মোনায়েম || @shy-fox 10% beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

জহুরা তখনও আইসিইউ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং অনেকটা অস্থিরতা পূর্ণ সময় কাটাচ্ছে। তার মন মেজাজ একদম ভালো নেই । তার কাছে এখন মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটাই অনেকটা কঠিন । এই সময়টা তার কাছে অনেকটা নরকের মত মনে হচ্ছে। হয়তো সে নরকের পরিপূর্ণ অবস্থা দেখেনি কিন্তু নরকের যাতনার মত তার যে যন্ত্রণা হচ্ছে, তা সেটা সে খুব ভালোভাবেই পৃথিবীর বুকেই বুঝতে পারছে ।

গুছিয়ে গুছিয়ে পনের লাখ টাকা জমা করেছিল নতুন বাড়ি বানানোর জন্য । ভাড়া বাড়িতে আর কতদিন থাকবে । এইদিকে মোনায়েম বড় হয়ে উঠছে , তাকে নিয়ে তার ভীষণ চিন্তা । তাকে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করে দেবে, তাকে ভালোভাবে মানুষ করে তুলবে, এমনটাই চিন্তা ছিল সাজু আর জহুরার সংসার জীবনে ।

জহুরার পরিচয় যদি দিতেই হয়, সে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আর সাজু ছিল একটা এনজিওর বড় কর্মকর্তা । বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার । অভাব ছিলনা , ছিলনা দুঃখ কষ্ট । সাজুর কর্মস্থল ছিল শহর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে । শুধুমাত্র সন্তানের কথা চিন্তা করে জহুরাকে এ শহরে একটা বাসা ভাড়া করে নিয়ে দিয়েছিল ।

Screenshot_20220509-232118_Messenger.jpg

কারণ তখন মোনায়েম সদ্য স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল । তাতেই তাদের কত চিন্তা ভাবনা । নিজের সঙ্গে নিজের স্যাক্রিফাইস কারণ ভবিষ্যৎ বেড়ে উঠতে চায় সুন্দর পৃথিবীতে । এমনটা চিন্তায় থাকতো প্রতিনিয়তই তারা ।

ঘটনাগুলো আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি । আমার শহরের চেম্বারের পাশের বাসাতেই ওরা থাকত । কত ভালোবাসা ছিল এই দম্পতির ভিতরে । আজ ভাবলেই মনটার উপর যেন ঘন কালো মেঘ এসে জমাট বাঁধে ।

সাজু সাহেব ঠিক বৃহস্পতিবার করে বাড়িতে আসতো শুক্রবার থেকে আবার শনিবার সকালে চলে যেত গন্তব্যে মানে যেখানে সে কর্ম করতো সেখানে। তাদের তেমন একটা চিন্তা ছিলো না কিন্তু সকল চিন্তা আবার ছেলেটাকে ঘিরেই। তবে সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিল ।

যেহেতু এ শহরে তারা একটা জমি কিনেছে তাই আর বেশি দিন সাজু সাহেব চাকুরি করতে রাজি নয় । এমনিতেই বেসরকারী চাকুরী তার ভিতরে এনজিওর ঋণ প্রকল্পের দায়িত্বে আছে, অনেকটাই চাপ সামলাতে হয় । এতো চাপ এই বয়সে সে আর নিতে রাজি হয় । তাই ভাবছিল বুঝেশুনে চাকুরিটা ছেড়ে দেবে আর বাড়ির কাজে লেগে পড়বে জমানো টাকা দিয়ে ।

একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, অনেক সময় সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনা গুলোর মাঝে থেকেও অনেক ভুল-ভ্রান্তি চলে আসে । আপনি যেমন করে বিষয়গুলো ভাবতে চাচ্ছেন,ঠিক তেমন করে বিষয়গুলো হয়ে ওঠে না । হয়তো নিয়তি একটু এদিক-সেদিক করে দেয় ।

রাত্রি তখন এগারোটা, জহুরার পা কেটে গিয়েছে বটি লেগে । জহুরা ফোনে সাজুকে ঘটনাটি বলেছে। সাজু সাহেব ,জহুরাকে বলেই ফেলল শুভোর কাছে যাও , গিয়ে দেখাও । আমি আসছি । ঐ মাঝরাতেই মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে যখন সাজু সাহেব আসছিল, হুট করে কোথায় থেকে কি হয়ে গেল । তারপর সাজু সাহেব এখন আইসিইউ এর বেডে ।

জহুরা কাঁচের জানালা দিয়ে বারবার ইসিজি মনিটরের দিকে দেখছে । দেখছে, হার্টবিটের দাগ গুলো ক্রমশ করে উপরে উঠছে আবার ক্রমশ নিচে নামছে । কি যে অপেক্ষা করছে জহুরার ভাগ্যে, তা বলা মুশকিল ।

