অনু: আজও তোমায় ভালোবাসি||[10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। লেখার মাঝে বিভিন্ন রকমের চরিত্র উপস্থাপন করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাই আজকে আমি একটি সুন্দর অনুগল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা এই অনুগল্পটি সকলের ভালো লাগবে।

আজও তোমায় ভালোবাসি:

few-g92dd1d3a0_1920.jpg
source


ভালোবাসি কথাটি অল্প কয়েকটি শব্দের মাঝেই সীমাবদ্ধ। তবে ভালোবাসার গভীরতা অনেক বেশি। সেই ভালোবাসার গভীরতা থেকে নিবিড় ভালোবেসেছিল নীলিমাকে। নীলিমার মায়াবী চোখের চাহনিতে নিবিড় নিজের ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছিল। ভার্সিটিতে পড়ার সময় নিবিড় নীলিমার দেখা পায়। প্রথম দেখাতেই নীলিমাকে ভালো লেগে যায় নিবিড়ের। নিবিড় ছিল গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই তার কাছে ভালোবাসা অনেকটা বিলাসিতার মতোই মনে হয়েছে। নিবিড় কবিতা লিখতে পছন্দ করত। নীলিমাকে নিয়ে নিবিড় হাজারো কবিতা সাজাতো। কবিতার লাইন গুলোর মাঝে মিশে থাকত নীলিমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা। নিবিড় শুধু দূর থেকেই নীলিমাকে দেখতো। নিজের ভালোবাসার কথা হয়তো আড়াল করতে চাইত। নিবিড় জানতো নীলিমা তার থেকে একেবারেই ভিন্ন। কারণ নীলিমা আর নিবিড়ের মাঝে অনেক তফাৎ। নিবিড় নিজের মনের মাধুরী দিয়ে কবিতা লিখত আর যেকোনোভাবে সেই কবিতাটি নীলিমা কাছে পৌঁছাতো।

নীলিমা সেই কবিতাগুলো পড়ে মুগ্ধ হয়ে যেত। কবিতার লাইনের মাঝে অফুরন্ত ভালোবাসা খুঁজে পেতে নীলিমা। নীলিমা কবিতার প্রেমে পড়তে লাগলো। সে খুঁজতে লাগলো তাকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো কে তাকে পাঠাচ্ছে। নীলিমা ধীরে ধীরে খুঁজতে লাগলো সেই মানুষটিকে। যেই মানুষটি আড়াল থেকে তাকে কবিতা লিখে পাঠাচ্ছে। একদিন নীলিমা যখন আনমনে বট গাছের নিচে বসে ছিল তখন হঠাৎ করেই দূর থেকে একটি ছেলেকে লক্ষ্য করলো। ছেলেটি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর কি যেন লিখছে। তখন থেকেই নীলিমা সেই ছেলেটিকে লক্ষ্য করতে লাগলো। আসলে সেই ছেলেটি আর কেউ ছিল না সে ছিল নিবিড়। এভাবে ধীরে ধীরে নিবিড়ের ভালোবাসা নীলিমার সামনে প্রকাশিত হলো। নিবিড় অনেক ভয়ে ভয়ে কথাটি বলেই ফেলল যে আমি তোমায় ভালোবাসি। নীলিমা নিবিড়ের কথায় অনেক খুশি হল। সেও বলল আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। এভাবে একটি সুন্দর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠলো।

এভাবেই কাটতে লাগল তাদের দিন। এরপর কয়েকটি বছর কেটে গেল। নিবিড় নীলিমাকে কবিতা পড়ে শুনাতো আর নীলিমা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে সেই কবিতাগুলো শুনতো আর বারবার মুগ্ধ হয়ে যেত। নীলিমার মুখে কবিতার প্রশংসা শুনে নিবিড় আরো বেশি আনন্দ পেত। হঠাৎ একদিন নীলিমা নিবিড়কে বলল আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। সেই কথাটি শোনা মাত্রই নিবিড়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। অপ্রত্যাশিত এই কথাটি শোনার জন্য নিবিড় মোটেও প্রস্তুত ছিল না। নিবিড় সবেমাত্র গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। এখনো কোন চাকরি জুটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মাঝেই নীলিমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে জেনে নিবিড় অনেকটা ভেঙে পড়ল। নিবিড় নীলিমাকে বোঝাতে লাগলো। কিন্তু নীলিমা ধীরে ধীরে বদলে যেতে লাগলো। নীলিমার এই বদলে যাওয়া নিবিড়কে আরো বেশি কষ্ট দিল। নিবিড় ভাবতে লাগলো তার ভালোবাসায় হয়তো কোন কমতি ছিল তাই সে তার প্রিয় মানুষটিকে ধরে রাখতে পারল না।

