চায়ের দাওয়াত || @shy-fox 10% beneficiary
মন বড় অদ্ভুত জিনিস, কখন কি যে চেয়ে বসবে, কখন কি বায়না উঠবে মনের ভিতরে, এটা বলা খুবই মুশকিল । এইতো সে দিন হুট করে সন্ধ্যায় মনে হল যে, পরিবার নিয়ে একটু মালাই চা খেয়ে আসি । যদিও একাই যেতে চেয়েছিলাম , তবে মনে হল যে সঙ্গে গিন্নি ও বাবুকে নিয়ে যাই । কারণ তারাও আমার মত বেশ হাঁপিয়ে উঠেছে । হয়তো এই গরমে নতুবা এই চার দেয়ালের মাঝে বন্দি থেকে । অতঃপর যেমন চিন্তাভাবনা তেমন কাজ । তবে এখানে কিছুটা মজার ব্যাপার আছে, সেটা একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি ।
আমার বাল্যবন্ধুরা কমবেশি সকলেই বিভিন্ন কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে ফেলেছে । বয়স তো হয়েই গেলো , দেখতে দেখতে ত্রিশের কোঠা সবাই পাড়ি দিয়েছে । আর কত ব্যাচেলর লাইফ আর কত কর্মহীন জীবন । একটা সময়ের পরে কর্মহীন জীবন নিজেকে অনেকটাই হতাশা এবং বিশাদগ্রস্থ করে ফেলে ।
সজীব আমার বাল্যবন্ধু । সে এই তল্লাটে মোটামুটি বেড়ে উঠেছে । তার চিন্তা চেতনা মূলত এলাকার মানুষজনকে ঘিরেই । আসলে আপনার যদি জনসেবা করার ইচ্ছা থাকে ,তাহলে সেটা যে কোন জায়গা থেকেই করা যায় । এটাই একদম চিরন্তন সত্য কথা ।
এই চায়ের দোকানের মালিক আগে যে ভদ্রলোক ছিল, সে আসলে কাস্টমারকে খুব ভালোভাবে আকর্ষণ করতে পারছিল না । হয়তো তার কোথাও দুর্বলতা ছিল । কিন্তু সজীব যেহেতু এই এলাকাতেই বেশ ভালোভাবেই সময় কাটিয়েছে এবং জীবনের ত্রিশটি বছর সে এখানকার লোকজনের মাঝে মিলেমিশে বেড়ে উঠেছে । তাই এলাকার মানুষের টুকটাক হাঁড়ির খবর থেকে শুরু করে মুখের চাহিদা পর্যন্ত, সবকিছু তার একদম নখ-দর্পণে । বলতে গেলে, অনেকটাই যেমন দেশ তেমন বেশ ।
যেহেতু সে সুযোগ পেয়েছে, তাই আগের মালিকের সঙ্গে কথা বলে সে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছে রেস্টুরেন্টটা চালানোর জন্য । খুব বেশি কিছু আসলে সজীব করেনি । আসলে সে তার বুদ্ধিমত্তা খাটিয়েছে । সে মূলত এখানে খুব সস্তায় হালকা কিছু চা-নাস্তা খাবার বেশ ভালোভাবে পরিবেশন করার ব্যবস্থা করেছে ।
যেমন ধরুন বিভিন্ন প্রকারের চা সঙ্গে স্যান্ডউইচ আর হালকা তেলে ভাজা খাবার । মানে স্বল্প পয়সায় অনেকটা সময় ধরে গল্প করে লোকজন বেশ কিছু খাবার খেতে পারবে এবং বেশ ভালো সময় কাটাতে পারবে । যেহেতু খাবাবের দাম সস্তা তাই নিরিবিলি পুকুরের উপরে বসে লোকজন বেশ ভালই সময় কাটাতে পারবে, এমন চিন্তা ভাবনা করেই ঐ রেস্টুরেন্টের মালিকের কাছ থেকে কিছুদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিল জায়গাটি ।
তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে যা হয় আরকি ।বর্তমানে রেস্টুরেন্টটি সে নিজেই ক্রয় করে নিয়েছে । ব্যবসা তো আসলে হুটহাট করে হয় না । এর জন্য শ্রম দিতে হয় এবং ধৈর্য্য ও মানসিকতার ব্যাপার তো থাকেই । সর্বোপরি এখানকার খাবারের সর্বোচ্চ মূল্য ত্রিশ টাকা আর সেটাই হচ্ছে মালাই চা সঙ্গে যদি দুটো পিঁয়াজি নেন দশ টাকা করে আর যদি একটা স্যান্ডউইচ সঙ্গে নেন বিশ টাকা দিয়ে তাহলে মোট পঞ্চাশ টাকা থেকে ষাট টাকায় বেশ ভালো খাওয়া হবে সন্ধ্যের নাস্তাটাতে এবং হালকা করে গল্পগুজবও করা যাবে ।
