শায়ান যখন চেম্বারে || @shy-fox 10% beneficiary
কর্মস্থল নিয়ে তেমন খুব একটা আমি লিখিনা । তবে কর্মস্থল নিয়ে প্রতিনিয়ত বেশ ভালোই অভিজ্ঞতা হয় আমার । মাঝেমধ্যে চেষ্টা করি তবে তেমন লিখতে ইচ্ছে করে না । যাইহোক আজকের ঘটনাটা একটু আলাদা হবে। কারণ এই প্রথমবার আমার সন্তান ও আমার সহধর্মিনী আমার কর্মস্থলে এসেছে । তাই ব্যাপারটা তো একটু স্পেশাল হবে এটা ভীষণ স্বাভাবিক।
হীরা বেশ কিছুদিন থেকেই বলছিল ব্রাশ করার সময় তার হালকা রক্ত আসে দাঁতের গোড়া দিয়ে। যেহেতু দীর্ঘসময় গর্ভাবস্থায় ছিল এবং তারপরে বাবু ডেলিভারী হওয়ার পরে দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অনেকটাই নিবিড় যত্নের মধ্যেই ছিল । তারপরেও তার মুখ ও দাঁতের চিকিৎসাটা সেই সময় ঠিকমতো করা হয়নি আর তাছাড়া গর্ভাবস্থায় দাঁত ও মুখের চিকিৎসা না করাই শ্রেয় ।
কয়েকদিন আগে যখন সে বারবার আমাকে বলছিল, তার মুখ ও দাঁত হালকা ভারি ভারি লাগে এবং দাঁতগুলো হালকা শিরশির করে এবং দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত আসে । তখন আমি তার দাঁত গুলো দেখার চেষ্টা করলাম । দেখি দাঁতের গোড়ায় ভীষণ পরিমাণে প্লাগ জমে গিয়েছে, যাকে আমরা বাংলায় পাথর বলি ।
আসলে আমি মনেকরি প্রতিটি সচেতন মানুষের প্রতি ছয় মাস অন্তর একবার দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত এবং ভালোভাবে দাঁতগুলো পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত । কারণ দাঁত কিন্তু মানুষের অমূল্য সম্পদ । এটা যদিও আমরা দাঁত থাকতে বুঝি না, তবে আগে থেকেই সচেতন হওয়া দরকার।
যাইহোক, আপনার সচেতনতা আপনার কাছে। আমি শুধুমাত্র একজন চিকিৎসক হিসেবে একটা পরামর্শ দিয়ে গেলাম এটাই আরকি ।
হীরার মুখের অবস্থা দেখে আমার নিজের কাছে খুব খারাপ লাগল এবং আমি তাকে বললাম যে, আজকে বিকেলে যখন আমি চেম্বারে যাব, তখন তুমি আমার সঙ্গে চেম্বারে যাবে । অতঃপর বিকেল তিনটে নাগাদ আমি , শায়ান ও শায়ানের আম্মু বেরিয়ে পড়লাম । গন্তব্য তখন আমাদের চেম্বারের উদ্দেশ্যে । রিসিপশনিস্ট কে আগে থেকেই ফোনে বলে রাখলাম স্কেলিং এর মেশিন ও চেম্বারটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখার জন্য । আজকে নতুন অতিথি যাবে আমাদের চেম্বারে ।
সাড়ে তিনটে নাগাদ আমরা চেম্বারে পৌঁছে গেলাম এবং আমার মোটামুটি ভালই লাগছিল । কারণ এই প্রথম শায়ান বাবু ও তার আম্মু আমার চেম্বারে এসেছে । যেহেতু এটা আমার কর্মস্থল, তাই মূলত আশেপাশের লোকজন গুলো যখন শুনেছে আমার বাবু ও আমার সহধর্মিনী এসেছে, তখন তারাও কিছুটা এসে দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিল । যাইহোক হীরা অবশ্য খুব ভালোভাবেই তাদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং চেষ্টা করেছে আন্তরিকতা বজায় রাখার জন্য ।
অতঃপর চেম্বারে প্রবেশ করলাম এবং হীরা কে বললাম তুমি একটু রিসিপশন রুমে বসো । আমি একটু সবকিছু ঠিকঠাক করে নেই এবং যন্ত্রপাতিগুলো সেটিং করে নেই । একটা বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে । সেটা হচ্ছে রিসিপশন রুমের দেয়ালে আমার অনেক বড় একটা ছবি দেওয়া আছে। শায়ান যখন আমার ছবি দেখছিল, তখন বারবার ছবিটা ধরার চেষ্টা করছিলো । ব্যাপারটা বেশ ভাল লেগেছে আমার।