Banner.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

পুরো গল্পটি পড়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আসলে কার কখন কপালে কি আসবে কেউ জানেনা। তারা অনেক স্বপ্ন দেখছিল সাজানো সংসার গোছাবে। 15 লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনবে চাকরি ছেড়ে দেবে তারা সুন্দরভাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করবে কিন্তু নিয়তি তাদের হতে দিল না সুখময়। হসপিটালে থাকলে বোঝা যায় যে মানুষ বাঁচার জন্য কতই না কষ্ট করে।আমরা দোয়া করি যেন তাদের সংসারটি আবারো আগের মত পূর্ণতা পায়। এই কামনাই করি😥🤲🤲

 2 years ago 

আসলে কখন কার ভাগ্যে কি ঘটে যায় , এটা আসলে বলা খুব মুশকিল । নিয়তি থেমে থেমে মোচড় খায় , এমন ভাবে মোচড় খায়, যেন সব কিছু উল্টো পাল্টা করে ফেলে ।

 2 years ago (edited)

জহুরা এবং সাজু সাহেবের এত সুন্দর একটি সংসারে হুট করে এত বড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট এটি মেনে নেয়ার সত্যি অনেক কষ্টকর। ভাইয়া পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব খারাপ লাগছিল আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন আমরা ঘটনা গুলো যেভাবে ভাবি সবসময় কিন্তু তা সেভাবে হয়ে ওঠে না। দোয়া করি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে যেন সাজু সাহেব খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যান এবং আরো দোয়া করি জহুরা ভাবিও খুব দ্রুত যেন সুস্থ হয়ে যান। জানিনা সাজু সাহেবের এই অবস্থার ফলে মোনায়েম এবং তার মা জহুরা ভাবির এখন কি অবস্থা। 🥲এই গল্পটির পরবর্তী অংশটুকু জানার জন্য আমি খুবই আগ্রহী,। আশা করি ভাইয়া পরবর্তীতে ঘটনাটি আমাদের মাঝে আরও শেয়ার করবেন।♥️

 2 years ago 

আশেপাশে কত শত গল্প ছড়িয়ে আছে, যতই জীবন গুলো দেখি, ততই আতকে উঠি । কতই না গল্প আমার মাথার ভিতরে ঘুরপাক খায় । হয়তো লিখব লিখব করে লিখে উঠতে পারি না, তাই একটু লিখে ফেললাম ।

 2 years ago 

ঘটনাটি যখন পরছিলাম প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম এটা আপনার কোনো সিরিজ হবে ভাইয়া।কিন্তু মাঝ থেকে যখন আবার পরছি সত্যি অবাক হয়ে গেলাম এতো দারুন হাসি খুশি একটা সংসার শেষ এই পরিনতি সত্যি কষ্ট দায়ক ছিল। দোয়াকরি সব কিছু ঠিক হয়ে যাক আপনি গুছিয়ে লিখেছেন ভালো লেগেছে🙏🙏

 2 years ago 

আরো কিছু বলার আছে , দেখি সময় হোক । চেষ্টা করব বাকিটা বলার জন্য ।

 2 years ago 

🙏🙏🥰

 2 years ago 

এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষ কতইনা পরিকল্পনা করে।কিন্তু সবকিছুই কি আর পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়। কারণ উপরে যিনি আছেন তিনি সবকিছুর পরিকল্পনা আগেই করে দিয়েছেন। যাই হোক প্রার্থনা করি সাজু সাহেব সুস্থ হয়ে ওঠেন।

 2 years ago 

সাজু সাহেবের পরের ঘটনাটা বেশ জটিলতা সম্পন্ন , দেখি সময় সুযোগ পেলে লিখে ফেলবো ।

 2 years ago 

পুরো গল্পটা পড়ে খুবই কষ্ট পেলাম ভাইয়া, আরো বেশি কষ্ট পেয়েছি এটা বাস্তব জীবনের গল্প বলে। এক নিমিষেই তাদের পরিবারের পুরো গল্পটাই ঘুরে গেল। সত্যিই খুবই কষ্টদায়ক ছিল গল্পটা। দোয়া করি শাজু শাহেব যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

 2 years ago 

জীবন ও সময় বহমান নদীর মতো, কখন কি হবে বলা যায় না ভাই ।

 2 years ago 

রাজু সাহেব আর জহুরা র জীবনের গল্প পড়ে অনেক খারাপ লাগে। আসলে আমাদের জীবনে বেঁচে থাকতে গেলে ছোট ছোট স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়, সেই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যেতে হয় ছোট্ট একটা সন্তান নিয়ে ছোট্ট একটি সংসার কত গোছানো স্বপ্ন নিমিষেই যেন তছনছ হয়ে যায়। জহুরা অনেক স্বপ্ন দেখেছিল কিন্তু তার ভাগ্যে কি আছে তা এখন অনিশ্চিত! ভাগ্যের কি নির্মম খেলা বলেন! তার অসুস্থতার কথা শুনে তার স্বামী যখন মধ্যরাতে গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে আসতেছিল হয়তোবা হার্ট অ্যাটাক করেছিল । আমাদের জীবনে কার জীবনে কখন কি আছে কেউ জানি না। কখন আমাদের জীবনের পথ পরিবর্তন হবে সেটাও জানি না। আপনি এখন সুস্থ আছেন 5 সেকেন্ড পরে দেখবেন যে আপনি আইসি বেডে পড়ে আছেন হায়রে জীবনের লীলা খেলা। যাইহোক জহুরার জীবনে অন্ধকারের কালো ছায়া যেন নিয়ে আসে সেই প্রত্যাশা করছি তাদের স্বপ্ন যেন মাটিতে মিশে না যায় সেই জন্য দোয়া করছি।

