দেহ করেছিলাম , ঠিক সেটাই হলো ‌। আমার এখনো মনে আছে , সেই সময়ে বিকেল বেলা করে , যখন প্রাইভেটে মিথিলা আসতো , তখন তার চাচার মোটর বাইকে করেই সে আসতো ।

চায়ের কাপটা কোনরকম রেখে , মিথুন দাদার পিছনে হাঁটা শুরু করলাম । যে জায়গাটাতে গিয়ে পৌঁছালাম, সেই জায়গাটা আমার পূর্ব পরিচিত । এটা মিথিলাদের বাড়ির সামনের জায়গা ‌।মিথিলার সঙ্গে দেখা নেই , দীর্ঘ কয়েক বছর । তাও তো এক যুগের বেশি সময় । বাড়ির সামনে যেতেই, তখনো কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি । যদিও গত দুদিনের ঘটনা, তবে পরিবেশটা এখনো শান্ত হয়নি ।

রিক্সা থেকে মাঝ বয়সি একটা মেয়ে দ্রুত নামলো । তার মনটাও বেশ খারাপ , সেটা তার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে । তার মুখটা আমার কাছে বেশ পরিচিত লাগছে , কোথায় যেন দেখেছি । আসলে মানুষ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়ে যায় শারীরিক গঠনের দিকে থেকে।

দ্রুত যখন বাড়ির ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিল মাঝ বয়সি মেয়েটা , তখন বাধ্য হয়েই পেছন থেকে তাকে ডাক দিলাম , মিথিলা বলে। সম্ভবত সে আমার গলার স্বরটা এখনো মনেই রেখেছে । তারপরেও যখন ফিরে তাকিয়েছে, আমি শুধু বললাম, আমি শুভ ।

তোর চাচার বিষয়টা বেশ দুঃখজনক ‌। ওর চোখে যেন পানি টলটল করছে, এই বুঝি কেঁদে দেবে । ও অনেকটা কাঁদো কাঁদো সুরে বলে দিল , এই সড়ক গুলো যে কবে নিরাপদ হবে, তা তুই বলতে পারিস । কি দোষ ছিল আমার চাচার । ঘাতক গাড়িটা একদম থেতলে দিয়েছে ।

Banner-6.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

খুবই খারাপ লাগল ভাইয়া পোস্ট টি পড়ে।এভাবে কোন পরিচিত মানুষের মৃত্যু সংবাদ সব সময়ই পীড়া দেয়।ঈশ্বর শোক সন্তপ্ত পরিবার কে ধৈর্য ধরার শক্তিদিন।

খুব কষ্ট লাগলো শুভ দা তোমার আজকের পোস্ট পড়ে। এতটাই সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছ যে আমি পড়তে পড়তে পোষ্টের সাথে ব্যাপারটা কল্পনাও করছিলাম। কাছের মানুষের এই ধরনের দুর্ঘটনা আসলে খুব কষ্ট দেয়। আসলে আমাদের রাস্তায় চলাচল করা নিয়ে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। গণ সচেতনতা বৃদ্ধি না হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছো ভাই, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে গণ সচেতনতাই বেশ ভালো উদ্যোগ।

 2 years ago 

আজকের গল্পটা পড়ে আসলে অনেক কষ্ট লাগলো।
আসলে মানুষের মৃত্যুর কথা শুনলে অটোমেটিকলি নিজের মনে একটা কষ্ট এসে ধাক্কা দেয়। আর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হলে যেন কষ্টটা দ্বিগুণ বেড়ে যায় কারণ সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে অনেক প্রাণ অকালে ঝরে যায়। আমার মনে হয় অসচেতনতার কারণেই এই দুর্ঘটনা গুলো সংঘটিত হয়।

 2 years ago 

শিরোনামটা পড়ে ভেবেছিলাম হয়তো কোন ভালোবাসার গল্প লিখছেন। কিন্তু হ্যাঁ এখানে ভালোবাসার ছোঁয়া ঠিকই আছে, তবে তার মাঝে পুরোটাই বেদনাদায়ক। আপনার বাস্তব জীবনের ভালোবাসার নিদর্শন কিছু স্মৃতি কিছু ভালোবাসা যা এখনো মুচতে পারেননি। মানুষের পরিবর্তনটা স্বাভাবিক। মিথিলা আপু ডাক দেওয়ার পর কান্না বিজড়িত চোখে যখন আপনার দিকে তাকিয়ে ছিল হয়তো দুজন দুজনকে চিন্তা একটু কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু আমি ভেবে অবাক হচ্ছি ওই সময় স্থির কিভাবে ছিলেন। জীবনের মূল্যবান একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম ভাইয়া।

