অভিজ্ঞতার আলোকপাত || @shy-fox 10% beneficiary
আক্তার মিয়ার বাড়ী আমার চেম্বারের পিছনেই । বলতে পারেন চেম্বারের জানালা খুললেই আক্তার মিয়ার বাড়ি দেখা যায় । যাইহোক এলাকায় নতুন ডাক্তার হিসেবে এসেছি , তাই মাঝেমাঝে অনেক বয়স্ক লোকজন এসে আমাকে বাজিয়ে দেখে। দেখে ,ডাক্তার ছোকরা কিছু করতে পারে কিনা । মানে এককথায় ডাক্তারের নলেজ কেমন, এটা একটু জানার চেষ্টা করে ।
যদিও আমি ব্যাপারগুলোকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করি । তবে মাঝে মাঝে স্বাভাবিক ব্যাপার গুলো অনেকটা সময় বিরক্তির কারণ হয়ে যায় । যাইহোক একটু খোলাসা করে বলার চেষ্টা করছি ।
ঐ যে বললাম চেম্বারের জানালা খুললেই আক্তার মিয়ার বাড়ি দেখা যায়, তাই একটু মাঝে মাঝে কথা হতো । ওখান থেকেই একটু আন্তরিকতা হয়েছিল। তবে আন্তরিকতা গুলোকে যে অনেকেই সুযোগ হিসেবে গ্রহন করে, এটা হয়তো আক্তার মিয়াকে না দেখলে আমি খুব একটা বুঝতাম না।
যাইহোক কয়েকদিন থেকে আক্তার মিয়ার উপরের চোয়ালের দাঁতে ভীষণ ব্যথা করছিল । ভদ্রলোকের ষাট বছরের কাছাকাছি বয়স হবে।
মাঝেমাঝে আমার চেম্বারে এসে কি করছি এইসব খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করত। তবে গত কয়েকদিন থেকে ওনার যে রূপটা দেখেছি, তাতে আমি অনেকটাই বিরক্ত হতে বাধ্য হয়েছি ।
মানুষ বড়ই অদ্ভূত , মুহূর্তেই রূপ পরিবর্তন করে ফেলে । ভদ্রলোকের দাঁতের ব্যথার কারণ কিন্তু উনি নিজেই । কারণ উনি নিজেই তার দাঁতের যত্ন সঠিকভাবে নেয় নি । যাইহোক আমি তাকে প্রথমবার প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছিলাম এবং চেষ্টা করেছিলাম আমার প্রাপ্ত স্যাম্পল ওষুধগুলো থেকে তাকে ওষুধ দেওয়ার জন্য । কয়েকদিন খেয়ে ভালো ছিল । তারপরে দীর্ঘদিন পরে পুনরায় আবারও এসেছে । এবার যখন তার দাঁতের অবস্থা দেখলাম , মোটামুটি আমি নিজেই কিছুটা শিহরিত হয়ে গিয়েছি। কারণ অনেকটাই ইনফেকশন হয়ে ক্যাভিটিস হয়ে গিয়েছে। অবস্থা এতটাই করুন যে, তার দাঁতটি অপারেশন করে ফেলে দিতে হবে ।
এবার যখন আক্তার মিয়া আমার চেম্বারে এসেছে, সে মূলত এসেছিল আমার কাছ থেকে ফ্রিতে স্যাম্পলের ওষুধ নেওয়ার জন্য । তার যখন আমি দাঁত দেখলাম । এবার তাকে বললাম,আক্তার কাকু আপনার দাঁতের অবস্থা খুব একটা ভাল না। এইভাবে ওষুধ খেয়ে খেয়ে আর কতদিন ব্যথা দাবিয়ে রাখবেন । আর এইসব ওষুধে তো অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, শরীরের উপর অনেক প্রভাব ফেলে । তার থেকে বরং অপারেশন করে দাঁতটাকে ফেলে দেন । এটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে । আমি আপনাকে আর এইভাবে ওষুধ দিতে রাজি নই ।
আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে , আমার একটা সঠিক মন্তব্য হয়তো তার কাছে সঠিক নাও লাগতে পারে । সে আমাকে বিরক্তিকর ভাবে বলেই ফেলল, হুম বুঝছি । বলো, অপারেশন করতে কত টাকা লাগবে । আমি সত্যি তার কথা শুনে, অনেকটাই বিব্রত হয়ে গিয়েছি। আমি তাকে খুব শান্তভাবে বলার চেষ্টা করলাম । কাকু পয়সার হিসাব পরে হবে , আমি আপনার শারীরিক সুস্থতার কথা চিন্তা করছি ।
এতদিনের আন্তরিকতা, এতদিনের ফ্রি পরামর্শ, স্যাম্পলের ওষুধ যেগুলো আমি মাগনায় দিয়েছি, আজ শুধুমাত্র আমার একটা সঠিক মন্তব্যের জন্য, আক্তার কাকু নিজেকে অনেক জটিল ভাবে প্রদর্শন করল । আমি তাকে ভীষণ ঠান্ডা মাথায় ও নরম সুরে বলে দিলাম, কাকু আপনার সমস্যা আরও বড় ডাক্তারকে দেখাতে হবে। আমার মত ছোট ডেন্টিস্ট কে দেখিয়ে কোন লাভ হবে না ।
