এই চা গরম || @shy-fox 10% beneficiary
ঘুম থেকে উঠতেই কড়া ধূপের গন্ধ নাকে আসছে, বুঝতে পারছি পাশের ঘরে পুজো চলছে । অনেকদিন বাদে ধূপের গন্ধে ভালোই লাগছে । ধূপ নিয়ে আসলে আমার তেমন কোন ধারণা নেই তবে যতদূর জানি পবিত্র কাজে ব্যবহার হয় ।
আমি অনেকটা ভিখারির মতো, কখন কার কাছে হাত পেতে বসি তা বলা খুব মুশকিল । মাঝে মাঝে তো পাশের ফ্ল্যাটের বৌদিকে বেশ জ্বালাতন করি । সংকীর্ণতাকে জয় করে কখনো কখনো সরাসরি বলেই ফেলি , এক কাপ চা হবে ।
আজও ঠিক এর বিকল্প হয়নি । ঘুম থেকে উঠেই দেখি হীরা নেই , হয়তো বাজারে গিয়েছে । শুনলাম শাশুড়ি এসেছে হয়তো পুরো মাসের বাজার করতে ওরা বাজারে গিয়েছে । এই দিক থেকে আমি বেশ ভাগ্যবান সহজে আমাকে বাজারে যেতে হয় না । যা কেনার হীরা আর আমার শাশুড়ি দেখেশুনেই কেনে । আমার হাতে সময় কই বলুন হয়তো এজন্যই তারাই কার্য গুলো নিজ দায়িত্বে করে দেয় ।
আমার আসলে সময়ের কোন নির্দিষ্ট ঠিক ঠিকানা নেই । হয়তো মানুষের যখন সকাল হয়, আমার তখন রাত শুরু । এ বাসায় আসার পর থেকেই পাশের বাসার বৌদি যদি না থাকতো । আমাদের বেশ ভালোই ঝামেলা হয়ে যেত । তার মেয়েটা দুটো একদম লক্ষী । শায়ান বাবুকে সামলানোর ব্যাপারটা কতোটা যে ঝামেলাকর তা বলে বোঝানো মুশকিল। হীরা তো একা পেরেই ওঠে না ।
হয়তো বৌদির মেয়েগুলো আছে বিধায় শায়ান কিছুটা হলেও একাকীত্ব ভুলে যায় । বেশ কৃতজ্ঞ আমি লক্ষী দুটোর কাছে । ওরা আমার ছেলেটাকে এমন ভাবে নিজের করে নিয়েছে , যেটা অনেকটাই নিজের ভাইয়ের মতো । সামনেই নাকি ভাই ফোঁটা আসছে । আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওরা যদি শায়ান কে ভাইফোঁটা দিয়েই দেয় তাহলে বরং আমি খুশিই হবো । আমার অবশ্য জাত-কুল এইসবে কোন যায় আসে না । আমি মানুষ এর উপর তো আর সত্য কিছু দেখি না । ভাইয়ের কপালে বোন ফোঁটা দেবে , তাতে আবার জাতের কি আসে যায় ।
কোন রকমে চোখ ঘষতে ঘষতে গিয়ে বৌদির দরজায় টোকা দিলাম । যেহেতু ধূপের গন্ধ আসছে, তাই আমি বুঝে নিলাম যে বৌদি পুজোয় বসেছে । ওপাশ থেকে তাও দরজা খুলে দিল । দুই হাত বাড়িয়ে বললাম, মা বেশ মাথা ধরেছে তোর আন্টি তো বাসায় নেই,আমাকে এক কাপ চা দিবি, বেশ খেতে ইচ্ছা করছে ।
আমার চায়ের বায়না নতুন না, তবে ওরা কখনো না করে না । এমনিতেই আমার এই দিকে হ্যাংআউটের সময় হয়ে যাচ্ছে, তারপর যদি চা না খেতে পারি তাহলে হয়তো ঠিকঠাক কথা বলতেই পারবো না । মাথাটা বড্ড ঝিমঝিম করছে, যখন আমি মোটামুটি ল্যাপটপের সামনে বসে সবকিছু সেটআপ করছি, তখন মা এসে হাজির । আমার অর্থী মা । মা আমার অনেকটা দেবী তুল্য , হাতে করে বিস্কুট আর এক কাপ চা নিয়ে হাজির । এমন বেলায় এমন চা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার ।
