বিপ্লব ভাই || @shy-fox 10% beneficiary
কত মানুষের সঙ্গে ক্রমাগত পরিচয় হয়ে যাচ্ছে । কত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় । কত মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তো সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় টুকটাক গল্প-স্বল্প হয় । এতো মানুষ কে কি আর মনে রাখা যায় ।
আমি মনে করি এত মানুষের ভিড়ে, মানুষকে মনে রাখা খুব কঠিন । তবে কিছু কিছু মানুষ হুটহাট মনে এবং মস্তিষ্কে গেঁথে যায় এটা একদম সত্য কথা , যেমনটি ঘটেছিল বিপ্লব ভাইয়ের সঙ্গে ।
ক্লান্ত শরীরে যখন রেস্টুরেন্ট প্রবেশ করলাম । তখন অনেকটাই একঘেয়ামি লাগছিল । কারণ দীর্ঘসময় রোদের ভিতরে পুলে গোসল করে অনেকটাই নাজেহাল হয়ে গিয়েছিলাম । তার ভিতরে বেশ ক্ষুধার্ত ছিলাম । টেবিলে বসতেই হুট করে বিপ্লব ভাইয়ের আগমন এবং মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল , কি করতে পারি আপনার জন্য স্যার । যদিও আমার স্যার কথাতে ভীষণ এলার্জি আছে । এটা আমি অনেকটা সময় বলেছি কিন্তু সেদিন আমি এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে , আমার অযথা কথা বলার মত পরিস্থিতি ছিলনা । ভদ্রলোক আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেই আমাকে জুস দেওয়ার চেষ্টা করল এবং মূলত আমি জুস খাওয়ার পরে অনেকটাই চাঙ্গা বোধ করলাম এবং তারপরে ক্ষাণিকবাদে সেই ভদ্রলোক কে আবারো ইশারায় কাছে ডাকলাম । এবার তাকে ফিসফিস করে বললাম , আমাকে ভাই বলে ডাকুন । তাহলে অনেকগুলো খাবার অর্ডার করবো । এবার সেই শ্যাম বর্ণ চেহারায় হালকা হাসি ।
এ ধরনের হোটেলগুলোতে যারা কাস্টমার সেবাদানকারী হিসেবে আছে । ভদ্রলোকদের কতগুলো পয়সা স্যালারি দেয় তা আমার জানা নেই । তবে আমি মনেকরি তাদের অতিথীয়তায় যদি কাস্টমাররা খুশি হয় তাহলে তারা অনেকটাই বকশিস পেয়ে থাকে এবং আমি মনে করি এটা অনেকটা সৌজন্যবোধ হিসেবে । তবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে কাস্টমার কতটুকু খুশি এবং মুগ্ধ হয়েছে , সেই সার্ভিস ম্যানের কাছ থেকে ।
ভদ্রলোক কে বললাম, আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে বসতে পারেন । সেও বেশ ভালোভাবেই আন্তরিকতার সঙ্গে দাঁড়িয়েই থাকলো এবং বললাম কতক্ষণ লাগবে খাবার আসতে । সে বলল , চল্লিশ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে । এবার আমি চেষ্টা করলাম, তার গল্প শোনার জন্য । সে জয়পুরহাট থেকে এখানে এসেছে । কখন কার ঠিকানা কোথায় হয়ে যায় , এটা বলা মুশকিল।
মাঝবয়সী শ্যামলা গড়নের ভদ্রলোকটা আমার পাশে দাঁড়িয়ে বেশ ভালোভাবেই বলছিল তার অতীত যেটা আমি জানার চেষ্টা করছিলাম । মূলত অনার্স মাস্টার্স করেছিল আজিজুল হক কলেজ থেকে । তারপরে মোটামুটি বেশ ভালো সময় ঘুরেছে এই শহরের অলিতে গলিতে । কম করে হলেও ত্রিশটার মত ভাইবা দিয়েছে সরকারি চাকরির । তবে এ শহরে আর যাই কিছু সহজে পাওয়া যায় না কেন , তবে চাকরি পেতে গেলে অনেকটা কপাল লাগে । যা সকলের জন্য সৌভাগ্য কর হয় না । অতঃপর যখন দেখেছে যে, এখানে একটা তারকা মানের হোটেল হচ্ছে, তখন সেই সুযোগে চেষ্টা করেছে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একটা কোর্স করার জন্য ।
