মধ্যবিত্তের ঈদ

in আমার বাংলা ব্লগlast year

png_20230629_173620_0000.png

বেতন বোনাস মিলে এবার ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছে জোহা মাস্টার। একটা সময় এই পয়সা দিয়ে তার বেশ ভালোই চলে যেত। তবে দিন যত গড়িয়ে যাচ্ছে তার অর্থনৈতিক অবস্থা যেন আরো বেশ জটিলতা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে ।

সে মূলত মাধ্যমিক স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক। এই বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আলাদা করে প্রাইভেট পড়তে চায়না। ছাত্র-ছাত্রীদের নজর তো শুধু অংক ইংরেজি ফিজিক্স কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি এসব সাবজেক্টের দিকে। তাই জোহা মাস্টারের বাড়তি ইনকাম নেই বললেই চলে।

ব্যক্তি জীবনে সে তিন সন্তানের জনক। ছোট ছেলেটার বয়সও পাঁচ বছর অতিক্রম করে চলেছে আর বড় দুটো মেয়ে। একটা ক্লাস সেভেনে পড়ে আর একটা অনার্সে। সকালবেলা কোনরকম ঈদগাহ মাঠ থেকে ছোট ছেলেটাকে সঙ্গে করে নিয়ে সে নামাজ পড়ে ফিরেছে। এসেই বাসার বাহিরে তালা লাগিয়ে দিয়ে রেখেছে এবং বাসার ভিতরে গিয়ে তারা এমন ভাবে আবদ্ধ হয়ে আছে, যাতে মানুষ বুঝতে না পারে, বাসার ভিতরে কেউ আছে।

এমনিতেই সে এই শহরে ভাড়া বাসায় থাকে, তার ভিতরে মোটামুটি স্বামী স্ত্রী সন্তান মিলে পাঁচ সদস্যের সংসার। তার মেয়েরাও পড়াশোনার সঙ্গে জড়িত আছে, তাদের পিছনেও বেশ ভালোই পয়সা খরচ করতে হয়। আজকাল তো ছোট ছেলেটার জন্য একটু বাড়তি পয়সা খরচা হচ্ছেই। সামনে মাসে আবার বাসা ভাড়া দিতে হবে, সংসার খরচ আছে এবং সন্তানদের পড়াশোনার পিছনেও কিছুটা পয়সা লেগে যাবে, অনেক হিসাব-নিকাশ করে দেখল, সে যদি এবার কোরবানি দেয় তাহলে সামনে মাসে তাকে অর্থনৈতিকভাবে বেশ বিপাকে পড়তে হবে।

যদিও ইচ্ছে ছিল ভাগে অন্যদের সঙ্গে কোরবানি দেওয়ার, তবে এবার কোরবানির পশুর যে দাম ছিল, তাতে আসলে তার সেই ইচ্ছেও পূর্ণ হয়নি। এ শহরটা বড্ড আজব শহর, নূন্যতম সৌজন্যতা ও আন্তরিকতা কারো মাঝেই যেন নেই। কে রাখে কার খোঁজ।

একটা বার চিন্তা করে দেখুন তো, একটা মানুষ কতটা পরিমাণ লজ্জায় পড়ে গেলে বাসার বাহিরে তালা লাগিয়ে ভিতরে আবদ্ধ অবস্থায় অবস্থান করে। কারণ একটু পরেই তো ছিন্নমূল মানুষরা আসবে আর আকুতিপূর্ণ ভাবে ডাকাডাকি করবে মাংসের জন্য। তাদের অনুরোধ ফেলাও বেশ কষ্টকর কারণ তারাও তো এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে কোনভাবেই এত চড়া মূল্য দিয়ে মাংস কিনতে পারেনা।

উচ্চবিত্তদের অবস্থার কথা জানা নেই, তবে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের অবস্থা বেশ করুন। না পারছে তারা উপরের দিকে উঠতে, না পারছে তারা নিচের দিকে নামতে।

এতসবের মাঝেও জোহা মাস্টার বড্ড আশাবাদী। এসবের হয়তো একদিন পরিবর্তন হবে, সে আবারো আগের মত এই স্বল্প পয়সার বেতনে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারবে। অবশ্যই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে, তবে সেই পরিবর্তন জোহা মাস্টারের অনুকূলে থাকবে নাকি প্রতিকূলে যাবে সেটা বলা বড্ড মুশকিল।

Banner-13.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 last year 

আমাদের সমাজে জোহা মাস্টারের মত অনেকেই আছে যারা পরিবার নিয়ে কোনো রকমে টিকে আছে। তাদের কাছে কোরবানি দেয়া যেমন কষ্টের তেমনি না দেয়াও লজ্জাকর। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ যেনো প্রতিটি মধ্যবিত্তদের জীবনের গল্প। দারুন লিখেছেন ভাইয়া।

 last year 

চেষ্টা করেছি আপু পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে লেখাটা প্রকাশ করার জন্য।

 last year 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে বেশ অবাক হই। আমার মনে হয় টাকা দিয়ে জিনিসপত্র না কিনে,শুধু টাকা চিবিয়ে খেলেও পেট ভরে যাবে। আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, উন্নত যে দেশগুলোর জিডিপি বেশি, সেই সমস্ত দেশেও অনেক জিনিসপত্রের দাম এতো না। তাই হিসাব না করলেও অটোমেটিক হিসাব চলে আসে মনের মধ্যে। ডিটারজেন্ট পাউডার কোরিয়াতে ১০ কেজি কিনতাম বাংলাদেশী ৫০০-৬০০ টাকা দিয়ে। আর আমাদের দেশে এক কেজি ডিটারজেন্ট এর দাম ১৭০-১৮০ টাকা। দিন দিন যেন সবকিছুর দাম বেড়েই চলছে। এমন আরো অসংখ্য জিনিসপত্র রয়েছে যেগুলোর দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি এবং লাগামহীন বেড়েই চলছে। সবকিছুর মূলে রয়েছে সিন্ডিকেট। তাইতো মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের অবস্থা দিনদিন করুণ হয়ে যাচ্ছে। তবে এগুলো দেখার মতো কেউ নেই। যাইহোক সময়োপযোগী একটি পোস্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 last year 

আসলেই পারিপার্শ্বিক অবস্থায় কি চলছে বা কি হচ্ছে, এসব দেখার সত্যিই কেউ নেই।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56560.74
ETH 2390.02
USDT 1.00
SBD 2.34