আমি দুহাত বাড়িয়ে প্লেটটা হাতে নিলাম , বললাম মা তুই এখানে বসে যা । দেখ আমি কি করি , ও দেখছিল আমার কাজ গুলো । ও আসলে আমার বকবকানি প্রতিদিনই শোনে । যার কারণে ও একটু হলেও বুঝতে পারে আমার কাজ সম্পর্কে । শক্ত বিস্কুটে কামড় দিয়ে, যখন আমি চায়ে চুমুক দিচ্ছি তখন যেন একটা প্রশান্তি কাজ করছে নিজের মাঝে । এমন সময়ে চা দেওয়ার জন্য সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ।
মানুষকে আমার সম্মান দিতে ভালোই লাগে । এই যে বৌদি , এই ভদ্র মহিলাকে সেই প্রথম থেকেই দেখছি । কোন বাড়তি আকাঙ্ক্ষা নেই , দুটো মেয়েকে নিয়ে এই ভাড়া বাসায় থাকে । শুধুমাত্র মেয়ে দুটোকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করবে এবং মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে এই আশায় । কতো যে কষ্ট করে মেয়ে গুলোর জন্য, যা প্রতিনিয়ত চোখের সামনেই দেখছি । ওদের বাবা তো চাকরির সুবাদে সেই ঢাকায় থাকে । মাঝে মাঝে তো অর্থীকে বলি তুই আমার মেয়ে হয়ে যা । আমার তো মেয়ে নেই , তুই শায়ানের বোন হবি, তোরা ভাই বোন একসঙ্গে থাকবি, খেলবি আমার চোখের সামনে ঘোরাঘুরি করবি, আমি এতেই প্রশান্তি পাব ।
মা যেহেতু আমার কর্মস্থলে এসেছে, তাই তাকে আমি বুঝিয়ে বললাম , এই দেখো তোমার ছেলে কত্ত কাজ করে । কত মানুষের সঙ্গে কথা বলে । ওকে আমি ইচ্ছা করেই আমার চেয়ারে বসে দিয়ে, কানে হেডফোন লাগিয়ে দিলাম । আমি এইভাবেই কথা বলি মা সকলের সঙ্গে, এইভাবেই সকলের মনোরঞ্জন করি ।
মুহূর্তেই শায়ান চলে এসেছে কারণ ওর বোন এসেছে এটা ও বুঝতে পেরেছে । আসলে ও ওকে পেলে সবকিছুই ভুলে যায় এমনকি আমাকেও । ওর কাছেই ও সব সময় থাকে, মোটামুটি এখানে আসার পর থেকে, ওদের দুই বোনের কাছে থেকেই ছেলেটা আমার দিন দিন বেড়ে উঠছে ।
যদি এই এক কাপ চা নতুন না । যখনই অর্থী আমার চা খাওয়ার কথা শুনে, তখনই ও নিজে হাতে আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে । এটা আমার জন্য সত্যিই একটা গর্বের ব্যাপার । তাও দিনশেষে কেউ একজন এরকম মানুষের জন্য চা বানায় খুব পরম যত্নে, এটা আসলেই সৌভাগ্যের ব্যাপার । ওকে আমি বড্ড পছন্দ করি । ও আমার যদি মেয়ে হতো হয়তো এই ভাবেই বাবাকে প্রতিনিয়ত চা বানিয়ে দিত । আমার তো মেয়ে নেই, তবে ওকে যতবার দেখি ততবার আমি গর্ববোধ করি । কারণ ও আমার মেয়ের অভাবটা পূরণ করেছে ।
যদিও বৌদি কখনো না করে না । এদিক থেকে বেশ ভালো লাগে বৌদিকে । বেশ খোলামেলা মনের মানুষ । যদিও অনেকটাই বিভিন্ন রীতিনীতি অন্য ধর্মের মানুষের মাঝে থাকে । তবে তার মাঝে তেমন আমি এত ধর্মীয় রীতি-নীতির ব্যাপার গুলো খুব একটা দেখি না । আমি তো মাঝে মাঝে বলেই ফেলি, জীবনটা নিজের । নিজের মতো করে বাঁচতে হবে । বড্ড ভালো গান গায় তার বড় মেয়েটা । যেটা আপনারা ইতিমধ্যেই শুনেছেন । সামনে ভাইফোঁটা আসছে , আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছি । যদি ওরা আমার ছেলেকে ভাইফোঁটা দেয় তাহলে হয়তো ওদের দু-বোনের দুটো হাত আমি ভরিয়ে দেবো । এতে কে কি বলবে , কে কি মনে করবে, আমার তাতে যায় আসে না । ওরা আমার মা , ওদের প্রথম ও শেষ পরিচয় এটাই ।
