অনুগল্প:শেষ বিকেলের আলো||[10% shy-fox]
আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।
বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। মাঝে মাঝেই চেষ্টা করি মনের মাধুরী দিয়ে অনুগল্প লেখার জন্য। আমি জানিনা আমার লেখা অনুগল্প গুলো আপনাদের কাছে কেমন লাগে। তবে অনুগল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই আজকে আমি নতুন একটি অনুগল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।
অনুগল্প:শেষ বিকেলের আলো
কোন এক পড়ন্ত বিকেলে আকাশ দেখা পেয়েছিল তার প্রিয় মানুষটির। পড়নে নীল শাড়ি, হাতে নীল রেশমি চুড়ি, আর কপালে লাল টিপ। ওই লাল টিপের সৌন্দর্যের মাঝেই আটকে গিয়েছিল আকাশের চোখ। আকাশ প্রথম দেখাতেই মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিল। নাম না জানা সেই মেয়েটির প্রেমে পড়েছিল আকাশ।ক্ষণিকের একটু দেখা আকাশের মনে ভালোবাসার সৃষ্টি করেছিল। আকাশ ছোটবেলা থেকেই একটু লাজুক প্রকৃতির। তাই তো সে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করে। হঠাৎ করেই সেই নীলপরীর দেখা পেয়ে আকাশ যেন বদলে যেতে লাগলো। আকাশের ভালোলাগার নীলপরী কখন যে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল আকাশ বুঝতেই পারলো না। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে যখন আকাশ নীল পরীর দেখা পেয়েছিল তখন গোধূলির আলোয় প্রকৃতি সেজেছিল নতুন রূপে। আর সেই নীলপরীকে আকাশের কাছে মনে হয়েছে শেষ বিকেলের আলো।
আকাশ বিভিন্ন মাধ্যমে মেয়েটির ঠিকানা খুঁজে বের করল। এরপর চুপি চুপি সেই মেয়েটিকে দেখতে লাগলো। আকাশ মাঝে মাঝেই মেয়েটির বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো মেয়েটিকে দেখার জন্য। হয়তো আড়াল থেকেই মেয়েটিকে দেখতো। কিন্তু মেয়েটি সেটা বুঝতেই পারত না। আকাশ নিজের মনের কথা মেয়েটিকে বলতে পারেনি। কারণ সে মেয়েটিকে দূর থেকেই ভালোবাসতে চেয়েছিল। আকাশ যখন দূর থেকে মেয়েটিকে দেখতো তখন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। হয়তো সেই অনুভূতির মাঝে অনেক অনেক ভালোবাসা ছিল। এরপর যখন হঠাৎ একদিন আকাশ মেয়েটির সামনাসামনি হলো তখন মেয়েটি আকাশকে প্রশ্ন করল আপনি সব সময় কেন আমার বাসার সামনে আসেন?
আকাশ তখন মাথা নিচু করে রইলো। কারণ এই প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারেনি। হয়তো দেওয়ার সাহস হয়নি। তাই তো আকাশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এরপর নীরবতা ভেঙে মেয়েটি আকাশকে বলল আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন? এবার আকাশ মাথা উঁচু করে বলল যদি বলি ভালোবাসি তাহলে আপনি কি করবেন? এবার মেয়েটি কিছুক্ষণ সময় নিরব হয়ে গেল। মেয়েটির নীরবতা ভেঙে ছেলেটি তাকে আবারো প্রশ্ন করল। মেয়েটির মুখে তখন কোন কথা নেই। শুধু দু চোখের কোনায় দু ফোঁটা পানি রয়েছে। এরপর আকাশ মেয়েটির কাছে জানতে চাইলো আপনার চোখে পানি কেন? তখন মেয়েটি বলল আমার জীবনে ভয়ংকর এক অতীত রয়েছে। যে ভয়ংকর অতীত আমার জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে। তাই আমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই। এমনকি আমি কাউকে ভালোবাসতেও চাই না। তখন মেয়েটি বলল আমি ভালোবেসে একজনকে বিয়ে করেছিলাম। আমি তাকে ভালোবাসলেও আমার প্রতি তার ভালোবাসা বেশিদিন ছিল না। কারণ আমাদের ভালোবাসার মাঝে অন্য কেউ ছিল। আমাদের সুখী জীবনের মাঝে অন্য কেউ চলে এসেছিল। আমার প্রতি তার অবহেলা আমাকে তেলে তিলে কষ্ট দিয়েছিল। বেঁচে থেকেও যেন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। তার এই অবহেলা সহ্য করতে পারছিলাম না। কারণ আমি তাকে ভালোবাসতাম।এরপর বাধ্য হয়ে তাকে ছেড়ে চলে এসেছি। কারণ আমি চাই সে সারা জীবন সুখে থাকুক। হয়তো নতুন কাউকে পেয়ে সুখে আছে। হয়তো বা সুখে থাকার চেষ্টা করছে। তাই তো আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি নিজের মতো করে। সবকিছু শোনার পর আকাশ কিছুক্ষণ নীরব রইল। এরপর আকাশ বলল আপনার জীবনে অতীতে যাই থাকুক না কেন আমি আপনাকে ভালোবাসি। কারণ আপনি আমার শেষ বিকেলের আলো।
আকাশ মেয়েটির দুটি হাত ধরল। এরপর বলল তুমি আমায় ভরসা করতে পারো। আমি তোমায় কতটুকু ভালোবাসতে পারবো জানিনা তবে হয়তো কোনদিন ঠকাবো না। এই ভরসাটুকু তুমি আমার উপর রাখতে পারো। হয়তো মানুষের জীবনে বিশ্বাস একবার ভেঙ্গে গেলে বারবার ফিরে আসে না। তাই বলে যে অন্য কাউকে বিশ্বাস করা যায় না তা কিন্তু নয়। আমি আমার এই হাত দুটো তোমার পানে বাড়িয়ে দিলাম। তুমি তোমার বিশ্বাসের দুটি হাত আমার হাতের উপর রেখে ভরসা করতে পারো। হয়তো তোমায় সুখে রাখতে পারব না তবে নিজের সুখ গুলো দিয়ে তোমাকে সুখী রাখার চেষ্টা করব। চেষ্টা করব নিজের আবেগ মাখা ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আগলে রাখতে। কারণ তুমি আমার শেষ বিকেলের আলো। আর আমি চাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তুমি আমার শেষ বিকেলের আলো হয়েই পাশে থাকো।
আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানিনা। তবে আমি চেষ্টা করেছি দারুন এই অনুগল্পটি লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি সকলের কাছে ভালো লেগেছে।