অনুগল্প: ভালো থেকো||[10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই সময় পেলেই অনুগল্প লেখার চেষ্টা করি। আজকে আমি একটি নতুন অনুগল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লিখা এই অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

ভালো থেকো:

couple-g240c61f07_1920.jpg
source


পৃথিবীর সব সুখগুলো এসে যখন ধরা দেয় তখন হঠাৎ করেই সেই সুখ পাখিটি ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। যখন দুটি হৃদয় ভালোবাসায় ভরে ওঠে তখনই কোন এক কালো ছায়া এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে যায়। শাওন ও রিধিমা একে অন্যকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। শাওন ও রিধিমার এই সুখের সংসার বেশ ভালোই চলছিল। রিধিমা ছিল লক্ষ্মী একটি মেয়ে। অনেক ভালোবাসতো শাওকে। শাওন ছোটখাটো একটি চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিল। ভালোবেসে বিয়ে করার পর তারা অনেক কষ্টে জীবন কাটিয়েছে। কারণ দুই পরিবার তাদেরকে মেনে নেয়নি। দুই পরিবারের অমতে তারা বিয়ে করেছিল। তবুও একটি সুন্দর সম্পর্কের পূর্ণতা পেয়েছিল। বেশ হাসিখুশি ভাবেই কাটছিল তাদের দিনগুলো। তাদের এই ছোট্ট সুখের সংসারে ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না। হয়তো বিলাসিতার অভাব ছিল কিন্তু সুখের কোন অভাব ছিল না। ছোট্ট এই সংসারে কানায় কানায় সুখ দিয়ে পূর্ণ করা ছিল। যেই সুখের আশা সবাই করে।

এভাবে যখন কয়েক মাস কেটে গেল এরপরেও দুটি পরিবার তাদেরকে মেনে নিল না তখন তারা নিজেদেরকে শক্ত করে নিয়েছিল। তারা ভেবে নিয়েছিল এই পৃথিবীতে দুজন দুজনার জন্য বাঁচতে হবে এবং দুজনার দুটি হাত শক্ত করে ধরেই বাঁচতে হবে। রিধিমাকে খুশি করার জন্য শাওন সব সময় ব্যস্ত থাকতো। রিধিমার ছোট ছোট ইচ্ছে গুলোকে শাওন পূর্ণ করার চেষ্টা করতো। যাতে করে সে পরিবারের থেকে দূরে থাকার কষ্ট ভুলতে পারে। শাওন ও রিধিমা দুজনেই বেশ ভালোভাবেই নিজের সংসার জীবন কাটাচ্ছিল। শাওনের ছোট ছোট উপহার আর রিধিমার হাসিমাখা মুখ দুটি মিলে মিশে তাদের সংসার আরো খুশিতে ভরে উঠেছিল। শাওন অফিস থেকে ফেরার পথে রিধিমার পছন্দের সাদা গোলাপ নিয়ে আসত। সাদা গোলাপ পেয়ে দিদিমা অনেক খুশি হত। রিধিমার হাসি মুখ দেখার জন্য শত ব্যস্ততার মাঝেও শাওন তাকে সাদা গোলাপ উপহার দিত।

শাওন প্রতিদিন রিধিমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে। তাই আজকে রিধিমা শাওনকে একটি খুশির খবর দিতে অপেক্ষা করতে লাগলো। শাওন যখন অফিস থেকে ফিরছিল তখন রিধিমা বারবার তাকে ফোন করছিল কখন সে পৌঁছাবে। কারণ সেই খুশির খবরটি দেওয়ার জন্য রিধিমা আর অপেক্ষা করতে পারছিল না। শাওন যখন বাসায় পৌঁছালো তখন রিধিমা তাকে চোখ বন্ধ করতে বলল। এরপর বলল আমরা দুজন থেকে তিনজন হতে চলেছি। সত্যি কথা বলতে সেই মুহূর্তটি শাওনের জন্য অনেক খুশির ছিল। কারণ তাদের জীবনে নতুন সদস্য আসতে চলেছে। শাওন ও রিধিমার সুখের সংসার আরো বেশি আনন্দে ভরে উঠলো। এভাবেই দিন কাটতে লাগলো তাদের। যখন ধীরে ধীরে সময় ঘনিয়ে আসতে লাগলো রিধিমা ধীরে ধীরে অনেকটা অসুস্থ হতে লাগলো।

