সেদিনের সেই সন্ধ্যা || @shy-fox 10% beneficiary
এটা সম্ভবত গত সপ্তাহের শেষের দিকের মুহূর্ত ছিল । যাইহোক সোহাগের সঙ্গে আমার অনেকদিন থেকে দেখা হয় না । ও আমার পূর্ব পরিচিত, শেষ যেবার কথা হয়েছিল তখন সম্ভবত ও ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি পড়তো । তারপরে আসলে জীবন জীবিকার তাগিতে বেশ ভালই দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল । আসলে দিনশেষে এটাই বাস্তবতা ।
আগের দিন রাতে সোহাগ কে ফোন দিয়েছিলাম, শুনলাম তুই নাকি এখন এলাকাতেই থাকিস । ও বলল হ্যাঁ ভাই, আপনি ঠিকই বলেছেন । আমি তো ওকে বলেই ফেললাম, বিকাল বেলা করে বাবুকে নিয়ে ঘুরতে বের হই । তোর যদি কোন সমস্যা না থাকে , তাহলে আমি তোর সঙ্গে দেখা করতে চাই । আসলে অনেকদিন দেখা নেই । ও আবার সেই ফাঁকে বলেই ফেলল , সুমনও এখন এলাকাতেই থাকে । তো আমি বললাম, ঠিক আছে তাহলে আগামীকাল দেখা হবে । তুই সুমনকে সঙ্গে করে নিয়ে বিকেল বেলা রেডি থাকিস, আমি তোকে ফোন দিব ।
কিছুদিন আগেই আমি সম্ভবত বলেছিলাম যে, বাবুকে নিয়ে বিকেল করে ঘুরতে বের হওয়াটা আমার অনেকটাই নেশার মত হয়ে গিয়েছে । তারপরেও যেহেতু প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জায়গায় যাই, আমি চেষ্টাকরি ফেলে আসা জীবনের মানুষগুলোর সঙ্গে নতুন করে সাক্ষাৎ করার জন্য ।
হয়তো এতে একটা ভিন্ন রকম অনুভূতি কাজ করে । কারণ যে মানুষগুলোর সঙ্গে, একটা সময় শৈশবের মুহূর্ত কাটিয়েছি হয়তো আজ কর্মব্যস্ততার কারণে তাদের সঙ্গে ঠিক সেই ভাবে দেখা হয়ে ওঠে না । তবে তারপরেও একটা দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই যায় । সেই জায়গা থেকেই ভাবলাম যে, সোহাগের সঙ্গে দেখা করি ।
সোহাগ তো আমাকে বলেই ফেলল, তাহলে আমাদের দেখা হবে আননের চায়ের দোকানে । আনন আমার বাল্যবন্ধু, তবে ওকে দেখে বোঝার কোন বুদ্ধি নেই যে , ওর বয়স ত্রিশ পার হয়ে গিয়েছে । ওকে দেখতে এখনো ২০ থেকে ২৫ বছরের যুবক ছেলেগুলোর মতোই লাগে ।
অতঃপর যেমন কথা ঠিক তেমন বাস্তবায়ন । পরের দিন বিকেল বেলা রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম আননের চায়ের দোকানের উদ্দেশ্যে । রাস্তাতেই সোহাগ ও সুমনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল । ওদেরকে বললাম, আগে বাবুর জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে । বাবুর ডায়াপার শেষ হয়ে গিয়েছে এবং তাছাড়াও সেরেলাক কিনতে হবে । ওরা বলল , তাহলে ঠিক আছে । আগে ভাতিজার জন্য এগুলো কেনা হোক , তারপরে কোথাও গিয়ে বসে গল্প করা যাবে ।
অবশেষে বাজারের ভিতরে গিয়ে বাবুর প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে , তারপর বাবুকে নিয়ে আননের চায়ের দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম । আমাদের তিনজনকে দেখে আনন মোটামুটি বেশ ভালই খুশি হয়েছে । যদিও এই দোকানটাতে আমি মাঝে মাঝে এসেই চা খাই , তবে আজকের দিনে আমার সঙ্গে আরও দুজন অতিথি ছিল । আমি নিজের থেকেই কিছু খাবার ও মালাই চা অর্ডার করলাম ।
যেহেতু দীর্ঘদিন পরে সোহাগ ও সুমনের সঙ্গে দেখা, তাই একটু খোশ গল্প শুরু হয়ে গেল । ওদের কাছ থেকে শোনার চেষ্টা করছিলাম যে, ওদের সময় গুলো এখন কেমন যাচ্ছে । সুমনের বেকারত্বের হতাশার গল্প আর সোহাগ মোটামুটি একটা আইটি কোম্পানিতে চাকরি করছে , চেষ্টা করছে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ।
