শুভাকাঙ্ক্ষী

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

beanie-ge784a96e8_1920.jpg
source

চোখের সামনে রাসেল ভাইয়ের মুখটা যেন বারবার এই মাঝরাতে ভেসে উঠছে। তার সঙ্গে আমার ভিন্ন রকম একটা সম্পর্ক ছিল। যেখানে হয়তো বয়সের ব্যবধান কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। কত যে সময় দুই ভাই একসঙ্গে কাটিয়েছে, তার হিসেব নেই।

সময় গুলো আসলেই বেশ ভালো ছিল। হয়তো ফেলে আসা দিনগুলোর কথা যখন এভাবে হুটহাট মাঝরাতে মনে পড়ে যায়, তখন অনেকটাই বুকের ভিতরে হাহাকার অবস্থা তৈরি হয়।

আমার এখনো বেশ ভালো ভাবে মনে আছে। প্রায়ই ভাই, চেম্বারের সামনে এসে উচ্চস্বরে ডাকতো। কিরে শুভ, ব্যস্ত আছিস নাকি। আসলে তার ডাক আমাকে, কখনোই অপ্রস্তুত করে নি । যতো ব্যস্তই থাকতাম না কেন, সব কিছু ফেলে আগে তার সঙ্গে দেখা করতাম।

আমি যে সালে জন্ম গ্রহণ করেছিলাম, ভাই সেই সালে রুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছিল। তবে বাস্তবে তেমন কোন চাকরি করেনি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়নি। যদিও এইসব না করার কারণ কি ছিল,তাকে কখনো তা জিজ্ঞেস করা হয় নি। আসলে কিছু কারণ অজানা রাখাই ভালো। কার কোথায় অভিমান জমে আছে,তা তো বলা যায় না। একটা চমকপ্রদ তথ্য দেই, এর আগে যে ভদ্রলোক রুয়েটের ভিসি ছিল, সে আমার রাসেল ভাইয়ের বন্ধু ছিল।

জীবনটাকে প্রতিনিয়ত সে, নিজের মত করে দেখার চেষ্টা করেছিল। তাই হয়তো এতো বড় প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেও হয়তো অজানা অভিমানে, শেষমেশ নিজের ইচ্ছেতেই এই মফস্বলে এসে জীবনের বাকিটা সময় কেটে দিয়েছিল। একাকী জীবনে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল যে, বিয়ে পর্যন্ত করার প্রয়োজন বোধ করেনি সে।

থানার সামনের সব থেকে যে বড় বাড়িটা ছিল, ওটাই ছিল তার আবাসস্থল। যেহেতু আমার বাসার পাশেই তার বাসা ছিল, তাই ছোট বেলা থেকেই তাকে দেখে বড় হয়েছি। প্রতিনিয়তই তাকে নিয়ে জানার কৌতুহল কাজ করতো।

একটা কথা ভাই সবসময়ই বলতো, জীবনে কি পেয়েছিস, কি হারিয়েছিস, এসব নিয়ে খুব একটা বেশি ভাববি না। তোকে কিভাবে মানুষ মনে রাখবে এবং কিভাবে মানুষের মনে গেঁথে থাকবি, সেই চিন্তাভাবনাটাই প্রতিনিয়ত করবি।

একবার সেকি অবস্থা, হঠাৎ মাঝরাতে ফোন দিয়ে বলছিল, শুভ তোর রক্তচাপ মাপার মেশিনটা নিয়ে আয় তো, আমার হাত পা কেন জানি ঝিনঝিন করছে, শরীরটা খুব একটা ভালো ঠেকছে না।

সেই রাতেই তাকে বেশ কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ভাই যেহেতু আপনার মাথার ডান পাশের ব্যাথাটা থেমে থেমে জাগ্রত হয়, তাই যদি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর চেষ্টা করতেন, তবে সেটা আপনার জন্যই ভালো হতো। যদিও পরবর্তীতে সে ডাক্তার দেখিয়ে ছিল, তবে ততদিনে মাথার ভিতরের টিউমারটা বেশ বড় হয়ে গিয়েছিল।

কিসের এতো অভিমান, তা কখনোই জানা হয়নি। জীবনে বহু সুযোগ সে পেয়েছিল। যে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে সে পড়াশোনা করেছিল, সেখানকার প্রফেসর হওয়ার মতো সুযোগ তার কাছে এসেছিল। কিন্তু তাও সেখানে সে নিযুক্ত হয় নি। সবকিছু বাদ দিয়ে এসে নিজেদের জমি-জমা দেখাশোনা করতো।

আজ মাঝরাতে ছোট মুঠোফোনটা যখন ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম, তখন হঠাৎ করে তার নাম্বারটা চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। মুহূর্তেই তার কথা মনে পড়ছিল। বুকের ভিতরে কেমন জানি ধড়ফড় করছিল।

আচ্ছা আমার মনে একটা প্রশ্ন উঠছে, যারা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছে, তাদের মুঠোফোনের নাম্বার বা তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল যদি হুটহাট আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তাহলে মনেহয় মনটা নিমিষেই ভারাক্রান্ত হয়ে যায়, তাই না। এইযে এই মাঝরাতে আমার যেমনটা হচ্ছে।

সেই উচ্চস্বর এখন আর শুনি না, তাও তো চারটে বছর হয়ে গেল। কিভাবে যে সময় গুলো এত দ্রুত চলে গেল, তা বুঝে উঠতেই পারলাম না। রাসেল ভাই ওপারে কেমন আছে, তা জানা নেই। তবে স্রষ্টা তাকে ভালো রাখুক, এই মাঝরাতে তার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে, এমনটাই প্রার্থনা করছি।

