অনুগল্প:মেঘ বালিকা||[10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি মিষ্টি প্রেমের একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

অনুগল্প:মেঘ বালিকা

woman-ga534c548f_1920.jpg
source


সৈকত সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করে ছোটখাটো একটি চাকরি পেয়েছে। চাকরির সুবাদে সৈকত অনেকটা দূরে বসবাস করত। ঈদের ছুটিতে যখন সৈকত বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের টিকিট কাটতে গেল সেখানে অনেক কষ্টে ট্রেনের টিকিট পেল। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনে উঠে পড়ল। নিজের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যখন সে ট্রেনে উঠলো হঠাৎ করেই লক্ষ্য করল তার পাশের সিটে একটি মেয়ে বসেছে। এলোমেলো বাতাসে মেয়েটির মাথার লম্বা কালো চুল গুলো উড়াউড়ি করছে। মেয়েটির পরনে ছিল সাদা ধবধবে একটি জামা। সাদা ওড়না দিয়ে মেয়েটি নিজের মাথা ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিল। মেয়েটিকে দেখে সৈকতের মনে হচ্ছিল যেন এক টুকরো সাদা মেঘের পালক তার পাশে বসে আছে। মনে হচ্ছে যেন সাদা মেঘের পালক থেকে কিছু অংশ খসে পড়েছে তার পাশে। নাম না জানা এই মেয়েটিকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছিল সৈকত। প্রথম দেখাতেই মেয়েটিকে ভালো লেগেছিল সৈকতের। নাম না জানা এই মেয়েটির নাম দিয়েছিল মেঘ বালিকা। পুরোটা রাস্তা জুড়ে সৈকত শুধু তার মেঘ বালিকাকেই দেখতে লাগলো। মেয়েটি নিজের মতো করে বই পড়ছিল এবং তার গন্তব্যে যাচ্ছিল। মেঘ বালিকাকে দেখে সৈকত আর নিজের চোখ ফেরাতে পারছিলনা। সৈকত মনে মনে ভাবছিল মানুষ যে এত সুন্দর হতে পারে তা সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এই মেঘবালিকার অপরূপ সৌন্দর্য সৈকতকে মুগ্ধ করেছে। যেহেতু ট্রেন জার্নি অনেকটা সময় জুড়ে ছিল তাই পুরোটা সময় সৈকত খুব আনন্দে উপভোগ করেছে। পাশে যখন মেঘ বালিকা থাকে তখন যে কারোও জার্নি অনেক সুন্দর হয়।

এভাবে যখন অনেকটা সময় কেটে গেল তখন ট্রেন ধীরে ধীরে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গেল। সৈকতের এবার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। কারণ সময়ের সাথে সাথে তারা অনেকটা পথ চলে এসেছে সেই সাথে তার মেঘ বালিকাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় চলে এসেছে। যখন নির্দিষ্ট স্টেশনে ট্রেন থামলো তখন সৈকত দেখল তার মেঘ বালিকা ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে। সৈকত নিজের প্রয়োজনীয় ব্যাগগুলো নিয়ে সেও স্টেশনে নেমে পড়ল। সৈকত বারবার মেঘ বালিকাকে দেখছিল কিন্তু সেই মেয়েটি একটিবারও তার দিকে তাকালো না। এমনকি একটি বার কথা পর্যন্ত বললো না। হয়তো সে খেয়ালই করেনি কোন একজন মানুষ তার প্রেমে পাগল হয়েছে এবং তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছে।স্টেশনে নামার সাথে সাথেই সৈকত দেখল তার বাবা তাকে নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এরই মাঝে অনেক লোকের ভিড়ের কারণে সে তার মেঘ বালিকাকে হারিয়ে ফেলল। কিন্তু মনে মনে সান্ত্বনা পেল তার মেঘ বালিকা যখন এখানেই নেমেছে তার মানে আশেপাশেই তার বাসা হবে। তাইতো সে কিছুটা সান্ত্বনা নিয়ে নিজের বাবার সাথে বাড়ি চলে গেল। বাড়ি গিয়ে সবার সাথে অনেক আনন্দে সময় কাটাতে লাগলো। কিন্তু হৃদয়ের কোণে যার জন্য ভালোলাগা তৈরি হয়েছে সেই মানুষটিকে ভুলতে পারছিল না। বারবার সেই মেঘ বালিকার কথা মনে পড়ছিল সৈকতের। সৈকতের মনে হচ্ছিল যেন সেই মেঘ বালিকা তার কত আপন। আনমনে নিরালায় মেঘ বালিকার কথা ভাবছিল আর সৈকত অনেকটা কষ্ট পাচ্ছিল। অনেকটা আনমনে সময় কাটাচ্ছিল সৈকত। এভাবে একটি দিন কেটে গেল। এরপর সৈকতের বাবা মা তাকে বলল সৈকতের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হয়েছে। মেয়ে তাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। এখন যদি সৈকত চায় তাহলে সে দেখতে পারে। এই কথাটি শোনার মাত্রই সৈকতের যেন আরো বেশি খারাপ লাগলো। কারণ সে কিছুতেই মেঘ বালিকাকে ভুলতে পারছিল না।

