অনুগল্প:সুখের পায়রা||[10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। কোন গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝেই অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করি। তেমনি আজকে আমি নতুন একটি অনুগল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।

অনুগল্প:সুখের পায়রা

valentine-g7b9b24692_1920.jpg
source


পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষ সুখের আশা করে। হয়তো কেউ জীবনে সুখী হয় আবার হয়তো অনেকে সুখের আশায় পুরোটা জীবন মাটি করে। তেমনি সবুজ ও রিমা সুখের আশায় ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। দীর্ঘদিন প্রেম করার পর তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। তবে সুখ নামক শব্দটি তাদের জীবনে ক্ষণিকের ছিল। কারণ সুখের পায়রা যখন জীবন থেকে হারিয়ে যায় তখন সুখ নামক শব্দটিও হারিয়ে যায়। সবুজ ছোটখাটো একটি চাকরি করতো। আর রিমা ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতো। হয়তো খুব স্বাচ্ছন্দে তাদের জীবন কাটছিল না। তবে সুখে পরিপূর্ণ ছিল তাদের ছোট্ট এই সংসার। দুজনের ভালোবাসায় এই ছোট্ট সংসার যেন পূর্ণতা পেয়েছিল। এভাবেই কাটছিল তাদের ভালোবাসার সংসার।

হঠাৎ তাদের এই সুখের সংসারের মাঝে দুঃস্বপ্নের কালো ছায়া নেমে এলো। অদৃশ্য এক কালো ছায়া তাদের ভালোবাসাকে এলোমেলো করে দিল। সবুজ যেহেতু মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে তাই হয়তো রিমাকে স্বাচ্ছন্দ এনে দিতে পারেনি। তবে নিজের সাধ্যমত সুখ এনে দিয়েছিল। সবুজের এক বন্ধু ছিল সে তাদের এই দুঃসময়ের সুযোগ নিয়েছে। তার নিজের অফিসে চাকরি দিয়েছে সবুজকে। সবুজের বাসায় মাঝে মাঝে যাতায়াত করত তার সেই বন্ধু। হঠাৎ করে সবুজ বুঝতে পারল তার বন্ধুটি মাঝে মাঝেই তার বাসায় আসছে। এমনকি তাদের জন্য দামি দামি উপহার নিয়ে আসছে। যে উপহারগুলো পেয়ে রিমা অনেক খুশি। রিমার মুখে যখন সবুজ তার বন্ধুর প্রশংসা শুনত এবং দামি দামি উপহারের প্রশংসা শুনতো তখন সবুজের হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে যেত। শুধু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারত না। রিমা ধীরে ধীরে বদলে যেতে লাগলো। যে রিমা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো আজ সেই রিমা অন্যের উপহার পেয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দূরে সরিয়ে দিতে লাগলো। উপহারের মাঝে নিজের সুখ খুঁজে নিতে লাগলো। সবুজ এই পরিস্থিতিতে পারছিল না চাকরি ছেড়ে দিতে পারছিলোনা রিমাকে কিছু বলতে।

সবুজের বন্ধু এবং রিমার মাঝে বেশ বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। তারা প্রায়ই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কিংবা শপিংমলে ঘুরতে যেত। সবুজ হঠাৎ করে যখন বাসায় আসতো তখন দেখত রিমা বাসায় নেই। এভাবে ধীরে ধীরে সবুজ ও রিমার মাঝে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু সবুজ রিমাকে কিছু বলতে পারছিল না। ভিতরে ভিতরে সবুজ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিল। রিমার অবহেলা সবুজকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছিল। কেন জানি তাদের সুখের সংসার আজ মলিন হয়ে গেছে। সবুজের ভালোবাসার মাঝে রিমা আজ আর সুখ খুঁজে পায় না। নিজের বিলাসিতার মাঝে রিমা সুখ খুঁজে নিয়েছে। মাঝে মাঝে সবুজ ভাবতো যে মানুষটি একদিন তাকে অনেক ভালোবাসতো ও তার সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়েছিল সেই রিমা আজ বিলাসিতার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।

হঠাৎ একদিন সবুজ দেখল রিমা তার বন্ধুর গাড়িতে উঠছে। সবুজ নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি সেদিন। সবুজ অনেক কেঁদেছিল। যে কান্না হয়তো চার দেয়ালের মাঝে আটকে ছিল। হয়তো চার দেয়ালের বাহিরের কেউ সেই কষ্টগুলো বুঝতে পারেনি। সবুজের সেই অনুভূতি গুলো হয়তো রিমাও বুঝতে পারেনি। সবুজ নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলার চেষ্টা করছিল। সে চাইছিল হয়তো কোনদিন হঠাৎ করে রিমা বদলে যাবে। হয়তো তাদের ভালোবাসার সুখের সংসার আবার সুখে ভরে উঠবে। কিন্তু না সময়ের সাথে সাথে রিমা যেন আরো বেশি বদলে যেতে লাগলো। রিমার কাছে আজ সবুজকে বড়ই বিরক্ত লাগে। সবুজ তবুও নিজেকে শান্ত রেখে রিমার সাথে ভালোভাবে কথা বলে যাচ্ছিল। হয়তো নিজের মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সবুজ ভালো থাকার অভিনয় করে যাচ্ছিল।