যাইহোক অতঃপর হীরাকে ডেন্টাল ইউনিটে উঠিয়ে, তারপর তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করলাম । আসলে নিজের মানুষ তো, তাই একটু হাত কাঁপছিল প্রথমদিকে । পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গিয়েছে । পাক্কা এক ঘন্টা সময় লেগেছে হীরার পুরো মুখের দাঁত গুলো স্কেলিং করতে । অবশেষে দাঁতগুলো পরিষ্কার করার পর একদম ঝকঝকে মুক্তোর মতো দেখতে লাগছিল ।
আমি হীরা কে বললাম, এখন কেমন বোধ করছো । সে বলছে, আগের থেকে অনেকটাই মুখ পাতলা লাগছে এবং আগের থেকে বেশ সতেজ অনুভব করছি । আমি তাকে বললাম ঠিক আছে, তোমার সমস্যা এখন অনেকটাই সমাধান হয়ে গিয়েছে এবং বাকি সমাধানটুকু হবে কিছু ঔষুধ খাওয়া ও কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই ।
যদিও হীরা এই প্রথম আমার চেম্বারে এসেছিল, তারপরেও সে আমাকে ভিজিট দেয়নি বরং আমার কাছ থেকে উল্টো আরো পয়সা নিয়েছে এবং পাশের দোকান থেকে যাওয়ার সময় খাবার কিনে নিয়ে গিয়েছে । যাইহোক সর্বোপরি আমার কাছে বেশ ভালো মুহূর্ত ছিল ঐ সময়টায় । কারণ আমি নিজে কৃতজ্ঞ যে , আমার সন্তান ও আমার সহধর্মিণী আমার কর্মস্থলে এসেছে এটা ভেবে ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাইয়া।ছয় মাস পর পর আমাদের দাঁতের স্পেশালিস্ট কে দেখানো উচিত।কিন্তু আমরা এতটাই অসচেতন যে 6 মাস কেন 6 বছরেও যদি দাঁতের কোন সমস্যা না পাই তাহলে আমরা ডক্টরের কাছে যায় না।
তবে হীরা ভাবির এত চমৎকার চিকিৎসা দেয়ার পরও ভাবী আপনাকে ভিজিট দিলো না এটা সত্যি অনেক দুঃখের বিষয়।একদিকে সময়, শ্রম অন্য দিক থেকে পাশের দোকান থেকে খাবার কিনে নিয়ে সেখানের একটি বিল।যাই হোক এটাই ভালোবাসা ভালোবাসে বৃষ্টি থাকুক সারা জীবন।সপরিবারে সুখে-শান্তিতে বসবাস করুন এটাই প্রত্যাশা।♥♥
ভাইয়া আপনি ঠিক কথাই বলেছেন দাঁত আমাদের অমূল্য সম্পদ। আসলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম আমরা বাঙালিরা বুঝিনা। আমি মনে করি আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু দিন অন্তর অন্তর একজন ভালো দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। ছোট ছোট সমস্যাগুলো সময়ের সাথে সাথে যদি আমরা সমাধান করে না নিতে পারি তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবো। যাইহোক ভাবী তার দাঁতের চিকিৎসা করিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো। সেইসাথে শায়নকে দেখে অনেক ভালো লাগলো। সে প্রথমবার তার বাবার অফিসে গিয়েছে। ভাইয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আপনার পোস্টের মাঝে তুলে ধরেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
একদম সঠিক কথা বলেছেন ভাই । ধন্যবাদ আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
ওয়াও! নিজের কেবিনে নিজের মানুষের চিকিৎসা এটা তো অসাধারণ এক অনুভূতি। আর শায়ান বাবুকে ডাক্তার রূপে দেখতে অনেক ভালো লাগলো। তবে ভাবী ভিজিট না দিয়ে কাজটা একদমই ঠিক করে নাই। হাহাহাহা 😁
হাহাহা কিচ্ছু করার ছিল না ।
ভাই আসলে নিজের কর্মস্থলে যখন নিজের আপন জন কিংবা প্রিয় জন এর পদার্পণ ঘটে তখন ঠিক কেমন অনুভূতি হয় তা বলে বোঝানোর মত না! খুব শীঘ্রই ভাবির সুস্থতা কামনা করছি। আর আমাদের ছোট্ট সায়ান সোনামণি যে আপনার রিসিপশনে ঝুলানো ছবিটি বারবার হাত দিয়ে ধরে ছিল তা কিন্তু আমি লক্ষ করেছি। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার এবং আপনার পরিজন দের জন্য।
ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
এটা ভারী মজার কথা ছিল ভাইয়া।সত্যিই দাঁতের গুরুত্ব অপরিসীম যা না থাকলে তার মর্ম হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করা যায়।দাঁত সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি।ধন্যবাদ ভাইয়া।
