হাসপাতালে কিছু সময়
দুদিন গ্রামে থাকার পরে আজকে শহরের বাসায় চলে এসেছি। মূলত দুটো দিন বেশ ভালোই সময় কাটিয়েছি গ্রামীণ পরিবেশে। আজকে শহরে ফিরেই মূলত প্রথম যে কাজটা করেছি,সেটা হচ্ছে বাবুর পঞ্চম ডোজের টিকাটি ভালোভাবে দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি ।
মূলত বাবুর জন্মের পর থেকে সবগুলো টিকাই এখন পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই দেওয়া সম্পন্ন হল। আসলে এই টিকা গুলো শিশুদের জন্মের পর থেকে দেড় বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ কোর্স সময় মাফিক কমপ্লিট করতে হয়। যেহেতু এটা একটা বাড়তি চাপ ছিল তাই মূলত বাসায় ঢোকার আগেই হসপিটালে গিয়েছি আর গিয়ে ভালোভাবে টিকা কেন্দ্র থেকে বাবুর টিকাটা দিয়ে নিয়ে এসেছি ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে বাবুকে নিয়ে যখন হসপিটালে গিয়েছি, তখন বাবু গিয়েই কিছুটা উৎফুল্ল ছিল কিন্তু যখন এক এক করে অন্য বাচ্চাদের টিকা দেওয়া দেখেছে তখন কিছুটা ও ঘাবড়ে গিয়েছিল। কারণ তাকেও যে মূলত একই কাজের জন্য এই জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে ।
হীরাকে বললাম দুশ্চিন্তা করার কোন দরকার নেই। বাবু আমার কাছেই থাকবে, তুমি পাশে থাকিও না। তোমার ভয় লাগতে পারে, তুমি দূরে থেকে দেখার চেষ্টা করো। যে ভদ্রমহিলা টিকা প্রদান করছে, সে আমার পূর্ব পরিচিত। সে আমাকে দেখেই আজ সকালে বেশ ভালই খুশি হয়েছে। আমার নাম ধরে বলল, তোমার বাবু তো দেখি এখন বেশ ভালই বড় হয়েছে। আমিও তার সঙ্গে ভালোভাবে কুশল বিনিময় করার চেষ্টা করলাম ।
ভদ্র মহিলা প্রথমেই আমাদের বলেছিল, একটু ধৈর্য্য ধারণ করার জন্য। কারণ আমার মত আরও অনেকেই তাদের ছোট বাবুদের কে নিয়ে এসেছে টিকা দেওয়ার জন্য। যেহেতু এটা সরকারি হসপিটাল, তাই এই পাবলিক সার্ভিসগুলো নেওয়ার জন্য আমি মনে করি যে, সকলের একটু হলেও ধৈর্য্য ধারণ করে থাকা উচিত। কারণ আমি যে রকম আমার কাজের জন্য গিয়েছি, ঠিক অন্য মানুষরাও একই সেবা গ্রহণ করার জন্য গিয়েছে ।
অতঃপর সেই কাঙ্খিত সময় চলে আসলো। বাবুকে নিয়ে বসে পড়লাম টিকা প্রদানকারী ভদ্রমহিলার পাশে। যেহেতু সে আমার পূর্ব পরিচিত, তাই তার সঙ্গে খানিকটা সময় কথা বলে মানসিকভাবে হালকা হয়ে নিলাম। সে বলল যেহেতু এটা পঞ্চম ডোজ তাই বাবুর ডান পায়ের মাংসপেশিতে দেবে। তাই বাবুর শরীর থেকে পায়জামাটা আমি খুলে ফেললাম, এবার বাবু বুঝতে পেরেছে যে, তার সঙ্গে কিছু একটা ঘটবে।
ভীষণ ছটফট করা শুরু করলো এবং কান্নাকাটি ও চেঁচামেচি করছিল। যদিও আমি ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম, তবে ও কিছুতেই শান্ত হচ্ছিল না। যাইহোক অল্প কিছুক্ষণ পরেই ইনজেকশন রেডি, এখন শুধু পুশ করা বাকি ।
ভদ্রমহিলা মূলত এই কাজের জন্যই এখানে নিযুক্ত আছে। তাই বলা যায় সে ভীষণ অভিজ্ঞ এইক্ষেত্রে। সে বলল যে, আপনি আপনার বাবুকে শক্ত করে ধরুন এবং বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি । অতঃপর বাবুর পা ধরে থাকতেই ভদ্রমহিলা ইনজেকশনটা পুশ করে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই বাবুর ক্রমাগত কান্নার পরিমাণটা আরও বেড়ে গিয়েছে। পরিবেশটা যেন মুহূর্তেই একদম ভারী হয়ে গেল।
