প্রয়োজনের বন্ধুত্ব || @shy-fox 10% beneficiary
ইব্রাহিম মিয়ার সঙ্গে খালেক মিয়ার সম্পর্কটা একটু ভিন্নভাবে হয়েছে । প্রায় পনের বছর আগে থেকেই তাদের মধ্যে অনেকটাই বন্ধুত্ব সম্পর্ক আর এই বন্ধুত্বের পিছনে কিছু কারণ ছিল । ইব্রাহিম মিয়ার সংসারের অবস্থা অনেকটাই নাজুক । বলতে গেলে দিন আনে দিন খায় অবস্থা আর খালেক মিয়ার তো মোটামুটি দিনকাল ভালোই চলে যায় ।
যেহেতু দুজনেই গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ । তবে দুই জনের জীবন-জীবিকা একটু আলাদা । খালেক মিয়ার মাঠে কিছুটা জমি-জমা আছে । খালেক সেগুলো নিজেই চাষাবাদ করে । মোটামুটি বছরের দুই সিজনে বিশেষ করে জুন আর ডিসেম্বর মাসে ফসল কাটার সময়, খালেক মিয়ার ইব্রাহিম মিয়াকে খুব দরকার পড়ে । যদিও এটা প্রয়োজনের বন্ধুত্ব, তবে মাঝে মাঝে প্রয়োজনের বন্ধুত্ব গুলো অনেক সময় টিকে যায় যুগের পর যুগ ।
এবারের সময়টা বেশ ভালই যাচ্ছিল,খালেক মিয়ার । ধান পেঁকে গিয়েছে মাঠে, শুধুমাত্র কাঁটার অপেক্ষা । তার মাঝেই ঝড় বৃষ্টিতে মাঠের ধান গুলো একদম জমির সঙ্গে লেগে গিয়েছে । অনেক জমিতে তো একদম পানি জমে , জমির ফসল ডুবে গিয়েছে । কয়েকদিন ধরে বেশ চিন্তায় আছে খালেক মিয়া । কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না । এই পাঁকা ফসল গুলো যদি এভাবে নষ্ট হয়ে যায় , তাহলে তো বিপদ ।
ইব্রাহিম মিয়ার এলাকায় ধান কাঁটা-মাড়ির তেমন কোন তোরজোড় নেই । অনেকটা ফাঁকা সময় পার করছে সে । তবে হঠাৎ করে গতরাতে মুঠোফোনের মারফতে খালেক নিয়ার এই দুঃসংবাদ পেয়েছে । তারপর থেকেই তার মন অনেকটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে । কারণ বন্ধুর বিপদ যাচ্ছে, এই সময় তার পাশে থাকাটা তার নিতান্তই কর্তব্যের ভিতরে পড়ে । তবে খালেক মিয়ার মাঠে যতগুলো জমি আছে, সেগুলোর ফসল কাটতে কমপক্ষে দশ থেকে বার জন লোকের দরকার হবে । অতঃপর ইব্রাহিম মিয়া তার গ্রামের কিছু লোকজনকে বলল, চলো বাহে বেড়িয়ে আসি কয়েক দিনের জন্য। হয়তো ঘোরাঘুরি হবে আর সঙ্গে বাড়তি কিছু পয়সা কামানোও যাবে ।
অতঃপর সোনাইডাঙ্গা থেকে খুব ভোরবেলা বড় নৌকায় করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা । এই এলাকায় তেমন খুব একটা বেশি ধান চাষ হয় না । এমনিতেই নদী এলাকা তার ভিতরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই আছে । যার কারণে এই এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা অনেকটাই আলাদা অন্যান্য এলাকার থেকে । হয়তো এই কারণেই খালেক মিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে ইব্রাহিম মিয়ার ।
বছরের এই সময়টাতে ইব্রাহিম মিয়ার এলাকাতে বেশ ভালই বন্যা হয় । তার কারণে জীবিকার তাগিদে লালমাটি এলাকাতে তারা অনেকটা জীবিকার সন্ধানে চলে আসে । এই লালমাটি এলাকাতে বেশ ভালোই ধান চাষাবাদ হয় আর এই ধানগুলো মাড়াই করার জন্যই মূলত অতিরিক্ত মানুষের দরকার হয় । যার কারণে নদী অঞ্চলের লোকজন এই এলাকাতে ভিড় করে ।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই ইব্রাহিম মিয়া পৌঁছে গিয়েছি খালেক মিয়ার বাড়ির উঠোনে । উঠোনে পৌঁছেই একটা জোরে ডাক ছাড়লো , কিরে খালেক তোর চিন্তামুক্ত করে এসেছি, কই তুই । পুরোনো বন্ধু দীর্ঘদিন পরে বাড়িতে এসেছে হয়তো তাকে সহযোগিতা করার জন্য । ধান গুলো কেটে দেবে, সেগুলো বাড়িতে নিয়ে এসে দেবে জমি থেকে । বিনিময়ে তিনবেলা পেট ভরে খাওয়া আর ফিরে যাওয়ার সময় হাতে কাঁচা পয়সা ।