আজ অনেক বছর পর নিবিড় ও নীলিমা মুখোমুখি। তবে তাদের মুখোমুখি হওয়া সত্যি অপ্রত্যাশিত ছিল। নীলিমার সেই কাজল কালো চোখের মায়া আজ মলিন হয়ে গেছে। চেহারায় কালিমা পড়েছে। চোখের নিচের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। আগের মত সেই লাবণ্যতা নীলিমার মাঝে নেই। সেই খোলা চুল গুলো আজ এলোমেলো হয়ে আছে। যে চুলের মিষ্টি গন্ধে নিবিড় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল। নীলিমার এই অবস্থা দেখে মুহুর্তের মধ্যেই নিবিড়ের মন এলোমেলো হয়ে গেল। কারণ সে চেয়েছিল তার ভালোবাসার মানুষটি যেন ভালো থাকে। তাই তার জীবন থেকে অনেকটা দূরে সরে এসেছিল। কিন্তু কেন আজ তার এই অবস্থা এই কথাটি ভাবতেই নিবিড়ের মন বিষিয়ে উঠছিল। নীলিমা নিবিড়কে দেখে এক পলকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু তার দুচোখের কোনায় দু ফোঁটা পানি ছিল। নীলিমার মুখে কোন ভাষা নেই আজ। মনে হচ্ছে যেন একেবারে মৃত কোন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে নিবিড়ের সামনে। নীলিমা আজ চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছে নিবিড়ের অফিসে। কিন্তু হঠাৎ করে নীলিমার চাকরি করার প্রয়োজনীয়তা পড়লো কেন এই কথাটি ভাবতেই নিভীরের মনে বারবার খটকা লাগছে। এরপর নীরবতা ভেঙে নিবিড় নীলিমাকে বলেই ফেলল আপনি এই চাকরিটি করতে চান? নীলিমা এবার নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তরে বলল যখন জীবনের সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যায় তখন বেঁচে থাকার জন্য একটি চাকরি খুবই প্রয়োজন হয়। তখন নিবিড়ের বুঝতে আর বাকি রইল না নীলিমার জীবনে অনেক কিছুই ঘটে গেছে।

নিবিড়ের কেন জানি বারবার অনেক কিছুই জানতে ইচ্ছে করছে। জানতে ইচ্ছে করছে নীলিমার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাগুলো। যখন নিবিড় অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল তখন দূর থেকেই দেখতে পেল নীলিমা আনমনে দাঁড়িয়ে আছে। নিবিড় নীলিমার কাছে গিয়ে সবকিছু জানতে চাইল। এর উত্তরে নীলিমা বলল আমার জীবনে যা ঘটে যাওয়ার কথা ছিল না তাই ঘটে গেছে। আজ আমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। তবে আমি কারো করুন চাই না। এই পৃথিবীতে আমি একাই বেঁচে থাকতে চাই। কথাগুলো যেন নিবিড়ের বুকে গিয়ে বিধলো। এবার নিবিড় নীলিমার কাছে সবকিছু জানতে চাইল। নীলিমা বলল আমার স্বামীর সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। সেই ডিভোর্সের কারণ শুধুই আমি। কারণ আমি মা হতে ব্যর্থ। এই পৃথিবীতে একজন নারীর মূল্য তখনই কমে যায় যখন সে মা হতে ব্যর্থ হয়। আজ আমি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে ঘুরছি। কিন্তু কি দোষ ছিল আমার? আমিও তো মা হতে চেয়েছিলাম। আজ আমি মা হতে ব্যর্থ এই অপরাধ কি শুধুই আমার?

নীলিমার মুখে এই কথাগুলো শুনতে নিবিড়ের খুবই কষ্ট হচ্ছিল। এরপর নিবিড় নিজের দুটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল তোমার এই ছন্নছাড়া জীবনে আমি কি তোমার সঙ্গী হতে পারি? নীলিমা তখন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। আসলে নীলিমা বুঝতে পেরেছিল এটা শুধুই আবেগ। কারণ একটা সময় নিবিড়কে ছেড়ে সে চলে গিয়েছিল। আর সেই নিবিড় আজ তার ছন্নছাড়া জীবনের সঙ্গী হতে চায়। নীলিমা বলল এ জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি আবার অনেক কিছুই হারিয়েছি। পাওয়া বা না পাওয়ার সুখগুলো এবং দুঃখগুলোকে নিয়েই আমি বেঁচে থাকতে চাই। আমার এই ছন্নছাড়া জীবনে তোমাকে জড়াতে চাই না। এই বলে নীলিমা নিজের গন্তব্যে চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ করেই নিবিড় নীলিমাকে বলে উঠলো আমি আজও তোমায় ভালোবাসি। আজও তুমি আমার কবিতায় আছো। আজো আমি তোমায় নিয়ে কবিতা লিখি। কারণ আজো আমি তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি। কিন্তু নিবিড়ের ডাকে নীলিমা আজ সারা দিল না। এভাবেই হয়তো নিবিড়ের মত অনেকেই নিজের ভালোবাসাকে ভুলতে পারে না। কিন্তু নীলিমার মত মানুষরা চাইলেও আর ফিরে আসতে পারে না। কারণ জীবনের বাস্তবতা তাদেরকে বারবার বুঝিয়ে দেয় জীবন বড়ই কঠিন।

আশা করছি আমার লেখা এই অনুগল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 64252.58
ETH 3495.24
USDT 1.00
SBD 2.50