 2 years ago 

প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম হয়ত গল্প হবে, কিন্তু সব টুকু পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।এই শহরে আদৌ ঠিক হবে না, সড়ক গাড়ি ড্রাইভার এর জন্য কতশত মানুষ এক্সিডেন্ট হয়ে মরে যাচ্ছে, তার কোন হিসাব নেই।রাস্তায় বের হলে রীতিমত আতংকে থাকা লাগে, সুস্হ ভাবে বাড়ি ফিরতে পারবো তো।😭

 2 years ago 

আসলে বর্তমানের সড়ক ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে বলে বোঝানোর মত নয়। আপনজন হারানোর হাহাকার হয়তো তারা বোঝে না। তাইতো রাস্তাঘাট গুলো এখনো অবহেলায় পড়ে আছে। কয়েকদিন আগে আমিও বড় ধরনের একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আর একটু হলেই হয়তো না ফেরার দেশে চলে যেতে হতো। সেখান থেকে পড়ে গেলে আসলে বাঁচার সম্ভাবনা ছিল না। যাই হোক ভাইয়া মিথিলা আপুর চাচার মৃত্যুর সংবাদ শুনে খারাপ লাগলো। দিনে দিনে রোড এক্সিডেন্ট বেড়েই যাচ্ছে।

 2 years ago 

আপনার ব্যাপারটি জেনে বেশ ব্যথিত হলাম আপু, নিজের প্রতি খেয়াল রাখিয়েন।

 2 years ago 

এত মন খারাপ হয়ে গেলো বিষয়টা পড়ে। বড্ডই দুর্ভাগ্যজনক।সব জায়গাতেই এমন কিছু বেপরোয়া লোকজন গাড়ি নিয়ে ছোটাতে থাকে। কিছু লোকের হাতে গাড়ির স্টেয়ারিং পড়লেই এরা এমন একটা ভাব দেখাতে থাকে যে রাস্তা এদের পৈতৃক সম্পত্তি।কিন্তু এদের এই বেপরোয়া ব্যাবহারের জন্য অনেক পরিবার যে অকালে অনাথ হয়ে যায় এটা এদের কি করে বোঝাবে কেউ?

 2 years ago 

কে ভাবে কার কথা, রাস্তায় চলাচল করলে বোঝা যায়, সবাই ব্যস্ত। সড়ক দুর্ঘটনা ব্যাপারটা আসলেই বেশ কষ্টদায়ক।

 2 years ago 

আপনার বাস্তব জীবনের গল্পটি সত্যিই মর্মান্তিক।খুবই খারাপ লাগলো বিষয়টি পড়ে।মৃত্যু কখনো বলে আসে না তবে মানুষের কর্মকান্ড অনেকটাই দায়ী এক্ষেত্রে।সড়ক ভালো থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটতে নাও পারতো।সচেতনতা বৃদ্ধি করাটা জরুরি, যাই হোক মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করি।

 2 years ago 

সড়ক গুলো কবে যে নিরাপদ হবে এমনটাতো আমিও ভাবি।

 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া কাহিনী শুনে খুবই খারাপ লাগলো। এই রোড এক্সিডেন্ট প্রতিনিয়ত আমাদের প্রিয় মানুষ গুলোকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে আপনার ছোট মায়ের এক্সিডেন্ট এর কথা শুনেছিলাম। তাও প্রায় বছর খানেক আগের কথা। এখন আপনার বান্ধুবী মিথিলার চাচার মৃত্যুর খবর,জা সত্যিই খুব দুঃখজনক।আসলেই কবে যে ঠিক হবে, নিরাপদ হবে এই সড়ক পথ

 2 years ago 

আসলেই মিথিলার চাচার মৃত্যুটা বেশ কষ্ট দিচ্ছে আমাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 64103.87
ETH 2762.96
USDT 1.00
SBD 2.65