মুহূর্তটাকে জমিয়ে রাখলাম ||@shy-fox 10% beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

20211108_121506.jpg
এমনিতেই গতরাতে ক্লাস নিয়ে , মাথা ব্যথা করছিল । কারণ ক্লাস শুরু হয়েছিল রাত দশটায় এবং শেষ হতে হতে প্রায় রাত একটা বেজে গিয়েছিলো । মানে পাক্কা তিন ঘন্টা একনাগাড়ে চেয়ারে বসে কানে হেডফোন দিয়ে, সবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে একদম মাথা ঝিম ধরে এসেছিল । নিজেই এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে, কোন মত নিজেকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কফি খাওয়ার পড়ে মনে হলো যে ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। যাইহোক এখনো অনেকগুলো কাজ করা বাকি, কাজগুলো সেরে ঘুমোতে হবে ।

ঘুম বড় অদ্ভুত জিনিস চাইলেও, তা হুটহাট করে পাওয়া যায় না । যখন দরকার তখন যদি তাকে একটু বিরক্ত করেন, তাকে আর হাজার ডাকলেও সে কিন্তু আর আসবেনা। ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক আমার গত রাতে তেমনি ঘটেছিল । অবশেষে কাজ শেষ করে যখন ঘুমোতে যাবো, তখন দেখি ঘড়িতে ঠিক ভোর পাঁচটার মতো বেজে গেছে। যাইহোক আজ আর ঘুম হবেনা । কারণ সকাল বেলা শায়ানকে নিয়ে টিকা দিতে যেতে হবে।

PhotoCollage_1636486620811.jpg

তাও বিছানায় একটু শুয়ে পড়লাম, এপাশ ওপাশ হলাম কিন্তু ঘুমা আর হল না । যাইহোক নিদ্রাহীন একটি রাত কাটিয়ে দিলাম । অবশেষে ঘড়ির কাঁটায় যখন সকাল দশটা বাজল, তখনই হিরামনিকে বললাম, বাবুকে রেডি করে ফেলো। ওকে নিয়ে হসপিটালে যাব টিকা দিতে । যাইহোক হিরামনি খুব তাড়াতাড়ি ব্যস্ত হয়ে পড়ল, শায়ানকে রেডি করার জন্য। মোটামুটি কিছুক্ষণ পরেই শায়ানকে নিয়েই ও রেডি হয়ে গেল এবং গন্তব্য এখন আমার হসপিটালের উদ্দেশ্যে ।

এর আগেরবার যখন টিকা দিতে এসেছিলাম, তখন খুব একটা বেশি ঝামেলা হয়নি এবং খুব সহজেই টিকা দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু এবার একটু বিপত্তি হয়েছিল। কারণ এমনিতেই করোনার টিকা দিচ্ছে, যার কারণে হসপিটালে প্রচুর ভিড় লেগেই আছে। তার মধ্যে আমরা গিয়েছি বাবুকে নিয়ে টিকা দিতে। যাইহোক ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে গিয়েছিলো আমার জন্য । অবশেষে আমার কলিগের কাছে ফোন করে, শিশুদের টিকা দেওয়ার স্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিলাম ।

PhotoCollage_1636486667888.jpg

সত্যি বলতে কি, খুব একটা বেশি নিজের পরিচয় দিতে ইচ্ছা করেনা। কারণ নিজের পরিচয় আমি সব সময় লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করি। তবে মাঝে মাঝে যখন ভীষণ প্রয়োজন হয়, তখন ইচ্ছা করেই পরিচয় দেই । যাইহোক যেহেতু সরকারি হসপিটাল, আমি মনে করি এখানে সবার সমান অধিকার এবং সবার ক্ষেত্রেই প্রাপ্ত সেবা একই রকম।

এমনিতেই আমার গত রাতে ঘুম হয়নি, তার মধ্যে সরকারী হসপিটালের অবস্থা অনেকটাই করুন এবং আমিও চাচ্ছিলাম যে, খুব তাড়াতাড়ি এখান থেকে বাবুকে নিয়ে টিকা দিয়ে যেতে পারলেই বাঁচি। যাইহোক অনেক মানুষ এসেছে তাদের ছোট ছোট বাচ্চাকে নিয়ে টিকা দিতে । যেহেতু হসপিটালের আউটডোরের বারান্দাতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে ছোট বাচ্চাদের, তাই ওখানে ওষুধ কোম্পানির কিছু লোক সর্বদাই জটলা পেঁকে থাকে ।

