অনুগল্প:ভালোবাসি এই কথাটি হয়নি বলা||[10% shy-fox]
আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।
বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। মাঝে মাঝে চেষ্টা করি সুন্দর কিছু অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। তেমনি আজকে নতুন একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
ভালোবাসি এই কথাটি হয়নি বলা:
সাদিয়া ও মাহিনের বিয়ে হয়েছে মাত্র কয়েকদিন হল। পারিবারিকভাবে তাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে। সাদিয়া ও মাহিন একে অপরকে চিনতোনা। তারপরেও তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়েছে। দুজনের পরিবার মিলে তাদের বিয়ের আয়োজন করেছে। অচেনা অজানা দুজন মানুষের মধ্যে একটি মধুর সম্পর্ক তৈরি করার জন্য তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সাদিয়া দেখতে অনেক সুন্দরী। তাইতো মাহিনের মা প্রথম দেখাতেই সাদিয়াকে পছন্দ করেছিলেন। সাদিয়া অনেকটা সরল মনের মেয়ে। তার মনে কোন কথা লুকিয়ে রাখতে পারেনা। আর অন্যদিকে মহিন একটু চাপা স্বভাবের ছেলে। মাহিনের মুখে খুব সহজে কথা ফুটে উঠে না। একেবারে যেন নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করে মহিন। অন্যদিকে সাদিয়া কথা বলতে পছন্দ করে। তার মুখ যেন অনবরতই চলছে। সাদিয়া যখন বিয়ে করে অচেনা একজন মানুষের হাত ধরে তার নতুন সংসার জীবনে প্রবেশ করে তখন তার মনের মাঝে নানান স্বপ্ন এসে বাসা বাঁধে। হয়তো তার স্বপ্নের মাঝে তার স্বপ্নের নায়ককে খোঁজার চেষ্টা করছিল।
বুক ভরা স্বপ্ন এবং নয়ন ভরা আশা নিয়ে সাদিয়া নতুন জীবন শুরু করেছিল। তবে মহিন তাকে পদে পদে অপমান করত। সাদিয়ার বকবকানি তার কাছে ছেলেমানুষী মনে হতো। ধীরে ধীরে সাদিয়া বুঝতে পারল মহিন তাকে খুব একটা পছন্দ করে না। সাদিয়া নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করল। এখন সারাদিন অনেকটা চুপচাপ কাটিয়ে দেয় সাদিয়া। এখন আর মাহিনের সাথে পাগলামি করে না। সাদিয়া এখন আর মাহিনের কাছে বায়না ধরে না আইসক্রিম খেতে। এখন আর মাঝরাতে সাদিয়া মাহিনের কাছে বায়না ধরে না জোছনার আলো উপভোগ করতে। সাদিয়া অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। সাদিয়ারার এই বদলে যাওয়া বারবার অবাক করে দিচ্ছিল মাহিনকে। যে মেয়েটি মাহিনকে ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে জিজ্ঞাসা করতো তুমি এখন কি করছো সেই মেয়েটি সারা দিনে একটিবার মাহিনকে ফোন দেয় না। সাদিয়ার এই বদলে যাওয়া মাহিন ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছি। মাহিন হয়তো বুঝতে পেরেছিল সাদিয়া তার কোন কথায় আঘাত পেয়েছে।
