বেঁচে থাকার লড়াই

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

আজকে হাটের দিন, তাই সকাল থেকেই বেশ ব্যস্ত নিজাম ভাই। এই ঊর্ধ্বগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারে কিভাবে যে, সে তার সংসার চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা যখন সে মাঝে মাঝে চিন্তা করে, তখন যেন সে অনেকটাই দুর্বিষহ চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে যায়।

কোন রকমে খেয়ে পড়ে টিকে আছে এই সময়ে। যদিও এটাকে বেঁচে থাকা বলে না, বলা যায় প্রতিটা পদক্ষেপে তাকে এক প্রকার যেন যুদ্ধ করেই সবকিছু মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

হাটে এসেই কোনরকমে হাট ইজারাদারের কাছে একপ্রকার মিনতি করেই বললো, কোনভাবেই সে আজ হাটের পয়সা দিতে পারবে না। তার ব্যবসার অবস্থা অনেকটাই নাজুক। এমনিতেই প্রচুর রোদ, তার ভিতরে রোগা পাতলা শরীর, ক্রমাগত যেন সে বেলুন গুলো ফুলিয়েই যাচ্ছে। ফুসফুসের উপর যে কি পরিমান চাপ পড়ে, তা হয়তো সে নিজেই মাঝে মাঝে অনুধাবন করতে পারে।

20230831_174323.jpg

20230831_174310.jpg

20230831_174304.jpg

20230831_174258.jpg

20230831_174248.jpg

20230831_174400.jpg

20230831_174353.jpg

20230831_174704.jpg

20230831_174653.jpg

নিয়তি বড় অসহায়, এই সময়ে এসে কোনভাবেই সে ব্যবসাটাকে ছাড়তেও পারছে না আবার নতুন করে যে অন্য কিছু করবে সেটাও ভেবে পাচ্ছে না। চোখের পলকেই দেখতে দেখতে অনেকগুলো বেলুন ফুলিয়ে সেগুলো আকর্ষণ করানোর সাজিয়ে রাখলো। তার মূলত ক্রেতা হাটে ঘুরতে আসা ছোট বাচ্চারা।

সে যদি সারাদিনে তার সবগুলো বেলুন বিক্রি করে ফেলতে পারে, তাহলে সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হবে। এর বেশি কোনভাবেই সেটাকে বৃদ্ধি করানো যাবে না। আর তার ভিতরে যদি হাট ইজারাদার কে ৫০ টাকা দিতে হয়, তাহলে ব্যাপারটা অনেকটাই তার কাছে জটিলতা সম্পন্ন হয়ে যায় ।

অতিরিক্ত গরমে নিজাম ভাই ঘেমে আজ অস্থির। কোনরকমে দু গ্লাস লেবু পানি খেয়ে তৃষ্ণা মিটিয়ে নিয়েছে, এখনো সন্ধ্যে নামতে অনেকটা দেরি আছে। তাছাড়াও কিছু বেলুন রয়েই গিয়েছে, যেগুলো বিক্রির আশাতে সে মূলত এখনো এই বাজারেই অবস্থান করছে।

যদিও এখনো মাসের শেষ হয়নি, তবে ইতিমধ্যেই গিন্নি বারবার বলছিল বাসার কাঁচা বাজার শেষ, যে করেই হোক আজ বাজার করতেই হবে। অবশেষে আমি, গিন্নি, আমার ছোট শালী আর বাবুকে নিয়ে বিকেলের দিকে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। যে জায়গাটা থেকে কাঁচা বাজার করি, সেখানেই মূলত নিজাম ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল।

আমি বারবার খেয়াল করার চেষ্টা করছিলাম, নিজাম ভাই আমার বাবুকে বেলুন দেখিয়ে আকর্ষণ করানোর চেষ্টা করছিল। যেহেতু রঙিন বেলুন আর অনেকটা সাজিয়ে রেখেছে, তাই আমার বাবুও চেষ্টা করছিল সেদিকটাতে নজর দেওয়ার। এই বেলুনগুলো অনেকটা সাময়িক সময় খেলার জন্য, মানে ফেটে গেলেই শেষ।

আমরা কাঁচা বাজার করছিলাম আর নিজাম ভাই বারবার আমাদের কাছে এসে ঘুরপাক করার চেষ্টা করছিল। বিষয়টা বুঝতে আমার আর বিন্দুমাত্র বাকি থাকলো না। তাকে এবার বলেই ফেললাম কত করে বেলুন, সে হাসি মুখে বলল ১৫ টাকা করে। বিক্রি একদম শেষের দিকে তো আর এই দুটো আছে, এ দুটো বিক্রি হলেই বাড়ি চলে যাব।

