কানের দুল

in আমার বাংলা ব্লগlast year

jewel-g3526a42d4_1280.jpg
source

কিছুদিন থেকেই সময়টা আমার বেশ ভালই কঠিন যাচ্ছে। বলতে গেলে, সময়টা হয়তো পক্ষে যাচ্ছে না। তারপরেও সবকিছু মানিয়ে নিয়ে, নিজের গতিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। হয়তো জীবন এমনই।

আমার এখনো খুব ভালোভাবে মনে আছে, আমার গিন্নি যখন প্রথম পড়াশোনাকে ইস্তফা দিয়ে ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিল, তারপরে ওর ইনকামের প্রথম টাকা দিয়ে এক জোড়া রুপোর নুপুর আর সোনার কানের দুল বানিয়েছিল। আসলে ও সেই সময় পড়াশোনা কেন ইস্তফা দিয়েছিল, তার কারণ হয়তো ও খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল। এত কাঠখড় পুড়িয়ে পড়াশোনা করে, শেষমেষ হাতে কিছু কাগজের সার্টিফিকেট আসবে, এছাড়া এর বেশি আর তেমন কিছুই না। তবে বাস্তবিক কাজ যদি প্রথম থেকেই শেখা যায়, তাহলে হয়তো ভালো কিছু পরবর্তীতে করতে পারবে। হয়তোবা এমনটাই চিন্তাভাবনা ছিল ওর।

যদিও এই সিদ্ধান্ত নিতান্তই ওর ব্যক্তিগত ছিল। আমি কোন হস্তক্ষেপ করিনি। সম্ভবত ও যখন অনার্স দ্বিতীয় কি তৃতীয় বর্ষে পড়ে, তখনই করোনা মহামারীর প্রকোপ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আর দ্বিতীয়তঃ পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর করে চাকুরি পাওয়াটা এই সময়ে যে বেশ কষ্টসাধ্য, তা ও ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল। তাই হয়তো মাঝপথে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাছাড়াও সারাদিন সংসার সামলিয়ে, সঠিকভাবে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করাটা আসলেই ওর জন্য সেই সময় একটু কঠিনই ছিল।

থাক সেসব কথা, তবে আজ যে কথাটা বলছি সেটা একটু কষ্ট পাওয়ার মত। আমার এখনো চোখের সামনে ভাসছে ওর প্রথম ইনকামের সেই টাকা উত্তোলনের মুহূর্ত । সেই সময় ও যে কতটা পরিমাণ খুশি হয়েছিল, তা আমি মুখে বলে বোঝাতে পারবো না। যেহেতু ও নিজেই ইনকাম করেছিল, তাই ওর কাছে ওর উপার্জনের টাকাটা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

সেদিন সন্ধ্যেতে ও আমাকে নিজের থেকেই রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল এবং টাকা উত্তোলনের পর থেকেই, ও কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছিল এবং সেই পরিকল্পনা মাফিক কাজগুলো করার জন্য ও বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তেমন কোন আহামরি পরিকল্পনা না, নিজের জন্য রুপোর নুপুর আর সোনার কানের দুল বানানোর পরিকল্পনা। অবশেষে নুপুর আর সোনার কানের দুল বানানো হয়েই গেল এবং ও নিজেই আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে সেই টাকাগুলো পরিশোধ করেছিল। সেই দিন আমি ওর হাসিমুখ দেখে একটা কথাই বুঝতে পেরেছিলাম, প্রত্যেকটা মানুষের হোক সেটা নারী বা পুরুষ, সকলের স্বনির্ভরশীল হওয়া খুবই জরুরী।

গতকাল রাতে যখন আমি মিটিং এ ব্যস্ত ছিলাম, সেই সময় ও ঘুমানোর আগে মাথার চুল আঁচড়াচ্ছিল আর হঠাৎই খেয়াল করেছিল, ওর এক পাশের কানের দুল নেই। যদিও ও তাৎক্ষণিক আমাকে ব্যাপারটা জানিয়েছিল, আমিও চেষ্টা করেছিলাম ওকে সঙ্গে নিয়ে পুরো বাসা খোঁজাখুঁজি করার জন্য। দীর্ঘ সময় খোঁজাখুঁজির পরে একটা সময় অবশ্য নিরাশ হয়ে গিয়েছিলাম।

