স্মৃতিকথা
সেদিন সুমাইয়ার মন ভালো ছিল না । তার অবশ্য যথার্থ কারণ ছিল । এমনিতেই তারা তিন বোন আর তার মধ্যে সে হচ্ছে মেজো। বড় বোনের তো অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বলা যায়, এখন শুধু বাড়িতে সুমাইয়া আর ওর ছোট বোন থাকে।
যেহেতু গ্রামীন এলাকায় তাদের বাড়ি। মূলত তাদের পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে গৃহপালিত প্রাণী মানে গরু-গাভী লালন পালন করা আর কৃষিকাজ তার বাবা যেহেতু যুক্ত আছে এই ভাবেই তাদের আয় রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা হয়। এটা যে শুধু সুমাইয়ার পরিবারের অবস্থা তা কিন্তু না বলা যাবে না। মোটামুটি গ্রামীন অঞ্চলের প্রতিটা পরিবারের জীবন জীবিকার অবস্থা এই কৃষি কাজের উপরেই নির্ভরশীল।
অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে সুমাইয়া। কিছুদিন আগেই তাদের লাল গরুটার ছোট্ট একটা বাছুর হয়েছে। সুমাইয়া এবার তার বাবাকে বলেই দিয়েছে, এই বাছুরটা কিন্তু আমার। ওকে আমি যত্ন করে বড় করবো। যেহেতু তার মেয়ে বলেছে এই কথা,তাই তার বাবা সেক্ষেত্রে আর কোন দ্বিমত পোষণ করেনি।
সুমাইয়া নিজেই ছোট মানুষ আর এতোটুকু মানুষ হয়ে, এই বাছুরটার সে কিভাবে যত্ন করবে। এটা আসলে তাদের অভ্যেসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে বেঁচে যাওয়া খাবার আর নিজেদের ফসলের খড় দিয়েই তার ছোট্ট বাছুরের খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে যাবে আর এভাবেই চলছিল সময়গুলো।
মাস দুয়েক আগের ঘটনা কোন এক গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে, সুমাইয়া যখন স্কুল থেকে ফিরে এসে এবং তার বাছুরটাকে প্রতিদিনের ন্যায় যত্ন করে বাড়ির ভিতরে গিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিল এবং বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠে যখন দেখতে পায়, বাড়ির সকলেই বেশ ব্যস্ত। কারণ তখন কারোই যেন দম ফেলানোর সময় নেই, সবাই ব্যস্ত মূলত ধান মাড়াইয়ের কাজে।
ঘুম থেকে উঠে যখন সুমাইয়া তার বাছুরের কাছে গিয়েছে, গিয়েই দেখে তার বাছুর মাটিতে শুয়ে আছে। যদিও প্রথমে সে দূর থেকে ব্যাপারটাকে দেখে ভীষণ স্বাভাবিক ভেবেছিল, হয়তো ভেবেছে বাছুরটা যেহেতু তার মায়ের কাছেই ছিল হয়তো মায়ের দুধ খেয়ে ক্লান্তি লেগেছে, তাই আরামে সেখানে শুয়ে আছে। হয়তো বাড়ির যদিও দু-একজন লোক এমন দৃশ্য দেখে থাকে, ঠিক তারাও হয়তো ব্যাপারটাকে তেমন ভাবেই দেখেছিল।
সুমাইয়া তার বাছুর কে দূর থেকে ডাকার চেষ্টা করছিল কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই। তাই তড়িঘড়ি করে যখন কাছে গিয়েছে তার বাছুরকে দেখছিল তখন দেখলো তার বাছুর মুখের একপাশে জিব্বা বের করে আছে। আসলে ঘটনা কিছুটা বিপরীত হয়েছিল এই যাত্রায়। বাছুর ঠিকই তার মায়ের দুধ খেতে এসেছিল কিন্তু কোন ভাবে তার মায়ের গলায় বাধা দড়ি এবং তার গলায় বাধা দড়ি একত্রে প্যাঁচ লেগে বাছুরের গলায় ফাঁস লেগে গিয়েছিল, তার তাতেই মৃত্যু ঘটে ছোট্ট বছুরের।
না জানি, বাছুরটা বাঁচার জন্য কতই না ছটফট করেছিল। যদি সে কথা বলতে পারতো তাহলে হয়তো চেঁচিয়ে তার বিপদের কথা বলতে পারতো বাড়ির মানুষদেরকে। তবে এখানে আর তেমনটা হয়নি, মৃত্যুর সঙ্গে একাকী যুদ্ধ করে অবশেষে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে বাছুরটা।
ছোট্ট মেয়ে সুমাইয়ার চোখে অজস্র পানি। তার আদরের বাছুরটার জন্য সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিল। সেদিন যখন এই দৃশ্য আমি নিজেও দেখেছিলাম, তখন যেন সুমাইয়ার মত আমিও কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিলাম।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1672934920166211587?t=AjF8YlkAkNgkXeBEyCDJJA&s=19
