অনুগল্প:কোন এক বসন্তে||[10% shy-fox]
আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।
বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি নতুন একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
অনুগল্প:কোন এক বসন্তে
কোন এক বসন্তে তোমার দেখা পেয়েছিলাম। হয়তো এরপর অনেক বসন্ত পেরিয়ে গেছে। তবুও তোমায় খুঁজি প্রতিটি বসন্তে। দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটি বসন্ত বেরিয়ে গেল। আজও আছি তোমার প্রতীক্ষায়। বসন্তের সেই সুন্দর দিনে তুমি যখন বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে মাথায় ফুল দিয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলে তখন হঠাৎ করেই তোমার সাথে ধাক্কা লেগেছিল। এরপর তোমার কোপা থেকে ফুলটি পড়ে গিয়েছিল। আমি অবাক নয়নে তোমায় দেখছিলাম। তোমার খোপার ফুল আমার হৃদয়কে উতলা করেছিল। সীমান্ত যখন বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিল তখন আনমনে সেই কথাগুলো ভাবছিল। বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা সেই মেয়েটির কথা আজও মনে পড়ে সীমান্তের। এরপর অনেকগুলো বসন্ত পেরিয়ে গেছে। তবুও সীমান্ত সেই মেয়েটির দেখা পায়নি। হয়তো মনে মনে প্রত্যেকটি বসন্তে সেই মেয়েটির প্রত্যাশা করে সীমান্ত। মনে মনে ভাবে হয়তো কোন এক বসন্তে আবারো দেখা হয়ে যাবে তাদের। কিন্তু সেই সময়টা আর আসে না। হয়তো কোন এক বসন্তে সীমান্ত তার ভালোলাগার সেই মেয়েটিকে পেয়ে যাবে এই প্রত্যাশায় প্রত্যেকটি বসন্তের জন্য অপেক্ষা করে।
দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেল। সেই সাথে অনেক বসন্ত বেরিয়ে গেল। সীমান্ত বড় হয়েছে। পড়াশোনা শেষ করে সীমান্ত আজ একজন সফল মানুষ। হয়তো আজ তার সব আছে শুধু নেই ভালোবাসার সেই মেয়েটি। যেই মেয়েটি এক পলকে তার হৃদয় হরন করেছিল। এক পলকের একটু দেখা সীমান্তের মনে ভালো লাগা তৈরি করেছিল। সেই ভালোলাগা থেকে কখন যে গভীর ভালোবাসা পরিণত হয়েছে তা সীমান্ত বুঝতেই পারেনি। সময় যত বয়ে চলেছে সময়ের সাথে সাথে সীমান্তের ভালোবাসা আরো বেড়েছে। হয়তো তাকে দেখার জন্য আজও সীমান্ত বসন্তের অপেক্ষা করে। যদি কোন বসন্তে তার দেখা পায় এই প্রত্যাশা করে সবসময়। বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা সেই মেয়েটিকে তার হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছে সে। এভাবে কেটে গেল আরো কিছুদিন। সময়ের সাথে সাথে সীমান্তের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তাই বাসার সবাই সিদ্ধান্ত নিল সীমান্তের বিয়ের।
সীমান্ত অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য রাজি হচ্ছিল না। কারণ তার ভালো লাগার সেই মেয়েটিকে আজও সে ভুলতে পারেনি। হয়তো সেই মেয়েটি তার অনুভূতিতে মিশে আছে। তাইতো সে তাকে আজও ভালোবাসে। বাবা-মায়ের কথা চিন্তা করে অবশেষে সীমান্ত বিয়ের জন্য রাজি হল। এবার শুরু হয়ে গেল মেয়ে দেখার পালা। সীমান্তের মা বললেন আমি আমার বান্ধবীর মেয়েকে নিজের পুত্রবধূ করার জন্য অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম। কিন্তু সীমান্তর অনুমতি না পেলে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তো আজকে আমি সীমান্তের অনুমতি নিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে যাচ্ছি। সীমান্তের মা এবং বোন মেয়েটির বাসায় গেল। যাওয়ার পর মোটামুটি বিয়ের কথা পাকা করে ফেলল। যখন সীমান্ত জানতে পারল তার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়েছে তখন কিছুটা মন খারাপ করলো। এই বিয়েটি হয়ে গেলে সীমান্ত আর কোন বসন্তের অপেক্ষা করতে পারবে না। তার প্রিয় মানুষটির কথা ভাবতে ভাবতে সীমান্ত অনেকটা আনমনে হয়ে গেল।
