দূরত্ব
আসলে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করতে হয় না । তবে একটা সময়ের পরে গিয়ে, সেই সম্পর্ক গুলোতে আপনা-আপনি নিজের থেকে দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। এটাই হয়তো চিরন্তন সত্য কথা, এইসব ই তো আজকাল চারিপাশে দেখছি। যদিও বাস্তব ব্যাপার গুলো, একটু ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে হয় বা দেখতে হয় ।
শিহাব আর বেলায়েতের সম্পর্কটা তৈরি হয়েছিল হয়তো একই অফিসে চাকরি করার সূত্রে। শিহাব তার পরিবার নিয়ে এই শহরেই থাকতো , তবে বেলায়েত থাকতো মেসে। তার পরিবার থাকতো গ্রামে। এই কংক্রিটের শহরে শিহাবের সময় গুলো বেশ ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছিল। অতঃপর একটা সময় গিয়ে তার প্রিয়তমা স্ত্রী উপলব্ধি করতে পারে, সে মা হতে চলেছে ।
সত্যি বলতে কি, এরকম সংবাদ যে কোন পুরুষ মানুষের জন্যই অনেকটা খুশির। ঠিক শিহাবও তার ব্যতিক্রম নয়। আসলে বাবা হওয়ার অনুভূতি মুখে প্রকাশ করা বেশ মুশকিল ।
শিহাবের সূদুর ভাবনার পরিকল্পনা যেন, এখন থেকেই শুরু হয়েছে। কিভাবে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আগমন হবে, কিভাবে বেড়ে উঠবে এইসব চিন্তাভাবনা তাকে যেন ক্রমাগত আজকাল ভাবনায় ফেলে দেয়। সন্তানের আগমন উপলক্ষ কে কেন্দ্র করেই সঞ্চয় নিয়ে একটা সুক্ষ্ম পরিকল্পনা করে সে। যে করেই হোক মাস শেষে বেতন থেকে কিছু টাকা অন্তত জমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্পোরেট চাকরি করে সে, কখন কি হয় তা তো বলা মুশকিল। তাই সঞ্চয়টা হয়তো এখন থেকে করাই শ্রেয়। অফিসের কলিগ বা বন্ধু বলতে ঐ একজনই, সে হচ্ছে বেলায়েত। হয়তো এই কোম্পানিতে চাকরির সুবাদেই বন্ধুত্বের সম্পর্কের সৃষ্টি ।
শিহাবের স্ত্রীর তখন নয় মাস, ডাক্তার বলে দিয়েছে সিজারের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। কারণ তার স্ত্রীর বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে। এমনিতেই বেশ ভালোই খরচা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই শিহাব একটা সময়ে গিয়ে ভেবেই রাখলো সঞ্চয়ের টাকা থেকেই যেহেতু খরচ গুলো হচ্ছে, তাই একটা সময়ে গিয়ে মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে সিজারের খরচটা ও তারপরে বাবু হওয়ার পরবর্তীতে যেসব খরচ গুলো হয়, সেটা সে সঞ্চয় থেকেই মিটিয়ে ফেলবে।
শুনেছি বিপদে বন্ধুর পরিচয়। আচ্ছা সেই বিপদেই যদি বন্ধু তার ভিন্ন চেহারা দেখিয়ে দেয়, তাহলে কেমন লাগে বলুন তো। সিজারের দুই দিন আগেই শিহাব তার স্ত্রীকে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছে। সবকিছুই ঠিকঠাক, কাউন্টারে কিছু টাকাও জমা প্রদান করেছে বাকিটা রিলিজ হওয়ার সময় ।
বেলায়েতের হঠাৎ করেই আর্থিক সংকট, কি কারণে সেটা, তা আর হয়ে জানা ওঠে নি শিহাবের। আসলে বেশ কিছু দিন থেকেই শিহাব অফিসের বাহিরে মানে ছুটিতে আছে। হঠাৎ যখন বেলায়েত আবদার করে বসেছে শিহাবের কাছে ত্রিশ হাজার টাকার জন্য, যদিও শিহাব আগে পিছে ভাবেনি কারণ বন্ধু মানুষ, তাছাড়াও শিহাবের ব্যাপারটি বেলায়েত জানে।
বেলায়েত শিহাবকে বলেই দিয়েছে, আমি তোর বিষয়টা সবই বুঝেছি। তবে আমি তোকে খুব দ্রুতই টাকাটা দিয়ে দেবো, তুই চিন্তা করিস না। মোটামুটি বেলায়েত কে টাকা ধার দেওয়ার পরেও শিহাবের কাছে এখন যে টাকা আছে, সেটা দিয়ে তাও সে হসপিটালের বাকি বিলগুলো দিতে পারবে।