এবার সৈকত অনেকটা মন খারাপ করলো। কারন তার বাবা-মা একটি মেয়েকে পছন্দ করেছে নিজেদের ছেলের বউ করার জন্য। যেহেতু সৈকত নিজের বাবা-মার কথা ফেলতে পারে না তাই মেয়ে দেখার উদ্দেশ্যে তার বাবা-মা এবং বোনকে নিয়ে গেল। সৈকত যখন মেয়ের বাসায় গেল তখন সৈকতের খুবই মন খারাপ ছিল। এরপর হঠাৎ করেই জানালা দিয়ে সৈকত দেখল সেই মেঘ বালিকাকে। মেঘ বালিকাকে সেখানে দেখে সৈকত অবাক হয়ে গেল। মনের মাঝে আশার সঞ্চার হল। সৈকত এবার অনেক উৎসাহ নিয়ে সেখানে বসে ছিল। ভেবেছিল হয়তো সেই মেঘ বালিকাই তার হবু বউ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতা সবাইকে মেনে নিতে হয় এরপর মেঘ বালিকা এবং অন্য একটি মেয়ে রুমে প্রবেশ করল। যখন সবাই সেই অন্য মেয়েটির সাথে কথা বলছিল তখন সৈকত অপলক দৃষ্টিতে মেঘ বালিকার দিকেই তাকিয়ে ছিল। এবার সৈকতের মা অনেকটা বিরক্ত হয়ে সৈকতকে বলবো তুই কি করছিস বাবা আমাদের হবু বৌমাকে সামনে বসিয়ে রেখে অন্য কারো দিকে তাকিয়ে আছিস এটা ভালো দেখায় না। এবার সৈকত অনেকটা লজ্জা পেল এবং সেই সাথে অনেকটা কষ্ট পেল।

