বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। নিজের কল্পনা থেকেই অনুগল্প লেখার চেষ্টা করি। তাই আজকে আমি আমার লেখা একটি অনুগল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।

বৈশাখী মেলায় ঘুরতে গিয়ে আকাশ একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে। আকাশ যখন বৈশাখী মেলায় ঘুরাঘুরি করছিল তখন হঠাৎ করেই একটি মেয়েকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ে মেয়েটি বৈশাখী মেলায় ঘুরাঘুরি করছিল। তার কপালে ছিল সুন্দর একটি লাল টিপ। মেয়েটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আকাশ। প্রথম দেখাতেই মেয়েটিকে বেশ ভালো লাগলো আকাশের। এরপর মেয়েটির আশেপাশে ঘুরতে লাগলো। আকাশের বন্ধুরা আকাশকে ক্ষ্যাপাতে লাগলো। কিন্তু আকাশ কোন কিছুতে পাত্তা না দিয়ে মেয়েটির পিছু নিল। মেয়েটি মেলায় ঘুরে ঘুরে তার পছন্দের জিনিসগুলো কিনছিল। মেয়েটি দেখতে এতটাই সুন্দর ছিল যে মেয়েটি যখন দোকানে গিয়ে তার পছন্দের জিনিসগুলো কিনছিল তখন দূর থেকে আকাশ মেয়েটির সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। সেই সাথে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিল। এবার মেয়েটি গিয়ে দাঁড়ালো রেশমি চুড়ির দোকানের পাশে। রেশমি চুড়ি সব মেয়েরই অনেক প্রিয়। বিশেষ করে লাল রঙের রেশমি চুড়ি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সবার কাছে খুবই প্রিয়। মেয়েটি যখন বেছে বেছে নিজের পছন্দের রেশমি চুড়ি গুলো কিনছিল তখন তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর সাহস আকাশের ছিল না। এবার মেয়েটি যখন রেশমি চুড়ি কেনা শেষ করে মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল তখন ভুলবশত রেশমি চুড়ি গুলো সেখানে রেখেই চলে আসলো। আকাশ বিষয়টি লক্ষ্য করার কারণে সে নিজে গিয়ে সেই চুড়িগুলো সংগ্রহ করল। এরপর মেয়েটির পিছু নিল। মেয়েটি যখন দেখল একটি ছেলে তার পিছু নিয়েছে তখন সে অনেকটা লজ্জা পেল। কারন মেয়েরা সাধারণত লাজুক হয়। কারণ লজ্জা হল নারীর ভূষণ। আকাশের ডাকে মেয়েটি আর পিছু ফিরে তাকালো না। এবার আকাশ সেই রেশমি চুড়ি গুলো নিজের কাছেই রেখে দিল। এভাবেই যখন আরো কিছুদিন কেটে গেল তখন আকাশ অনেকভাবে মেয়েটির খোঁজ করার চেষ্টা করল। তারা ছোট্ট একটি শহরে বসত করে তাই আকাশ ভাবল এই ছোট্ট শহরে তাকে খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন হতে পারে না।

এভাবে দিন যেতে লাগলো সপ্তাহ যেতে লাগলো। কিন্তু প্রথম দেখার সেই ভালোলাগার মেয়েটিকে আকাশ কিছুতেই ভুলতে পারছিল না। তার রেশমি চুড়ি গুলোর দিকে যখন আকাশ তাকিয়ে থাকে তখন কল্পনায় সেই মেয়েটির ছবি ভেসে ওঠে। কল্পনার সেই মেয়েটিকে সে কোনভাবেই ভুলতে পারছিল না। হঠাৎ একদিন যখন আকাশ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তখন দূর থেকেই দেখল সেই মেয়েটি রিকশায় করে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হল আকাশে দূর সম্পর্কের এক বোনের সাথে মেয়েটি একই রিক্সায় যাচ্ছিল। আকাশ দেখে অনেকটা আনন্দ পেল। এরপর সে তার সেই বোনের সাথে যোগাযোগ করে মেয়েটি সম্পর্কে জানতে চাইল। আকাশ যখন তার বোনের কাছে মেয়েটি সম্পর্কে জানতে চাইলো তখন হঠাৎ করেই তার বোনের মুখটা কেন জানি ধোঁয়াশার মতো হয়ে গেল। আকাশ বারবার তাকে বলতে লাগলো আমাকে কিছু বল সেই মেয়েটি সম্পর্কে। তখন তার বারবার মনে হচ্ছিল হয়তো সে তার ভালোলাগার প্রিয় মানুষটিকে আর কখনো পাবে না। তাই হয়তো তার বোন তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে না। আকাশের অনেক জোরাজুরির পর তার বোন তাকে মেয়েটির ফোন নম্বর দিল। এরপর আকাশ মনের আনন্দে এবং অনেকটা উৎফুল্ল হয়ে মেয়েটিকে ফোন দিল। কয়েকবার রিং বেজে গেল কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোনটা রিসিভ করল না। এভাবে বেশ কয়েকবার রিং বেজে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই এক মিষ্টি কন্ঠ ভেসে এলো। আকাশ নিজের পরিচয় উপস্থাপন করতে পারছিল না তাই বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথা বলার চেষ্টা করছিল। হয়তো প্রিয় মানুষের সাথে প্রথম কথা বলার মাঝে অনেক জরতা কাজ করে। তাই আকাশ নিজের নিজের মনের কথা বলতে ব্যর্থ হচ্ছিল।