বেশ ভালই বানিয়েছিস মা চা টা । আবারও কিন্তু আর একদিন বানিয়ে নেব । তখন কিন্তু না করতে পারবি না । যাওয়ার সময় হাসি দিয়ে বলল, যখন খেতে চাবেন আঙ্কেল, তখনই আমাকে বলবেন । আমি আপনাকে চা বানিয়ে দিব ।
যাইহোক এখন হ্যাংআউট শো শুরু করতে হবে । অনেকটাই কথা হয়ে গেল , কাজে মনোনিবেশ করতে হবে । আজ আবার বহু কাজ হাতে জমে আছে । তোকে বড্ড বিরক্ত করি রে মা , মন খারাপ করিস না তো । এক গাল হাসি দিয়ে বলল, আমি এমনটা কখনোই ভাবি না বরং ভালই লাগে আপনাকে চা বানিয়ে দিতে পেরে ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
মানুষ শুধুই মানুষ। সে যে ধর্মেরই হোক না কেন।ভালো একজন প্রতিবেশী পেয়েছেন এটাই অনেক। এই মানুষগুলো আপনার বিপদের সঙ্গী। বৌদি ও উনার মেয়েদেরকে আমারও অনেক ভালো লাগে। শায়ান বোন পেয়েছে এটাই অনেক। সবার জন্য শুভকামনা রইলো।
তারমানে ভাই গরম চা বিস্কিট ভিজিয়ে, নরম করে খুব আরামের সাথে খেয়েছেন। আসলে অনেক সময় মাথা ব্যথা করলে তখন একটু গরম গরম চা অথবা কপি হয়ে গেলে কিছুটা স্বস্তি বোধ করা যায়। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
তাহলে বোঝা গেল অর্থির হাতের চা খেয়ে আপনি হ্যাংআউট শুরু করেছিলেন। তারপর শরীরটা বেশ চাঙ্গা হয়েছিল আপনার 😊। আরে ভাইয়া বাজারে যে ঝামেলা ভালোই ভাবি তা সামলায়। পাশের বাসার বৌদি ও তার মেয়েদের কথা শুনে খুবই ভালো লাগলো,আসলে এমন মেয়েরা থাকলে ঘরের বাচ্চার সামলানো সহ টুকিটাকি কাজ করেলে কতইনা ভালো হয়।
হুম আপু আসলে সেই দিনের সময়টা ঠিক এই ভাবেই শুরু হয়েছিল। তাছাড়া বেশ ভালোই সময় কেটেছে ।
এরকম একজন মা থাকলে তো সত্যিই জীবন ধন্য ভাইয়া ।আপনার মেয়ের অভাবটা যেন অর্থী পূরণ করছে আসলে । আপনাকে আমার এই জন্য খুবই ভালো লাগে ভাইয়া আপনি একদম ফ্রি মাইন্ডেড ❤️ । সবার সাথে একদম মিশে যেতে পারেন খুব সহজেই । আপনার সিংহাসন তাহলে আপনার মা দখল করে নিয়েছে 🤭 । চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন আপনার । যাই হোক হ্যাংআউটের বৌদির বড় মেয়ের গান আসলেই অনেক চমৎকার হয় ভাইয়া । আমার কাছে খুবই ভালো লাগে গানগুলো শুনতে ।
হুম বৌদির বড় মেয়ে ভালই গান গায় , এইটা একদম সত্য কথা বলেছেন ভাই । ধন্যবাদ আমার অনুভূতি বুঝে নেওয়ার জন্য।
আসলে ভাই আপনি সত্যি বলেছেন কাজের সময় জানা থাকলে মাথা ঠিক থাকেনা। কারন মেয়েটা আসলে অনেকটা অভ্যাস এর মত । তবে আসলে ছোট মেয়েটাকে দেখে বেশ ভালো লাগলো। আপনার জন্য নিজের হাতে যত্ন করে চা বানায়। আসলে এই সময়ে উপকার করার মতো কেউ থাকেনা। দুনিয়াটাই কেন জানি স্বার্থপর। তবে মেয়েটাকে দেখে ভিন্ন মনে হলো খুব ভালো লাগলো ভাই। আর ধন্যবাদ জানাই আপনাকে এই সুন্দর মুহূর্তটাকে আমাদের মাঝে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য।
