হাসিমুখ || @shy-fox 10% beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

Screenshot_20220804-162741_Messenger.jpg

আজকাল বাসা থেকে বের হই না । খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া, ছাদের দিকেও যাওয়া হয় না। এই বন্দী জীবনটা আমার অনেকটাই সঙ্গী হয়ে গিয়েছে । ভালোই লাগে, এখানে কেউ বাঁধা দেয় না । নিজের মতো করে থাকি , নিজের মতো করে বাঁচি । তারপরেও দিনশেষে যখন খুবই অতীব প্রয়োজনে বাহিরে যেতে হয়, তখন যখন মানুষগুলোকে দেখি তখন মনেহয় যেন এক ভিন্ন গ্রহের মধ্যে চলে এসেছি ।

সেকি চেঁচামেচি সেকি ছোঁটাছুঁটি , সবকিছুই জীবিকার জন্য । আজকাল মানুষের নাম বেশি মনে রাখতে পারি না । কত পরিচিত মুখ চোখের সামনে ঘুরঘুর করে, তবে তাদের চিনেও যেন চিনে উঠতে পারি না । হয়তো মুখে চিনি তো নামে মনে করতে পারি না নয়তো নামে মনে করতে পারি, তবে অনেক সময় চেহারা মনে থাকে না ।

যদিও ভেবেছিলাম শুক্রবারের আগে বাসা থেকে বের হব না । হয়তো গেলেও ছাদে টুকটাক যেতে পারি একটু হাওয়া বাতাস খাওয়ার জন্য তারপর আবার ঘরে ঢুকে নিজের কর্ম ব্যস্ত হয়ে যাব । তবে যেমনটা ভাবি তেমনটা তো সবসময়ই হয়ে ওঠেনা। দুপুরের পরেই শুনলাম হাকিম ভাই নাকি বেশ ভালোই অসুস্থতায় ভুগছে । মাঝে মাঝে একটা জিনিস ভেবে অবাক লাগে , এই ভদ্রলোক নিচ তলাতেই থাকে যদিও আমার সম্পর্কে মোটামুটি কিছু ধারণা তার আছে তারপরেও তার শারীরিক সমস্যা, আমাকে কেন জানি বলেনি । যাইহোক তার ব্যাপারটা শুনে বেশ ব্যথিত হয়েছি ।

মজনু চাচার চা বহুদিন পরে খেতে ইচ্ছা করছে । এ চায়ের মাঝে আলাদা একটা প্রশান্তি খুঁজে পাই । যেটা এর আগেও একবার আমি বলেছিলাম । সারাদিন যখন কর্মের ভেতরে ডুবে থেকে খুবই মস্তিষ্কের উপর চাপ পড়ে গিয়েছিল । তখন মনে হল যে এই সময় এক কাপ মজনু চাচার কড়া লিকারের দুধ চা হলে মন্দ হতো না । অতঃপর বেড়িয়ে পড়লাম মজনু চাচার দোকানের উদ্দেশ্যে । ঝটপট জলদি চা দিয়ে দাও চাচা , একটু চায়ে চুমুক দিয়ে ভিতরটা জুড়িয়ে নিতে চাই ।

গাড়িগুলো যেন ক্রমাগত ছুটছে । এই রাস্তার পাশের সস্তা চায়ের দোকানটাতে যখন দাঁড়িয়ে থেকে চা খাচ্ছি তখন চলন্ত গাড়িগুলো দেখছি, যে যার গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছে । কার গন্তব্য কোথায় , তা বলা মুশকিল । কত মানুষ জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আর দেখার চেষ্টা করছে , কেউ কাউকে চেনে নাকি । এখানে কেউ কাউকে চেনে না , তবে আবার সবাই সবাইকে প্রয়োজনে চেনে । আমি অনেকটা গন্তব্যহীন মানুষ । হয়তো এই চায়ের দোকানেই আমার গন্তব্য ছিল । তাই চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর দেখছি পারিপার্শ্বিক অবস্থা । ভালোই লাগছে, সঙ্গে গরম দুধ চা ,ঠান্ডা বাতাস আর ছুটে চলা গাড়ির শো শো শব্দ । আলাদা একটা উন্মাদনা কাজ করছে ।

