সময় কত দ্রুত চলে যায়

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

png_20221109_140207_0000.png

ডিজাইন canva দ্বারা বানানো

এইতো আমার এখনো মনে আছে, সেই দিন রাতের কথা। বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিদিনের ন্যায় হ্যাঙ্গআউট শো শেষ করে, তারপরে নিজের ব্যাক্তিগত কিছু কাজ শেষ করে ঘুমোতে ঘুমোতে ভোর হয়েছিল।

ঘুম তখনো আমার একদম পরিপক্ক হয়নি, এমনিতেই শুক্রবারের দিন , সকাল বেলার দিকে কাজ খুব একটা হাতে নেই । তাই মোটামুটি ভালোই ঘুমিয়ে ছিলাম । হুট করেই বাবার ফোন, ফোন ধরতেই বাবা যেন কান্না জড়িত কন্ঠে বলছে, তোর ছোটমা রোড এক্সিডেন্ট করেছে । তাকে নিয়ে বগুড়া মেডিকেলের দিকে রওনা দিয়েছি, অবস্থা একদম আশঙ্কাজনক পূর্ণ।

আসলে ছোট মা মূলত বাড়িতে থাকতেন এবং আমার ছোট বোন থাকতো হোস্টেলে, সে মূলত বাড়ি ফিরে আসছিল এবং তাকে নেওয়ার জন্যই ছোট মা বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিল আর যাত্রাপথেই ঘটনাটা ঘটেছিল।

মূলত ভ্যানে করে শহরের দিকে আসছিল এবং পিছন থেকে এক মোটর বাইক চালক সেই ভ্যানটিকে ধাক্কা দিয়েছিল আর তখনই ছিটকে পড়ে গিয়েছিল ছোট মা রাস্তার উপর । দ্রুত ছিটকে পড়ে যাওয়ার পরে যেটা হয়েছিল, সেটা হচ্ছে তার মাথার উপর দিয়ে মোটর বাইকটা চলে গিয়েছিল এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল ।

আমাদের লোকাল হসপিটালে আমার ছোট-মাকে ভর্তি করে নেয় নি । কারণ যেহেতু হেড ইঞ্জুরি ছিল এবং নাকে মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল, তাই মূলত তারা তাকে রেফার করেছিল । বাবা এম্বুলেন্স নিয়ে রওনা দিয়েছিল বগুড়া মেডিকেলের উদ্দেশ্যে । তবে খুব একটা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি বগুড়া মেডিকেলে পৌঁছানোর আগেই ছোট মা ইহলোক ত্যাগ করেন।

যেহেতু আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন সে, আর ঐপক্ষে আমার দুটো বোন ছিল , হঠাৎ করেই সাজানো-গোছানো সংসারটা যেন বিষাদে ভরে উঠলো । আমি আর দেরি করতে পারলাম না ।

আমার কলিগদের কে জানিয়ে দিলাম, রোড এক্সিডেন্টে আমার ছোট মা মারা গিয়েছে । আমাকে সেখানে দ্রুত যেতে হবে । যদি কোন কমিউনিটির কোন কাজ চলে তাহলে তারা যেন সেটা সামলে নেয় ।

আজ যখন ফেসবুকের নিউজ ফিড ঘাঁটছিলাম, সেদিনের সেই মুহূর্তের ছবিগুলো হুট করেই ভেসে উঠেছিল । যা আমাকে , অনেকটাই মানসিকভাবে আঘাত করেছে । আসলে মৃত্যু কখন কার কিভাবে হবে, এটা বলা যায় না । তবে অপমৃত্যু মেনে নেওয়া বেশ কষ্টকর । বিশেষ করে এই সড়কগুলো যে কবে নিরাপদ হবে, তা বলা বেশ কষ্টসাধ্য । শুধু যে আমার ছোট মায়ের মৃত্যু হিসেবে কথাগুলো বলছি , তা কিন্তু না । কারণ প্রতিনিয়তই এই সড়কগুলো যেন একেকটা মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