যাইহোক এবার বেচারা বুঝতে পেরেছে যে , আমি অভিমান করেছি । অতঃপর সেই আগের চিরচেনা রূপ । আবার শুরু করে দিলো সেই কাকুতি-মিনতি। সেই রকম অনুরোধ । কি একটা অবস্থা । মানুষ বড়ই অদ্ভূত, নিজের প্রয়োজনে এরা সব রকম আচার আচরণ করতে পারে। এই যে মানুষটা একটু আগে নিজেকে জটিলভাবে প্রদর্শন করেছে, সেই মানুষটাই আবার একটা কথা শোনার পরে , সে আবারও ভিন্নভাবে আমার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করছে । কি অদ্ভুত ব্যাপার তাইনা ।
যাইহোক আমি এবার চেঁচিয়ে আমার রিসিপশনিস্টকে ডাকলাম এবং বললাম, দেখো আক্তার কাকুর জন্য কি করা যায় এবং যেটা না নিলেই নয়, সেই ব্যবস্থাই করো এবং তাকে তাড়াতাড়ি ডেন্টাল ইউনিটে শোয়ানোর ব্যবস্থা করো । আমার হাতে সময় কম, অপারেশনটা দ্রুত করতে হবে ।।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
আসলে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা গিরগিটির মতো নিজের রূপ পাল্টায়। স্বার্থলোভী লোক। যাইহোক, আপনার লেখা পড়ে যেইটা বুখতে পারলাম যেহেতু তার বয়স ষাট বছরের কাছাকাছি। হয়তো তার মেজাজটাই কিছুটা খিটখিটে তাই আপনাকে অপারেশনের টাকার কথা বলছে। বয়স বাড়লে মানুষের বোধ শক্তি কিছুটা লোপ পায়। তাই তার উপর রাগ করে লাভ নেই।
তবে আমি মনে করি কারো কাছ থেকে উপকার পেলে তাকে উপকার করতে না পড়লেও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত। আপনার লেখা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ডাক্তারি পেশা অনেক সুন্দর একটি পেশা। মানুষের সেবা করারই যার লক্ষ্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
প্রয়োজনে বাবা
নইলে দেয় থাবা
কি ভয়ংকর মানুষ ওরে,
কোথায় তুমি যাবা।।।
প্রয়োজনে নরম ওরা
ওরাই আবার কঠোর
কথার মাঝে সাইকেল নয়
চালিয়ে দেয় মোটর।।
আক্তার কাকুর জন্য রইল
শুভকামনা অনেক
প্রয়োজনে রূপ বদলাতে
পারে তারা হরেক।
♥♥
একদম ঠিক বলেছেন আপু ।
একটা মানুষ ভুল করার পরে যদি তার ভুল শুধরে নেয় এটা কিন্তু অনেক বড় একটা গুণ। আসলেই ভাইয়া আপনি একটা মানুষকে খুবই সুন্দর ভাবে বোঝাতে পারেন যেমনটা আমাদের হ্যাংআউটে আপনি সুন্দর ভাবে আমাদের খুব অল্প কথায় বিষয়গুলোকে ক্লিয়ার করে দেন। আপনার দিনের অভিজ্ঞতা গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার ফলে এখান থেকে আমি কিন্তু অনেক বড় একটা শিক্ষা পেলাম। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে চমৎকার এই পোস্ট টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ভাইয়া,মানুষ রূপ পরিবর্তন করতে সময় লাগে না। যখন তার স্বার্থে আঘাত লাগে তখন মুহূর্তের মধ্যে তার আসল রূপ বেরিয়ে আসে। ভাইয়া,আপনার পুরো লেখা পড়ে আমি বুঝতে পারলাম আপনি বড়ই বিরম্বনার ভিতরে আছেন।তারপরও ভাইয়া, ডাক্তার হলে এই রকম রোগীদের ব্যবহার কিছুটা সহ্য করতে হয়। ডাক্তাররা তো মহান সৃষ্টিকর্তার পরে ডাক্তারের সম্মান দেওয়া হয়।বলতে হবে ভাইয়া,আপনার অনেক ধৈর্য্য আছে।আর এমনিতেও ভাইয়া, বয়স হলে মানুষ গুলো যেনো কেমন হয়ে যায়।তাদের আচার-ব্যবহার কিছুটা শিশু সুলভ হয়ে যায়। যাইহোক ভাইয়া আপনার লেখাটা পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া,এত সুন্দর একটি পোস্ট মাঝে মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
