প্রদীপ নিভে গেল ||@shy-fox 10%beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

20211001_110147.jpg
রাত তখন তিনটার মতো বাজে হুট করে মোবাইলটা বেজে উঠল এবং মোবাইলে চোখে পড়তেই দেখলাম আম্মুর ফোন ।আমি একটু কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। এত রাতে তো আম্মু কখনো ফোন করে না। হুট করে রাত্রিবেলা আম্মুর ফোন পেয়ে যখন ফোনটা ধরলাম । অপরপ্রান্ত থেকে আম্মুর থেকে কেঁদে উঠল এবং বলল তোর নানি কেমন যেন করছে । শুধু মাকে এতোটুকুই বললাম, মা তোমার কি হয়েছে? মা বার বার বলল নানি কেমন জানি করছে , মার কথা বার্তা শুনে বুঝতে পারছি মার মন মাননসিকতা ভালো নেই। আমি বললাম যে তুমি কোথায়, মা বলল যে লোকাল হসপিটালে।
20211001_103950.jpg
আমি বুঝতে পারছি যে কোন একটা ঝামেলা হয়েছে অবশেষে আমার কর্পোরেট মোবাইলটা বের করে, সেখান থেকে লোকাল হসপিটালের ইমারজেন্সি নাম্বারটাতে ফোন দিলাম এবং ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম । ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার যেটা বলল, সেটা শোনার পরে আমার মোটামুটি হাত-পা কিছুটা অবশ হয়ে আসার মত আসছিল ।
PhotoCollage_1633109744062.jpg
এমনিতেই গভীররাত ,তারপরে এই রকম একটা দুঃসংবাদ । সবমিলে কী করবো, আসলে বুঝে উঠতে পারছিনা । তার ভিতরে বাড়ি থেকে কমপক্ষে 15 কিলোমিটার দূরে আছি। এই অবস্থায় সেখানে সশরীরে উপস্থিত হওয়া মুশকিল । অবশেষে আমি চেষ্টা করছিলাম মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত করে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। যাইহোক আমি প্রথমে মামার কাছে ফোন দিলাম এবং তারপরে মামার কাছ থেকে, শুধুমাত্র ইসিজি রিপোর্ট শোনার চেষ্টা করলাম। মামা বলল রিপোর্ট নাকি খুব একটা ভালো আসেনি ,এটা নাকি ডাক্তার বলে দিয়েছে এবং ডাক্তার বলেছে যে লোকাল হসপিটালে হবে না। তাকে বড় মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে হবে।
PhotoCollage_1633109686223.jpg
যাইহোক মামার কথাগুলো, যদিও আমি লোকাল হসপিটালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পরেই বুঝতে পেরেছিলাম । তাই নিজেকে আমি কিছুটা শান্ত করে,আমি আবারও আম্মুকে ফোন দিলাম এবং আম্মুকে বললাম । মা তুমি পরিবারের সবার বড় ,এখন ভেবে-চিন্তে আগাও। তুমি একটু ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করো। কারণ তুমি যদি ভেঙে যাও এই অবস্থায় নানী পরিস্থিতি কিন্তু আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং তোমার ভাই-বোনরা কিন্তু আরও চিন্তায় চিন্তিত হয়ে যেতে পারে।


