সহজ সমাধান steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

destruction-1929422_1280.jpg
source

শফিকের বেড়ে ওঠা আর অন্য দশটা ছেলের মত নয়, জন্মের পর থেকে বাবা-মার আদর পেয়েছে খুবই স্বল্প। মা অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করতো আর বাবা নিয়োজিত ছিল গ্যারেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে।

গ্যারেজের পিছনে যে ঝুপড়ি ঘর ছিল, সেখানেই মূলত শফিকরা থাকত। যদিও তাদের পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা তেমন একটা ছিল না, তারপরও তাদের পরিবারে অশান্তি ছিল না। কারণ তারা জানে তাদের নিজেদের ভিতরে আসলে অশান্তি করেও লাভ নেই, অর্থনৈতিক সচ্ছলতার অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে গেলে একমাত্র কাজই করে যেতে হবে, তার বিকল্প আর কিছুই নেই।

যেহেতু জন্মের পর থেকেই শফিক এই অবস্থা দেখে বড় হয়েছে, তাই মোটামুটি সে এই অবস্থার সঙ্গে অনেকটা মানানসই। পড়ালেখা করা তার খুব একটা ভাগ্যে জোটে নি। শফিকের এখন বয়স ১৬-১৭ তার বাবা যে গ্যারেজে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে, সেখানে মোটামুটি সারাদিন সে সময় পার করে। মূলত গ্যারেজে আগত গাড়িগুলোর পরিচর্যা করে। ঐ দেখা যায় দিনশেষে গাড়ির ড্রাইভার গুলো গাড়ি পরিষ্কারের জন্য তাকে বাড়তি কিছু বকশিশ দিয়ে থাকে, এই ভাবেই শফিকের কিছুটা বাড়তি ইনকাম হয়।

তাছাড়াও তার বাবার দায়িত্ব মাঝে মাঝে সে নিজে পালন করে। এখন সে বড় হয়েছে যেহেতু, তাই কিছুটা দায়িত্ব দেওয়ার মতো শক্তি সামর্থ্য দুটোই আছে। কত মানুষের আনাগোনা এই গ্যারেজে, কত রকমের ঘটনার সাক্ষী তাকে প্রতিনিয়ত হতে হয়, তাছাড়া এখানে যে সকল কার্যকলাপ হয় সেগুলো তার কাছে অনেকটাই হরহামেশাই দেখার মত।

মোটামুটি গ্যারেজে যে গাড়িগুলো থাকে তাদের ড্রাইভাররা গ্যারেজে বসে হালকা নেশা পানি, জুয়া তারা খেলেই। এটা এক প্রকার এখানকার সাধারণ দৃশ্য। রাত-বিরাত সবকিছুই যেন এখানে সমান। সেদিন ভোর রাতের দিকের ঘটনা, শফিকের বাবা কয়েকদিন থেকে জ্বরে ভুগছে, তাই ঠিকমতো সে ডিউটি করতে পারছে না। টানা কয়েকদিন থেকে শফিক নিজেই তার বাবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

ক্লান্ত শরীরে যখন ভোর বেলার দিকে গ্যারেজের সামানে দায়িত্বরত অবস্থায় কোনো রকমে একটু বিশ্রামের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিল তখনই গ্যারেজের ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। তবে এই আওয়াজটা ড্রাইভারদের মধ্যকার জুয়া খেলায় জেতার পরে উচ্চ হাসিতে লুটিয়ে পড়ার মতো আওয়াজ না, এই চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে মনে হয়েছে কেউ হয়তো বিপদে পড়েছে।

শফিক ঘুমকাতুরে চোখে কোনরকমে সেখানে গিয়ে হাজির হতেই, যা দেখে তা দেখে মোটামুটি সে নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি, ড্রাইভারদের ভিতরে কি হয়েছে তা সে জানেনা, তবে গিয়ে দেখে একজন ড্রাইভার রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে, হয়তো তার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে। তবে বাকি দৃশ্য দেখার পরে শফিক আরো হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। কারণ বাকি ড্রাইভার গুলো যেন পালাতে পারলে বাঁচে। যেহেতু তারা নিজেরা মারামারি করেছে এবং পরিস্থিতি বড্ড ভয়াবহ তাই গাড়ি নিয়ে ভেগে যেতে পারলেই তারা যেন বিপত্তি থেকে রক্ষা পাবে ব্যাপারটা এমন।

শফিক যখন দেখছে ঘটনাটা তার আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে, সে সেখানে কোনরকম দেরি করেনি মুহূর্তেই ওখান থেকে গ্যারেজের মেইন গেটের কাছে চলে এসেছে এবং তড়িঘড়ি করে পুরো গেটটা লাগিয়ে দিয়েছে। তারপরে স্থানীয় জনগণের মাধ্যমে পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছে। আর লক্ষ্য একটাই ছিল ভিতরে যা ঘটে ঘটুক, তবে কেউ যেন গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে।