সত্যি বলতে কি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট কিন্তু একটা সম্মানী জব । আমি মনেকরি বিশেষ করে যারা এই জবের সঙ্গে যুক্ত তাদেরকে অবশ্যই একটা জিনিস প্রতিনিয়ত মাথায় রাখতে হয় । সেটা হচ্ছে, কিভাবে তারা কাস্টমারকে খুশি করবে এবং এটাই তাঁদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে । এবং সেটা হতে পারে তাদের আচার-আচরণ ও ব্যবহার থেকে শুরু করে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সে আসলে কি শিখানো হয়, তা আসলে আমি জানিনা । তবে যতদূর তাদের কার্যকলাপ দেখে বুঝলাম, তারা আসলে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে কাস্টমারকে সেরা সুবিধা ও সার্ভিস দেওয়ার জন্য । আমি বুঝতে পেরেছি মানুষ হয়ে মানুষের মন জয় করা যেখানে খুবই কঠিন কাজ । সেখানে সেইরকম একটা চ্যালেঞ্জিং পূর্ণ কাজ তারা করে থাকে । আমার কাছে ব্যাপারটা বেশ ভালোই লেগেছে । কারণ এখানে এক সঙ্গে তাদেরকে অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হয় । বিশেষ করে কাস্টমারের চাহিদা থেকে শুরু করে তাদের মানসিকতা বোঝা ।
দেখুন একটা সোজা বাংলা কথা বলার চেষ্টা করি । সেটা হচ্ছে , আপনার মানিব্যাগ থেকে আপনি তখনই পয়সা বের করবেন যখন আপনার কোন কিছুর প্রতি অতিরিক্ত ভালো লাগা তৈরি হবে বা কোন জিনিসের প্রতি আগ্রহ বাড়বে , ঠিক তখনই দুটো পয়সা যদি আপনার অতিরিক্ত চলেও যায় তখন আপনার খুব একটা মনে লাগবে না । ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক । কারণ যেখানে অতিরিক্ত ভালো লাগা কাজ করে , সেখানে একটু পয়সাপাতি গেলে খুব একটা যায় আসে না । হয়তো এই জন্যই বিশেষ করে এরকম হোটেলগুলোতে সার্ভিসের জন্য তারা অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ পেয়ে থাকে । আর এটা আসলে তারা যে , খুব একটা জোরজবস্তি করে নেয় তা কিন্তু না । আমি মনেকরি যে, তারা তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যাপারটাকে গ্রহণ করে থাকে ।
তারকা মানের হোটেল থেকে শুরু করে বড় বড় খাবারের দোকান গুলোতে দেখবেন, বেশ ভালো মানের কাস্টমার সার্ভিস দেওয়ার জন্য কিছু ভদ্রলোক সেজেগুজে সবসময় কাস্টমারের জন্য অপেক্ষা করে এবং তাদের কাজই হচ্ছে কাস্টমারকে বেশ ভালোভাবে খুশি ও আপ্যায়ন করা । যাইহোক এ যাত্রায় আমার বেশ ভাল লেগেছে এবং ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে বিপ্লব ভাইয়ের আচার আচরণ দেখে ।
হোটেল থেকে যখন বের হবো তখন তাদের হেড শেফে মানে বেলাল ভাইয়ের সঙ্গে যখন আমি ছবি তুললাম, তখন বেলাল ভাইকে কানে কানে বললাম যে আপনাদের বিপ্লব ছেলেটা বেশ ভদ্র ।
তার আচরণ ও অতিথীয়তায় আমি একদম মুগ্ধ হয়েছি । হয়তো এই জব গুলোর ক্ষেত্রে প্রমোশন গুলো নির্ভর করে ঠিক কাস্টমারের মন্তব্যের উপরেই । একজন সার্ভিস ম্যানের জন্য কাস্টমারের ভালো মন্তব্য অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ ।
শুধু কি বিপ্লব ভাই, আমি মনেকরি যে এইরকম যারা সরাসরি কাস্টমারদের সার্ভিস দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে । তারা সকলেই চেষ্টা করে, কাস্টমারের মানসিকতা বুঝে প্রতিনিয়ত সার্ভিস দেওয়ার জন্য । আসলে এই মানুষগুলো প্রতিনিয়ত সরাসরি চ্যালেঞ্জিং ভূমিকায় থাকে অতপ্রোতভাবে । কারণ যেকোন রকম সিচুয়েশন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় । আমি মনেকরি এটা আসলেই একটা সম্মানীয় জব । আর আমার মনে হয়, যে বা যারা এরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে , তাদেরকে কিছুটা পয়সা বাড়িয়ে দিলে বরং আত্মতৃপ্তি বেড়ে যায় ।
ভালো থাকুক এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষ গুলো ।।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
অনার্স-মাস্টার্স করে বহু যুবক এখনো বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই দিক থেকে আমি বিপ্লব ভাইকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ সে তো একটা পেশা বেছে নিয়েছে। আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই, তারকা মানের রেস্টুরেন্টগুলোতে মেইন উদ্দেশ্যই থাকে কাস্টমারের সন্তুষ্টিসাধক। আপনি প্রথম শেফ এর কাছে বিপ্লব ভাইয়ের প্রশংসা করেছেন এটা তার জন্য অনেকটাই ভালো হবে। আপনার মতো আমারও রেস্টুরেন্টে কেউ স্যার বলে সম্বোধন করলে কেমন জানি আনইজি লাগে। হহাহা, যাইহোক, পুরো গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। এটা সত্যি কিছু কিছু মানুষের সাথে ক্ষনিকের পরিচয় হলেও সারা জীবণ মনে থাকে। 💕