ও বেশ ভালই চা বানায় ভাই । এইটা সত্য ঐ সময় চা টা আসলেই বেশ দরকারী ছিল আমার জন্য।
শুভ ভাই আপনার গল্প পড়ে আমি একেবারে আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম গল্প পড়ার সময় চোখে জল চলে এসেছে। সত্যি কথা বলতে আপনি আমার মেয়েদেরকে অনেক ভালোবাসেন তাই ওরাও আপনাকে ভালোবাসে। আমি সবসময়ই চাই আমার মেয়েরা ভালো কিছু হওয়ার আগে যেন তারা ভালো মানুষ হতে পারে, আপনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে একটু হলেও বুঝতে পারছি যে আমার মেয়েরা আর কিছু হোক বা না হোক মানুষের মন জয় করার মতো মানসিকতা তাদের তৈরি হয়েছে আমি একজন মা হিসেবে এতেই অনেক খুশি।গতকাল আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তাই সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে ছিলাম আপনি কখন চা খেতে চেয়েছিলেন আর কখন আমার মেয়ে আপনাকে চা বানিয়ে খাইয়েছে আমি কিছু বলতে পারিনা আপনার পোস্ট দেখে বুঝতে পারলাম। 🙂 আমার ছোট মেয়ে খুব ভালো চা বানাতে পারে। আপনাকে চা বানিয়ে খাইয়ে খুশি করতে পেরেছে এতে আমিও অনেক খুশি হয়েছি। সবসময় দোয়া করবেন আমার মেয়েরা যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। আর আপনিও ভাই ফোঁটা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকিয়েন 😃 ধন্যবাদ ভাইয়া।
অবশ্যই আমি প্রস্তুত আছি কিন্তু বৌদি । আমার মা দুটো কে ভালোভাবে দেখে রাখিয়েন । শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
আসলেই দাদা মেয়েরা হচ্ছে ঘরের লক্ষী। ঘরে একটা মেয়ে থাকা মানে একটা লক্ষী থাকার মতো। তাছাড়া মেয়েরা বাবার ভক্ত হয় বেশি। দিন শেষে যখন ঘরে আসবেন, দেখবেন মেয়েটা বাবা বাবা বলে বুকের উপর চাপিয়ে পড়বে, তখন পরম তৃপ্তিতে বুকটা ভরে যায়। এছাড়াও ঘরের কাজে মাকে হেল্প করার জন্য মেয়েদের জুড়ি নাই। ধন্যবাদ।
একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই । আমি কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করছি ভাই ।
ভাইয়া আমাদের সায়ান বাবু যে একটি বোন পেয়েছে সেটা জানতে পেরে খুবই ভালো লাগলো। আসলে ভাইয়া প্রতিবেশীরা হলো আমাদের সবচাইতে বেশি আপনজন। আর আপনি ভালো একটি প্রতিবেশী পেয়েছেন এটা জানতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগলো। আর দিনশেষে সবচাইতে বাস্তব কথা হলো ধর্ম নয় মানুষই বড়ো। অতি চমৎকার একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার প্রিয় ভাইয়া।
কর্মব্যস্ত এই দুনিয়ায় আমরা সবাই যান্ত্রিক হয়ে পড়েছি। পাশের দরজায় কি করছে তারও কোন খবর রাখছি না। প্রতিবেশীর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু আপনার প্রতিবেশীর সাথে এত মধুর একটা সম্পর্ক দেখে সত্যিই ভালো লাগলো। বিপদে বন্ধুর পরিচয়। এ ধরনের বন্ধু থাকলে সকালে চায়ের অভাব হয় না।
এই ধরণের সম্পর্ক গুলো দারুণ মিষ্টি হয়।