গ্যারেজের মেইন গেইট লাগিয়ে দেওয়ার পরে, ভেতর থেকে ড্রাইভাররা শফিককে প্রলোভিত করার জন্য বেশ আকুতি-মিনতি জানায়,তাকে বেশ ভালই পয়সার লোভ দেখানো হয়েছিল, শফিকের জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে সহজেই হয়তো প্রলোভিত হয়ে যেতে পারত। টাকার লোভ তো অন্য জিনিস, তবে শফিকের ছোট মাথায় সেটা খুব একটা ঢোকে নি।

শফিক শুধু চেয়েছে পুলিশি ঝামেলাতে যেন তাকে জড়াতে না হয়, কেননা টাকার কাছে হয়তো যদি সে হার মানতো, তাহলে খানিকটা দিনের জন্য তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরে আসতো, তবে পরবর্তীতে এই রেশ থেকেই যেত। একটু পরেই পুলিশের গাড়ি এসে হাজির, গ্যারেজের সামনে জড়ো হওয়া লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে দিল পুলিশ।

তারপর শফিক কে বলল গেইট খোলার জন্য, শফিক পুলিশের কথা অনুযায়ী তাই করল। শফিক হয়তো টাকার লোভের কাছে প্রলোভিত হয়নি, তবে ভিতরে কি যেন হলো, একটু পরে শুধুমাত্র যে লোকটা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল পুলিশ শুধু তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল এবং বাকি ড্রাইভাররাও তাদের গাড়ি নিয়ে পুলিশের গাড়ির পিছনে পিছনে যে যার মতো যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে চলে গেল। বলা যায়, মুহূর্তেই গাড়ি ভর্তি গ্যারেজটা ফাঁকা হয়ে গেল। এখানে যে হতাহতের মত একটা ঘটনা ঘটেছে তা যেন বোঝার উপায় নেই। ঐ যে বললাম, শফিক প্রলোভিত হয়নি তাতে কি হয়েছে, তবে পুলিশ তো প্রলোভিত হওয়া বাকি রাখেনি। সকাল সকাল মোটা অংকের কাঁচা টাকা পুলিশের পকেটে ভরে গেল আর ব্যাপারটাও অনেকটা সহজ সমাধান হয়ে গেল।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

|Column 1|Column 2|Column 3|
|------------|------------|------------|
|     Text     |     Text     |     Text     |

|Column 1|Column 2|Column 3|
|------------|------------|------------|
|     Text     |     Text     |     Text     |

Sort:  
 11 months ago 

শফিক দরিদ্র হলেও নিজের সততা বিক্রি করেনি।অন্যদিকে পুলিশ ঠিকই টাকার কাছে বিক্রি হয়ে এতো বড় একটা ঘটনা ধামাচাপা করে ফেললো।এটাই আসলে বাংলাদেশ।এখানে কোনো কিছুর বিচার হয়না, কিছু অসৎ পুলিশের কারণে।আসলে টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়না।এই শফিকের মতো মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 11 months ago 

তবে এভাবে চলতে থাকলে, এই ভালো মানুষের সংখ্যা শূন্যের কেঠায় পৌঁছে যাবে।

 11 months ago 

বাংলাদেশের বেশিরভাগ পুলিশ প্রচন্ড লোভী। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত অন্যায় অপরাধ বেড়েই চলছে, এর প্রধান কারণ হচ্ছে পুলিশ। পুলিশ যদি ঘুষ না খেয়ে তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক মতো পালন করতো, তাহলে দেশের চিত্র অনেকটাই পাল্টে যেত। ছোট্ট শফিক এর কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার সেসব পুলিশদের। তবে সব পুলিশ খারাপ নয়। কিছু কিছু ভালো পুলিশও দেখেছি আমি। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

সব সেক্টরেই আসলে কিছু মানুষ ভালো থাকে, তবে সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য।

 11 months ago 

সহজ সমাধান হয়ে গেল পুলিশের কাছে টাকার জন্য। এজন্যই অপরাধীরা আরও বেশি সুযোগ পায়। যতরকমের অসামাজিক কার্যকলাপ আছে সেগুলো করে বেশি। এই যে অসামাজিক কার্যকলাপ বেড়ে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন আর কতদিন মুখ চাপা দিয়ে বসে থাকবে? এর সমাধানই বা কিভাবে হবে? তবে শফিক সাহেবের মতো মানুষ আছে বলেই সমাজ এখনও টিকে আছে। এভাবে কতদিনই বা টিকে থাকবে আমার জানা নেই।

 11 months ago 

সামনের দিন গুলো তে যে কি হবে তা বলা মুশকিল ভাই 🙏

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59493.68
ETH 2649.33
USDT 1.00
SBD 2.45