এরপর আকাশ অনেকটা সাহস নিয়ে পুরো বিষয়টি বলল যে কালকে সে তার কেনা পছন্দের রেশমি চুড়ি গুলো দোকানে ফেলে এসেছিল। এরপর আকাশ বলল সেই চুড়িগুলো তার কাছে রয়েছে। এরপর মেয়েটি সব শুনে একেবারেই অবাক হয়ে গেল। তখন আকাশ তাকে বলল আপনি যদি চান আমার কাছ থেকে সেই চুড়িগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। মেয়েটি কিছুক্ষণ নীরব থাকল। তার নীরবতায় আকাশ অনেকটা হতাশ হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর মেয়েটি বলল ঠিক আছে আপনি কোথায় আসতে পারবেন? এরপর ঠিকানা অনুযায়ী মেয়েটি এবং আকাশ একই জায়গায় মিলিত হলো। দুজনের দেখা হওয়ার পর মেয়েটি অনেকটা লজ্জা পাচ্ছিল। আবার হঠাৎ করেই মেয়েটির মুখটা কেন জানি অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন রোদ্রউজ্জ্বল আকাশের মাঝে হঠাৎ কালো মেঘের ছায়া। এরপর মেয়েটি আকাশের সাথে কথা বলে সেখান থেকে চলে গেল। এরপর থেকে আকাশ মাঝে মাঝেই মেয়েটির সাথে কথা বলতো। এবার আকাশ চেষ্টা করল মেয়েটিকে বোঝানোর যে সে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু মেয়েটি সবকিছুকে এড়িয়ে গিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলা শুরু করতো। আকাশের জড়াজুড়িতে মেয়েটি বলতে বাধ্য হল আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন? আকাশ তখন বলল আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। তখন মেয়েটি বলল আপনি যদি সত্য কিছু জানতে পারেন তাহলে কখনোই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেন না। এসব শুনে মেয়েটি ওড়নায় মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগলো। তখন বলতে লাগল এই পৃথিবীতে হয়তো আমার সময় খুবই অল্প। জানিনা কখন হঠাৎ করে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। আমার অনেক সাধ ছিল লাল রেশমি চুড়ি ও লাল বেনারসি শাড়ি পড়ে কারো বধূ হবার। সে সাধ আমার পূর্ণ হলো না। ক্যান্সারের ভয়াবহতা আমার স্বপ্নকে একেবারে নষ্ট করে দিল। ঠিক সেই মুহূর্তে আকাশ নিজেকে সামলাতে পারছিল না। আকাশের মনে হচ্ছিল এখন যদি চিৎকার করে সে কাঁদতে পারতো তাহলে বোধহয় অনেক শান্তি পেত। আকাশ সেই মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিল সে তাকে বিয়ে করবে। একজন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তার স্বপ্নগুলোকে পূরণ করবে। হয়তো অনেকটা আবেগের বসেই আকাশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে আকাশ নিজের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে সেই মেয়েটিকে বিয়ে করল। আর তার হাতে পরিয়ে দিল লাল রেশমি চুড়ি। ভাগ্যের নির্মমতার কাছে আমরা সবাই বড় অসহায়। তাদের বিয়ের সপ্তাহখানে কাটতে না কাটতেই হঠাৎ করেই মেয়েটি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ল। এরপর আকাশ দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো তাকে বাঁচানোর জন্য। এবার মেয়েটি তাকে বলল এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সাধ আমার পূর্ণ হয়ে গেছে। তুমি আমার জীবনে পূর্ণতা এনে দিয়েছো। আমার শেষ ইচ্ছে তুমি আমার মৃত্যুর আগে আমাকে আমার পছন্দের সেই লাল রেশমি চুড়ি পরিয়ে দাও। এই কথা শুনে আকাশ কেঁদে ফেলল। অনেকটা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল আমি তোমাকে হারাতে চাই না। তখন মেয়েটি বলল বাস্তবতার এই নিষ্ঠুরতা আমাদেরকে মেনে নিতেই হবে। এসব বলতে বলতে আকাশ যখন মেয়েটির হাতে লাল রেশমি চুড়ি গুলো পরিয়ে দিতে লাগলো তখন হঠাৎ করেই অনুভব করল আকাশের কোলে মেয়েটি মাথা দিয়ে ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর আকাশ বুঝতে পারল হয়তো সে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে। এভাবেই হয়তো একটি ফুলের মত জীবন শেষ হয়ে গেছে। এভাবে মৃত্যু হল একটি মধুর সম্পর্কের।