অনুগল্প: খোলা জানালা ও সেই মেয়েটি||[10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে ভালো লাগে আমার। তাই মাঝে মাঝেই লেখার চেষ্টা করি। জানিনা আমার লেখা অনুগল্প গুলো আপনাদের কাছে কেমন লাগে। তবে এই অনুগল্প লিখতে আমার বেশ ভালো লাগে। তাই আজকে আমি নতুন একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি।

খোলা জানালা ও সেই মেয়েটি:

woman-g27aadea72_1920.jpg
source


সাব্বির সবেমাত্র মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে। সাব্বির যখন স্কুলে পড়তো তখন একটি মেয়েকে তার খুবই ভালো লাগতো। আর সেই মেয়েটির নাম ছিল নীলা। সাব্বির যখন স্কুলে যেত তখন নীলার বাসার সামনে দিয়ে যেত। নীলা প্রতিদিন জানালা খুলে বসে থাকতো। জানালার পর্দার আড়াল থেকে মাঝে মাঝে মুচকি হাসত নীলা। নীলার সেই হাসিতে সাব্বিরের মন উতলা হয়ে যেত। সাব্বির নীলাকে দেখার জন্য রোজ সেই পথ দিয়ে স্কুলে যেত। সাব্বিরের প্রথম ভালোলাগার নাম হচ্ছে নীলা। নীলার প্রতি সাব্বিরের ভালোলাগা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হতে লাগলো। হয়তো সময়ের সাথে সাথে নিজের মনের অনুভূতিগুলো ভালোবাসার দিকে এগোতে লাগলো। নীলাকে না দেখে সাব্বিরের একটি দিন যেন পূর্ণতা পেতো না। নীলাকে দেখার জন্য সাব্বির ছটফট করত। কখন সে নীলার বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে পারবে এবং নীলার হাসিমাখা মুখ দেখতে পারবে এই প্রতীক্ষায় থাকত সবসময়।

নীলাও মনে মনে সাব্বিরকে পছন্দ করত। তাইতো সে সাব্বিরের জন্য রোজ সকালে জানালার পাশে বসে থাকতো। তার মিষ্টি হাসি এবং মায়াবী চোখের চাহনি বলে দিত সেও সাব্বিরের প্রতি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এভাবে যখন তাদের দিন কাটতে লাগলো তখন একদিন হঠাৎ করে সাব্বির নীলাকে একটি চিঠি দিল। এরপর অনেক ভয়ে ভয়ে সেই রাস্তা দিয়ে যেতে লাগলো। সাব্বিরের ভয়ের কারণ ছিল একটি যদি নীলা তাকে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে সে নিজেকে সামলে নিতে পারবে না। কারণ জীবনে প্রথম প্রেমের অনুভূতি সাব্বির খুব ভালোভাবেই অনুভব করছিল। পরের দিন সাব্বির একেবারে মাথা নিচু করে নীলার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই একটি মেয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ালো। সে আর কেউ নয় এই মেয়েটি হচ্ছে নীলা। তার ভালোবাসার নীলা। নীলা সাব্বিরকে কিছু না বলে শুধু হাতে একটি কাগজ দিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেল। নীলার সেই লাজুক চোখের চাহনি এবং হাসি মাখা মুখ দেখে সাব্বিরের হৃদয় আনন্দে নেচে উঠলো।

