প্রস্থান ও আগমন
এ বাসায় তো কম করে হলেও দুই বছর হলে উঠেছি। প্রথম যেদিন এ বাসায় এসেছিলাম সেই দিন নিচতলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে যে ভদ্রলোক থাকে সেইদিনই তার নাম শুনেছিলাম। ভদ্রলোকের নাম হাকিম। সে বেশ কষ্ট করেই আমার নিজের মালপত্রগুলো পাঁচ তলায় আমার ফ্ল্যাটে বেশ ভালোভাবে সাজিয়ে দিয়েছিল। তবে কথায় কথায় স্যার স্যার বলে মুখে একদম ফেনা তুলে দিয়েছিল ।
স্যার ডাকে বড্ড এলার্জি আছে আমার। এটা আমি হয়তো বিগত সময়েও বলেছিলাম। মানুষের ভিতরে এতো ভেদাভেদ রাখতে আমি খুব একটা বেশি পছন্দ করি না। তার থেকেও বড় ব্যাপার হচ্ছে, সে যদি আমাকে ভাই বলে ডাকে তাহলে আমি বেশি খুশি হব প্রতিনিয়ত। যদিও প্রথম দিন হয়তো এই বাসার নিয়মকানুন বুঝতে কিছুটা আমার সময় লেগেছিল। তারপরে তো ঐদিন বেশ ভালোই ক্লান্ত ছিলাম তাই আর নিচে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
সম্ভবত একদিন পরে নিচে নেমেছিলাম চেম্বার যাওয়ার কারণে। তখন তো রোজ চেম্বার করতাম। চেম্বার থেকে ফেরার পথে বাসায় যখন ঢুকবো আবারো একই অবস্থা, স্যার বলে সম্বোধন করছিল আর চেষ্টা করছিল অতিরিক্ত আপ্যায়ন করার জন্য ।
তার অবশ্য দোষের কিছু নেই। কারণ এই ভবনে কমবেশি ১৮ থেকে ২০ টার মত পরিবার থাকে। যারা থাকে তারা মোটামুটি সবাই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাদের আসলে স্যার ডাক না শুনলে হয়তো মান-অভিমান বাড়তে পারে। যদিও আমি নিজের ব্যক্তি পরিচয় খুব একটা দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি না বা আমার এতো ভালোও লাগে না।
তারপরেও আমি বুঝতে পেরেছি হাকিম ভাই আসলে এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তাকে রোজ প্রতিনিয়ত এই পরিবার গুলোর লোকজনদের কে একটু বেশিই আপ্যায়ন ও সমাদর করে চলতে হয়। যেটা অনেকটায় স্বাভাবিক ও সে এটাতে অভ্যস্ত বলা চলে ।
আমি চেষ্টা করেছিলাম দ্রুত সেদিন বাসায় ঢোকার জন্য। তার সঙ্গে খুব একটা কথা বাড়ায় নি। তবে তার নাম্বারটা সংগ্রহ করে নিয়ে ছিলাম। বাসায় ঢুকেই ইচ্ছাকৃতভাবেই হাকিম ভাইকে ফোন দিলাম এবং বললাম আমার বাসায় আসার জন্য। আর হীরাকে বললাম, মোটামুটি বাসায় যদি হালকা কিছু খাবার থাকে তা একটু টেবিলে সাজিয়ে রাখো। নিচের হাকিম ভাই আসবে তার সঙ্গে আমি বসে কথা বলব ।
খানিক বাদেই হাকিম ভাই এসে উপস্থিত আমার বাসায় দরজায়। দরজা খুলে দেওয়া মাত্রই আবারো সেই একই সম্বোধন। এবার আমি বেশ হাসি মুখেই তাকে বললাম, ভিতরে আসুন। বসে যান চেয়ারে,আমার কিছু কথা আছে আপনার সঙ্গে। ভদ্রলোকের মুখটা আমি ঐদিন দেখেছিলাম, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তার চোখের চাহনি, ভদ্রলোক বেশ খুশি হয়েছিল আমার আপ্যায়নে।
এবার হাসতে হাসতে তাকে বলেই দিলাম, আপনি এরপর থেকে আমাকে ভাই বলে সম্বোধন করবেন। যদি কখনো আর আমাকে স্যার বলে সম্বোধন করেন, তাহলে কিন্তু আপনাকে আমি আর সুনজরে দেখবো না। হয়তো তার মনে জায়গা আমি সেদিনই করতে পেরেছিলাম, শুধুমাত্র একটা কথাতেই।
তবে আজ আমার খারাপ লাগছে, আজ আমার চোখে কোনায় জল । অচেনা এক ভদ্রলোকের জন্য, যার সঙ্গে আমার কোন রক্তের সম্পর্ক নেই, যার সঙ্গে আমার কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই, তারপরেও ভদ্রলোকের জন্য বড্ড মায়া হচ্ছে । দীর্ঘ দুটো বছরে কোনোভাবেই সে আমাকে অযত্নে রাখেনি বরং আমার জন্য সর্বদা বেশিই করেছে এই হাকিম ভাই।