সাদিয়া আজকাল সংসারের কাজে বেশ মনোযোগ দিয়েছে। অনেকটা গুছিয়ে সংসার করতে চেষ্টা করছে সাদিয়া। সাদিয়া নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে। সে এখন চেষ্টা করছে নতুন নতুন রান্না করার। যদিও সাদিয়ার রান্নার হাত আগের থেকে অনেকটা ভালো হয়েছে। তবে মহিন কোনদিন সাদিয়াকে বলেনি আজকের রান্না দারুন হয়েছে। হয়তো প্রশংসা করার সময় মাহিনের নেই। সে হয়তো বুঝতে পারেনি তার একটুখানি প্রশংসা সাদিয়াকে আরও বেশি উৎসাহ দেয়। যখন সাদিয়া অনেকটা বদলে গেল তখন বারবার মাহিনের মনে পড়তো সেই আগের সাদিয়াকে। সাদিয়ার পাগলামো গুলো মাহিনের খুব মনে পড়ছে। তার মনে হচ্ছে আগের সাদিয়া অনেক ভালো ছিল। তার পাগলামো গুলোর কথা মনে পড়তেই মাহিনের হাসি পাচ্ছে। তবে সময়ের সাথে সাথে সাদিয়া যেমন বদলে গেছে তেমনি মাহিন সেই আগের সাদিয়াকে মিস করতে শুরু করেছে। হয়তো ভাবছে তার সাথে তার পাগলামো গুলো একেবারে পারফেক্ট ছিল। কিন্তু সাদিয়াতো আর আগের মত নেই। এখন অনেকটা বদলে ফেলেছে নিজেকে। সংসার নামক যান্ত্রিক জীবনে নিজেকে যান্ত্রিক করে তুলেছে সে। পরিবার, স্বামী, সংসার এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকছে সে। নিজের জন্য একটুখানি সময় বের করা তার কাছে অনেক কঠিন ব্যাপার আজ। হয়তো সে চায় না নিজের ইচ্ছে গুলোকে পূর্ণ করতে।
আজ হঠাৎ করে মাহিমার কেন জানি মনে হচ্ছে সে সাদিয়াকে বেলি ফুলের মালা উপহার দিবে। মাহিন সাদিয়ার খোঁপায় বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দিতে চায়। সেই সাথে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ তাকে উপহার দিতে চায়। আজ মাহিন অফিস ছুটির পর বেরিয়ে পরল বেলি ফুল ও লাল গোলাপ কেনার জন্য। সাদিয়াকে উপহার দেওয়ার জন্য বেলি ফুল ও লাল গোলাপ নিয়ে মাহিন যখন রাস্তা পার হচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই একটি প্রাইভেট কার এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। ফুলের মালা ও লাল গোলাপ ছিটকে পড়ে গেল রাস্তার মাঝে। নিজেকে সামলাতে না পেরে রাস্তার মাঝে পড়ে গেল মহিন। এই পরিস্থিতির মাঝে মাহিনের বারবার মনে হচ্ছিল হয়তো এটাই আমার জীবনের শেষ সময়। সাদিয়া তুমি আমার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে ছিলে। হয়তো বুঝতে পারিনি। হয়তো তোমাকে আজও বলা হয়নি আমি তোমাকে ভালোবাসি। হয়তো না বলা কথা তোমার কাছে চিরজীবন না বলাই থেকে গেল। আমার মনের অব্যক্ত কথাগুলো ব্যক্ত করতে পারলাম না। ভালোবাসি এই কথাটি হয়নি বলা। এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মাহিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। তার না বলা কথাগুলো না বলাই থেকে গেল।
আজকে আমি চেষ্টা করেছি ভিন্ন ধরনের একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।
সত্যি ভাইয়া ভালোবাসি এই কথাটি হয়নি বলা দারুণ লিখেছেন। আসলে আমরা কেউ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝতে পারি না।মাহিনের মনে সাদিয়ার জন্য অনেক ভালোবাসা ছিল।তয়তো সে মুখে বলতে পারিনি কিন্তু তার ভালোবাসার অফুরন্ত ছিল।।মাহিন সাদিয়ার খোঁপায় বেলি ফুলের মালা আর পরানো হলো না। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপু আপনি অনেক সুন্দর ভাবে আপনার মন্তব্য প্রকাশ করেছেন দেখে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি বলতে কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যেগুলোর মূল্যায়ন আমরা করতে জানিনা। যখন সেই মানুষগুলো হারিয়ে যায় তখন খোঁজার চেষ্টা করি।