আমি গল্প লিখে কাউকে কাঁদাই, কাউকে হাসাই, কাউকে ভাবিয়ে তুলি আবার কাউকে চিন্তায় ফেলে দেই। আমি মানুষটা সত্যিই অদ্ভুত , নিজেও জানিনা কি করছি বা কি করব । অনেকে তো কানাঘুষা করে ঐ পাঁচ তলায় এক পাগল থাকে । লেখালেখির জন্য ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছে । আমার তাতে কোন যায় আসে না । এ কান দিয়ে শুনি ঐ কান দিয়ে বের করে দেই । আবার মাঝে মাঝে কিছু কথা মস্তিষ্কে রেখে দেই হয়তো প্রতিউত্তর দেবো কর্মের মাধ্যমে তার অপেক্ষায় ।

গরম গরম দুটো পরোটা দে তো মাহবুব , সঙ্গে যদি খাসির মাংসের হালিম থাকে তাহলে মন্দ হয় না । ভাই তেল ছাড়া পরোটা হবে চলবে, আরে নিয়ে আয় । কই ভেবেছিলাম চা খেয়ে বাড়ির পথে ফিরবো, তা আর হলো না । মনে হলো তোর কথা, তাই চলে আসলাম।

মাহবুব আমার পরিচিত, বেশ অনেক আগে থেকেই ছেলেটাকে চিনি । যত দেখি ততই ভালো লাগে । হুট করে যখন হোটেলে যাই, ওর হাত গুলোর দিকে যখন তাকাই, বুকের ভিতর একটা ধাক্কা লাগে । অল্প বয়সেই হাতগুলো একদম সাদা করে ফেলেছে । সারাদিন পানির কাজ, গ্লাস ধরে এদিক ওদিক নিয়ে যায়, যার কারণে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকগুলোতে সাদা সাদা হয়ে গেছে । নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয় ওর কাজ দেখলে । সামান্য কিছু টাকা বেতনের জন্য, দিনরাত পরিশ্রম করে । কখনো কাস্টমারের ঝাড়ি আবার কখনো মালিকের কড়া শাসন । তুই তোকারি সবসময় তো লেগেই আছে । যদিও এসব মাহবুবের কাছে অনেকটাই দুধভাত ।

কেমন আছিস মাহবুব , হালিম খাবি । ভাই আপনি আমাকে এতো ভালবাসেন কেন । আরেকটা হালিম নিয়ে আয় সঙ্গে দুটো পরোটা । সেই যখন ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়তাম , তখন থেকেই মাহবুবকে চিনি । এই হোটেলের সঙ্গে ওর একটা বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে । এই চাকরি আসলে ওর নেশা । রোজ রোজ কাস্টমারকে আপ্যায়ন করা ওর আসলে পেশা ।

ভাই আপনার সঙ্গে একই টেবিলে বসে খেতে দেখলে মালিক ঝাড়বে । ডিউটি সময় চলছে আমার, মালিক দেখলে ঝামেলা করবে । তোর মালিককে আমি সামলে নেব , তুই খা আমার সঙ্গে । অতঃপর দুই ভাই, দুই বাটি হালিম আর পরোটা, খেয়ে বেশ তৃপ্তি পেলাম । টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে, ক্যাশ বাক্সের সামনে আসলাম । বেশ চড়া কথা কথা শুনতে হলো মাহবুব কে । এবার আমি একটু বেঁকে বসেছি । এই যে মশাই , পঞ্চাশ টাকা অতিরিক্ত নিয়েন তাও বেচারাকে আর তুই তোকারি করিয়েন না । ওর এই সময়টা আমি কিনে নিয়েছি ।

ভাই দেড়শ টাকা দিলেন যে, পঞ্চাশ টাকা তোর মালিকের , নব্বই টাকা খাবারের বিল আর দশ টাকা তোর, রেখে দিস । মনে হইলে আবারও একবার পান খেয়ে নিস । তুই পান খেলে, ঐ রঙিন মুখ দেখলে ভালোই লাগে । ফিক করে হাসবি আর নিজের কর্মে ব্যস্ত থাকবি । আজ তাহলে চলি রে ।

Banner-2.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

তুই পান খেলে, ঐ রঙিন মুখ দেখলে ভালোই লাগে । ফিক করে হাসবি আর নিজের কর্মে ব্যস্ত থাকবি ।

ভাইয়া আপনার মানবতা বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে। আপনি সবাইকে আপন করে নেন যা দেখে খুবই ভালো লাগে। প্রত্যেকটি মানুষ যদি আপনার মত করে ভাবতো তাহলে মাহবুবের মত মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটানো সম্ভব হতো। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাইয়া।