রিধিমা বেশ কষ্ট পাচ্ছিল। শাওন রিদিমাকে কোন কাজ করতে দিত না। নিজে নিজেই সবকিছু করার চেষ্টা করত। তবুও রিধিমা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগলো। এরপর বাধ্য হয়ে শাওন রিধিমাকে হসপিটালে ভর্তি করলো। ডক্টর বিভিন্ন পরীক্ষা করার পর শাওনকে জানালো রিধিমা আগে থেকেই অনেকটা অসুস্থ ছিল। যেহেতু সে এখন মা হতে চলেছে তাই তার অসুস্থতা আরও বেড়ে গেছে। এখন সবকিছু বিধাতার হাতে। যদি আপনি রিধিমাকে বাঁচাতে চান তাহলে এই সন্তানের মায়া ত্যাগ করতে হবে। আর যদি আপনারা সন্তান চান তাহলে মায়ের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এই কথাগুলো শোনার পর শাওন যেন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। হয়তো তার পাশে দাঁড়ানোর মত তখন কেউ ছিল না। দুটি পরিবারের সাথে এখনো ভুল বুঝাবুঝি চলছে। দুই পরিবারের কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে শাওন অনেকটা ভেঙে পড়ল। একদিকে তার সন্তান অন্যদিকে তার ভালোবাসা। না পারছে রিধিমাকে সবকিছু বলতে না পারছে নিজেকে সামলাতে। অবশেষে সেই দিনটি ঘনিয়ে এলো। রিধিমা অনেক কিছুই বুঝতে পারছিল। এরপর সে বাধ্য হয়ে ডক্টরকে অনুরোধ করল সবকিছু খুলে বলার জন্য। ডক্টর প্রথমে কিছুই বলতে চাইনি। এরপর রিধিমার কান্নাকাটিতে ডক্টর বলতে বাধ্য হয়েছে। এবার রিধিমা হাসিমুখে ডক্টর কে বলল আমি এই পৃথিবীতে যে কয়টা দিন কাটিয়েছি তাতেই আমি অনেক খুশি। আমি চাই আমার গর্ভের সেই সন্তান এই পৃথিবীতে আসুক। আমি চাই আমার সন্তান এই পৃথিবীর মাঝে বেড়ে উঠুক। অবশেষে এই সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হলো। কিন্তু শাওন তার ভালোবাসার রিধিমাকে হারিয়ে ফেলল। যখন সে তার কন্যা সন্তানের মুখ দেখল তখন আরো বেশি কান্নায় ভেঙে পড়ল। কারণ সেই মেয়েটির মায়া ভরা মুখের মাঝে রিধিমার মুখ খুঁজে পেল। আজ রিধিমার মৃত্যুবার্ষিকী তাইতো বাবা মেয়ে দুজনে মিলে রিধিমার কবরের পাশে বেশ কিছু সাদা গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর শাওন বারবার মনে মনে বলছে তোমাকে ছাড়া আমরা ভালো নেই তবে তুমি ভালো থেকো।

আমার এই অনুগল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানিনা তবে আমি চেষ্টা করেছি নিজের মত করে এই সুন্দর একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Sort:  
 2 years ago 

সত্যিই অসাধারণ ভাইয়া আপনার গল্পটা পড়ে এতটুকু বুঝলাম যে ভালোবাসার শক্তি অসীম ৷তাই তো শাওয়ান ও রিধিমা শত কষ্ট করেও দুজন দুজনকে কখনো ফেলে চলে যাই নি ৷আর সত্যি বলতে মন থেকে ভালোবাসা গুলো এমনি ৷
আবার আরেকটা কথা আসলে যারা কষ্ট করে তারা পরে সুখী হতে পারে না ৷আর সুখ বেশী দিন থাকে না ৷
খুব খারাপ লাগলো যে ভালোবাসার মানুষটি আর পৃথিবীতে থাকল না ৷
যাই হোক গল্পটা পড়ে খুব ভালো লাগলো আবার কষ্টও লাগলো

 2 years ago 

আমাদের জীবনের সুখ গুলো সব বিচিত্র রকমের। যখন সুখগুলো জীবনে এসে ধরা দেয় তখন দুঃখগুলো তার চারপাশে ভিড় করে আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65792.35
ETH 2676.19
USDT 1.00
SBD 2.90