এমনিতেই নিরিবিলি পরিবেশ, তার ভিতরে বর্ণিল রঙের আলোকসজ্জা, মনটা ফুরফুরে হয়ে যেতে বাধ্য আরকি ।
ব্যবসা আসলে চাইলে অনেক ভাবেই করা যায় । যদি চিন্তা-চেতনা সঠিক থাকে , তাহলেই আরকি সর্বক্ষেত্রেই করা সম্ভব । ওর টার্গেট ছিল সকল ধরনের কাস্টমারকে কেন্দ্র করে । কোনো শ্রেণীবিন্যাস রাখেনি এখানে । হয়তো এখানে কেউ গাড়ি নিয়ে এসেও চা খায় , কেউ হয়তো আমার মতো পায়ে হেঁটে এসেও চা খাওয়ার চেষ্টা করে । আর আশেপাশের লোকজন তো বিকেল বা সন্ধ্যেবেলায় সবাই মিলে বসে গল্পগুজব করে চা নাস্তা খেয়ে যায় ।
একেতো সজীব ছোটবেলা থেকেই এই এলাকাতেই বড় হয়েছে এবং তারমধ্যে শুধুমাত্র বুদ্ধিমত্তার পরিচয় সে দিয়েছে । মানে অনেকটা সময় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত । তবে তার মানসিকতার তারিফ করতে হয় । সেই দিন সন্ধ্যার পরে সজীব আমাকে মেসেজ করেছে । আগের যে চায়ের রেস্টুরেন্টটা ছিল সেটা সে ক্রয় করে ফেলেছে । লিখেছে বেড়াতে আসিস , এখন এটা তোর বন্ধুর । এখানকার মালাই চা খুব প্রসিদ্ধ । তুই চাইলে খেয়ে দেখতে পারিস ।
যেহেতু বন্ধু মানুষ কর্মে লেগে গিয়েছে । তাই ব্যাপারটা শুনেই ভালো লেগেছে । তার ভিতরে বেশি ভাল লেগেছে সে আগে যে রেস্টুরেন্টের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতো আর কিছুটা সময় সেখানে দিত , সে এখন সেটার নিজেই মালিক । এটা ভেবেই বেশ ভালোলাগা বোধ কাজ করছিল ।
যাইহোক তার দাওয়াত আমি কোনভাবেই ফেলতে পারি না । অবশেষে পরিবার নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম । তবে আমরা এমন সময় গিয়েছি যে, সেখানে আসলে বসার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল না । কারণ ভিতরে লোকজন দিয়ে ভর্তি । তাই আমাদেরকে অবশ্য বাহিরে বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, একদম খোলা আকাশের নিচে ।
মন্দ বলবো না , সবকিছুই ভালো তবে পরিবেশনটা একটু আলাদা । হয়তো এজন্যই তাদের নাম ডাক দ্রুত ছড়িয়ে গিয়েছে । বেশ ভালই লাগলো, একশত টাকার ভিতরে চা-নাস্তা করে ফেললাম পরিবারের সকলে মিলে । পরিবার বলতে, আমি হীরামনি আর সঙ্গে শায়ান বাবু । যদিও শায়ান কিছু খায়নি, তবে ওর মার চা খাওয়ার সময় বেশ ভালোই ঝামেলা করছিল ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
পরিবেশটা সত্যি অনেক সুন্দর ছিলো। এখন মানুষ এগুলোই চায় একটু লাইটিং থাকবে নিরিবিলি পরিবেশ থাকবে। আমাদের এলাকাতেও এমন কিছু রেস্টুরেন্ট হয়েছে, একটার নাম বাঁশ বাড়ি, আর একটা গোল পাতার কুঞ্জ। এগুলোর ডেকারেশন লাইটিং দেখে মানুষের মনে এমনিতেই একটা কৌতূহল জাগে। আর খাবার ভালো মানের হলে কাস্টমার রেগুলার কাস্টমার হয়ে যায়। আপনার বন্ধু সজীবের ব্যবসার উন্নতি কামনা করি। পরিশ্রম আর বুদ্ধি থাকলে জীবনে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
