মাঝেমাঝে অনেক সুন্দর উপদেশ শুনতেও তিতা লাগে ।
প্রতিদিন সকাল আটটা মানেই, আমাকে এই পথ ধরে আমার কর্মস্থলে যেতে হয় এবং সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা হয় সেটা হচ্ছে প্রতিদিন কর্মস্থলে যাওয়ার সময় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যেতে হয় এবং প্রত্যেক জনের গল্প থাকে বিভিন্ন রকম। গতকাল আমার সঙ্গে যে মানুষটা গিয়েছে তার গল্পটা একটু ভিন্ন । চেষ্টা করব সেটা শেয়ার করার জন্য ।
ছবিটা দেখলেন, ছবিটা দেখে কি বুঝলেন বলেন তো! ছবিটার মাঝে কিছু অর্থ লুকিয়ে আছে। আচ্ছা আমি ব্যাখ্যা দেই । সেটা হচ্ছে লোকটা তার শখের বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে অজানা কোন গন্তব্যে। যাচ্ছে শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে । আসলে এই সময়টাতে মানুষজন একদম অস্থির হয়ে গিয়েছে। কারণ পকেটে পয়সা না থাকলে, হাঁড়িতে ভাত না থাকলে । পৃথিবীর সুন্দর উপদেশ গুলোও তখন তিতা লাগে । আমি আসলে এত ব্যাখ্যা কোনভাবেই জানতাম না তবে যেহেতু আমাকে, দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার পথ প্রতিনিয়ত যেতে হয় এই পথ ধরে। তাই একটু সময় পাওয়া যায় পথে,সহযাত্রীর কথা শোনার জন্য । হয়তো গতকাল টাও ঠিক এমনটাই কিছু হয়েছিল বিধায় এ গল্পটা আমার শোনা হয়েছিল ।
এরা অনেক আগে থেকেই গাড়িতে আছে এবং আমি কালকে দেরি করে গাড়িতে উঠেছি । যাইহোক গাড়ি যখন চলতেই শুরু করেছে, একটা সময় গিয়ে লোকটা তার মেয়েটার অবস্থা দেখে বার বার বুঝাচ্ছে। যে কষ্ট নিও না তোমার মা ঠিকই আসবে আমাদের কাছে । যদিও আমি প্রথমে কথাগুলোতে খুব একটা গুরুত্ব দেইনি। পরে একটা সময়ে গিয়ে কথাগুলোতে গুরুত্ব দিতে আমি বাধ্য হয়েছি কারণ ছোট মেয়েটার অবস্থা দেখে। একটা সময় গিয়ে ,আমি জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করলাম কি হয়েছে আপনাদের। তার পরবর্তীতে যেটা শুনতে পেলাম সেটা কিছুটা দুঃখজনক ঘটনা । অভাব ও অসচ্ছলতার কারণে লোকটার বউ বাধ্য হয়েছে ঘর ছাড়তে। কারণ প্রতিনিয়ত ঝগড়াঝাঁটি হতো সংসারে । সমসাময়িক সময়ে, অভাব যেন প্রতিটি ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। জানিনা এভাবে চলতে থাকলে, ভবিষ্যতে আরো কী অপেক্ষা করছে এটা বলা খুব মুশকিল ।
আমার বোঝার বাকি রইল না। কারণ আমি বুঝতে পারছি এ লোকটা তার ভিটেমাটি ছেড়ে,অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছে। মানে হয়তো কোনো বড় শহরে যাচ্ছে ,যেখানে গিয়ে সে তার ভাগ্যকে পরিবর্তন করবে । তাই যেহেতু তার বউ চলে গিয়েছে অন্যত্র । তাই লোকটা সঙ্গে করে তার বাচ্চা মেয়েকে নিয়েই বাধ্য হয়েছে ঘর ছাড়তে। কারণ মেয়ের প্রতি নাকি তার ভালোবাসা কাজ করে । একটা সময় সংসারে নাকি সব ছিল, ভালোবাসা ছিল সচ্ছলতা ছিল কিন্তু সময়ের কারনে সব যেন আজ ফিকে হয়ে গিয়েছে । কারো কোন নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নাই,কে কোথায় যাচ্ছে,কে কি করবে এটা যেন কেউ জানেনা । তবুও লোকটা ছুটে যাচ্ছে বড় কোন শহরে তার ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। সে চায় তার সংসারটাকে আবার আগের মতো করে সাজাতে ।
ছবিতে লোকটিকে যারা হাসতে দেখছে। তাদেরকে আমি বলব, আপনাদের দেখার ভিতর কিছুটা ভুল আছে। কারণ লোকটার জন্মগত ভাবেই মুখ বাঁকা আর আমার স্বল্প সময়ের যাত্রার মধ্যে ছবিটা তোলার একটু সময় হয়েছিল। যাইহোক এই ছিল আজকের ঘটনা ,চেষ্টা করব পরবর্তী সময়ে নতুন কিছু নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য।তবে প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তার কাছে,ভালো থাকুক এই মানুষগুলো। তাদের সংসার আবার জোড়া লাগুক। তাদের জীবন আবার সুন্দর হোক এই কামনাই করি ।