শৈশবের স্কুল
যেহেতু আমার মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা, তাই ছোটবেলা থেকেই আমার শিক্ষাগুরু ছিলেন আমার মা। বলা যায় অনেকটা তার কাছ থেকেই আমার শিক্ষার হাতে খড়ি। মায়ের বেশ ভালই কষ্ট গিয়েছে সেসময়। এমনিতেই আমরা সমবয়সী দু ভাই ছিলাম বয়সের ব্যবধান মাত্র ১৭ মাসের। তাই দুভাইকে নিয়েই অনেকটা সংগ্রামী জীবন তাকে পাড়ি দিতে হয়েছিল।
আজকে দীর্ঘ বহু বছর পরে আমার সেই শৈশবের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার ছেলেকে নিয়ে। এর আগে শূন্যদার গল্প বলেছিলাম, মনে আছে কি। শূন্যদার দোকানটা কিন্তু এই স্কুলের দেয়াল ঘেঁষেই লাগানো। মোটামুটি কয়েকটা দিন থেকে বেশ ভালোই ব্যস্ততা যাচ্ছে, যেহেতু শহর থেকে কিছুটা অদূরে কম পয়সায় বাসা দেখার চেষ্টায় ছিলাম, তাই মোটামুটি ঐদিকটা তে যাওয়া হয়েছিল।
যদিও কিছু বাসার সন্ধান পেয়েছি, তবে দেখি কি হয় শেষপর্যন্ত। থাক সেসব কথা, দীর্ঘদিন পরে যেহেতু এদিকটাতে আসার সুযোগ হয়েছে, তাই মোটামুটি দীর্ঘ সময় শূন্যদার সঙ্গে গল্প করার চেষ্টা করেছি, তার হাতে বানানো দুধ চা খাওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করিনি।
যদিও আমার সময়কার বেলার শৈশবের স্কুলটা এমন ছিল না, তখন ছিল মাত্র আধাপাকা কয়েকটা ঘর, যা এখনো আছে। তবে সেসব ঘরে মনে হয় না এখন আর পাঠদান দেওয়া হয়। শূন্যদার সঙ্গে গল্প করে, ইচ্ছে করেই ঢুকে গিয়েছিলাম স্কুলের ভিতরে। এখন তো স্কুলের নিরাপত্তার জন্যও লোক রাখা আছে। আমাদের সময় কিন্তু এত কিছু ছিল না। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, হোক সেটা অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থাতেও।
যেহেতু আমার মা ও বাবা এই শহরেই প্রথম ছিল আর আমার মায়ের প্রথমদিকের কর্মস্থল ছিল এই স্কুল। তাই আমাদের দুভাইকেই সঙ্গে করে এখানে নিয়ে আসতো মা। অতঃপর ধীরে ধীরে একসময় মায়ের চাকরির সুবাদে সম্ভবত দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত মনে হয়, এখানে আমার পড়াশোনা করার সৌভাগ্য হয়েছিল।
তারপর পরবর্তীতে মায়ের বদলি হয়ে গিয়েছিল অন্য স্কুলে, আবার সেখানে গিয়ে আমাকে অন্য শ্রেনীতে ভর্তি হতে হয়েছিল। বিশেষ করে প্রাইমারির সময়টা এভাবেই কেটেছিল আমার শিক্ষা জীবন।
একা একাই হাঁটছিলাম স্কুলের ভিতরে বাবুকে নিয়ে। দেখছিলাম নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকটি তার সন্তানকে নিয়ে খেলছিল। আমিও চেষ্টা করছিলাম আমার সন্তানকে নিয়ে সময় কাটানোর জন্য স্কুলটার ভিতরে এবং ফেলে আসা শৈশবের কথা কিছুটা মনে করার চেষ্টা করছিলাম।
শুধু মনে আছে এই স্কুলে আমার সময় গুলো বেশ ভালই কেটেছিল, এমনিতেই মা শিক্ষিকা ছিল, তার ভিতরে আমাদের দুই ভাইকেই সবাই অনেক পছন্দ করত। সেটা মায়ের সহকর্মীরা থেকে শুরু করে উপর ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা পর্যন্ত। বলা যায় আমার দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সময়টা এখানে হেসে খেলেই কেটেছে।
এখন তো স্কুলের অনেক পরিবর্তন দেখছি, স্কুলের ভিতরে খেলার জায়গা করা হয়েছে, ছোট পার্কের মতো তৈরি করা হয়েছে এবং দোতলা বিল্ডিং করা হয়েছে। মোট কথায় পুরনো ঘরগুলো আর ব্যবহৃত হয় না। নতুন ভবনেই সব পাঠদান চলে।