হুম । সবাইকেই সচেতন থাকা দরকার এই বিষয়ে ।
সায়ান বাবু আজকে মায়ের কোলে চড়ে বাবার চেম্বারে গেল। কয়দিন পর একাই যেতে অভ্যস্ত হোক। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আমিন।
এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। আপন মানুষের চিকিৎসা করা এবং আপন মানুষের কাছ থেকে চিকিৎসা পাওয়া। একটু আলাদা অনুভূতির ব্যাপার। এই ভাল লাগা বোঝানোর মত নয়। আর সত্যি বলতে আমরা দাতের ব্যাপারে সচেতন নই। সকলের উচিত সচেতন হওয়া। সময় টি ভালই পার করেছেন। ভাল লাগলো আজকের লেখাটি। ধন্যবাদ ভাই। শুভেচ্ছা রইল।
ভাই আপনার ছেলেকে কি এখন থেকে ট্রেইনিং দিচ্ছেন নাকি? ছেলেকে ডাক্তার বানান দোয়া রইলো মামা বড় ডাক্তার হবে। কর্মস্থল এবং আপনার কিছু জ্ঞানমূলক কথা দিয়ে নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেনিলাম ভাই। অনেক সুন্দর লিখেছেন ভালোই লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে।❤️ভাই ভালোবাসা নিবেন।
ছেলে প্রকৃত মানুষ হোক এই আশীর্বাদ করিও । ধন্যবাদ তোমার মন্তব্যের জন্য।
শায়ান বাবু তার বাবার চেম্বারে গিয়ে স্টেথোস্কোপ দিয়ে জুনিয়র ডাক্তার হয়ে গেলো।হা হা কিউট লাগছে।আসলেই দাঁত একটি মানুষের জীবনে মূল্যবান সম্পদ,যদিও আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি ন। সচেতনামূলক কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।তবে ভাইয়া, আপুর কাছ থেকে কিন্তুু ভিজিট নিয়ে,আমাদের মিষ্টি খাওয়াতে পারতেন হা হা 😜😜।ভালো ছিলো।শুভ কামনা রইল।
ওকে বলে দিছি এই সপ্তাহে মুরগীর মাংস রান্না করে খাওয়াতে হবে । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ভাইয়া আমি প্রথমে একটি কথাই বলতে চাই ছোট্ট মিষ্টি কিউট শায়ানকে দেখে খুবই সুন্দর লাগছে। সে তার বাবার সাথে বাবার চেম্বারে গিয়ে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়েছে। আর আমরা সকলেই জানি শায়ান বাবু ঘুরতে ভালোবাসে। সে বাহিরে ঘুরতে গেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। আসলে শায়ান বাবুকে দেখে বোঝা যায় সে একজন হাসি খুশি ও মিশুক মানুষ হবে। আমি যখন আপনার পূর্বের শেয়ার করা ভিডিওগুলো দেখেছি তখনই বুঝেছি শায়ান খুব সহজেই মানুষের সাথে মিশতে পারে। তবে যাইহোক ভাইয়া হিরা মনি আপু তার দাঁতের চিকিৎসা করিয়েছে এবং সেটা আবার তারই প্রিয় মানুষটির কাছে এটা জেনে ভালো লাগলো। প্রিয় মানুষটি যখন দক্ষ ডক্টর তখন চিন্তার কোন কারণ নেই। আশা করছি খুব শীঘ্রই আপু সুস্থ হয়ে উঠবেন। ভাইয়া আপনি যে কথাটি বলেছেন আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তিকেই মাঝে মাঝে নিজের দাঁত পরীক্ষা করানো উচিত। আমার মনে হয় আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে নিজেদের দন্ত সমস্যায় ভুগছি। কিন্তু আমরা ডাক্তারের কাছে যেতে চাই না। আসলে কোন সমস্যা যখন শুরু হয় তখন যদি ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে খুব দ্রুতই ভালো হয়ে যায়। ভাইয়া আপনি একজন দন্ত চিকিৎসক হিসেবে অনেক সুন্দর ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এবং আমাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে।
চেষ্টা করেছি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আপু । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।