সারাদিন ও কত জায়গাতেই তো ঘোরাঘুরি করেছে বা অনেক লোকজনই তো বাসাতে বেড়াতে এসেছিল বা কখন থেকে ওর কানের দুলটা নেই, সেইসব ঠিকমত ও কিছুই বলতে পারছে না, তাই বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম।

তবে ও যে নিজের থেকেই একটু বেশি কষ্ট পেয়েছে আর ওর মনটা যে একটু বেশিই খারাপ হয়েছে , তা ওর মুখ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম। এমনিতেই ওর প্রথম উপার্জনের টাকা দিয়ে বেশ শখ করে কানের দুলটা বানিয়ে ছিল আর আজ সেটা হারিয়ে ফেলেছে, তখন আসলে মনে কষ্ট পাওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক।

যদিও, ও এখন মাসে ব্লগিং করে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে, তা দিয়ে চাইলেই অনায়াসে যেকোনো সময় এমন কানের দুল বানাতে পারবে, তবে প্রথমকার বানানো জিনিস তো, তাই ওর খারাপ লাগাটা একটু বেশিই কাজ করছে।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 last year 

নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু বানানোর মাঝে আলাদা রকমের আনন্দ আছে। কানের দুলটি হারিয়ে গেছে জেনে সত্যিই কষ্ট পেলাম। আসলে মেয়েদের অনেক শখের জিনিস থাকে যেগুলো অতি মূল্যবান না হলেও হারিয়ে গেলে ভীষণ কষ্ট লাগে।😔😔

 last year 

এটার জন্যই বেশি কষ্ট পেয়েছে ও, আসলে প্রথম উপার্জনের টাকা ছিল তো, তাই মায়াটা একটু বেশি কাজ করেছে।

 last year 

ভাইয়া আপনার লেখাটা পড়ে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো । আপনার সঙ্গে আমিও একমত প্রত্যেকটা মানুষেরই স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন সেটা মেয়ে হোক কিংবা ছেলে । ভাবিও ঠিক তেমনি তার প্রথম ইনকামের টাকা দিয়ে শখ করে কানের দুল কিনেছিল যেটি আজ হারিয়ে ফেলেছে । সত্যি শখের কোন জিনিস সেটা ছোট হোক বা বড় হোক হারিয়ে ফেললে মনটা ভীষণ খারাপ হয় ।আর যদি হয় প্রথম ইনকামের টাকা দিয়ে কেনা তাহলে তো কোন কথাই নেই ।প্রার্থনা করি যেন হারানো কানের দুলটি খুব শীঘ্রই ভাবি খুঁজে পায় ।ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

সত্যি বলতে গেলে কি, এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আসলেই কিন্তু সকলের স্বাবলম্বী হওয়া খুবই জরুরী।

 last year 

অনেক সময় আমরা যে সিদ্ধান্ত নেই তা ঠিক না ভুল সেটা পরবর্তী সময় বলে দেয়। ভাবীর তখনকার সিন্ধান্ত যে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিলো, তা তো এখন বলার অপেক্ষা রাখে না। ভাবীর মন হয়তো প্রচন্ড খারাপ, যেহেতু যে দুলটি হারিয়েছেন, তার সাথে ভাবীর ইমোশোনাল এচাটমেন্ট টা অনেক বেশি।
যেহেতু কেবল গতকাল রাতের কথা,, আরেকটা দিন আশায় থাকাই যায়। ভাবীর ভাগ্য ভালো থাকলে পেয়েও যেতে পারেন কোন ভাবে....

 last year 

তা অবশ্য মন্দ বলেন নি, তবে আমরা গ্রামে আসছি। হয়তো এ যাত্রায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন নাও হতে পারে।

 last year 

এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করার পর যদি কাঙ্খিত চাকরি না পাওয়া যায়, তাহলে সবকিছুই বৃথা হয়ে যায়। কারণ প্রতিটি মানুষের লক্ষ্য থাকে কিছু করার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপুর সিদ্ধান্তটা সঠিক। আমিও একটা সময় এমনটা ভেবেছিলাম। চোখের সামনে সিনিয়র ভাইয়েরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পায় না। তাই অনার্স প্রথম বর্ষের শেষের দিকে সাউথ কোরিয়াতে চলে গিয়েছিলাম। দোয়া করি আপুর প্রথম ইনকামের কানের দুল যেন খুঁজে পায়। আপনাদের জন্য শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58522.85
ETH 2614.85
USDT 1.00
SBD 2.43