সীমান্তের পরিবারের সবার সাথে মেয়েটির কথা হতো যখন। সবাই সীমান্তকে বলল তুমি মেয়েটির সাথে দেখা করো। তখন সীমান্ত বলল আমি তার সাথে দেখা করতে চাই না। মেয়েটি যখন বিষয়টি কিছুটা জানতে পারল তখন তার বোনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করব। যেহেতু সে সীমান্তের বোনের সাথে আগে থেকেই পরিচিত তাই সবকিছু জিজ্ঞাসা করতে তার কিছুই মনে হলো না। তখন তার বোন সবকিছুই বলল তাকে। তখন মেয়েটি মনে মনে ভাবলো হয়তো কোন একদিন তার সাথে এমনটি হয়েছিল। তাই তো সে সীমান্তের বোনের সাথে বুদ্ধি করে বলল কাল তুমি তোমার ভাইয়াকে নিয়ে সেই জায়গাটিতে চলে এসো যেখানে তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। কিন্তু তুমি বলবে না তার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
সেই শাড়ি সেই খোপায় ফুল পড়ে মেয়েটি বেরিয়ে পড়ল সীমান্ত এবং তার বোনের সাথে দেখা করতে। পুরো বিষয়টি সীমান্তের কাছে অজানা। তাই তো সীমান্ত তার বোনকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে সেই মেয়েটি এসে আবারো তাকে ধাক্কা দিল। যখন সীমান্ত চশমা ঠিক করতে করতে মেয়েটির দিকে তাকালো তখন সে অনেকটা চমকে গেল। অবাক নয়নে মেয়েটিকে দেখতে লাগল। তখন মেয়েটি তার খোপার ফুলটি কুড়িয়ে নিয়ে আবারো চলে যেতে লাগলো। সীমান্ত শুধু অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো তুমি আমার জীবনে এলে তবে অনেকটা দেরি হয়ে গেল। সীমান্ত বাসায় ফিরে মন খারাপ করে বসে রইল। সে মনে মনে ভাবছে কি করে তার বাবা মাকে বলবে সে এই বিয়ে করতে চায় না। এই কথাটি বলার সাহস তার নেই। কারণ তার বাবা-মা তাকে অনেক ভালোবাসেন। এছাড়া তার অনুমতি দিয়েই বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। অবশেষে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। অনেকটা মন খারাপের মাঝেই সীমান্ত বিয়ে করতে বাধ্য হলো। যখন সে তার বউয়ের মুখ দেখল তখন অনেকটা চমকে গেল। কারণ সে ছিল সেই বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা সেই মেয়েটি। এরপর মেয়েটি তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। এবার সীমান্ত অনেকটা লজ্জা পেয়ে গেল। অবশেষে সীমান্ত তার মনের মানুষকে জীবনসঙ্গীনী হিসেবে পেয়ে গেল।
আশা করছি আমার লেখা এই অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আপনাদের ভালোলাগায় আমার লেখা সার্থক্য হবে।
সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলাম আপনার এই পোস্টটি পড়ে আপনি আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে হঠাৎ করেই হারিয়ে যাওয়ার পরে যেই আকুতি মিনতি থাকে সেগুলো তুলে ধরেছেন। হঠাৎ করেই কারো জীবন থেকে যখন প্রিয় মানুষটি হারিয়ে যায় তখন সত্যিই অনেক বেশি খারাপ লাগে। প্রিয় মানুষ হারিয়ে যাওয়ার পরে অনেকগুলো বসন্ত পার হয়ে গেলেও যে বসন্তে তাকে পেয়েছিলাম সেই রকম বসন্ত আর হয়তো ফিরে আসে না।