আর এইদিকে আনন চায়ের দোকান দিয়ে মোটামুটি একটু ভিন্নভাবে চা বিক্রি করছে । কারণ এখানে একটু চায়ের দামটা বেশি , তবে পরিবেশটা বেশ মানসম্মতভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছে । এদের অবশ্য মালাই চায়ের কদর করতে হয় । খুব বেশি গরম না আবার একদম ঠান্ডাও না । আমি যখন মালাই চা খাচ্ছিলাম, বাবুও তখন বারবার মুখ নাড়ানাড়ি করছিল । অল্প একটু দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম , বেশ তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিল বাবু ।
দীর্ঘদিন পরে সোহাগ ও সুমনের সঙ্গে দেখা আর আননের ব্যবসার খোঁজখবর নিলাম । সর্বোপরি সেদিনের সন্ধ্যাটা বেশ ভালই কেটেছিল । সত্যি বলতে কি , পুরনো মানুষগুলোর সঙ্গে যখন দীর্ঘদিন পরে দেখা হয় , তখন যেন মনে হয় ফেলে আসা সময়গুলো আবারো নতুন করে ফিরে পাচ্ছি । যদিও এখন কর্মব্যস্ততার কারণে আগের মত গুছিয়ে সময় দেওয়া হয় না । তবে তারপরেও যখন হুটহাট করে এরকম একটা মুহূর্ত চলে আসে, তখন সেটা অনেক স্মৃতিমধুর হয়ে থাকে ।
সোহাগ তো সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ও বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হবে । তবে সুমনের মনে হয় আরো সময় লাগবে । যাইহোক সোহাগ আমাকে অগ্রিম দাওয়াত দিয়ে দিল । আননের ও অবশ্য এমন চিন্তা-ভাবনা আছে, তবে ও আরেকটু সাবলম্বী হলে , তারপরে হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেবে । যাইহোক দিন শেষে ফেলে আসা মানুষগুলোর সঙ্গে বেশ ভালো একটা সময় কাটিয়েছিলাম, সেদিনের সেই সন্ধ্যাবেলায় ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
খুবই চমৎকার একটি ব্লগ আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন ভাইয়া। এই ব্লগের মাধ্যমে আপনি কিছু বাস্তব চিত্র আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন, একটা সময় যাদের সঙ্গে আমরা অনেকটা সময় অতিবাহিত করতাম যাদের ছাড়া হয়তো ঘোরাঘুরি করাটা একদম পানসে লাগতো, হঠাৎ করে জীবিকার তাগিদে হয়তো তারা হারিয়ে যায়। ইচ্ছা থাকলেও তাদের সঙ্গে আর তেমন একটা দেখা বা যোগাযোগ হয়ে ওঠেনা। কিন্তু হঠাৎ করি তাদের কথা মনে পড়ে এবং ফোনে কথা বলা হয় আপনার ক্ষেত্রে ও সেটাই ঘটেছে। অনেকদিন পরে তাদের সঙ্গে খুবই চমৎকার একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন সুন্দর এই মুহূর্তটা আমাদের সকলের মধ্যে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।।
আসলে জীবন বড়ই বৈচিত্র্যময় , কখন কি হয় তা কি আর বলা যায় । তবে আপনার মন্তব্যটা বেশ ভালোই লেগেছে ভাই ।
ভাই আজকে আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলে খুবই ভালো লাগে। তাই আজকে আপনি অনেক দিন পর সুমনের ও সোহাগ এর সাথে দেখা হয়ে খুবই আনন্দময় মুহূর্ত উপভোগ করেছেন। আসলে বন্ধু এবং পুরনো অন্য মানুষদের সাথে যদি হঠাৎ করে দেখা হয় তাহলে খুবই ভালো লাগে। কর্ম ব্যস্ততার কারণে হয়তো আগের মতো আনন্দময় মুহূর্ত উপভোগ করা যায় না। তারপরেও যেটুকু সময় উপভোগ করা যায় তুমি যেন ভালো লাগে। পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যাই। হোক আজকে আপনার পোস্টটি আমার খুবই ভালো লেগেছে।
পুরনো মানুষগুলোর সাথে দেখা হলে যেমন ভালো লাগে তেমনি তাদের সাথে মনের কথা আদান প্রদান করলে ভেতরটা অনেক হালকা হয়ে যায়। পুরনো বন্ধুদের সাথে যখন দেখা হয় তখন তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায় এবং নিজের কথাগুলো তাদের সাথে শেয়ার করা যায়। আসলে কারো সাথে দেখা হলে পুরনো সেই সম্পর্ক আরো বেশি গভীর হয়। ভাইয়া আপনার বন্ধু সুমনের বেকারত্বের হতাশা যেন কেটে যায় এই দোয়া করি। আসলে বেকারত্ব অভিশাপের মত।
