আন্তরিকতা
একটু আগেই টেবিলে, সুমন সাদা রুটি আর মিষ্টি দিয়ে গিয়েছে। এখানে প্রায়ই আসি, এই টেবিলটাতেই বসি, তাই বলা যায় সুমনের সঙ্গে সম্পর্কটা বেশ ভালই দৃঢ় হয়েছে। অন্যান্য খাবারের থেকে সাদা রুটি আর মিষ্টি খেতে কিছুটা ভালো লাগে। এই হোটেলে যখনই আসি, তখনই আমি সুমনকে খোঁজার চেষ্টা করি। ঠিক সুমনও আমাকে দেখলে, ও যত ব্যস্তই থাকুক না কেন, সে আমার কাছে আসার চেষ্টা করে এবং খোঁজখবর নিয়ে থাকে।
ওকে যতবারই বকশিস দিতে গিয়েছি ততবারই আমি ব্যর্থ হয়েছি। ইচ্ছে করেই সে আমার কাছ থাকে বকশিস নিতে চায় না। একবার তো বলেই ফেলেছে যখন বেশি প্রয়োজন হবে, তখন নিজে আমি আপনার কাছ থেকে চেয়ে নেব।
সঞ্জিতকেও চিনি বহুদিন আগে থেকেই। এই চার রাস্তার মোড়ে মাঝে মাঝেই আসি, ছুটে চলা মানুষগুলোকে দেখি আর চায়ে চুমুক দেই। ঠিক এখান থেকেই পরিচয়ের সূত্রপাত সঞ্জিতের সঙ্গে। কিরে সঞ্জিত চা খাবি, ভাই আমি তো সারাদিন চা বানানোর মাঝেই থাকি, তাই খুব একটা খাওয়ার ইচ্ছে জাগে না। আপনি দেখি একা একা ফিসফিস করছেন, মন খারাপ নাকি। না রে সঞ্জিত, ছুটে চলা মানুষগুলো কে দেখছি আর ভাবছি কতই না ব্যস্ততা তাদের।
নিজাম ভাইয়ের সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধানটা বেশ, তবে আমাদের সম্পর্কটা যেন অনেকটাই আত্মিক। প্রায়ই টুকটাক বাসার কেনাকাটার জন্য তার দোকানে যাই, পরিচয়টা হয়েছিল সেভাবেই। বাসা থেকে বের হলেই রোজ তার সঙ্গে দেখা হয়, ভদ্রলোক বড্ড হেসে কথা বলে। নিজের থেকেই আমার খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করে, যেটা আমাকে ভীষণ আকৃষ্ট করে ।
এই যে নিজাম ভাই, সঞ্জিত, সুমন এদের কাউকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তবে তারপরেও তারা আমার কাছে ভীষণ আপন। নিজের আপন মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলেও যে প্রশান্তি পাই না, ঠিক তার থেকেও বেশি প্রশান্তি পাই এই মানুষ গুলোর সঙ্গে কথা বলে।
এই মানুষগুলো আমার বন্ধু নয়, তবে তারা বন্ধুর থেকেও কোন অংশে কম নয়। তবে যাদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বিশেষ করে স্কুল-কলেজে পড়ার সময়ে, আজ তাদের সঙ্গে অনেকটাই দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে।
স্কুল কলেজ জীবনের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে আমি তেমন কোন কিছু আশা কখনো করিনি বা প্রাপ্তিও রাখিনি, শুধু চেয়ে ছিলাম তারা আমাকে মনে রাখুক বা টুকটাক খোঁজখবর নিক, ঠিক এতোটুকুই চাওয়া ছিল । আর এতোটুকু করতেই তারা ব্যর্থ হয়েছিল। তবে এ যাত্রায় নিজাম ভাই, সঞ্জিত, সুমন যা ক্রমাগত করেই যাচ্ছে। এই মানুষগুলো এখন সত্যিই আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমি কৃতজ্ঞ তাদের আন্তরিকতার কাছে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগল। সত্যি ভাইয়া আন্তরিকতা মহৎ একটি গুণ। আসলে যাদের সাথে আন্তরিকতা আছে তারা আমাদের আপনজনের মতো। সত্যি কতো আপনজন আন্তরিকতার অভাবে দূরে চলে যায়।তাই আমাদের সবারই উচিত আন্তরিকতা হওয়া।
ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
