অনুগল্প:তুমি আমার মনের মানুষ||[10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে অন্য গল্প লিখি। আজকে নতুন একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্প সকলের কাছে ভালো লাগবে।

অনুগল্প:তুমি আমার মনের মানুষ

woman-g98feb3c4b_1920.jpg
source


আজ নিলয়ের জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে ছোটখাটো একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে তার কাছের বন্ধু বান্ধবীদেরকে নিয়ে ছোট্ট একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছে তাদের পছন্দের কফি হাউজে। যেখানে তারা মাঝে মাঝেই আড্ডা দেয়। সেই কফি হাউজে যাওয়ার জন্য নিলয় বেরিয়ে পড়ল। নিলয় যখন বাইকে করে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই জ্যামে আটকা পড়ল। এরপর দূর থেকে একটি মেয়েকে দেখে নিলয়ের চোখ আটকে গেল। নীল রঙের জামা পড়াতে মেয়েটিকে যেন নীলপরীর মত লাগছিল। তার কপালে ছিল ছোট্ট একটি কালো টিপ। প্রথম দেখাতেই যেন নীলপরীকে ভালোবেসে ফেলেছিল নিলয়। জ্যাম থেকে বের হয়ে যখন নিলয় নিজের গন্তব্যের দিকে এগোতে লাগলো মেয়েটিও হঠাৎ করে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। হয়তো এই ভিড়ের মাঝে অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে এটা ভাবতে ভাবতে নিলয় কিছুক্ষণ আশপাশে তাকিয়ে দেখলো। এরপর নিজের গন্তব্যে চলে গেল।

আজ নিলয়ের যেহেতু জন্মদিন তাই বন্ধু-বান্ধবীরা তার জন্মদিন উদযাপন করার জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে নিলয়ের জন্য বসে আছে। নিলয়ের আজ মনটা বড়ই আনচান করছে। রাস্তায় হারিয়ে ফেলা সেই নীলপরীর কথা বারবার মনে পড়ছে তার। তার ভাসা ভাসা দুটো চোখ, মায়াবী চোখ নিলয়কে বারবার ঘায়েল করছে। নিলয় তার বন্ধুদের সাথে ঠিকমত আনন্দ করতে পারছে না। বারবার কে যেন মনের মাঝে এসে জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে এরকম অনুভব করছে নিলয়। বন্ধুদের মন রক্ষার জন্য বেশ কিছুক্ষণ সেখানে থেকে সবার সাথে জন্মদিনের কিছুটা সময় উদযাপন করলো নিলয়। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল নিলয়ের। নিলয় যখন বিছানায় এসে বসে পড়ল তখন বারবার ভেসে বেড়াচ্ছিল সেই নীলপরীর মুখখানা। বারবার মনে হচ্ছিল আড়াল থেকে যেন তার নীলপরী তাকে ডাকছে।

পরের দিন যখন নিলয় ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে তখন মনে মনে তার হারিয়ে যাওয়া নীলপরীকে খুজতেছিল। কিন্তু তার নীলপরী যে হারিয়ে গেছে এই কথাটি ভাবতে ভাবতে নিলয় অনেকটা মন খারাপ করেই ভার্সিটির গেটে ঢুকলো। যখন সে আনমনে মোবাইল ফোন টিপতে টিপতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ করে একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগলো। ধাক্কা লেগে তার ফোনটি একেবারে রাস্তার মাঝখানে পড়ে গেল এবং ফোনটি অনেকটা ভেঙে গেল। যখনই সেই মেয়েটিকে কিছু বলতে যাবে তখন দেখতে পেল এই মেয়েটি আর কেউ নয় সেই নীলপরী। তখন মেয়েটি অনেকটা বিনয়ের স্বরে বলল ভাইয়া আমি এডমিশনের জন্য এখানে এসেছিলাম। তাই কাগজপত্র ঠিক করতে করতে হেঁটে যাচ্ছিলাম সেজন্য খেয়াল করতে পারিনি। নীলপরীকে দেখে নিলয়ের চোখ একেবারে আটকে গেল। সে বুঝতে পারছিল না তাকে কি বলবে। এবার নিলয় নিজেকে কিছুটা শান্ত করে তার মোবাইল ফোনটি উঠিয়ে নিল। এরপর মেয়েটিকে বলল ঠিক আছে হয়তো আমারও ভুল ছিল। এরপর নিলয় মেয়েটিকে বলল আপনি কি আপনার সব কাজ করতে পেরেছেন? মেয়েটি কিছুটা ধীরে ধীরে বলল ভাইয়া আমি এখানে আমার মামার বাসায় থাকি। তাই একা একাই আসতে হয়েছে। এবার নিলয় মেয়েটিকে সব কাজে সাহায্য করল। এরপর মেয়েটির সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হলো। তখন মেয়েটি বলল ভাইয়া আপনার ফোন নাম্বারটি যদি পেতাম তাহলে ভালো হতো। মাঝে মাঝে যদি কোন বিষয় জানার থাকে তাহলে জানতে পারতাম। এই কথাটি শুনে নিলয় অনেকটা আনন্দ পেল। এরপর তারা দুজনে দুজনের বাসায় চলে গেল।

