অনুগল্প:ভালোবাসি তোমায়||[10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি সুন্দর একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।

অনুগল্প:ভালোবাসি তোমায়

bokeh-gfac09136e_1920.jpg
source


অনেক বছর পর তোমায় দেখলাম। তুমি সেই আগের মতই আছো। হয়তো একটুখানি বদলে গেছো। সেই মায়াবী চোখের চাহনি আজও সেই আগের মতই আছে। তবে কাজল কালো চোখের নিচে আজ কিছুটা কালি জমেছে। হয়তো তুমি নিজের জীবন নিয়ে সুখেই আছো। হয়তো সুখের সাগরে নিজের ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছো। কিন্তু আজও আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি। কারন তুমি আমার জীবনের প্রথম প্রেম। অনেক বছর পর এসেও আমার সেই অনুভূতি একটুকুও বদলায়নি এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই সজল নিজের চোখের জল মুছল। এতক্ষণ আমি যার মনের কথাগুলো লিখছিলাম সে হলো সজল। সজল ও স্বর্ণালী একে অপরকে ভালোবাসতো। স্বর্ণালীর বাবা এবং সজলের বাবা সম্পর্কে ভাই ছিল। ছোটবেলা থেকেই একই বাড়িতে বড় হয়েছে তারা। খেলার সাথী থেকে কখন যে তাদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তারা বুঝতেই পারেনি। এরপর ধীরে ধীরে সজল ও স্বর্ণালী বড় হতে লাগলো। বড় হওয়ার পর তারা অনুভব করল একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা। যে ভালোবাসা তাদের মাঝে অন্যরকমের অনুভূতি তৈরি করেছিল। সজল স্বর্ণালীর থেকে মাত্র এক বছরের বড় ছিল। তাইতো স্বর্ণালী এবং সজল একই সাথে হেসে খেলে বড় হয়েছে। এভাবে চুপি চুপি তাদের প্রেমের গল্প চলতে লাগলো। হঠাৎ একদিন তাদের সেই প্রেমের গল্পের মাঝে ঝড় নেমে এলো।

সজল যখন নিজের ঘরে পড়ছিল তখন হঠাৎ করেই স্বর্ণালী তার ঘরে প্রবেশ করে এবং একটি চিঠি দেয়। সজলের মা দূর থেকে সেই বিষয়টি লক্ষ্য করেছিল। এরপর তিনি সজলকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করেছিল পুরো বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু সজল স্বর্ণালীর বিষয়টি একেবারে এড়িয়ে যায়। বলে সে শুধু আমার খেলার সাথী আর কিছু নয়। সজলের মা বিষয়টি বেশ গভীরভাবে ভাবতে লাগলেন। যেহেতু তাদের দুজনেরই কম বয়স তাই এই বয়সে ভুল করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তারা সবেমাত্র কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়েছে তাই তাদের মাঝে আবেক অনেক বেশি। তাইতো সজলের মা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। এরপর তিনি অনেক ভেবে চিন্তে সজলকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন। তিনি দূরে নিজের ভাইয়ের কাছে সজলকে পাঠিয়ে দিলেন পড়াশোনার জন্য। প্রথমে সজল সেখানে যেতে চায়নি। এরপর সবার অনুরোধে বাধ্য হয়ে সেখানে পৌঁছে গেল। এবার সজল ও স্বর্ণালীর মাঝে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল। সজলের চলে যাওয়া স্বর্ণালীকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। স্বর্ণালী সেদিন অনেক কেঁদেছিল। সজল আড়ালে লুকিয়ে কেঁদেছিল। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। এভাবেই তাদের দিন কেটে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে সজল নিজের বাড়িতে চিঠি লিখতো। কিন্তু স্বর্ণালীকে চিঠি লেখার মতো সাহস তার ছিল না। কারণ সেই চিঠি যদি অন্য কারো হাতে পৌঁছে তাহলে আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হবে। কিন্তু সে স্বর্ণালীকে অনেক ভালোবাসতো। তাইতো সে অনেক কষ্ট পেত। শুধু অপেক্ষায় ছিল কবে সে নিজের বাড়িতে ফিরবে। এরই মাঝে আরো কিছু বছর কেটে গেল। দেখতে দেখতে স্বর্ণালীও বেশ বড় হয়ে উঠল।