সুমাইয়ার প্রিয় বাছুরের দুঃখজনক মৃত্যু হয়েছে জেনে খুব খারাপ লাগলো। কারন একটা প্রিয় জিনিস লালন পালন করে তা যদি এভাবে দুর্ঘটনায় মারা যায় তাহলে সত্যি ভীষণ খারাপ লাগে। সুমাইয়া খুব কষ্ট পেয়েছে তা বুঝতে পারছি। দোয়া রইল আবারো জেনো সুন্দর একটি বাছুর হয়।
সুমাইয়া নতুন একটা বাছুর আবারো পাক, এমনটা প্রত্যাশা আমি নিজেও করি ভাই।
ভাই সুমাইয়ার গরুর বাছুরের গল্পটা পড়ে, আমাদের নিজের একটি গাভীর বাছুর ছিল। গরুর বাছুরটা এত সুন্দর ছিল আর এত তার রূপ ছিল দেখে সবাই এক দৃষ্টিতে Aspects থাকতো। তিন মাসের মধ্যে এসে অস্বাভাবিক বড় হয়ে গেছিল। ঠিক একদিন রাত্রে ভালো গরুর বাছুরকে গোয়ালে তুললাম, সকালবেলায় গোয়ালে গিয়ে দেখি শুয়ে আছে আর দাবড়াচ্ছে। ঠিক সুমাইয়ার গরুর বাছুরের মতোই কিছুই বলতে পারছে না একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে লুটে পড়লো। ঐদিন এতটা কষ্ট পেয়েছিলাম যা বলে বোঝানো যাবে না। আপনার লেখার সাথে আমাদের বাস্তব জীবনে এমনটাই ঘটেছিল।
আপনার ব্যাপারটা শুনে বেশ ব্যথিত হলাম ভাই। আসলেই এই ব্যাপারগুলো খুবই কষ্টদায়ক।
আজকের পোস্টটি পড়ে কিন্তু আমার অনেক খারাপ লেগেছে। ছোট্র মেয়ে সুমাইয়া তার বাবার দেওয়া বাছুর টা এভাবে হারিয়ে ফেললো। যে বাছুর টিকে সুমাইয়া তার বাবার কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছে, তার এমন মৃত্যু দেখে তো সুমাইয়ার এমন হাউমাউ করে কাঁদার ই কথা। বেশ ভালো লাগলো আজকের পোস্টটি।
আসলে ব্যাপারটা অনেকটাই জটিলতা সম্পন্ন ছিল, স্বচক্ষে কাছ থেকে ব্যাপারটা দেখেছিলাম বিধায় নিজের মত করে লিখেছিলাম। ধন্যবাদ আপু আমার অনুভূতিটা বুঝতে পারার জন্য।
গ্রামের দিকে অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ ও পশু পালন করেই জীবনধারণ করে থাকে।
ভাইয়া, এই সেম ঘটনা আমাদের গরু ও বাছুরের সঙ্গে ও ঘটেছিল।দুইজনের গলার দড়ি প্যাচ লেগে আমাদের ছোট্ট বাছুরটি খোটার গায়ে এসে ছটফট করছিল।প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে কাঁদায় আপ্রাণ বাঁচার চেষ্টা করছিল।আমি এই গল্পটি শেয়ার করেছিলাম এখানে।ভাগ্যিস আমার মা জল আনতে গিয়ে দূর হতে দেখেছিল।তারপরও অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু খুশির খবর হলো আমরা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলাম।তবে আমাদের বাছুরের গলায় ফাঁসের দড়ির কালচে দাগ পড়ে গিয়েছিল।অনেক যন্ত্রনা নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিল বৃষ্টির মধ্যে সেই দাগ স্পষ্ট বলে দেয়।আমার আবারো মনে পড়লো আপনার গল্প পড়ে।সুমাইয়ার মতো আমিও খুবই কেঁদেছিলাম তবে খুবই খারাপ লাগছে তার বাছুরটি পৃথিবীতেই নেই।ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন দিদি, তাই আপনার বাছুর বেঁচে গিয়েছে। তবে আসলেই সুমাইয়ার ব্যাপারটা বেশ দুঃখজনক।
আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল আপু 🙏
আসলে আমাদের কৃষি পরিবারের অনেক ক্ষেত্রেই এরকম ভাবে গরুর বাছুর মারা যায়। আরেকটি কৃষি পরিবারে গরু ছোট বাছুর মরে যাওয়া মানে সেই পরিবারের জন্য একটি অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যাওয়া। আসলে সুমাইয়ার গরুর বাছুরটি মারা যাওয়ার কথাটা শুনে আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। আর এরকম একটি ক্ষতির মুহূর্তে সুমাইয়াসহ সুমাইয়ার পরিবারের সকলের মনটাই নিশ্চয়ই অনেক খারাপ ছিল। সুমাইয়া এবং তার পরিবার যেন এই ক্ষতির প্রভাবটা অনবিলম্বে কাটিয়ে উঠতে পারে এমনটাই আমি প্রত্যাশা করি।