কয়েকদিন আগে শুনলাম, সে নাকি বাসা থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছে। বেশ খারাপ লেগেছিল তখন। মুহূর্তেই খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, তবে যতদূর বুঝতে পেরেছিলাম, সে তার নিজের পরিবারের উপর অভিমান করে চলে গিয়েছে।
হয়তো ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। তবে সত্যি বলতে কি, মানুষের ভালোবাসা মানুষকে আবারও পূর্বের অবস্থানে ফিরে নিয়ে আসতে বাধ্য করে। হয়তো তেমনটাই হয়েছে এবার হাকিম ভাইয়ের সঙ্গে। আমি মনে করেছিলাম হয়তো তাকে মনে হয় আমি একাই শুধু ভালোবাসি তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এ বাসার কমবেশি সকলের মনেই সে অনেকটা স্থান জুড়ে আছে ।
তার পেশা যেটাই হোক না কেন,তার সততা ও পরিশ্রম দিয়ে সে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তাই হয়তো সে আবারও পূর্বের অবস্থানে ফেরত চলে এসেছে। আসলে যে কোন পেশা থেকেই মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া যায়। যদি সঠিক চিন্তাধারা,সততা এবং কাজকর্ম ঠিক থাকে তাহলে।
পরবর্তীতে বাসা মালিক কর্তৃক, সে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরেও তাকে আবারও খোঁজ করে আবারও তার স্থানে বহাল রাখা হয়েছে এবং আরো সম্মানের সহিত ।
হাকিম ভাইয়ের প্রস্থান বেশ ব্যথা দিয়েছিল আমাকে, তবে তার আগমন আমাকে আরো অনেকটাই প্রাণবন্ত করেছে। আমি বুঝি, এই মানুষগুলো সত্যিই আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি তার কাছে বরাবরই কৃতজ্ঞ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
কিছু কিছু মানুষ আছে যারা আপন হয়ে যায়। আসলে তাদের ব্যবহার এবং সততার জন্যই হয়তো তারা সবার মনে জায়গা করে নেয়। হাকিম ভাই সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। তাই তো তিনি চলে যাওয়াতে সবাই কষ্ট পেয়েছিল। যাই হোক তিনি আবারো ফিরে এসেছেন জেনে ভালো লাগলো। আসলেই মানুষগুলোর সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও হৃদয়ের গভীর থেকে তাদের জন্য অনেক ভালোবাসা তৈরি হয়।
এই বিষয়টি আমার অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া ।আপনি হাকিম ভাইকে ভাই বলে সম্বোধন করতে বলেছেন। আর হ্যা এটা ঠিক যেকোনো পেশায় সততার সাথে কাজ করতে পারলে মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া যায়।হাকিম ভাই যেমন আপনি এবং বাকি ২০ টা ফ্ল্যাটের মানুষের অনেকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।পরিবারের উপরে রাগ করে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন যদিও তবে তার সততা, নিষ্ঠার জন্য বাড়ীওয়ালা তাকে আবার সম্মানের সাথে তার জায়গাটা তেই দিয়েছে।দুই বছরে অনেক টায় মায়ায় পড়ে গিয়েছেন লোকটার।ধন্যবাদ ভাইয়া ভালো লিখেছেন ব্লগটি।
আমাদের ক্লাস নেয়ার সময় ও দেখেছি আপনি স্যার বলতে নিষেধ করতেন।হাকিম ভাইকেও ভাই বলতে বললেন।এতে আপনার উদারতার প্রকাশ ঘটলো।স্যার ডেকে চারিদিকে ভারী দেয়াল তুলে দিলে দুজন মানুষের সম্পর্ক আসলে সহজ হয় না।হাকিম ভাই সততা আর নিষ্ঠা দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিল তাই তার চলে যাওয়ায় সবাই খুব কষ্ট পেয়েছিল।যাই হোক আবার ফিরে এসেছে জেনে খুব ভাল লাগলো। রক্তের চাইতে আত্মার সম্পর্ক অনেক সময় খুব বড় হয়ে দাঁড়ায়।শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।