তার যে আজকের এই রোদের মধ্যে বেশ ভালই পরিশ্রম গিয়েছে, সেটা তার রোগা পাতলা শরীর দেখেই বুঝতে পারছিলাম। চোখ মুখ যেন অনেকটাই বসে গিয়েছে কোটরের ভিতরে। কোন প্রকার দামাদামি না করেই, বেলুন দুটো কিনে ফেললাম। সেকি তার প্রশান্তির হাসি, অনেকটাই যেন চোখে লেগে থাকার মত। কত টাকাই বা পেয়েছে সে এভাবে সারাদিন বেলুন বিক্রি করে, তারপরেও যে বেঁচে থাকার জন্য ক্রমাগত লড়াই করে যাচ্ছে, এটাই তো অনেক বেশি।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 10 months ago 

সমাজের এই মানুষগুলো পন্য দ্রব্যের উর্ধ্বগতির বাজারে যে এখনও টিকে আছে এটাই যেন অনেক। নিজাম ভাইয়ের মতো সমাজের অনেক মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। বেলুন ফুলাতেও ফুসফুসে প্রেসার পরতে হয়, দিনশেষে আয় রোজগারের জায়গাটা এটাই! যাক আপনি শায়ানকে দুটি বেলুন কিনে দিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। সব বেলুন বিক্রি করেই যেতে পারলো।

 10 months ago 

যেভাবে প্রতিনিয়ত বেলুন ফুলিয়ে যাচ্ছে, তাতে ফুসফুসের উপর বেশ ভালই চাপ পড়ে ভাই।

 10 months ago 

এই সাধারণ মানুষগুলোর ব‍্যাপার টা আপনি তুলে ধরেন আপনার এই বিষয়টি বরাবরই আমার কাছে অসাধারণ লাগে ভাই এবং অনেক অনুপ্রাণিত করে আমাকে। সত্যি এই বাজারে নিজাম ভাইয়ের মতো পেশাজীবীদের টিকে থাকা বেশ দুস্কর। এই ছোট আয় থেকে আবার হাটের ইজারা। লোকটা এই করতে করতে রীতিমতো হাপিয়ে গিয়েছে।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

সত্যিই যখন এই মানুষগুলোর কাছ থেকে, অতিরিক্তভাবে হাটের ইজারা বাবদ পয়সা নেওয়া হয়, তখন সেটা এক প্রকার কষ্টকর ব্যাপার হয়ে যায়।

 10 months ago 

অসহায় এই মানুষগুলোকে দেখলে সত্যি ভীষণ খারাপ লাগে। তারা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে এক প্রকার টিকে আছে। আমাদের দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। তারপরও আপনি শেষ বেলুন দুটি কিনে তাকে সামান্য খুশি করতে পেরেছেন ।এটুকুই অনেক বড় বিষয়। ধন্যবাদ আপনাকে ।বেশ ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে।

 10 months ago 

ধন্যবাদ আপু আমার অনুভূতি বুঝতে পারার জন্য।

 10 months ago 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে নিজাম ভাইদের মতো মানুষদের টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন ৫০০ টাকা উপার্জন করতে পারলেও, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেই তো টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। যাইহোক আপনি শেষের বেলুন দুটি কিনে খুব ভালো করেছেন ভাই। আপনি এমনিতেও খেটে খাওয়া মানুষদের সাথে মিশে থাকেন এবং সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

একটু গভীরভাবে যখন চিন্তা করা যায়, তখন আসলে অনেকটাই ব্যথিত হয়ে যাই, এই মানুষগুলোর জীবন যাপন দেখলে।

 10 months ago 

সবাই মিলে বাজার করতে গিয়েছিলেন আর বাজারে গিয়ে আপনার নিজাম ভাইয়ের ভাষাটা বুঝে ফেলেছিলেন। আমাদের দেশে এরকম প্রচুর মানুষ আছে যারা প্রতিনিয়ত এভাবেই বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আপনার মতো আমাদের সবার উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো তাদেরকে সাহায্য করা। এখানে একটা বিষয় দেখুন ভাই আপনার বাচ্চার খেলনা হলে তার পরিবারের মুখে সে অন্ন তুলে দিতে পারবে বিষয়টা অনেক গভীর। খুবই সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 10 months ago 

ব্যাপারটা নজরে পড়েছিল ভাই, তাই চেষ্টা করেছি নিজের অবস্থান থেকে কিছু করার জন্য।

 10 months ago 

ভাই আপনি আসলে অনেক দিকে খেয়াল রাখেন। এমন মানুষ যদি সবাই হতো তাহলে পৃথিবীটা বদলে যেতো। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 67200.37
ETH 3331.98
USDT 1.00
SBD 2.77