সবুজ ও রিমার বিবাহ বার্ষিকীতে সবুজের বন্ধু রিমাকে একটি ডায়মন্ডের হার উপহার দিয়েছে। সেই খুশিতে রিমা বারবার সবুজের বন্ধুর প্রশংসা করছিল। অন্যদিকে সবুজ ভেতরে ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। সবুজের কষ্টে জমানো টাকা দিয়ে কেনা নীল শাড়ি ও নীল রেশমি চুড়ি রিমির কাছে খুবই তুচ্ছ মনে হয়েছে। তবে সেই উপহারটি সবুজ অনেক কষ্ট করে কিনেছে। নিজের কষ্টের টাকা থেকে বাঁচিয়ে রিমার জন্য নীল রঙের এই শাড়িটি কিনেছে। কিন্তু দামি ডায়মন্ডের নেকলেসের কাছে সবুজের কেনা নীল শাড়ি ও নীল কাচের চুড়ির কোন মূল্য নেই। সবুজের হয়তো বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না। শুধু চেয়েছিল তার ভালোবাসার রিমা যেন নীল শাড়ি পড়ে বিবাহ বার্ষিকীতে সুন্দর করে সেজে থাকে। কিন্তু রিমা তার দেয়া সেই নীল শাড়ি ছুড়ে ফেলে দিল। অন্যদিকে রিমা সবুজের বন্ধুকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে লাগলো। তাদের এই বিবাহ বার্ষিকীর আয়োজন তাদের সাধ্যের মধ্যে ছিল। কিন্তু সবুজের বন্ধু এসে রিমাকে বলল চলো আমরা সবাই বাহিরে কোথাও খেতে যাই। সবুজ বললো আমার এখন ভালো লাগছে না তাই আমি বাসায় থাকতে চাই। তখন রিমা বলল ওর যাওয়ার দরকার নেই আমি আপনার সাথে যেতে চাই। কারণ ঘরের এই খাবারগুলো আমার কাছে আর ভালো লাগছে না। রিমা সবুজের সেই বন্ধুর সাথে বাহিরে ঘুরতে গেল। সেদিন সবুজ সত্যি অনেক কষ্ট পেয়েছিল। বিবাহবার্ষিকীর এই বিশেষ দিনে রিমার এই ব্যবহার তাকে খুবই কষ্ট দিয়েছিল। এরপর সে রিমাকে একটি চিঠি লিখে নিজের কষ্টের জীবনের ইতি টানলো। রিমা হারিয়ে ফেলল তার সত্যিকারের ভালোবাসাকে। মোহের পিছনে ছুটতে ছুটতে রিমা কখন নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি। মরীচিকা কখনো ভালোবাসা হতে পারে না এই কথাটি হয়তো রিমা বুঝতে পারেনি। রিমা বুঝতে পারেনি কিছু কিছু মানুষ আছে যারা শুধু সুখের পায়রা এবং দুর্বলতার সুযোগ নেওয়ার জন্যই তারা অপেক্ষায় থাকে। তাইতো রিমা ভুল করে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলল। সবুজের মতো একজন ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলল।

এই অনুগল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানিনা তবে আমি চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Sort:  
 2 years ago 

বাহ,গল্পটি বেশ করুণ পরিণতির।শেষটা পড়ে খারাপ লাগলো, আসলে রিমা লোভে সত্যিকারের ভালোবাসাকে ভুলে গিয়েছিল ।তাই শেষমেশ ভালোবাসার মানুষকেই হারিয়ে ফেলতে হলো।সুন্দর লিখেছেন, ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

রিমা তার লোভের কারণে সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে। যাই হোক আপু আপনি আমার গল্পটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

দারুন একটি অনুগল্প লিখেছেন ভাই পড়ে খুব ভালো লাগলো তবে রিমা মেয়েটি লোভের কারণে তার প্রিয় ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলল এটা খুব মর্মান্তিক একটি বিষয় ছিল, কষ্ট পেলাম বিষয়টি পড়ে। আসলে আমাদের সমাজের কিছু মানুষ আছে যারা এরকমই মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। আমার পক্ষ থেকে এদেরকে ধিক্কার জানাই।

 2 years ago 

ভাইয়া আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। এমন কিছু মানুষ আছে যারা স্বার্থের লোভে প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর সেই প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে অন্য সুখের সন্ধান করে। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59508.12
ETH 2603.38
USDT 1.00
SBD 2.39