লোকাল হসপিটাল থেকে মেডিকেল কলেজের দূরত্ব 30 কিলোমিটার। রাত তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত, কমপক্ষে আমি আম্মু এবং মামার সঙ্গে মুহূর্তে মুহূর্তে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কারণ সেই রাত্রি বেলা গাড়ি ম্যানেজ করা এবং সেই রাত্রি বেলা আবার প্রতিনিয়ত নানীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। যাইহোক আমি অবশ্য চেষ্টা করেছিলাম আম্মুকে মুখে কিছু সাজেশন দেওয়ার জন্য। কারণ যেগুলো নানির শরীরের জন্য ঐ মুহূর্তে কাজে আসতে পারে,এরকম কিছু উপদেশ । যাইহোক মোটামুটি একটা ঘন্টা মনে হচ্ছিল, ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে আমিও তাদের সঙ্গে বড় মেডিকেলে যাচ্ছি ।
আসলে গত সন্ধ্যায় নানি হঠাৎ করে, বমি করা শুরু করছিল এবং নারীর বয়স কমপক্ষে 70 বছরের বেশি হবে। আর সবথেকে বড় বিষয় নানী ব্যক্তি জীবনে ছয় সন্তানের জননী ছিল । নানু ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে, সে পুরো বড় সংসারটাকে একাই সামলিয়েছে শুধুমাত্র বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে। সে তার সংসার সামলিয়ে, তার সন্তানদের সবাইকে সুশিক্ষায় স্বশিক্ষিত করেছে। নানীর তিনজন ছেলে এবং তিনজন মেয়ে ,যাদের মধ্যে আমার মা সবার বড় এবং শহরেই তার দুটো সন্তান ছিল মানে আমার মেজো মামা ও ছোট মামা ।আসলে সবার মধ্যে মেজো মামা ও আমার আম্মুর সঙ্গে নানীর সখ্যতা ভালো ছিল ।
মেজো মামার সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল এখনো বিরাজমান। আর গ্রামের বাড়িতে থাকত নানি । আর ওখানে আমার আন্টির বাড়ি ছিল, সে মোটামুটি নানির দেখাশোনা করতো। রাত্রিবেলা গ্রামের বাড়িতে থাকা অবস্থাতেই, নানী যখন বুক ব্যথার কথা বলছিল এবং বারবার বমি করছিল। তখন গ্রামের বাড়ির লোকজন সেই অবস্থাতেই প্রথমে মেজো মামা ও আমার আম্মুকে ফোন দিয়েছে এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে স্থানীয় আত্মীয়ের সহযোগিতায়,মেজো মামা ও আমার আম্মু মিলে প্রথমে লোকাল হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ছিল। মূলত সন্ধ্যার পর থেকেই নানী দুবার মাইনর স্ট্রোক করেছিল ইসিজির প্রথম ভাষ্যমতে ।
লোকাল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার , ইমারজেন্সি মেডিসিন দিয়ে রেফার করে দিয়েছে বড় হসপিটালে। যাইহোক অবশেষে নানিকে নিয়ে আম্মু ও মেজো মামা, ও মেজো আন্টি যখন বড় মেডিকেলে আসতে পেরেছে তখন ঠিক ঘড়িতে ভোর 4.30 টার মত বাজে। যাইহোক মেডিকেলের সিসিইউ ইউনিটে নানীর জায়গা হয় । অবশেষে শুরু হয় সিসিইউ ইউনিটের চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে যদি বলি, তাহলে এটা অনেকটা এমন একটা ইউনিট যেখানে রোগীর বাঁচা-মরার চান্স সত্তর থেকে ত্রিশ ভাগের মতো । কারণ এখানে যে রুগী গুলো আসে, তার আগে থেকেই কিছুটা অর্ধমৃত অবস্থায় চলে আসে। এখানে এসে শুধুমাত্র রোগীকে সর্বোপরি ভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয় । যেটা একদম শেষ অবস্থাতেই যে কাজগুলো করা হয় আরকি ।
PhotoCollage_1633109789705.jpg
সিসিইউতে জায়গা হওয়ার পরপরই, সেখানকার ডাক্তার-নার্সরা মিলে সঙ্গে সঙ্গে নানীর পুরো শরীরে একদম, পোর্টেবল ইসিজির তার দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে এবং মনিটরে নানীর হার্টবিট শো করছে। সবকিছুর পর্যবেক্ষণ চলছে সেই মনিটর দেখেই । যাইহোক ডাক্তার অবশেষে স্ট্রেপটোকাইনেজ ইঞ্জেকশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল । কারণ যেহেতু স্ট্রোক হওয়ার 12 ঘন্টার ভিতরেই এই ইঞ্জেকশন দেওয়ার নিয়ম , যাইহোক অবশেষে ডাক্তারের সিদ্ধান্ত ও আমার মেজো মামা, মেজো আন্টি ও আমার আম্মুর সিদ্ধান্ত মোতাবেক নানীকে সেই পাওয়ারফুল ইনজেকশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল । এই ইনজেকশন দিলে তাৎক্ষণিক রোগীর শরীরে যে জায়গা গুলোতে রক্ত জমাট বেঁধে দিয়েছে, সে জায়গাগুলোতে তরল রক্ত করতে সহযোগিতা করে ।
মোটামুটি বলা যায় , এই ইঞ্জেকশন অনেক পাওয়ারফুল ও জীবনরক্ষাকারী। তবে এটার কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। যেমন এটা অতিরিক্ত পাওয়ারফুল হওয়ার কারণে, অনেক রোগীর বডি এই ইনজেকশনের ধাক্কা নিতে পারে না। যাদের শরীরে ইনজেকশনের ধাক্কা নিতে পারে তারাই মোটামুটি কিছুটা বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা তালিকায় থেকে যায়। যাইহোক নানির অনেকটা সময় ইনজেকশনটা ভালোমতোই গিয়েছে কিন্তু শেষের দিকে হুট করে পর্যবেক্ষণ মনিটরটার সিগন্যাল খুব খারাপ হয়ে আসছিল এবং একটা সময়ে গিয়ে টিট টিট করতে করতে থেমে গেল। যদিও ডিফাইব্রিলেটর দিয়েও শক দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে কাজ হয়নি আর হার্টবিট ফেরেনি ,পর্যবেক্ষণ মনিটরটা আর টিট টিট শব্দ করে নি। সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মনিটরের, মানে আমার নানির জীবন প্রদীপটা মূহুর্তেই নিভে গেল কিন্তু কিছুই করার থাকলো না ।