ভাই আপনি ঠিক বলেছেন আসলেই আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে। যারা দেখতে চায় যে লোকটি দক্ষতা কেমন এজন্য বাজিয়ে দেখার জন্য মাঝেমধ্যে আসে। আক্তার বাবুর ঘটনাটি পড়ে আমার খুবই ভাল লাগল, কারণ আক্তার বাবুর মত সমাজে আমাদের অনেক মানুষই আছে। তাদের চিন্তাধারা শুধু ফ্রিতে খেয়ে যাবে। এতে যদি তাদের সুস্থ নাও হয় তার পরেও তারা এই ফ্রিতে ওষুধগুলো খাওয়ার চিন্তাভাবনা করবেই। যাইহোক আক্তার বাবু দাঁতের অবস্থা ভালো না। আপনি যখন তাকে একটি ভাল পরামর্শ দিলেন, সে এই পরামর্শটা ভালোভাবে নিল না। আপনার উপর রেগে গেল। পরবর্তীতে আবার আকুতি শুরু করে দিলো। আসলেই মানুষের চরিত্র তাই এরকম। নিজের স্বার্থের জন্য সকল রকমের ব্যবস্থা নিতে পারে।
আসলেই ভাইয়া মানুষ খুবই অদ্ভুত।
আপনার লেখাটি পড়ছিলাম আর আমি নিজে অনুভব করতে ছিলাম। মনে হচ্ছিল কাহিনীটি আমার নিজের চোখের সামনে ঘটছে। আপনার লেখাটি পড়ে আমার অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।
আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ভাই ।
আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকুই বলতে পারি আসলে আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ বসবাস করে যারা নিজের প্রয়োজনে সব সময় নিজের চেহারা পরিবর্তন করে ফেলে। গিরগিটি যেমন ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায় তেমনি এই স্বার্থলোভী মানুষগুলো নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য মুহূর্তের মধ্যেই রং বদলে ফেলে। এসব মানুষগুলোই কটু কথা বলতে দ্বিতীয়বার ভাবে না। আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা বুঝতে পারি আসলে আমাদের চারপাশের মানুষের মানসিকতা সম্পর্কে। এসব মানুষ কখনোই বদলায় না। কারণ তাদের মানসিকতার পরিবর্তন কখনো হয় না বা তারা নিজেরাও নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টাও করে না। অনেক সুন্দর কিছু কথা শেয়ার করেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করেছেন।
এটা একেবারে ঠিক বলেছেন ভাইয়া।মানুষ নিজের দরকারে সব রকম রূপ ধারণ করতে পারে।তবে এটা দেখে ভালো লাগলো যে আপনি তাও সব মেনে নিয়ে সাহায্য করেন।
ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আসলে মানুষ কখনো কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। আপনি তাকে ভালো পরামর্শ দিয়েছেন এবং তার সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। আসলে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যাদের স্বভাবই এরকম। কৃতজ্ঞতাবোধ তাদের ভিতরে নেই। নিজের প্রয়োজনে সব সময় নিজের রূপ বদলায়। সময় থাকতে মানুষ সচেতন হয় না বলেই তারা বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় পরে। কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝেনা। সে যদি সঠিক সময়ে নিজের দাঁতের যত্ন নিতো এবং আপনার কথাগুলো মেনে চলতো তাহলে আরো দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতো। অনেক সুন্দর কিছু কথা সকলের মাঝে তুলে ধরেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।