সৈকত বারবার সেই মেঘ বালিকাকে দেখছিল আর মনে মনে ভাবছিল হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সবকিছুই দেন না। তাইতো আমি তোমায় পেয়েও হারিয়ে ফেললাম। এবার সৈকত অনেকটা মন খারাপ করে নিজের বাড়িতে চলে আসলো। আসার পর সৈকত তার মাকে বলল ট্রেনে দেখা হওয়া সেই মেয়েটির কথা। যে মেয়েটিকে সে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিল। এরপর বলেই ফেলল সেই মেয়েটি আর কেউ নয় সেই মেঘ বালিকা। কথাটি শোনা মাত্রই সৈকতের মা চেচিয়ে উঠলেন। বললেন তুমি হয়তো তার সম্পর্কে জানো না। আমরা যে মেয়েকে তোমার বউ করে আনার জন্য ঠিক করেছি ঐ মেয়েটির বড় বোন হল সেই মেয়েটি। মেয়েটি দেখতে সুন্দর তবে মেয়েটি কথা বলতে পারে না। জন্মের পর থেকে সে কোনদিন কথা বলেনি। সৈকত এবার অনেকটা কষ্ট পেয়ে তার মাকে বলল কেউ যদি কথা বলতে না পারে সেটা তো তার অপরাধ হতে পারে না। এবার তার মা তার সাথে কিছুটা রাগারাগি করল। এরই মাঝে বিয়ের দিন নির্ধারণ করা হলো। অবশেষে তাদের বিয়ের দিন চলে এলো। কিন্তু সৈকতের আজ ভীষণ মন খারাপ। কারণ সে মেঘ বালিকাকে ভালোবাসে। এবার যখন সে বিয়ে করতে গেল তখন দেখল সবাই কাজে ব্যস্ত কিন্তু কোথাও মেঘ বালিকাকে দেখতে পেল না সে। সৈকত ভাবল হয়তো কোথাও ব্যস্ত আছে। অবশেষে বিয়ে হয়ে গেল। এরপর যখন তারা বাসায় ফিরে এলো তখন সৈকত অনেকটা মন খারাপ করে বসে রইল। সৈকতের মা সৈকতকে বোঝাতে লাগলো সৃষ্টিকর্তা যাকে তোমার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে নির্ধারণ করে পাঠিয়েছে তাকেই তুমি তোমার জীবনে পেয়েছো। এবার সৈকত নিজেকে সামলে নিয়ে তার নিজের রুমে গেল। সেখানে গিয়ে সৈকত অনেকটা অবাক হয়ে গেল কারণ তার রুমে যে মেয়েটি ছিল সে আর কেউ নয় সে হচ্ছে তার মেঘ বালিকা। আজ মেঘ বালিকা সাদা রঙের একটি লেহেঙ্গা পড়েছে। তাকে দেখতে একেবারে পরীর মত লাগছে। অবশেষে সৈকত তার মেঘ বালিকাকে পেয়েছে এই জন্য সে অনেক খুশি। তখন মেয়েটি তার হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দিল। চিঠিতে লেখা ছিল আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আমি আপনাকে এভাবে বিয়ে করতে চাইনি। আসলে আমার বোন অন্য একজনকে ভালোবাসতো। তাই বাধ্য হয়ে আমি আপনাকে বিয়ে করেছি। অনেকটা বাবা মায়ের চাপে এবং পরিবারের কথা চিন্তা করে এই বিয়েটি করতে বাধ্য হয়েছি। আমি কথা বলতে পারি না তাই আপনাকে কোন ভাবে এই কথাগুলো জানাতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন দয়া করে। সৈকত যখন এই চিঠিটি পড়ছিল তখন মনে মনে হাসছিল এরপর বলল যার চোখে অনেক কথা লুকিয়ে থাকে তার আবার মুখে বলার দরকার কি। তোমার চোখের মাঝেই আমি সব কথা খুঁজে নেব মেঘ বালিকা। আজ থেকে আমি তোমাকে মেঘ বালিকা বলেই ডাকবো। মেয়েটি সৈকতের কথা শুনে কিছুটা লজ্জা পেল। এভাবে সৈকত তার মেঘ বালিকাকে তার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেয়ে গেল।

আমার লিখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানিনা তবে আমি চেষ্টা করেছি নিজের মতো করে সুন্দর একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Sort:  
 2 years ago 

অনুগল্প হিসেবে খুবই সুন্দর একটি গল্প আপনি লিখেছেন। সৈকত ও মেঘ বালিকা প্রেম অল্প শব্দের মধ্যে বর্ণনা করেছেন কিন্তু তার বিস্তৃতি অনেক । সত্যি খুব ভালো লাগলো আপনার এই অনু গল্পটি।

 2 years ago 

গল্পটা বেশ দারুন ছিলো।আসলে এমন ভালো মন ও প্রেমিক পুরুষ কি আসলেই পাওয়া যায়।আসলে মন থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইলে তা ফিরিয়ে দেন না তিনি।ধন্যবাদ

 2 years ago 

প্রথম দেখাতে ভালো লাগা কিন্তু কিছু বলতে না পারা ৷সবচেয়ে রোমান্টিক একটা বিষয় ৷আর এসব ঘটনা বাসে ট্রেনে প্রায় ঘটে ৷ঠিক যেমন সৈকত কিছু বলতে পারে নি ৷গল্পটা বেশ চমৎকার ছিল ৷কিন্তু দুঃখের বিষয় মেয়েটা কথা বলতে পারে না ৷যাই হোক পরিশেষে যে সৈকতের প্রথম দেখতেই ভালো লাগে ৷তার মিলন হলো

 2 years ago 

শেষমেশ একতরফা প্রেমেরও জয় হলো।সত্যিই ভাগ্যের লেখা কখনো খন্ডন করা যায় না।অসম্ভব ভালো লেগেছে গল্পটি পড়ে।অনেক সুন্দর লিখেছেন, ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68492.14
ETH 2699.27
USDT 1.00
SBD 2.72