আসলে শুধুমাত্র সুমনের না , সকল বেকারের বেকারত্ব কেটে যাক , এমনটাই প্রত্যাশা করি আপু ।
শৈশব বন্ধুদের দেখা দীর্ঘদিন পর দেখা ৷ সত্যি আসলে পুরনো মানুষ গুলোর সাথে দেখা হলে মনটা আসলে অনেক ফুরফুরে লাগে ৷ যা হোক বাল্য বন্ধু আননের চায়ের দোকানে সবাই মিলে আড্ডা বেশ সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন৷ আসলে এখন পরিচিত মানুষ গুলো সবাই জীবন জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত হয়ে গেছে ৷ তবে সোহাগ ভাই নতুন জীবন শুরু করবে জেনে ভালো লাগলো ৷
শায়ন বাবাও তাহলে মালাই চা খেয়েছে ৷
আসলেই সেদিন মনটা বেশ ফুরফুরে হয়েছিল। পুরনো মানুষ তবে মুহূর্ত গুলো যেন একদম জীবন্ত ছিল ।
এভাবেই যেন পরিচিত মানুষ গুলোর সাথে দেখা হয় ৷ এমনটাই প্রত্যাশা করি
সন্ধ্যা বেলা বন্ধুদের সাথে খুবই সুন্দর সময় পার করেছেন। আসলে পুরনো বন্ধুদের দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগে এবং তাদের সাথে সময় পার করতে আরো বেশি ভালো লাগে। আপনার বন্ধুর সোহাগ ও সুমন ভাই এর সাথে দেখা হয়ে আপনার খুবই ভালো লাগলো। আসলে সময়টা খুব তাড়াতাড়ি পার হয়ে গেল। ব্যস্ততার কারণে হয়তো আগের মতন বেশি আড্ডা দিতে পারেন না। তারপরেও পুরনো বন্ধুদের সাথে অনেক সুন্দর মুহূর্ত পার করেছেন।
বাল্য বন্ধুর সাথে দেখা হওয়া অনেক আনন্দের! যদি অনেক দিন পর হয় তাহলে সে আনন্দ সীমানা ছাড়িয়ে যায়। সে দিনের সন্ধ্যাটা দারূণ কেটেছে আপনাদের তাতে সন্দেহ নেই।বন্ধুতার জয় হোক। সেই সন্ধ্যার সবার জন্য শুভ কামনা।
বাহ্ দারুন কিছু সময় কাটিয়েছেন তাহলে ,আসলে এটা কিন্তু সত্যি বলেছেন পুরোনো মানুষদের সাথে সময় কাটালে অনেক ভালো লাগে আর পুরোনো দিনের কথা গুলো মনে পরে যায় ,ইচ্ছে করে আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম। দারুন লিখেছেন
চাইলেও কি আর ফেলা আসা দিনে ফিরে যাওয়া তবে , মাঝে মাঝে পুরনো মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা হলে ভালোই লাগে ।
খুব ভালো একটি নেশা হয়েছে ভাইয়া আপনার। ছোট বাচ্চাকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার। বাচ্চারা বাইরে গেলে খুব খুশি হয় । আপনার তো একসঙ্গে দুই তিনটি কাজ হয়ে যাচ্ছে। বাবুর প্রয়োজনের জিনিসপত্র কিনে নিলেন। আবার বন্ধুদের সঙ্গেও আড্ডা দিলেন। আসলে একটা সময় এমন আসে যে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আর তেমন আড্ডা দেয়া হয় না। বিকেলে বের হয়ে বেশ ভালো সময়ই কাটালেন মনে হয়। খুব ভালো লাগলো দেখে।
আসলে ডাক্তারি ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে এখন বিকেল বেলা করে ঘোরাঘুরি করাটা বেশ ভালোই নেশা হয়ে গিয়েছে আপু । এইটা সত্য দীর্ঘদিন পরে ওদের সঙ্গে দেখা হয়ে বেশ ভালোই লেগেছিল।
যখন কোনো বন্ধুর সঙ্গে অনেক দিন বিরতির পরে দেখা হয় সেই মুহূর্তটি অনেক ভালো কাটে। কারণ বন্ধুর সব জমানো কথা এবং নিজের জমানো কথাগুলোর আদান-প্রদান সেই সময়টা খুব দ্রুত কেটে যায়। আর দোয়া করি আপনার বন্ধুর বেকারত্ব খুব তাড়াতাড়ি কেটে যাক এবং খুব ভালো একটি ইনকাম সোর্স এর সন্ধান খুঁজে পাক।
কিছু কিছু মানুষ আছে বয়স যাদের চেহারায় খুব বেশি ছাপ ফেলতে পারেনা আমার মনে হয় সোহাগ সেই দলের। আর কাছের মানুষ গুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হলে যে কি রকম অনুভুতি হয় তা তো আমরা সবাই অনুধাবন করি। ভালোই লাগলো আপনাদের গেট টুগেদার।