ছোট মা মারা যাওয়ার পর থেকে দাদু বাড়িতে আর সেই রকম ভাবে যাওয়া হয়ে ওঠেনি । আজ আবারো বাবা ফোন করেছে, বলছে আগামী শুক্রবারে তোর ছোট মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী , তুই চেষ্টা করিস অবশ্যই তোর পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসার জন্য । আমি এবার বলেই ফেললাম , কোন চিন্তা করিও না, আমি যত ব্যস্তোই থাকি তাও সেখানে গিয়ে উপস্থিত হব ।

তবে একটা সত্য কথা, আর কত তাজা প্রাণ ঝরে গেলে যে , নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হবে, এটা নিয়ে ভীষণ চিন্তা হয়। তারপরেও আমি ভীষণ আশাবাদী , একদিন যাতায়াত ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হবে এবং সড়ক গুলো বেশ নিরাপদ হবে এবং এই মৃত্যু ফাঁদটা ক্রমশ কমে যাবে, এমনটাই আশা ব্যক্ত করছি, এই অবেলায় এসে ।

ছোট মাকে ভালো রাখুক সৃষ্টিকর্তা , তার পরম যত্নে । আজ হয়তো তার স্মৃতিগুলো বেশ ভাবিয়ে তুলেছে আমাকে । কারণ জীবনের অনেকটা সময় তার সঙ্গে আমার কেটে ছিল, যার কারণে তার মুখটা বারবার ভেসে উঠছে, আমার চোখের সামনে ।

দেখতে দেখতেই একটা বছর সময় যে, কিভাবে কেটে গেল তা বোঝাই গেল না । আসলে সময় তার নিজের গতিতে চলছে , কারো জন্যই যেন অপেক্ষা করে থাকছে না । আজ সেই মুহূর্তগুলো যেন , শুধুই স্মৃতি হিসেবে আছে ।

Banner-4.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

খুব খারাপ লাগলো ভাই আপনার ছোট মায়ের মৃত্যুর কারণ শুনে। এদেশের সড়ক কি আদো নিরাপদ হবে ভাই? আমার তো মনে হয়না। প্রতিদিন কতো নিরীহ প্রাণ ঝড়ে যাচ্ছে সড়কে। বিচার হওয়ার নাম নাই। কোনো জবাবদিহিতা নাই। এভাবেই চলছে যুগ যুগ৷ কষ্ট বুঝে তারা যাদের হাড়ায়। 😔😔😔

 2 years ago 

আসলে নিরাপদ হওয়াটা জরুরি এমনটাই তো ভাবছি।

 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া দেখতে দেখতে কিভাবে যে এক বছর হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। এইতো সেদিন আপনার ছোট মায়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনলাম। উনি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আপনি এই বিষয়ে পোস্ট করেছিলেন। আসলে সময় কত দ্রুত চলে যায়। শুক্রবার যেহেতু আপনার ছোট মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী তাই আপনি গ্রামের বাসায় যাবেন জেনে ভালো লাগলো। আসলে আপনি যেমন তাদেরকে আপন করে নিয়েছেন তেমনি আপনার ছোট মাও আপনাকে ভালোবেসে আগলে রাখত।

 2 years ago 

ব্যাপারটা যে আপনাদের মনে আছে, এটা জেনে বেশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

 2 years ago 

রোড এক্সিডেন্ট এখন আমাদের দেশে কিছুই না। প্রতিনিয়ত এক্সিডেন্ট হাজার মানুষ মরে যাচ্ছে। অকালে তাদের তাজা প্রাণগুলো ঝরে যাচ্ছে। যাইহোক কিভাবে আপনার ছোট ভাইয়ের প্রাণ চলে যাওয়াটা আসলেই মেনে নেওয়ার মতো না। দোয়া করি আপনার ছোটমা জান্নাত বাশি হোক।

 2 years ago 
আসলে এ ধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের বড়ই কষ্ট দেয়।যেন মনে নেওয়া যায় না।প্রায় পত্রিকা খুললেই এ ধরনের রোড এক্সিডেন্ট চোখে পরে।দেখলেই মনটা কষ্টে ভরে যায়।আসলে আপনার ছোট মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুের আপনাদের পরিবার অনেকটা মানসিক কষ্ট পেয়েছিল।আর সময়টাও কত দ্রুত চলে গেল।দেখতে দেখতে একটি বছরের পরিসমাপ্তি।যাইহোক,আগামী শুক্রবার আপনার ছোট মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী বাড়িতে যাবেন জেনে খুব ভালো লাগলো।আপনার জন্য শুভকামনা রইল দাদা।
 2 years ago 