মাঝে মাঝে কিছু মানুষের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধবের সঙ্গেও গড়ে উঠে না। ঠিক তেমনি সম্পর্ক এদের সঙ্গে আপনার গড়ে উঠেছে। সুমন অনেকদিন ধরে আপনাকে এখানে দেখে আসছে জন্যই একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। তার জন্য হয়তো সে আপনার কাছ থেকে বকশিশ নিতে চায় না। এরকম সম্পর্ক গুলো বেঁচে থাক হাজার বছর।
এটা একদম সত্য কথা বলেছেন আপু, এই সম্পর্ক গুলো আসলেই জীবিত রাখা উচিত।
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1672585506134331395?t=Gu05E3Z6lSDzjpwg4ISJOQ&s=19
মাঝে মাঝে আমাদের প্রত্যাশা গুলো ব্যর্থ হয়ে যায়। যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাশা করি তারা কখনো খোঁজ খবর রাখে না। আর যাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই দিনশেষে তারাই আমাদের আপন হতে চায় এটাই জীবনের বাস্তবতা। এছাড়া আপনি সবাইকে আপন করে নিয়েছেন বলেন তারাও আপনাকে আপন করে নিয়েছে। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে সত্যি অনেক ভালো লাগলো।
হয়তো বাস্তবতা এমনই, তাই হয়তো যাদেরকে কখনো আশা করিনি তারাই আমার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। সত্যিই মানুষগুলোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
ভাইয়া কথায় তো বলে আপনের চেয়ে পর ভালো, আর পরের চেয়ে জঙ্গল ভালো। মাঝে মাঝে আমরা যাদের থেকে প্রত্যাশা করি তারা আমাদের প্রত্যাশা গুলো মৃত্যু ঘটায়। আর যাদের থেকে প্রত্যাশা করি না তারাই আমাদের আপন হয়ে যায়। আসলে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়। যেটা আপনার মধ্যে আছে। এই যে , নিজাম, সুমন আর সঞ্জিত এরা কিন্তু আপনার হৃদয় দিয়ে গড়ে তোলা আপন জন। ভালো থাকুক আপনার ভালো লাগার মানুষ গুলো। ভালো থাকেন আপনার মত বড় মনের মানুষ।
আপনার এই কথা গুলো আমার বেশ ভালো লেগেছে। যথার্থ বলেছেন। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য 🙏
দারুন লিখছেন ভাইয়া কথা গুলো অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কাছের মানুষ গুলোর গল্প লিখলেন। আসলে এমন কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক না হলেও আত্মার সম্পর্ক অনেক বেশি গভীরত্ব প্রকাশ পায়। যাদের সাথে প্রতিনিয়ত দেখা শোনা হয় চলার পথে দেখা হয় বেশ ভালই লাগে। এমন মানুষ গুলো অনেক আন্তরিক সম্পন্ন মানুষ হয়। যদিও আপনি সুমনকে অনেকবার বকশিস দিতে চেয়েছেন কিন্তু বকশিস নেই না। আপনার কাছের মানুষগু লোর গল্প গুলো পড়ে অনেক ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ আপু আমার অনুভূতি বুঝতে পেরে মন্তব্য করার জন্য।
আসলে ভাইয়া, মানুষের সাথে আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে উঠলে, ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠলে পরস্পরের সাথে এমনিতেই একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। আর তখন সেই ভালোবাসা আকর্ষণে প্রিয় মানুষগুলো এক অন্যের খোঁজখবর নিতে থাকে। আর সুমন, সঞ্জিত, নিজাম ভাইদের সাথে আপনার নিঃসন্দেহে একটি ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। আমি আশা করি, তাদের সাথে আপনার এই আন্তরিকতার সম্পর্ক চির অটুট থাকবে।
ধন্যবাদ আপনাকে, আসলেই ভাই তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা আমার বেশ গভীর হয়ে গিয়েছে।