একই মানুষ তবে এতো বিভাজন কেন । এই জন্যই স্যার শুনলেই একটু বিরক্তি লাগে ।
বিপ্লব ভাইয়ের সম্পর্কে জানতে পেরে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। এই মানুষগুলো সব সময় মানুষের মন বোঝার চেষ্টা করে এবং তাদের সাথে আন্তরিকতার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। আমার যতটুকু মনে হয় মানুষের মন বোঝা এবং মন জয় করা সত্যি অনেক কঠিন ব্যাপার। যাই হোক আপনার কাছে যেহেতু বিপ্লব ভাইকে ভালো লেগেছে তাহলে নিঃসন্দেহে সে একজন ভালো মনের মানুষ। এভাবেই অনেক মানুষের সাথে হঠাৎ করেই সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। যে সম্পর্কগুলোকে কখনোই ভোলার মত নয়।
এই মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত বেশ প্রস্তুত থাকে সব রকম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।
জি দাদা জীবনে চলতে ফিরতে ঘুরতে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয় ৷কথা হয় কিন্তু দিনশেষে সবাই মনে রাখা যায় না ৷আবার কিছি কিছু মানুষকে কখনো ভুলা ও যায় না ৷
তবে একটা কথা ভাবছি জীবন টা সত্যি বড় অদ্ভুত ৷ভদ্র লোক আজিজুল হোক মাস্টার্স শেষ করেও চাকরি পায় নি ৷এতোগুলো ভাইবা দেওয়ার পরও হুম দিনশেষে কিছু ভাগ্যও লাগে ৷ধন্যবাদ দাদা
আমারও তো তাই মনেহয় । সবাই কে তো আর মনে রাখা যায় না । তবে কিছু মানুষ মনে গেঁথে যায় ।
ঠিকই বলেছেন ভাই ঐ বাজারে চাকরি যেন সোনার হরিণ তারপর আবার সরকারি চাকরি😩। তবে আপনার এটা আমার ভালো লাগল বিপ্লব সাহেবকে আপনি ভাই বলে বলতে পারলেন। এতে সে বেশ খুশি হয়েছে। আসলে এটাই হওয়া উচিত। আপনার এইধরনের কাজগুলো বেশ অনুপ্রাণিত করে আমাকে।।
ছোট কাজের সুখ স্মৃতি বেশ মনে রাখার মতো ।
অসাধারণ একটি পোস্ট করেছেন ভাই। আসলেই সত্যি এ সকল তারকা হোটেলে যারা কাজ করেন তাদের একমাত্র সম্পদই হচ্ছে ভদ্র নম্র আচরণ। সেই সাথে অতিথি পরায়ণা প্রীতি থাকবেই। এত সুন্দর একটি পোস্ট লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
তেমনটাই তাই তো লক্ষ্য করলাম ভাই । বেশ অতিথি পরায়ণ ।
ভাইয়া আপনি একজন মুক্তমনা মানুষ। তাইতো সবকিছু নিয়েই লিখতে পারেন। আর আপনার লিখা চরিত্রগুলো সব সময় বাস্তব থেকে নেওয়া। তেমনি আজকের লিখার প্রধান হচ্ছে বিপ্লব ভাই। হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্বে যারা আছে তারা সবসময় কাস্টমারদের ভালো সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই মানুষগুলো সব সময় হাসিমুখে সকলকে আপ্যায়ন করে। খুবই ভালো লাগে। বেলাল ভাই এবং বিপ্লব ভাইয়ের মত মানুষদের সম্পর্কে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️
ভালো লাগে জীবন গুলোকে কাছ থেকে দেখতে এবং জানতে ।
ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে আজকেও আপনার মনের এক বিশেষ উদারতা জানতে পারলাম।
ভাইয়া, স্যার এর পরিবর্তে ভাইয়া বলে ডাকার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে রেস্টুরেন্টে বিপ্লব ভাইয়ের মত অনেক মানুষই কাস্টমারদের স্যার বলে ডেকেও তাদের মন পায় না সেক্ষেত্রে ভাইয়া আপনার এরকম উদারতায় প্রমাণ করে যে আপনি অনেক বড় মনের একটি মানুষ। ভাইয়া আপনার জন্য অনেক অনেক আশীর্বাদ রইল।
মানুষ হওয়ার চেষ্টায় আছি রে ভাই । যদিও সহজ নয় তবে চেষ্টায় আছি ।