 2 years ago 

হার্ট অ্যাটাক না হয়ে তো অন্য কিছুও হতে পারে । তবে যাই হোক , এখনো কিন্তু সম্পূর্ণটা খোলসা করি নি । চোখ রাখুন হুট করে খোলাসা করে ফেলব ।

 2 years ago 

জহুরা কাঁচের জানালা দিয়ে বারবার ইসিজি মনিটরের দিকে দেখছে । দেখছে, হার্টবিটের দাগ গুলো ক্রমশ করে উপরে উঠছে আবার ক্রমশ নিচে নামছে । কি যে অপেক্ষা করছে জহুরার ভাগ্যে, তা বলা মুশকিল ।

ভাইয়া আপনার লিখা এই ঘটনাটি পড়ে খুবই কষ্ট পেলাম। আসলে জহুরা ও সাজুর মত অনেক মানুষ আছেন যারা নিজের স্বপ্ন হঠাৎ করে হারিয়ে ফেলে। আমরা সত্যিই কেউ জানিনা জহুরার ভাগ্যে কি আছে। তবে আমরা সকলেই প্রার্থনা করি তার স্বামী যেন সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে এবং তাদের সন্তান যেন ফিরে পায় তার সুস্থ স্বাভাবিক জীবন। আবারো আগের মত হয়ে উঠুক তাদের স্বাভাবিক জীবন এই কামনাই করছি। ভাইয়া অনেক সুন্দর ভাবে গুছিয়ে প্রতিটি কথা উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। 💖💖

 2 years ago 

দুনিয়াটা গোলকধাঁধার মতো ভাই । চাইলেই যদি সব হতো , তাহলে তো অনেক কিছুই হয়ে যেত। দেখি পরবর্তী সময়ে বাকিটুকু লিখবো ।

 2 years ago 

গল্পটি যখন পড়া শুরু করি ভাবছিলাম হয়তো সম্পর্কের ফাটল ধরার কোনো ঘটনা ঘটবে আসলে শেষ পর্যন্ত পড়ে খুব কষ্ট পেলাম। সাজু সাহেবের জন্য মন থেকে দোয়া করি তিনি যেন খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।

আসলে জীবণের কোনো গ্যারান্টি নাই। সাজানো গুছানো জীবণ মিনিটের মধ্যে অগোছালো হয়ে যেতে পারে। আপনার লেখার ধরণ একদম প্রফেশনাল লেভেলের ছিলো।

 2 years ago 

হুট করে যখন ঝড় উঠলে, সেটা থেমে যায় । কিন্তু উলট পালট হয়ে গেলে, সেটা ঠিক করা বেশ মুশকিল হয়ে যায় ।

 2 years ago 

আপনার এইধরনের লেখাগুলো আমার মুখের ভাষা কেড়ে নেই। আসলেই মানুষের জীবনে কখন যে কী হয়ে যায় এটা বলা মুশকিল। জহুরা ম‍্যাম এর জায়গাই আমিও থাকলে নরক যন্ত্রণা পেতাম। কী একটা অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে জহুরা ম‍্যাম এবং তার ছেলে। আর কিছু বললাম না ভাই। অসাধারণ ভাবে নিজের লেখা দিয়ে ঘটনা টা ফুটিয়ে তুলেছেন।।

 2 years ago 

পাঠকের সন্তুষ্টি লেখকের আত্মতৃপ্তির বহিরপ্রকাশ । আগামীতে চোখ রাখুন, জটিল কিছু অপেক্ষা করছে ।

 2 years ago 

😳😳😳💖💖😘

 2 years ago 

অনেক সময় সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনা গুলোর মাঝে থেকেও অনেক ভুল-ভ্রান্তি চলে আসে । আপনি যেমন করে বিষয়গুলো ভাবতে চাচ্ছেন,ঠিক তেমন করে বিষয়গুলো হয়ে ওঠে না ।

ভাইয়া, এটাই বাস্তব আমরা যেটা চিন্তা ভাবনা করি কিন্তু নিয়তির কারণে সেই চিন্তা ভাবনা এদিকসেদিক হয়ে যায়।কত সুন্দর চিন্তা ভাবনা করে ছিলেন সাজু সাহেব। সাজু সাহেবের কি কারণে এই অবস্থা জানি না।তার সুখের সংসার আজ এলোমেলো হয়ে গেছে।ভাইয়া, উনি আদৌ কি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে কি না জানিনা।তারপরও দোয়া করি তিনি যেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।ভাইয়া পোস্টটি পড়ে খুব খারাপ লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

দেখি সময়-সুযোগ হয়ে উঠলে, সাজু সাহেবকে নিয়ে বিস্তারিত জানাবো ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 57946.22
ETH 3059.94
USDT 1.00
SBD 2.34