নিলয় অপেক্ষা করতে লাগলো হয়তো সেই মেয়েটি তাকে ফোন করবে। কিন্তু সেই দিনটি এমনিতেই কেটে গেল। মেয়েটির ফোন আসলো না। রাত কেটে গেল তবুও মেয়েটি একটিবারও ফোন করল না। সকালবেলায় ভার্সিটিতে গিয়ে নিলয় মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে যখন মেয়েটি আসলো তখন মেয়েটিকে দেখে নিলয় আর কিছু বলতে পারল না। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। নিলয় মনে মনে তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। কারণ সেই নীলপরী যে তার মনের মানুষ। এভাবে আরও কিছু দিন কেটে গেল। কিন্তু নিলয় মেয়েটিকে তার মনের কথা বলতে পারল না। এরপর আরও বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ করে নিলয় দেখল মেয়েটি ভার্সিটিতে আসেনা। তাইতো নিলয় অনেকটা মন খারাপ করে বাসায় চলে গেল। এভাবে আরো কিছুদিন কেটে গেল। তবুও নিলয় মেয়েটির দেখা পেল না। অবশেষে নিলয় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে মেয়েটির বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করে মেয়েটির মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করল। এরপর ফোন দেয়ার পর দেখলো মেয়েটির ফোন বন্ধ আছে। এবার মেয়েটির বান্ধবীকে অনুরোধ করে বলল মেয়েটির খোঁজ নেওয়ার জন্য। মেয়েটির বান্ধবী মেয়েটির খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সে হসপিটালে ভর্তি আছে। নিলয় যখন হসপিটালে মেয়েটিকে দেখতে গেল তখন দেখল মেয়েটি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। নিলয়কে দেখে মেয়েটি অনেকটা অবাক হল। মেয়েটির এই অবস্থা দেখে নিলয় অনেক কষ্ট পেল। এরপর নিজের মনের কথা মেয়েটিকে বলে ফেলল। তখন মেয়েটি কেঁদে উঠলো। মেয়েটি বলল আমি আমার এই জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চাই না। এরপর মেয়েটি বলল দুর্ঘটনায় মেয়েটির দুটি পা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সে আর কখনো হাঁটতে পারবে না। এই কথাগুলো শুনে নিলয়ের খুবই কষ্ট হল। এবার নিলয় নিজের চোখের পানি লুকিয়ে মেয়েটিকে বলল তুমি যেমনি হও না কেন তবুও তোমায় ভালোবাসি। কারন তুমি আমার মনের মানুষ।

আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Sort:  
 2 years ago 

সত্যিই কি নিলয়ের মত মানুষ পাওয়া যায়,বিপদেও পাশে থাকার জন্য।যাই হোক ভালো লিখেছেন ভাইয়া।ধন্যবাদ

 2 years ago 

সত্যিকারের ভালোবাসলে প্রিয় মানুষটির বিপদে সব সময় পাশে থাকবে। হয়তো নিলয় সত্যিকারের ভালোবেসে ছিল। আপু আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

তা ঠিক,কিন্তু এই সত্যিকারী ভালোবাসা এখন আর পাওয়া যায় না,এখন গল্প কিংবা উপ্যানাসেই হয়।

 2 years ago 

গল্পটি পড়ে নিলয় এর জন্য খারাপ লাগলো। আসলে ভালোবাসা এমনি হয়। ভালোবাসার কথা মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে নেয়। তাহলে কষ্টটা আরো বেড়ে যায়। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি অনুগল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আমার লিখা গল্পটি পড়ে আপনার খারাপ লেগেছে এটা বুঝতে পারছি। তবে নিয়তি মানুষকে বদলে দেয়। তাইতো ভালোবাসার মানুষটি এভাবে অসহায় হয়ে পড়ে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আসলে প্রিয়জনের এরকম দূর্ঘটনা ঘটলে ভীষণ কষ্ট লাগে 😕
নিলয়ের জন্য খারাপ লাগলো।
সবমিলিয়ে ভালো লিখেছেন 👌

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া প্রিয়জনের এরকম দুর্ঘটনা ঘটলে সেই বিষয়টি সত্যি অনেক কষ্ট লাগে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59484.75
ETH 2614.53
USDT 1.00
SBD 2.41