বাহ তোমার এলাকার রেস্টুরেন্টের নাম গুলো তো বেশ ভালই লাগলো শুনে। ধন্যবাদ তোমার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য ।
মালাই চা ও খাবারের মান বেশ ভালো সেটা তো আপনার কাছ থেকে জানতেই পারলাম। তাছাড়াও আমার কাছে মনে হচ্ছে নিরিবিলি বসে গল্প করার পরিবেশ ও চমৎকার আলোকসজ্জার কারণে লোকজন বেশি আকৃষ্ট হয়। আর সাথে সুন্দর পরিবেশনটা তো আছেই। আসলে ভাবতে অবাক লাগে দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে মাত্র ৫০ টাকায় অনেক সুন্দর নাস্তা পরিবেশন করছে। যাইহোক ভাইয়া সবাইকে নিয়ে বন্ধুর রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যার সময় টা বেশ ভালোই উপভোগ করেছেন মনে হচ্ছে। রেস্টুরেন্টের সুন্দর আলোকসজ্জা দেখে শায়ান বাবু খুব সুন্দর ঘুরে ঘুরে দেখছে। আমার কাছেও খুব ভালো লাগলো আপনার সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে কাটানো সময় টুকু।
ধন্যবাদ আপনাকে।
সত্যি বলতে কি, সময়টা আসলেই বেশ ভালো ছিল । তাছাড়াও দীর্ঘদিন পরে বাহিরে গিয়েছি , আমরাও বেশ চাঙ্গা হয়েছি সময়টা কাটাতে পেরে ।
ঠিক বলেছেন ভাই, ব্যবসার জন্য আসলে বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। একটু ভিন্ন ধরনের আইডিয়া আর কৌশলী হলেই হবে, অবশ্য সাথে একটু সৌভাগ্য থাকতে হবে। যাই হোক চার দোকান থেকে রেস্টুরেন্ট মালিক আসলেই উন্নতি বলতে হবে। পরিবারের সঙ্গে ভালোই সময় কাটিয়েছেন বন্ধুর রেস্টুরেন্টে। মাঝে মাঝে এমন সময় কাটাতে পারলে খারাপ লাগে না কি বলেন। দোয়া রইল, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন সবসময়।
সত্যি বলতে কি, আসলে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সজীব । হয়তো তার কারণেই আজকে তার সফলতা সে পেয়েছে ।
ভাইয়া ভাবিতে নিয়ে খুব সুন্দর একটি মূহর্ত সেয়ার করেছেন। মালাই চা আসলে অনেক মজার। আপনার বন্ধু খুব ভাল একটি কাজ করেছে। আমিও আমাদের এলাকার শহীদ মিনারে মাঝে মাঝে চা খেতে যায়। ভালই লাগে চা খেতে খেতে আড্ডা দিতে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
যদিও মালাই চা আমি প্রথমবার খেয়েছি, তবে আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে এবং তাছাড়াও রেস্টুরেন্টটাতে আমরা বেশ ভালোই সময় কাটিয়েছি ।
ভাইয়া আপনি একদম ঠিক বলেছেন ব্যবসা হুট করেই করা যায় না। এর জন্য চাই মানসিক প্রস্তুতি এবং ধৈর্য। যদি ধৈর্য ধরে ব্যবসা না করা হয় তাহলে কখনোই সফলতা অর্জন করা যায় না। তবে যাই হোক আপনার বন্ধু এখন নিজেই এই সুন্দর একটি রেস্টুরেন্টের মালিক জেনে অনেক ভালো লাগলো। অল্প দামের মধ্যেই সবাই সেখানে গিয়ে পছন্দের খাবার গুলো খেতে পারে এবং নিরিবিলি সময় কাটাতে পারে।আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে জায়গাটি অনেক সুন্দর। আপনি আপনার পরিবার নিয়ে সেখানে গিয়েছেন এবং সুন্দর সময় কাটিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। ভাইয়া আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ♥️♥️