Banner-8.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

আসলে অভিমান বড় অদ্ভুত। কখন কার উপর অভিমানগুলো জমে যায় সেটা বুঝতে পারা যায় না। হয়তো উনার মনে অনেক বড় অভিমান জমা ছিল। হয়তো কারো প্রতি উনার অনেক ঘৃণা জন্মেছিল। তাই তো নিজের জীবনটাকে সবকিছু থেকে আলাদা করে রেখেছিলেন। এমনকি অনেক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। সেই সাথে জীবনের বৈবাহিক সম্পর্কেও জড়াননি। মনে হচ্ছে কাউকে ভালোবেসে অনেক বড় আঘাত পেয়েছিলেন। যদিও সেটা আমার মনের কল্পনা। তবে একটা কথা ঠিক বলেছেন ভাইয়া যারা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তাদের প্রোফাইল কিংবা ফোন নাম্বার দেখলেই বুকের মাঝে কেমন জানি করে উঠে। সেই মানুষগুলো হয়তো এখন আর নেই। তবে সেই স্মৃতিগুলো আজও রয়ে গেছে।

 2 years ago 

গত রাতে তার স্মৃতি গুলো আমাকে অনেকটাই যন্ত্রণা দিয়েছে আপু। ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক খারাপ লাগল রাসেল ভাইয়ের জন্য। সত্যি ভাইয়া আমাদের কাছের মানুষ গুলো চলে গেলে এভাবে তার নম্বর বা ছবি সামনে আসলে সত্যি মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আমার মনে হয় উনার কারো প্রতি ঘৃণা জন্মনিয়েছি। যার কারে নিজেই অভিমান করে নিজেকে সব কিছু থেকে লুকিয়ে রেখেছিল। আর এসকল স্মৃতি গুলো সব সময় মনে পড়ে।

 2 years ago (edited)

বন্ধুত্ব মানে না কোন বয়স বন্ধুত্ব মানে না কোন ধনী গরিব। চলার পথে কখন কার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় সেটা বোঝা বড় দায়। না হয় একটা জিনিস যখন আপনি জন্মগ্রহণ করেছেন , ঠিক সেই সময় তিনি রুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ার পাশ করে এসেছেন। এখানে বয়সের কতটা পার্থক্য। অথচ আপনাদের কথাবার্তা আপনাদের চলাফেরা মনে হচ্ছে আপনারা একে অপরের সম বয়সী এবং বন্ধু। মান-অভিমান নিয়ে মানুষের জীবন। তবে তিনার অভিমান কেন হয়েছে সেটা জানতে পারলাম না। তবে ঐদিন রাত্রে আপনাকে না ডাকলে এটাও আমরা হয়তো বা জানতে পারতাম না তিনার মাথায় টিউমার হয়েছে। তবে জীবনে অনেক ভালো কিছু করার সুযোগ ছিল উনার। তবে সবকিছু সবার ভালো লাগেনা। হয়তো বা তিনার এগুলো ভালো লাগেনি। এটা সত্যি ভাই যখন কাছে লোক অনেক দূরে চলে যায়, তখন কোন একটা সময় তার কথা মনে পড়লে বা তার ছবি ভেসে উঠলে বুকটার ভিতরে ধরফর করে ওঠে। এভাবে কাছের মানুষগুলো সবাই হারিয়ে যাবে কিন্তু তার স্মৃতি রয়ে যাবে।

 2 years ago 

আপনার মন্তব্যের শুরুর কথা গুলো, বেশ ভালো লেগেছে ভাই। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য। হয়তো জীবন এমনি ভাই।

 2 years ago 

সত্যি আমার নিজের মনটাও ভারাআক্রান্ত হয়ে গেল। আসলে এমন কিছু মানুষ আমাদের জীবনে রয়ে যায় যাদের স্মৃতিগুলো মনে উঠলে মনের কোণে যেন একটা কষ্ট জেগে ওঠে। আর আপনার রাসেল ভাইয়ের কথা বললেন আসলে ওনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ যেন আমারও হয়ে উঠলো। কারণ এত ভালো একটা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করার পরও কেন নিজেকে সেটেল করেন নি, এমনকি বিয়ে পর্যন্ত করেননি। তাহলে তার ভেতরকার কি অভিমান ছিল। যাই হোক এমন মানুষগুলো যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক সেই প্রত্যাশা করি। তবে সেই চার বছর আগে মানুষটা চলে গেছে কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনো মনে আছে আর স্মৃতি হয়েই রয়ে যাবে।

 2 years ago 

সত্যি আমার নিজের মনটাও ভারাআক্রান্ত হয়ে গেল। আসলে এমন কিছু মানুষ আমাদের জীবনে রয়ে যায় যাদের স্মৃতিগুলো মনে উঠলে মনের কোণে যেন একটা কষ্ট জেগে ওঠে। আর আপনার রাসেল ভাইয়ের কথা বললেন আসলে ওনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ যেন আমারও হয়ে উঠলো। কারণ এত ভালো একটা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করার পরও কেন নিজেকে সেটেল করেন নি, এমনকি বিয়ে পর্যন্ত করেননি। তাহলে তার ভেতরকার কি অভিমান ছিল। যাই হোক এমন মানুষগুলো যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক সেই প্রত্যাশা করি। তবে সেই চার বছর আগে মানুষটা চলে গেছে কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনো মনে আছে আর স্মৃতি হয়েই রয়ে যাবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68228.03
ETH 2645.06
USDT 1.00
SBD 2.69