 2 years ago 

আসলে আমি নিজেই চেষ্টা করছি মানুষ হওয়ার। পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে তো মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার পোস্টের লেখাগুলো পড়ে আমার সত্যিই অনেক অনেক ভালো লেগেছে। আরো বেশী ভালো লেগেছে আপনার আন্তরিক মানবতা বোধ দেখে। সত্যি ভাইয়া আপনি খুব সহজে মানুষকে আপন করে নেন। আপনার মুখের মিষ্টি মিষ্টি কথা এবং জাদু মাখা আচরণে সবাই মুগ্ধ হয়। অনেকদিন পরে আপনার এত সুন্দর একটি পোস্ট পড়তে পেরে সত্যি নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।

 2 years ago 

আপনার এ কাজগুলো আমার কাছে সব সময় অনেক ভালো লাগে ভাই. আপনার অনেক পোস্টই দেখি এরকম কাজ আপনি করে থাকেন। আসলে সবাই কিন্তু এরকম অন্য কোনো গরিব মানুষকে তার সাথে বসে খাওয়াতে পারে না। তাদের অহংকার এর জন্য বা হিংসার জন্য। কিন্তু আপনি এটা খুব সহজেই করে ফেলেন। আসলে আপনার মনটা যে অনেক বড় সেটা কিন্তু আপনার পোষ্টগুলো পরেই বোঝা যায়। ভালো লাগলো ভাই আপনার পোস্টটি পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য যাতে আমরাও এরকম ভাবে অন্য মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।

 2 years ago 

মানুষ হওয়ার চেষ্টায় আছি ভাই । মানুষ হতে পারলেই হলো ।

 2 years ago 

অনেকে তো কানাঘুষা করে ঐ পাঁচ তলায় এক পাগল থাকে । লেখালেখির জন্য ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছে ।

আপনার এই কাজটিতে আমিও একটু অবাক হয়েছিলাম। একেবারে পুরোপুরি ছেড়ে দিলেন ডাক্তারি? সপ্তাহে দুই একদিন হলেও চর্চায় রাখা মনে হয় ভালো হতো।
আমার তো একটানা কয়েকদিন ঘরে থাকলে দম বন্ধ বন্ধ লাগে। বাইরে না যাওয়া পর্যন্ত ভালই লাগে না। বাইরে ঘুরে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন মনে হচ্ছে। বেচারা মাহবুবের জন্য খারাপ লাগলো। হালিম পরোটা খেতে গিয়ে মালিকের ঝাড়ি খেলো। শেষে নিশ্চয়ই আপনার টিপস পেয়ে খুশি হয়েছে।

 2 years ago 

বাবুকে সময় দেওয়ার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আপু । কিছুই করার নেই।

 2 years ago 

আমরা আমাদের কর্মজীবনে যে যার মত ব্যস্ত থাকি। হয়তো অনেক সময় আমাদের চারপাশের মানুষগুলোর খোঁজ নেওয়ার সময় আমাদের থাকে না। তাদের সুখ দুঃখের গল্প গুলো শোনার মত সময় থাকে না। ভাইয়া আপনি নিজের কাজের মাঝেও আপনার চারপাশের মানুষগুলোকে সময় দেন এবং তাদের সাথে সময় কাটান দেখেই অনেক ভালো লাগে। বিশেষ করে আপনি মাহবুব ভাইয়ের মত একজন মানুষকে আপন করে নিয়েছেন এবং ভালোবাসা দিয়েছেন এটাই অনেক বড় পাওয়া। সত্যি ভাইয়া আপনার লেখাগুলো যতই করি ততই মুগ্ধতা বেড়ে যায়। আপনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালোবাসা আরো বেশি বেড়ে যায়। ভাইয়া আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।❤️❤️❤️

 2 years ago 

মাহবুব কে চিনি অনেক আগে থেকেই তবে কিছুই করতে পারি নি ওর জন্য । তবে আমি মানুষ হওয়ার চেষ্টায় আছি ।

 2 years ago 

বাসায় বন্দী থাকতে পারিনা, দম বন্ধ হয়ে আসে। আপনি কিভাবে থাকেন সেটা ভেবেই অবাক হই।
মানুষের প্রতি আপনার ভালোবাসা আমাকে বরাবরই আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। সবাই আপনার মত চিন্তা করলে হয়তো পৃথিবীটাই বদলে যেতো।
মানুষ পেছনে অনেক কিছুই বলবে। কিন্তু মানুষের কথা ভেবে চলতে গেলে নিজের ইচ্ছে গুলো অপূর্ণই থেকে যাবে। নিজের জীবন নিজের মনের মতো করেই কাটিয়ে দেয়া উত্তম। এতে আর কিছু থাক না থাক মানসিক শান্তি থাকবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 57859.61
ETH 2966.06
USDT 1.00
SBD 3.67