যাইহোক শিহাবের সন্তান পৃথিবীতে বেশ ভালোভাবেই আসলো। সিজার বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে এবং বাচ্চা ও মা দুজনেই সুস্থ আছে। এখন শিহাব মোটামুটি অনেক খুশি, তবে সঞ্চয় করে রাখা টাকা গুলো কিছুটা কমে এসেছে, এই মুহূর্তে তার বাড়তি টাকার খুব দরকার ।
যেহেতু বেলায়েত বলেছে তাকে খুব শীঘ্রই টাকাটা দিয়ে দেবে, তাই তাকে ফোন দিল। কিন্তু এই কয়দিনের মাঝেই বেলায়েতের কিছুটা রূপরেখা বদলে গিয়েছে। বেলায়েতের চাকরিটা চলে গিয়েছে, তার ফোনটা বন্ধ। শিহাব যেন দিশেহারা হয়ে পড়ল তাৎক্ষণিকভাবে। অফিস আর ওর মেসে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করলো ।
শিহাব চোখে অন্ধকার দেখছে, সব কিছু যেন এলোমেলো লাগছে ওর কাছে, কি ভাবছে আর কি হচ্ছে।
ক্রমশ
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
টাকা এমন একটা জিনিস দাদা, যেটা অনেক ভালো সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।বিশেষ করে আপনজনদের মধ্যে টাকা দেওয়া নেওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু বিপদে পড়লে যদি আবার আপনজন কাজে না আসে সেটা নিয়েও তো কথা হবে। টাকা ভীষণ বিষাক্ত।তাই কেউ যদি টাকা পায় কারো কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে দেওয়াই ভালো। আর ততটাই নেওয়া উচিত যতটা আমি তাড়াতাড়ি শোধ করতে পারব।বেশ ভালো দিকে এগোচ্ছে গল্পটা।আমি অনেক দিনই আপনার লেখা পড়তে পারিনি বিভিন্ন কারণে। তাই আজই পড়া শুরু করলাম আবার।
বিশ্বাস জিনিসটা যখন অবিশ্বাসে রূপ নেয় তখনই ঘটনা উল্টো হয়ে যায়। ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে যেখানে শিহাবের টাকার দরকার, তার বউয়ের জন্য। সেখানে এসে বেলায়তে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে এমনটা করলো। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে ঘটনাটা অন্যদিকে মোড় নিবে। যেহেতু বেলায়েতের চাকরিটাও চলে গেছে! হয়তো বেচারা খুব বিপদে পরেছে।
কঠিন মুহূর্তেই তো মানুষের আসল রুপ চেনা যায় ভাই, তবে সময় সুযোগ হইলে বাকিটা একদিন লিখবো।
বেলায়েতের মতো মানুষরা কখনোই প্রকৃত বন্ধু হতে পারেনা। কারণ তার বন্ধুর বিপদের সময়ও সে তার কাছে টাকা ধার চেয়েছে এবং নিয়েছে। কিন্তু যখন তার প্রয়োজন মিটে গেছে তখন তার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। হয়তো তিনি সমস্যার কারণেই টাকাটা নিয়েছেন। কিন্তু তাই বলে যে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হবে এমনটা নয়। তার সমস্যার কারণ গুলো যদি জানাত তাহলে হয়তো এভাবে তাদের সম্পর্কের মাঝে প্রতারণা শব্দটি ঢুকে পড়তো না।
আসলে ব্যাপারটা বেশ জটিলতাসম্পন্ন আপু, দেখি সময় করে পরের পর্বটা লিখবো।
সত্যি বলতে সমাজে এরকম অনেক বেলায়েত আছে। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে বন্ধুকে ঠকায়। আসলে আমার মনে হয় বেলায়েত শিহাবের সঞ্চয় করে রাখা টাকার বিষয়টা আগে থেকে জানতো। আর সে যেটা করেছে সেটা আগে থেকেই বুদ্ধি করে করেছি। শিহাবের বেলায়েত কে এতটা বিশ্বাস করা উচিত হয়নি।
সত্যিই, বিপদে প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় মেলে।আসলে মধুর সম্পর্কগুলি এভাবেই হয়তো পাল্টে যায় একসময়।বেলায়েতের মতো মানুষরা শুধুই সুযোগ সন্ধানী হয়ে থাকে।তাছাড়া তার বন্ধুকে সে কোনো নির্দিষ্ট কারন ও বলেনি।যাইহোক পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, ধন্যবাদ ভাইয়া।