অনুগল্প: অবশেষে তুমি এলে||[10% shy-fox]
আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।
বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। বর্তমানে একটু ব্যস্ত সময় পার করছি। তবে যখনই সময় পাচ্ছি কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু করে অনুগল্প লেখার চেষ্টা করছি। অনুগল্প পড়তে যেমন আমার ভালো লাগে তেমনি অনুগল্প লিখতেও ভালো লাগে। তাই আজকে আমি সুন্দর একটি অনুগল্প লিখে সকলের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্প সকলের ভালো লাগবে।
অনুগল্প: অবশেষে তুমি এলে
নিলয় গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। নিলয় ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে সে চলে যায় শহরের কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য। মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে পড়াশুনা শেষ করে সুন্দর একটি জীবন গড়ে তোলার। নিলয় সেই স্বপ্ন নিয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সে বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ হতে চায়। কারণ এই পৃথিবীতে ভালো মানুষের বড়ই অভাব। নিলয় যেহেতু পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিল তাই খুব সহজেই দেশের নাম করা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পদার্পণ করে নিলয় নতুন একটি পৃথিবী দেখল। হয়তো সবকিছু তার কাছে স্বপ্নের মত লাগছিল। শহরের চালচলন সবকিছুই তার কাছে ভিন্ন রকম মনে হচ্ছিল। যদিও নিলয় সেই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। তবে পরিবেশ তাকে মানিয়ে নিতে চাচ্ছিল না। কারণ তার বন্ধু বান্ধবীরা তাকে সবসময় গাইয়া বলে তিরস্কার করতে লাগলো। নিলয় সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে দিত। কারণ সে বুঝে গেছে এই শহরে থাকতে হলে তাকে সবকিছু মেনে নিয়েই চলতে হবে।
এই অচেনা শহরে নিলয় যখন নিজের মতো করে বাঁচতে শুরু করল তখন হঠাৎ একদিন অচেনা পরীর দেখা পেল। যে নিলয় জীবনে কোনদিন প্রেমে পড়েনি সেই নিলয় অচেনা পরীর প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে গেল। নাম না জানা অচেনা পরীকে দেখেই নিলয় কিছুটা অবাক হয়ে গেল। সেই মেয়েটি দেখতে ছিল অপরূপা সুন্দরী। যখন নিলয় দেখল সেই মেয়েটি তারই সাথে একই ক্লাসে পড়ে তখন যেন আনন্দের মাত্রা আরো বেড়ে গেল। নিলয় মেয়েটিকে চুপি চুপি দেখতো এবং দূর থেকেই দেখতো। সেই অচেনা পরীর নাম জানার জন্য যখন নিলয় মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো এবং তার নাম জানতে চাইলো তখন মেয়েটি তাকে অনেক অপমান করলো। তার বন্ধুরা মিলে অনেক হাসাহাসি করলো। সেদিন নিলয় খুবই দুঃখ পেয়েছিল। তবে মুখ বুঝে সব সহ্য করে নিয়েছে। সেদিনের পর থেকে নিলয়ের অপমান আরো বেড়ে গেল। তার অপরাধ ছিল সেই মেয়েটিকে ভালোবাসার। নিলয়ের অবুঝ হৃদয়ের ভালোবাসা যখন কোন বড়লোকের রাজকন্যার হাসির পাত্র হয়ে গেছে তখন নিলয় নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। নিলয় বুঝতে পেরেছে এই শহরের সাথে সে বড্ড বেমানান। এই শহরের মানুষগুলো মানুষকে খুবই অবজ্ঞা করে চলে। হয়তো তাদের মতে গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে কাউকে ভালোবাসার যোগ্য নয়।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল নিলয়ের দিনগুলো। নিলয় নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছিল। হঠাৎ একদিন নিলয় যখন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল তখন দেখতে পেল সেই মেয়েটি এক্সিডেন্ট করেছে। মেয়েটির এতটাই আঘাত লেগেছিল যে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল। নিলয় তখন ভদ্রতার খাতিরে সব পরিস্থিতি সামলে নিয়ে মেয়েটিকে হসপিটালে ভর্তি করে ডক্টর তখন তাকে বলে মেয়েটিকে রক্ত দেওয়া খুবই জরুরী। তা না হলে মেয়েটিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। নিলয় ভাবতে লাগে এখন সে কি করবে। এরপর