এমন ভাবে নিজেকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছি, মানে ডাবল মাক্স পড়ে নিজের মুখটাকে ঢেকে রেখেছি । তাও কেমনে কেমনে জানি একটা পরিচিত ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ আমাকে চিনতে পেরেছে এবং এসেই স্যার স্যার বলে একদম কান ঝালাপালা করে দিয়েছে এবং চেয়ার নিয়ে এসে বসতে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। যদিও আমার স্যার ডাক শোনা ও বলার প্রতি ভীষণ এলার্জি আছে । যাইহোক কেন এলার্জি আছে, ঐ ঘটনা না হয় অন্যদিন শোনাবো ।

PhotoCollage_1636486723393.jpg

তবে আজ আমি চেয়ারটাতে বসে গেলাম এবং কানে কানে রমিজ সাহেবকে বললাম, কি দরকার এত কিছু করার। রমিজ সাহেব হেসে বলল, বাবুকে টিকে দিতে নিয়ে এসেছেন স্যার। আমি তাকে আবারও সবিনয়ে বললাম, ভাই বলে ডাকুন না হলে কিন্তু চেয়ার থেকে উঠে যাব । ধন্যবাদ রমিজ সাহেবকে, খুব সুন্দর একটা বসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য । যদিও নিজের পরিচয় দিলে, খুব সহজেই সবার আগে বাবুকে টিকা দিয়ে নিয়ে চলে যেতে পারতাম তবে ইচ্ছা হচ্ছিল না ।

তবে একটা সময়ে গিয়ে হসপিটালের আউটডোরের অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে, স্বাস্থ্যকর্মীকে নিজের পরিচয়টা দিয়েই ফেললাম এবং বললাম একটু চেষ্টা করুন, আমাকে আগে সিরিয়াল দেওয়ার জন্য । যদিও স্বাস্থ্যকর্মীকে যখন বললাম তখনই আমাকে কাজটা করে দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু আমি তা করে নিতে নারাজ । আমি বললাম একটু সিরিয়ালটা আগে দিন, তার মানে এই না যে এখনই করে দিতে হবে । যাইহোক অবশেষে কিছুক্ষণ পরে, আমার সিরিয়াল চলে আসলো ।


বাবুকে নিয়ে যতক্ষণ চেয়ারে বসে ছিলাম, ঠিক ততক্ষন বাবু এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো এবং দেখছিল আগের বাচ্চা গুলোকে টিকা দেওয়ার পরে কি রকম কান্নাকাটি করে সেই মুহূর্ত। যদিও বাবু একদম নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে যখন স্বাস্থ্যকর্মীর পাশে বসলাম এবং বাবুকে টিকা দেওয়ার অন্তিম মুহূর্ত চলে আসলো, তখন বাবু হুট করে নড়াচড়া করে উঠলো এবং যখন ইনজেকশনের নিডিল বাবুকে পুশ করলো, তখন বাবু মুহূর্তেই কান্না করে উঠলো । যাইহোক ব্যাপারটা আমাকে একটু ইমোশনাল করে ফেলেছিল ।

আমি কোন রকম নিজেকে কন্ট্রোল করে, তাড়াতাড়ি কাজটা করে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । যাইহোক বাবুর কান্না কোনোভাবেই থামছে না । অবশেষে বাড়িতে এসে কোনরকমে বাবুকে সান্তনা দেওয়া গিয়েছে এবং একটা সময়ে গিয়ে বাবুর শরীরে জ্বর এসে গিয়েছে । যাইহোক মোটামুটি এই ছিল আমার আজকের সকালের অভিজ্ঞতা । তবে সর্বোপরি নির্ঘুম সময় এবং সকালবেলায় এরকম একটা মুহূর্ত, সব মিলিয়ে একটু জটিলতা ভাব ছিলোই নিজের কাছে ।