আমরা যতই অস্বীকার করি , মানুষ মানুষের পাশে থাকে না । তবে এটাও দিনশেষে সত্যকথা , প্রয়োজনের তাগিদেই হোক বা কর্মের কারণেই হোক, এই মানুষই কিন্তু আপনার পাশে থাকবে এটাই সত্য কথা । খালেক মিয়ার ইব্রাহিম মিয়াকে দরকার, ধান কাটার জন্য আর ইব্রাহিম মিয়ার দরকার পয়সা । অনেকটাই সহজ সমাধান, বুঝলে ভালো আর না বুঝলে কিচ্ছু করার নেই । জীবন এভাবেই চলছে ।
পড়ন্ত বেলায় আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ইব্রাহিম মিয়ার দলের লোকজনের সঙ্গে একটু কুশল বিনিময় করার । বেশ ভালই লাগল, তাদের কথাবার্তা ও কর্মব্যস্ততা শুনে । তারা আবারও ফিরে যাবে হয়তো কয়েকটা দিন পরে, ধান কাটা-মাড়ি শেষ হলেই ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
অসাধারণ সত্তিকারের একটি গল্প লিখেছেন ভাই। আপনার এই আজকের গল্প থেকে আমাদের ও অনেক কিছু শিখার আছে। আর সত্যি কথা বলতে সেই মানুষগুলোই মানুষকে সাহায্য করে বিপদে এগিয়ে যায় যাদের ভেতরে এখন এখন পর্যন্ত এই যুগের নোংরা বাতাস লাগে নি। ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনার আপনার সুন্দর ও সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
সাধারণ মানুষের মাঝে মিশলে অসাধারণ কিছু শেখা দারুণ কিছু জানা যায়। বতর্মান সময়ে বিনাস্বার্থে কেউ সাহায্য করে না এটা যেমন সত্য। ঠিক একই ভাবে ইব্রাহিম মিয়ার মতো মানুষেরও বড্ড অভাব। যারা একটা ফোন পাওয়া মাএই ছুটে আসবে। এটা সাধারণ মানুষের সাধারণ বুঝ।।
এটা সত্য কথা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশলে আসলেই অনেক কিছুই শেখা যায় । বিশেষ করে তাদের সহজ সরল আচরণ ভালোই লাগে ।
খালেক মিয়াও ইব্রাহিম মিয়ার বন্ধুত্বের বয়স ১৫ বছর আসলে এরকম প্রয়োজনের তাগিদে বন্ধুত্ব সম্পর্কটা বেশিদিন টিকে না, কিন্তু তাদের সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে টিকে গেছে। আসলেই খালেক মিয়া এবং ইব্রাহিম মিয়ার এই বন্ধুত্ব সম্পর্ক আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে, বিপদে এক বন্ধু আরেক বন্ধুর বিপদ থেকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা করছে। হয়তো তার বিনিময়ে সে কিছু অর্থ পাবে,কিন্তু বিপদটা অনেক বড় ছিল। সে যদি তার বিপদে এগিয়ে না আসত তাহলে তার ধানের ফসলের জমিতে আরো অনেক বড় ক্ষতি হতো। আসলেই বন্ধুত্ব সম্পর্ক এরকম বিপদে বন্ধুর পাশে থাকা। সত্যি আমার খুবই ভালো লেগেছে এই বন্ধুত্ব টিকে থাক যুগ যুগ ধরে। শুভকামনা রইল তাদের জন্য।
ভাই এই গুলো হচ্ছে প্রয়োজনের বন্ধুত্ব, তবে এমন বন্ধুত্ব হলে ক্ষতি নেই । জীবন যেখানে যেমন।
ভাইয়া আপনি খুব সুন্দর ভাবে খালেক মিয়াও ইব্রাহিম মিয়ার মাঝের সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। যারা মাঠে ফসল ফলাই তারা যে পরিমাণ পরিশ্রম করে এই সোনার ফসল ঘরে তোলার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকে কিন্তু একটা মুহূর্তে এসে যখন সবকিছু নষ্ট হয় বা আশানুরূপ ফল পায় না তখন তাদের অনেক কষ্ট হয়, খারাপ লাগে। অবশ্যই সেই ব্যথায় আমরা সবাই ব্যতীত। তিনি যখন তার খারাপ অবস্থা ইব্রাহিম মিয়াকে বললেন ইব্রাহিম মিয়াও কষ্ট পেয়েছে কারণ তাঁর সাথে তাঁর একটি ভালো সম্পর্ক ছিল হয়তো ।তার জমিতে তিনি ফসল কাটতেন। যাইহোক ইব্রাহিমের দলের সাথে আপনি কিছু সময় কাটিয়েছেন পড়ন্ত বিকালে দেখে ভালো লাগছে। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
বেশ ভালোই লাগছিল যখন ইব্রাহিম মিয়ার দলের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম ঠিক তখন।