হুম মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি ভাই যাওয়ার , এখন দেখি কি হয়।

 2 years ago 

মানুষের হায়াতের কথা বলা যায়না।কার কখন কি হয়ে যাবে কেউ জানেনা।
তবে আমিই শকড হয়ে গেলাম এটা দেখে যে তার মৃত্যুবার্ষিকী চলেও এসেছে।মনে হয় সেদিনই আম্মুর কাছে শুনলাম তার ইহলোক ত্যাগের বিষয়ে।
আল্লাহ পাক তাকে ভালো রাখুক।

 2 years ago 

দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গেলো, কিন্তু মনে হচ্ছে কয়েকদিন আগের কথা। সময় কত দ্রুত ফুরিয়ে যায়, আমি ওনাকে কখনো দেখিনি কিন্তু আপনার আর ভাবির মুখে যতটুকু গল্প শুনেছি তাতে করে নিঃসন্দেহে একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন তিনি। আপনার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী হলেও আপনাদেরকে খুব আপন করে নিয়েছিলেন, আসলে ভালো মানুষ পৃথিবীতে বেশিদিন থাকে না। মন খারাপ করবেন না ভাইয়া, ওনার জন্য দোয়া করেন। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। 🙏

 2 years ago 

অনেক খারাপ লাগলো। আজ প্রথম জানলাম। সময় সত্যিই খুব দ্রুতই চলে যায়। সময় থেমে থাকে না। কিন্তু কোন কোন ঘটনায় আমাদের মন মাঝে মাঝেই থমকে যায়।মন খারাপ করবেন না ভাইয়া।😔আপনার ছোট মায়ের জন্য দোয়া করেন,আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন,আমিন।

 2 years ago 

আসলেই ভাইয়া সময় অনেক দ্রুত চলে যায় ।সময়ের চাকা কখনো থেমে থাকে না । প্রিয় মানুষের চলে যাওয়াও দেখতে দেখতে বছর কেটে যায় । মনে হয় যেন এই তো সেদিন। আসলে এই রোড এক্সিডেন্ট টে মারা যাওয়াটা সত্যি মেনে নেওয়া যায় না। আপনার পরিবার যে অনেক মানসিক যন্ত্রণার মধ্য সময় কাটিয়েছে সেটা বুঝতে পারছি । তারপরেও সবকিছু ছাপিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে । মন খারাপ না করে মৃত্যুবার্ষিকীতে সবাই পুরো পরিবার একসঙ্গে হয়ে আপনার ছোট মায়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করবেন এটাই কামনা করছি । ধন্যবাদ ।

 2 years ago 

হুম আপু ইচ্ছে আছে পুরো পরিবার নিয়ে যাওয়ার জন্য। ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।

 2 years ago 

আসলে ঠিক বলেছেন ভাইয়া মৃত্যু তো সবার হবে কিন্তু অপমৃত্যু মানা যায় না। আপনার ছোট মায়ের জন্য সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো। যদিও প্রায় এক বছর হয়ে গেল, সময়টা যেন কিভাবে পার হয়ে গেল। ভালোই করেছেন আপনার বাবাকে বলেছেন, আপনারা অবশ্যই ব্যস্ততার মাঝে থাকলেও গ্রামের বাড়িতে যাবেন। আসলে আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থা কখনোই ঠিক হবে না।

 2 years ago 

শুনে খুবই খারাপ লাগলো , জানিনা এভাবে প্রতিদিন কতো কতো মানুষের প্রাণ হানি হচ্ছে ,আমাদের দেশের উন্নতি আদৌ হবে কি ,

 2 years ago 

এমন ভাবনা তো আমারো আপু, দেখি কি হয় সামনে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68542.93
ETH 2454.71
USDT 1.00
SBD 2.54