Sort:  
 3 years ago 

খুবই খারাপ লাগলো ভাইয়া সত্যিই অনেক খারাপ লাগলো হঠাৎ যখন আপনার আম্মু ফোন দিয়ে বলল আপনি যখন অন্যরকম হয়ে গেছিলেন এরকম পরিস্থিতি খুবই কষ্টকর। উনার জন্য দোয়া করি আল্লাহতালা যেন ওনাকে জান্নাত বাসী করুক।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

"সবাইকে একবার মৃত্যুর সাধ গ্রহণ করতেই হবে"।এটা আমরা সবাই জানি।তারপরেও কেন যে আমরা সম্পদ,যৌবন,রুপ,নেতৃত্ব নিয়ে অহংকার করি? আজ হোক কাল হোক আমাদের দুনিয়া ছেড়ে যেতেই হবে।আপনার নানীর ব্যপারটা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে শোকাহত। আপনাকে ধন্যবাদ। সুস্থ্য থাকবেন।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আমি ব্যক্তিগতভাবে শোকাহত। আমাদেরকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।দোয়া করি আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন আমিন।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আপনার নানির জন্য শোক প্রকাশ করছি। পুরোটা পোস্ট আমি পড়লাম। পরে খুব খারাপ লাগলো। এটি পুরো পরিবারের জন্য অনেক কষ্টকর একটা বিষয়। আল্লাহর যেন আপনার নানিকে জান্নাত দান করেন সেই দুয়া করি। খুবই খারাপ লাগচে আপনার লেখা গুলো পরে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর সাধ গ্রহণ করতে হবে।অনেক চেষ্টা করেছেন ভাই। দিনটি আপনার জন্য খুবই কষ্টের ছিল। আপনার নানীর জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।আপনার মনমানসিকতা যেন ভালো হয়ে যায় সেটাও কামনা করি।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহি রাজিউন। 😥😥
খুব খারাপ লাগলো ভাইয়া ।
দোয়া করি আপনার আম্মুকে আল্লাহ তায়ালা শক্তি দিক,মনোবল দিক।
বুঝতে পারছি আন্টির মনের অবস্থা কি হবে। 😥😥

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

😢কিছু করার নেই ভাই শুধু নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া।এটাই নিয়ম আসছি যেহেতু যেতে হবেই একদিন।আমার মনে হচ্ছে অ্যান্টি খুব নার্ভাস।এই মুহূর্তে তাকে সময় দেওয়া উচিত।
আপনার নানীর জন্য অনেক দোয়া রইলো ভাই।আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন।

আন্টির খেয়াল রাখবেন ভাই, সে যেন নার্ভাস হয়ে না পড়ে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

আপনার নানী মারা যাওয়ায় আমরা খুবই শোকাহত। আল্লাহ যেন ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন।আমিন। যদিও বিষয়টা দাদার কাছ থেকে শোনার পর থেকেই খারাপ লাগছিল। আজকে আপনার কাছ থেকে পুরো ঘটনা জানতে পেরে খুব খারাপ লাগল।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন।
বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমিন

 3 years ago 

আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি। অনেক সমবেদনা রইল।
সৃষ্টিকর্তা তাকে ভাল রাখুন ওপারে।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.11
JST 0.034
BTC 63418.73
ETH 3094.09
USDT 1.00
SBD 3.89