আমি কোন রকমে বাবুকে নিয়ে সেই জায়গা থেকে প্রস্থান করলাম। কারণ তার কান্নার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে এবং তার অবস্থা দেখে অন্য বাচ্চারাও একটু অস্বস্তি বোধ করছিল। যাইহোক এমন পরিস্থিতিতে ওকে নিয়ে কোনো রকমে হসপিটালের বাহিরে চলে আসলাম এবং বাবুকে আরও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম যে, এখন আর কিছু হবে না। ওনারা কেউ তোমার আশেপাশে নেই, তুমি এখন নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। তবে তারপরেও ও বেশ ভালই ব্যথা পেয়েছে। যাইহোক অবশেষে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ।
দুদিন বাসাতে ছিলাম না,তাই মোটামুটি অনেক কিছুই অগোছালো হয়ে আছে। সেইগুলো ঠিকঠাক করতে হবে এবং রাতে আবার কমিউনিটির কিছু কাজ আছে এবং ফেসবুকে লাইভ ভিডিও করতে হবে, সর্বোপরি একটা চাপ কাজ করছে নিজের ভিতরে। যাইহোক এখন যেহেতু বাসায় ফিরেছি, মোটামুটি ভালোভাবেই কাজে মনোনিবেশ করতে পারবো।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসলেই ভাই সরকারি কাজগুলোতে আমাদের সবাই ধৈর্য ধারণ করে থাকাই উচিত। যিনি টিকা দিচ্ছিলেন ওই ভদ্র মহিলা তাকে আপনি আগে থেকেই চিনতেন তার সাথে গল্প করে হালকা হয়ে নিলেন এটা যেন ভালো লাগলো। যেহেতু আপনার বাবু আগে থেকেই অন্য বাচ্চাদের টিকা দেওয়া দেখছিল তাহলে তো মনে হয় সে আরো বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিল। যাইহোক আপনারা সুন্দরভাবে আপনার বাবুর টিকা দিয়ে বাড়ি ফিরছেন এটা যেন ভালো লাগলো।
হুম বাবু ঘাবড়ে গিয়েছিল আর তাছাড়া অন্য বাচ্চারাও বেশ অস্বস্তি বোধ করছিল।
আমার মেয়েকেও যখন টিকা দিয়েছিলাম তখন আমি সাথে করে যাইনি। আসলে আমার ভীষণ ভয় করে। বিশেষ করে মেয়ে কান্না করলে সেটা তো একদমই সহ্য হবে না। যতবার ওর টিকা দিয়েছিল ততবার ওর আব্বু এবং দাদু নিয়ে গেছিল। সায়ানকেওতো দেখলাম ভীষণ ভয় পেয়েছে। যদি ওর দিদি টিকা দিয়েছেন তিনি আপনার পরিচিত হওয়াতে সুবিধা হয়েছে। ভালোই হলো সবকিছু ভালোভাবে মিটে গিয়েছে। পাঁচটা টিকা ভালোভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে।
হুম আপু, সেই মুহূর্তে বাবু ভীষণ ভয় পেয়েছিল। এটা একদম ঠিক বলেছেন।
আমার বাবুকে টিকা দেওয়ার সময় আমি নিজেও সামনে থাকতে পারতাম না,ওর কান্না দেখে আমার খুবই অস্বস্তি লাগতো।তাই ওর বাবাকে দিয়েই পাঠাতাম, পরে দেখতাম বাবা ছেলে দুইজন মিলেই কাঁদতো😉😉।যাই হোক অবশেষে যে বাবুর টিকা দিতে পেরেছেন তাই ভালো লাগছে।
এই জন্যই আপু, আপনার ভাবি কে সামনে রাখি নি। আর তা তাছাড়াও আমার নিজের ই ভীষণ খারাপ লাগতেছিল।
আমার ছেলে ইয়ানের টিকা দেয়া শেষ হয়েছে মাস দুয়েক আগে। বেশ ভয় পেয়ছিল সে আর ভীষণ কান্না করছিল। তবে দেখলাম শেষের টিকাতে তেমন জ্বর আসেনি।
একটু কষ্ট হলেও টিকাগুলো দিয়ে দিয়েছেন ভালো হয়েছে। আর টিকা দেয়ার পর বাচ্চারা বেশ কষ্ট পায় তাই অনেক বিরক্ত করতে থাকে।
ধন্যবাদ ভাই পুরো বিষয়টি গুছিয়ে উপস্থাপন করার জন্য। আর দিনশেষে সত্যিই আপনি বেশ ব্যাস্ত মানুষ। দোয়া রইল পুরো পরিবারের জন্য 🥀
পোস্টের হেডলাইন দেখেই বুঝেছিলাম যে এরকম কিছুই হবে। আহারে কত কষ্ট। উৎফুল্ল হয়ে গেল আর তারপরে সুচের খোঁচা খেয়ে এলো। মুখটা দেখেই আমার মায়া লাগছে। ওর মুখে আমি বৌদির ছাপ দেখতে পাই। সবাই বলে ছেলেটা মায়ের মতো দেখতে হলে সুখী হয়।আর ঠিকই করেছেন দাদা, আপনি ডাক্তারি লাইনে ছিলেন আপনার হয়তো এই বিষয়গুলো সাধারণ লাগতে পারে।কিন্তু বৌদি তো মা,মায়ের আবার মন দুর্বল হয়।বৌদির হাতে ওকে দেননি ভালই করেছেন। আর আরেকটা জিনিস সেটা আমার ভীষণ ভালো লাগলো।কার্ড এর মধ্যে মায়ের নাম আগে দেওয়া হয়েছে । বাবার নাম পরে দেওয়া হয়েছে।