এমনিতেই ভীষণ গরম পড়েছে ঘরে বাহিরে কোথাও যেন স্বস্তি পাচ্ছি না। তার মাঝেও যখন শহর থেকে কিছুটা অদূরে এসেছি এবং শৈশবের স্কুলে কিছুটা সময় বাবুকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করেছি, তখন এমন অস্বস্তিকর গরম আবহাওয়ার মাঝেও যেন কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি। সেটা হয়তো মনের দিক থেকে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1666024745241022466?t=w7s3GpvGH2DFr_seumK5uQ&s=19
বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে। আসলে শৈশবের স্কুলে গেলে এখন সেই পুরনো স্মৃতিগুলো খুজে পাওয়া যায় না। তার কারণ হচ্ছে অবকাঠামো গত পরিবর্তন। কিছুদিন আগে আমিও আমার পুরনো স্কুলে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে যেয়ে দুটি গাছ ছাড়া কোন কোন স্মৃতিকে খুঁজে পাইনি। যাইহোক বাবুকে নিয়ে বেশ ভালো একটি সময় অতিবাহিত করেছেন দেখে ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
আসলে আপু সময় গড়িয়ে গিয়েছে, তার সঙ্গে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি ভাইয়া একজন মা শিক্ষকা হলে স্কুলে তার সকল সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ তার বাচ্চাদের অন্য চোখে দেখবে এটাই স্বাভাবিক। আর হাতে খড়ি এমনিতেই মার কাছ থেকে পাওয়া হয়, তারপর আপনার মা হলো শিক্ষিকা।আর এখন সকল প্রাইমারি স্কুলে দোতলা হয়ে গেছে আগের মতো আর নেই। আপনি আপনার ছেলেকে নিয়ে বেশ ভালো একটা সময় কাটিয়েছেন স্কুলে জেনে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মূহুর্তটুকু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
আপনার পুরো পোস্ট পড়ে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। যেহেতু আপনার মা এখানে শিক্ষিকা ছিলেন সেই সুবাদে আপনাদের দুই ভাইকে সবাই অন্য চোখে দেখবে এটাই স্বাভাবিক। আপনি আপনার ছেলেকে নিয়ে খুব ভালো একটা সময় কাটিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করুন।
সত্য কথা বলতে গেলে কি, খুব অন্য চোখে দেখেনি, সবাই একটু আন্তরিক ছিল, জাস্ট এতোটুকুই আপু।
আপনার শৈশবের স্কুলের অনুভূতি গুলো পড়ে আমার কিন্তু ভাইয়া সেই ছেলেবেলার কথাগুলো মনে পড়ে গেল। শৈশবের স্কুল এবং শৈশবের কথা কেউ কি কখনো ভুলতে পেরেছে নাকি ভোলা সম্ভব? আমি তো প্রায় প্রতিদিনই আমার সেই ছেলেবেলার বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে আসি। কিন্তু এখন তো আর সেই বিদ্যালয় নেই। এখন তো শুধু দালান আর দালান। আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে এটা জানতে পেরে যে আন্টি একজন শিক্ষিকা ছিলেন। আর সে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন আপনারা দুই ভাই।
ধন্যবাদ আপু আমার অনুভূতি বুঝতে পেরে মন্তব্য করার জন্য।
ভাইয়া যে স্কুলে আপনার আম্মা শিক্ষকতা করেছেন এবং সেই স্কুলে আপনি লেখাপড়া করেছেন এটা জেনে আমার খুবই ভালো লেগেছে। একই সাথে আরো বেশি ভালো লাগলো যে, আপনি সেই স্কুলে আপনার ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছেন। এরকম গরম আবহাওয়ার মাঝে আপনার শৈশবের স্কুলে গিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য প্রিয় ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসলে সারাদিন ঘরে থাকার পরে, বিকেল বেলার দিকে আর ঘরে থাকতে মন চায় না, তাই কিছুটা ঘোরাঘুরি করার জন্য সেদিন বেরিয়ে ছিলাম।