যাইহোক বাবুর টিকা দেওয়ার মূহূর্তটাকে ক্যামেরাবন্দি করতে পেরেছিলাম এবং রেখে দিলাম স্মৃতির খাতায় । যখন বুড়ো হয়ে যাব, তখন দেখবো মূহূর্তটাকে এবং মুচকি করে হাসবো ।

Banner.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht

Sort:  
 3 years ago 

আসলে ভাইয়া আমার তিন ঘন্টা কথা বলা অনেক কষ্টকর। তারপরও আপনি সবকিছু খেয়াল করেন সকলের কথা শুনেন এবং সকলকে ভাল মতামত দেন কিভাবে কি করলে ভালো হবে এবং একটানা কথা বলা অনেক ধৈর্যের ব্যাপার।টিকাকেন্দ্রে অনেক ভিড় এবং সফলভাবে টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে অনেক ভালো লাগছে। বাবুর জন্য দোয়া রইল। সেজন্য সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

ঘটনা না হয় অন্যদিন শোনাবো ।

এই ঘটনা শোনার অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।

আপনার জায়গায় অন্য কেও হলে হয়তো তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ঢুকে এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে টিকাটা নিয়েই চলে আসতো। এই ব্যাপারে আপনার কাজটি আমাকে মুগ্ধ করেছে ভাইয়া।

 3 years ago 

শোনাবো অবশ্যই । আগে একটু মানসিক ভাবে ফ্রি হয়ে নেই ।

 3 years ago 

ছোট বাচ্চাদের টিকা দেওয়া দেখলে আমার খুবই কষ্ট লাগে। টিকা দেওয়ার ফলে শায়ান বাবুর নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট হয়েছে। আমাদের সকলের অতি আদরের শায়ান বাবু নিশ্চয়ই অনেক কান্নাকাটি করেছে। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা চিন্তা করে ও বিভিন্ন রোগ থেকে ছোট বাচ্চাদের রক্ষা করতে এসব গুরুত্বপূর্ণ টিকাগুলো দেওয়া খুবই জরুরী। তাই কষ্ট হলেও নিয়মমতো এই টিকাগুলো গ্রহণ করা উচিত। সাময়িক এই কষ্ট সারা জীবনের রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দোয়া করি শায়ান বাবু যেন সুস্থ সবলভাবে বেড়ে ওঠে। আপনার পরিবারের সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনি প্রতিটা প্রতিটা জায়গায় ভালো মনমানুষিকতার প্রকাশ করেন যেটা আমার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লাগে , আপনি চাইলে আপনার পরিচয় দিতে পারতেন তবে আর ঝামেলা পোহাতে হতোনা , কিন্তু আপনি সেটা করেননি , সবার মতো আপনি নিয়ম মেনে বাবুর টিকা দিয়েছেন। অনেক ভালো লাগলো ,বাবুর জন্যে অনেক দোয়া রইলো,

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

মাঝে মাঝে নিজের পরিচয় দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তা নাহলে কাজ আটকে থাকে।যাইহোক বাবুর জন্য অনেক আদর ও শুভকামনা রইলো।ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

শায়ান বাবুর জন্য দোয়া করি বাবু যাতে সুস্থ থাকে ভালো থাকে। অনেক ঝামেলার পর বাবুকে টিকা দেওয়া হল। শায়ান বাবুর জন্য শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago (edited)

নিজের আপন কেউ কষ্ট পেলে আসলেই প্রত্যেকটা মানুষই ইমোশনাল হয়ে পড়ে। আপনার অভিযান টা অনেক সুন্দর ছিল সেই সাথে অভিজ্ঞতাটাও । আপনার ভিডিওটি স্মৃতির খাতায় লিখে দেওয়ার বিষয়টি অনেক ভালো লেগেছে আমার । আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপনার জন্য ।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

শুভ ভাই আপনি আসলে খুব সুন্দর উপাস্থপনা করেন,আসলে এই উপাস্থপনা করাটাও অনেক কস্টের,আর এই কাজ সবাই পারে ও না ।

শায়ান বাবুর অনেক কস্ট হয়েছে টিকা নেয়ার সময়,আসলে প্রতিটা বাচ্চারি টিকার দরকার৷

শায়ান বাবার জন্য দোয়া রইলো। 💓💓💓

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 61414.81
ETH 2984.62
USDT 1.00
SBD 2.46