সত্যি বলতে কি, আমার মতে আমার বন্ধু যা করেছে সেটা তার নিজের যোগ্যতা থেকে করেছে এবং যার কারণেই সে আজকে সফলতার মুখ দেখেছে । আর আমি মনেকরি ব্যবসার ক্ষেত্রে এরকম মানসিকতা থাকা উচিত ।
এখনকার রেষ্টুরেন্টগুলো আসলে ডেকোরেশন এর কারণে বেশী আকর্ষনীয় হয়। যে যত চমৎকারভাবে ডেকোরেশন করে করতে পারবে সেইসব রেস্টুরেন্ট তত বেশি চলে। রেস্টুরেন্টের খাবারের দাম অনেক কম মনে হয়েছে আমার কাছে। এজন্যই হয়তো রেস্টুরেন্টটি আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লোকজনের কাছে। ভাবি আর ভাতিজাকে নিয়ে খুব ভালো সময় কাটিয়েছেন ভাইয়া। মালাই চায়ের কথা শুনে তো আমারই খেতে ইচ্ছে করছে। খুব পছন্দের আমার মালাই চা। রংপুরে যাওয়ার সময় এই মালাই চা খাওয়ার দাওয়াত নিলাম আপনার কাছ থেকে😋।
আপনাকে দাওয়াত দিলাম, আসেন আপনি । আপনাকে নিয়ে, আমার গিন্নিকে ও আপনার ভাতিজাকে নিয়ে , আবারও যাব সেই রেস্টুরেন্টের মালাই চা খেতে , দাওয়াত রইলো ।
আমার নামেই নাম দেখছি আপনার বন্ধুর। এটা দারুন লাগলো শুভ ভাই। আমিও যাব মালাই চা খেতে। সুযোগের অপেক্ষায় আছি। পরিশ্রম যে মানুষ কে কোথায় নিয়ে যেতে পারে সেটা আরেকটা বার প্রমাণ দিল আপনার বন্ধু। রেস্টুরেন্ট টা অনেক সুন্দর করে আলোক সজ্জা করেছে। আর মোটামুটি কম খরচেই ভালো মানের খাবার আছে । দোয়া করবেন ভাই আপনার বন্ধু সজিব এর মত আমিও যেন এমন উঠে দাঁড়াতে পারি একদিন।
দেখো ভাই, চাইলে জীবনে অনেক ভাবেই বেঁচে থাকা যায় । যদি একটু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় শুধুমাত্র দেওয়া যায় তাহলে ।
সুন্দর ঝিলিমিলি আলোকসজ্জায় পরিবেশটা মনোরম আর আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল।এত সুন্দর একটা পরিবেশ স্কপরিবারের নাস্তা খেয়ে মাত্র 100 টাকা বিল হয়েছিল।সপরিবারে বলতে আপনি ভাবি আর শায়ান বাবু ওর মায়ের চা খাওয়ার সময় অনেক বিরক্ত করছিল।তারমানে ও নিজেও খেতে চাচ্ছিল।যাই হোক সব মিলিয়ে খুব ভালো সময় কাটিয়েছেন।♥♥
যদিও টাকার পরিমাণটা কম , তবে তাদের খাবার পরিবেশন ব্যবস্থা এবং খাবারের মান বেশ ভালই ছিল । সর্বোপরি আমরা বেশ ভালোই সময় কাটিয়েছি সেই সন্ধ্যাতে ।
বাস্তবতা যখন লেখার মধ্যে ফুটে ওঠে তখনই তাকে লেখনি বলা যায়। আর হাজার গালি শুনিয়ে মে ফ্যালফেলিয়ে দেখে কিংবা হাসতে হাসতে পাগল হয় সেই তো বন্ধুত্বের মর্ম বোঝে ।সত্যিই আপনাদের এমন বন্ধুত্বের তারিফ করতে হয় ।আর খাওয়া-দাওয়া জীবনভর চলবে ।কখনো রেস্তোরাঁয়, কখনো নিজের হোটেলে ,কখনো বাবার হোটেলে ,কখনো বা আপন মনে। সুন্দর লিখেছেন।
ও নজরুল ভাই , আপনার লেখা যতই পড়ি ততই আমি বেশ গভীরভাবে চিন্তায় পড়ে যাই । বেশ দারুন লিখছেন ইদানিং আপনি , ভালই লেগেছে আপনার মন্তব্যটা । আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক টিকে থাকুক , যুগ থেকে যুগান্তর এমনটাই প্রত্যাশা করি । ভালোবাসা রইল অবিরাম।
💝