খালেক মিয়া ও ইব্রাহিম মিয়ার বন্ধুত্ব হয়তো অনেকটাই প্রয়োজনের তাগিদে। তবে কি আর করার বিপদের সময় বন্ধু বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছে এটাই বা কম কিসের। আমরা সকলেই বিশ্বাস করি এবং স্বীকার করি বিপদে মানুষ মানুষের পাশে থাকে। আর মানুষ মানুষের পাশে থাকে বলেই আমরা আজও নিজের বিপদ গুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারি। ভাইয়া আপনার শেয়ার করা লেখাগুলো পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ এবং সেইসাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️
বিপদে বন্ধুত্বের পরিচয় এটাইতো একদম খাঁটি সত্য। আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই ।
একেবারেই নির্ভেজাল সত্য কথা বলেছেন ভাই। এটার নাম হচ্ছে প্রয়োজনের বন্ধুত্ব। বেশিরভাগ সম্পর্কই এভাবে দেনা-পাওনার ভিত্তিতে টিকে আছে। আমি এটাতে তেমন দোষের কিছু দেখি না। কিছু কিছু বিষয়ে আপনার লেখার দক্ষতা সত্যি মনমুগ্ধকর এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
সম্পর্ক টিকে থাকাটাই যেখানে মূখ্য, সেখানে এই হলে কোন সমস্যাই নেই । বেশ ভালই লাগল আপনার মন্তব্যটা ভাই ।
ভাইয়া,এই কথাটি একদম আপনি ঠিক লিখেছেন প্রয়োজনের তাগিদে বন্ধুত্ব হলেও কিছু বন্ধুত্ব যুগ যুগ ধরে টিকে থাকে।যেমনটা খালেক মিয়া এবং ইব্রাহিম মিয়া বন্ধুত্বের সম্পর্কটা।বন্ধুর দুঃসময়ের কথা শুনে বসে থাকতে পারেনি।হয়তো কিছু পয়সার বিনিময়ে এই বিপদে বন্ধুর দুরবস্থার কথা শুনে যে ছুটে এসেছে এটাই অনেক বড় পাওয়া। জীবিকার তাগিদ হোক বা অর্থের তাগিত হোক তারপরও ভাইয়া মানুষ মানুষের জন্য এটাই সত্যিকথা।ভাইয়া,খুব ভালো লাগে আপনার লেখাগুলো পড়লে,আপনি বাস্তব জীবনের থেকে আপনার লেখা গুলোর মধ্যে সমাজের বাস্তবতা বাস্তব চিত্র গুলো ফুটিয়ে তোলেন।খুব ভালো লেগেছে লেখাটি পড়ে। ধন্যবাদ ভাইয়া।।
একদম ঠিক বলেছেন আপু তাও দিন শেষে বন্ধুত্ব টিকে আছে এটাই তো অনেক বেশি ।
আসলে ভাই এখনকার সম্পর্কগুলো এরকমই হয়ে গিয়েছে। সব সম্পর্কই প্রায় দেনা-পাওনার উপরেই টিকে রয়েছে। আসলে সময়টাই এমন, টিকে থাকার জন্য আমাদের এমনটা করতেই হবে। আপনার লেখাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া, অনেক কিছুই শিখতে পারলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।
সম্পর্ক আসলেই একই রকম থাকে শুধুমাত্র প্রয়োজনের জন্য কিছুটা পরিবর্তন হয় ।
পৃথিবীতে সব সম্পর্কেই স্বার্থের জন্য হয়, এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি। প্রত্যেকটি বিষয় আপনি এত নিখুত ভাবে তুলে ধরতে পারেন সেখান থেকেই সব সময় শেখার চেষ্টা করি। তারপরও বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝে মাঝে বিশ্বাস করা উচিত এবং মাঝে মাঝে সন্দেহ করাটা উচিত বলে আমি মনে করি।
দেখো শেখো এবং জীবনটাকে উপভোগ করো ভাই । জীবন এমনি , শুধুমাত্র থেমে থেমে রং বদলায় ।
আজকের গল্পটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে এমন বন্ধুত্ব শ্রমজীবি মানুষের মাঝেই বেশি দেখা যায়। তারা সহজ সরল মানুষ তাদের মনে কোনো প্যাচ নাই। তবে প্রয়োজনের বন্ধুত্ব হলেও মানুষের সাথে মানুষের বোঝা পড়া ভালো থাকলেই এমন বন্ধুত্ব গুলো টিকে থাকে। ইব্রাহিম মিয়া ও খালেক মিয়ার বন্ধুত্ব এবাবেই টিকে থাকুক যুগের পর যুগ এই দোয়া করি।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই , বন্ধুত্ব সম্পর্ক তো সব বয়সের মানুষের কাছে অনেকটাই আলাদা । যে যেভাবে দেখে ।