অবশেষে সাব্বির সেই চিঠিটি পড়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগলো। ক্লাসের বন্ধু বান্ধবীদের ভিড়ে সে চিঠি পড়ার সুযোগ খুঁজে পাচ্ছিল না। এরপর বাড়ি ফিরে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে পরিবারের সবাইকে লুকিয়ে নীলার চিঠি পড়তে লাগলো। হয়তো এই বয়সে প্রেমের অনুভূতিগুলো ভিন্ন রকমের। তাই তাদের অনুভূতিগুলো আলাদা রকমের ছিল। সেই রাতে সাব্বির ঘুমাতে পারেনি। কতবার যে নীলার দেওয়া চিঠি পড়েছে তার কোন হিসেব নেই। ঘন্টায় ঘন্টায় ক্ষণে ক্ষণে নীলার দেয়া চিঠি বের করে পড়েছে। একই কথা বারবার পড়তে পড়তে পুরো চিঠিটা যেন সাব্বিরের একেবারে অন্তরের মাঝে গেঁথে গিয়েছিল। প্রতিটি শব্দ যেন সাব্বিরের জন্য এক একটি ভালোবাসার উপহার ছিল। হয়তো নীলার লেখা কথাগুলো অনেকটা অগোছালো ছিল। কিন্তু সেই অগোছালো কথাগুলোর মাঝেও সাব্বির তার ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছিল। কারণ নীলা তার ভালোবাসা ছিলো। এভাবে ধীরে ধীরে তাদের প্রেমের গল্প এগোতে লাগলো। এরপর স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে সাব্বির কলেজে ভর্তি হলো। এবার সাব্বিরের চলার পথ ভিন্ন হয়ে গেল। সাব্বির নীলাকে দেখার জন্য প্রতিদিন নীলার বাড়ির সামনে যেত। এরপর কলেজে যেত। হয়তো তাদের কথা হতো না কিন্তু দুজনের সেই ক্ষণিকের দেখা তাদের মনে ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি করত।

এরপর বেশ কিছুদিন সাব্বির নীলার সাথে দেখা করতে যেতে পারেনি। কারণ সে কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এভাবে যখন আরো কিছুদিন কেটে গেল হঠাৎ করে সাব্বির নীলার বাড়ির সামনে এসে দেখল আজ জানালা বন্ধ। সাব্বির মন খারাপ করে সেখান থেকে ফিরে গেল। এরপর পরের দিন আবারও সেখানে গেল। কিন্তু যাওয়ার পরে দেখল সেখানে একই অবস্থা। এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর সাব্বির দেখল নীলার জানালা এখনো বন্ধ। তাই সে সাহস করে নীলার জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে নীলা বলে ডাক দিল। ভেতর থেকে একজন মহিলা কন্ঠের কেউ বলল কে আপনি? এবার সাব্বির ভাবতে লাগলো তাকে কি বলবে। অবশেষে বলল আমি নীলার বন্ধু। এই কথাটি শোনা মাত্রই মহিলাটি কেঁদে উঠলো। মহিলাটির কান্নার শব্দ সাব্বির শুনতে পেল। এরপর বলল নীলা কোথায়? এবার মহিলাটির কান্নার আওয়াজ যেন আরো বেড়ে গেল। মহিলাটি সাব্বিরকে বলল আমি নীলার মা। আমার নীলা মরণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত ছিল। তাকে আমরা ধরে রাখতে পারিনি বাবা। সে এই অল্প বয়সে আমাদেরকে ছেড়ে পরপারে চলে গেছে। এই কথাগুলো শোনার জন্য সাব্বির মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সাব্বির কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছিল না। বেশ কিছুক্ষণ যেন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সাব্বির শুধু একটি কথাই বলল তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে তবে যাওয়ার আগে কেন আমায় বলে গেলে না। হয়তো তুমি আমার প্রতীক্ষায় ছিলে। হয়তো আমার অপেক্ষায় থেকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছ। কিন্তু আমি তোমার জীবনের শেষ দিনগুলোতে তোমার পাশে থাকতে পারিনি। এটা আমার জীবনের বড় ব্যর্থতা। এভাবেই সাব্বিরের নীলা হারিয়ে গেল। হয়তো সাব্বির আর কোনদিন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মেয়েটির হাসি মাখা মুখটি দেখতে পাবে না।

আমার লেখা অনুগল্পটি কেমন হয়েছে জানি না। তবে আমি চেষ্টা করেছি নিজের অনুভূতি দিয়ে এই সুন্দর একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 57440.51
ETH 2911.34
USDT 1.00
SBD 3.66