হঠাৎ একদিন সজল জানতে পারলো তার ভালোবাসার স্বর্ণালীর অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। পরিবার থেকে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। ছেলে নাকি বড় ব্যবসায়ী। অনেক নাম ডাক। এসব গল্প যখন সজল তার মায়ের লেখা চিঠির মাধ্যমে জানতে পেরেছিল তখন সে খুবই কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু কিছু বলতে পারছিল না। এভাবে যখন আরো কিছুদিন কেটে গেল এরই মাঝে সজলের কাছে খবর এলো আর দুদিন পরে স্বর্ণালীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই তাকে বাড়িতে আসতে হবে। সজল অনেকটা ভারী মন নিয়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছালো। চারদিকে আলোকসজ্জা ও অনেক লোকের ছড়াছড়ি। তবুও যেন সজলের মনে কোন আলো নেই। সবকিছু যেন অন্ধকারে ভরে উঠেছে তার মনে। কারণ তার ভালোবাসার মানুষটি অন্য কারো হতে চলেছে। সবাই যে যার মত আনন্দে মেতে আছে। কিন্তু সজল মনে মনে শুধু কষ্ট পাচ্ছে। সজল যখন নিজের ঘরে বসে বই পড়ছিল এবং মন খারাপ করে বসে ছিল তখন হঠাৎ করেই দেখল স্বর্ণালী তার ঘরে প্রবেশ করেছে। এসে সজলের পাশে দাঁড়িয়ে বলল তুমি কি আমায় আজও ভালোবাসো? স্বর্ণালীর কথা শুনে সজল কিছুটা অবাক হল। বলল এই সময়ে এসে এই প্রশ্ন না করলেই পারতে। কারণ কিছু কিছু সময়ে এসে কিছু কিছু কথা বলতে নেই। হয়তো মনের অগোচরেই লুকিয়ে রাখতে হয়।

এবার স্বর্ণালী কান্না করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেল। সেই রাত স্বর্ণালী এবং সজল কেউ ঘুমাতে পারেনি। কারণ বুকে চাপা কষ্ট তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। পরের দিন খুব সকালে স্বর্ণালী ঘুম থেকে উঠে সজলের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এরপর একটি ছোট্ট চিরকুট তার বালিশের পাশে রেখে আসলো। সজল যখন স্বর্ণালীর লেখা চিরকুটটি পেল তখন সে সেই চিরকুটটি পড়তে লাগলো। স্বর্ণালী চেয়েছিল সজলের হাত ধরে অনেক দূরে হারিয়ে যেতে। যেখানে পরিবার নামক শব্দটি নেই। যেখানে শুধু তারা দুজন নতুন একটি স্বপ্নের পৃথিবী তৈরি করবে। যেখানে জীবনের জটিলতা অনেকটাই কম থাকবে। তাই তো স্বর্ণালী সজলের হাত ধরে অনেক দূরে পালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সজল আজ নিরুপায়। একদিকে তার পরিবারের সম্মান অন্যদিকে তার বাবা চাচাদের সম্মান। সব কিছুর কথা চিন্তা করে সজল নিজের আবেগ সংযত করার চেষ্টা করছিল। নিজের কষ্টগুলোকে আড়াল করার চেষ্টা করছিল।

পুরোটা দিন সজল নিজের ঘর থেকে বের হয়নি। সন্ধ্যা বেলায় স্বর্ণালীর গায়ে হলুদ তাই আজ অনেক লোকের ভিড় তাদের বাড়িতে। দেখতে দেখতে স্বর্ণালীর গায়ে হলুদের সময় হয়ে গেল। সবাই অনেক আনন্দ করছে নিজেদের মতো করে। সবাই আনন্দ করছে কিন্তু সজল নিজের ঘর থেকে বের হলো না। এরপর সজল খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আবার নিজের গন্তব্যে চলে গেল। যখন স্বর্ণালী সজলকে খুঁজেছিল তখন তার বালিশের পাশে খুঁজে পেল একটি চিরকুট। যে চিরকুটে লেখা ছিল, কিছু কিছু ভালোবাসা পাওয়ার মাঝে প্রশান্তি নেই। কিছু কিছু ভালোবাসা উজার করে দেওয়ার মাঝেও সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। তাই তো পরিবারের সকলের হাসি মাখা মুখ দেখার জন্য নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিলাম। তবে আজও তোমায় ভালোবাসি। সারা জীবন বলবো ভালোবাসি তোমায়।

আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানিনা। তবে আমি চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি অনুগল্প লিখা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আমার লিখাটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Sort:  
 2 years ago 

আসলে যখন ব্যর্থ প্রেমের গল্পগুলো পড়ি মন কেঁদে উঠে। যদিও এটি একটি গল্প। হতে পারে কাউকে নিয়ে বা নিজ থেকে বানানো গল্প। কিন্তু সকালবেলা পড়ে মনটা কষ্টে ভরে গেল। আসলে মহৎ প্রেম সব সময় কাছেই টানে না। অনেক সময় দূরে ও ঠেলে দেয়।অসম্ভব ভালো লেগেছে ভাইয়া আপনার অনুগল্পটি।আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনি আমার লিখা গল্পটি পড়েছেন এবং নিজের মনের কথাগুলো তুলে ধরেছেন অনেক ভালো লাগলো। এভাবেই মন্তব্য করে পাশে থাকবেন এই কামনা করি। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 2 years ago 

আপনার লেখা অনুগল্প "ভালোবাসি তোমায়"গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। ভালোবাসা বিসর্জন দেয়ার মাঝে কতটা যে সুখ রয়েছে সেটা আমার জানা নেই। একটা যে চিরস্থায়ী দুঃখ থেকে যায় সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

 2 years ago 

আমার লেখা অনুগল্পটি পড়ে সুন্দরভাবে মন্তব্য করেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59446.26
ETH 2613.63
USDT 1.00
SBD 2.41