সবকিছু পিছনে রেখে নিলয় সিদ্ধান্ত নেয় আমি নিজের রক্ত দিয়ে এই মেয়েটিকে বাঁচাবো। নিলয় নিজের রক্ত দিয়ে মেয়েটিকে বাঁচায়। মেয়েটি ধীরে ধীরে যখন সুস্থ হয়ে উঠতে লাগে তখন নিলয় মেয়েটির থেকে আড়ালে চলে যেতে লাগে। এরপর যখন মেয়েটি সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই দরজার পর্দার আড়ালে যখন ছেলেটির মুখ দেখে তখন মেয়েটি চিৎকার করে ওঠে। ছেলেটিকে প্রচন্ড রকমের অপমান করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর একজন ডাক্তার এসে বলেন এই লোকটি আপনাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন। তিনিই আপনাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছিলেন। মেয়েটি তখন নিজের ভুল বুঝতে পারে।
নিলয়ের প্রতি অন্যায়ের জন্য মেয়েটি মনে মনে খুবই লজ্জিত হয়। সে নিলয়কে খুঁজতে লাগে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে নিলয়কে আর দেখা যায়নি। নিলয় নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে। হয়তো মেয়েটির জীবন থেকে, হয়তো বা এই অচেনা শহর থেকে, হয়তোবা এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে সে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে। মেয়েটি নিলয়কে পাগলের মত খুঁজতে লাগে। হয়তো একটু খানি দেখা পাবার আশায় নিলয়ের গ্রামের ঠিকানা খুঁজতে লাগে। অনেক কষ্টে নিলয়ের এক বন্ধুর কাছ থেকে নিলয়ের গ্রামের ঠিকানা খুঁজে বের করে। সেই মেয়েটি নিলয়ের প্রতি অনেক অন্যায় করে ফেলেছে। তাই নিলয়ের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন মেয়েটি বুঝতে পারে নিলয়ের প্রতি অন্যায় করা তার খুবই ভুল হয়ে গেছে। তখন সে মনে মনে ভাবতে লাগে যে ছেলেটি তাকে এতটা ভালোবাসে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া ও অপমান করা তার মোটেই উচিত হয়নি। তখন নিলয়ের মায়াবী মুখটা তার চোখের সামনে বারবার ভেসে ওঠে। সে ধীরে ধীরে নিলয়ের প্রেমে পড়তে লাগে।
এরপর মেয়েটি নিলয়ের গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটে চলে যায়। অনেক কষ্টে সে তার নিলয়ের কাছে পৌঁছায়। দুজনের ভালোবাসা হয়তো আজ পূর্ণতা পেয়েছে। কিন্তু তার মাঝে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে। মেয়েটি আজ নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কোন এক কবরের পাশে। এই কবরটি হচ্ছে সেই নিলয়ের। যেই নিলয় একদিন তাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। এই নিলয় তাকে ভালোবেসে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। নিলয় নিজের ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই পৃথিবীর মাঝে। হয়তো সেই মেয়েটি নীলের ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে। তবে অনেক দেরি হয়ে গেছে। হয়তো নিয়তি তাদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দেয়নি। মেয়েটি যখন নিলয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু চোখের পানি ফেলছিল তখন হয়তো নিলয় দূর থেকেই তার ভালোবাসার পরীকে দেখছিল। হয়তো মনে মনে ভাবছিল অবশেষে তুমি এলে।
আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আমি আমার কল্পনা থেকে সুন্দর একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
ভালো ছিলো কিন্তু শেষ টুকু মেনে নিতে পারলাম না,আড়াল টা অন্যভাবেও করতে পারতো।আত্নহত্যা কোন সমাধান না।ভালোই লিখেছেন।ধন্যবাদ
সব গল্পে যদি শেষটা সুন্দর হয় তাহলে লেখার মাঝে ভিন্নতা আসে না। তাই আমি চেষ্টা করেছি একটু ভিন্নতা আনার জন্য। আপু আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনার লিখিত 'অবশেষে তুমি এলে' অনুগল্প টি খুব ভালো লাগলো পড়ে। তবে শেষ টা ব্যতিক্রম হলে আরও বেশি ভালো লাগতো। এমন সুন্দর আনুগল্পের অপেক্ষায় থাকবো। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
চেষ্টা করব ভাইয়া নতুন কোন অনুগল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।