"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা-১৪|| আমার গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প ||[10% shy-fox]
আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।
বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা-১৪ তে অংশগ্রহণ করার জন্য গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প নিয়ে এবার আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। গ্রীস্মকাল মানেই ফলে ফলে ভরপুর চারপাশ। যখন আমি গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প লিখতে বসলাম তখন বারবার কেন জানি শৈশবের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। তাই আজ আমি আমার শৈশব স্মৃতি থেকেই গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো। আশা করছি আমার লেখা গল্প সকলের ভালো লাগবে।
আমার গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প (লিচু চুরি):
গ্রীস্মকালে ফল পাকার মিষ্টি গন্ধ যখন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে তখন এই মন যেন আনন্দে নেচে ওঠে। তেমনি আজ আমি আমার কিশোর বেলার সেই গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আমি যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি। আমার পরিবারের সকলে মিলে আমরা গ্রামে বাস করেছি। যৌথ পরিবার হওয়ার সুবাদে আমার গ্রামের বাড়িতে অনেক লোক একসাথে থাকা হতো। তাই আমার সমবয়সী অনেকে ছিল আমার বাড়িতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমরা যারা সমবয়সী ছিলাম চাচাতো ভাই এবং ছোট চাচারা তারা সবাই মিলে সব দুষ্টুমিতে মেতে উঠতাম। আমাদের গ্রামের বাড়ীতে একই বাড়ীতে যেহেতু সবাই থাকতাম তাই যারা একটু বড় হতো অর্থাৎ ৫-৬ বছর হয়ে যেত তখন তাদেরকে বাহিরের ঘরে জায়গা দেওয়া হতো। আসলে বিষয়টি আপনাদের কাছে হয়তো আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে। কিন্তু এটাই সত্যি। আমাদের বাড়ির বাহিরে পুকুরপাড়ের কাছে বড় একটি ঘর ছিল। গ্রামের ভাষায় সেই ঘরটিকে বলা হতো "কাচারি ঘর"। আমরা যারা পড়াশোনা করতাম তাদেরকে সেখানে থাকতে দেওয়া হতো। সেখানে অনেকটা ম্যাস লাইফের মত আমরা সময় কাটিয়েছি। পড়াশোনা শেষ করে আমরা আবার নানান রকমের ফন্দি আটতাম কখন কার গাছের ফল চুরি করা যায়। আসলে আমাদের বয়স কাছাকাছি ছিল বলে দুষ্টুমিটা আরো বেশি জমে উঠতো। আমরা সকলে মিলে অনেক দুষ্টুমিতে মেতে উঠতাম। বিশেষ করে ফল চুরির মজার মজার ঘটনাগুলো প্রায় দিনই ঘটতো।
এবার আমি ফল চুরির একটি মজার ঘটনা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আমরা যখন সবাই স্কুলে যেতাম তখন দলবেঁধে স্কুলে যেতাম। স্কুল থেকে ফেরার পথে একদিন সবার নজর গেল সেই রহিম কাকার লিচু বাগানে। আসলে আমাদের গ্রামের বাড়িতে আম, কাঁঠাল ও লিচুতে ভরপুর ছিল। কিন্তু তবুও অন্যের গাছে লিচু দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। তাই রাতে পড়া শেষ করে সবাই মিলে প্ল্যান করলাম কি করে রহিম কাকার লিচু বাগানে ঢোকা যায় এবং মজার মজার লিচু খাওয়া যায়। সবাই মিলে অনেক রাত পর্যন্ত প্ল্যান করা হলো আমরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবো। ভোরে ঘুম থেকে উঠার পর আমরা আমাদের মিশন সাকসেসফুল করবো। তাই আমার ছোট চাচাকে বলে রাখলাম তুমি যখন ঘুম থেকে ভোরে উঠবে তখন আমাদের সবাইকে ডেকে দিবে। সেই অনুযায়ী খুব ভোরে আমরা সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। এখন প্লান অনুযায়ী সবাই চুপিচুপি বেরিয়ে পড়লাম। বাসা থেকে বের হতে আমাদের তেমন একটা সমস্যা হয়নি। কারন আমি আগেই বলেছি আমরা সবাই বাড়ির বাইরের ঘরে থাকতাম পড়াশোনার জন্য। এবার আমরা যখন চুপিচুপি বেরিয়ে পড়লাম আমাদের মিশন সাকসেসফুল করার উদ্দেশ্যে তখন আবছা আলো অন্ধকার চারপাশ ঘিরে আছে। খুব সাবধানে সবাই বেরিয়ে পড়লাম লিচু বাগানের উদ্দেশ্যে। সবার মাঝে তখন টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মজার মজার পাকা লিচু খাওয়ার জন্য।
খুব সাবধানতার সাথে আমরা ধীরে ধীরে লিচু বাগানের কাছাকাছি চলে গেলাম। এখন বিপত্তি বাধল লিচু বাগানের কাছে গিয়ে। কে প্রথম লিচু বাগানে ঢুকবে এই নিয়ে। সবাই তো আর একসাথে লিচু বাগানে ঢোকা যাবে না। যে একটু লম্বা ছিল তাকে বলা হলো তুমি আগে সুপারি গাছ দিয়ে উঠে লিচু গাছের বাগানে ঢুকো। এরপর তার সহায়তায় একে একে আমরা বাগানের বেড়া পার হলাম। কিন্তু বিপত্তি বাধলো আমার একটি চাচাতো ভাইকে নিয়ে। সে একটু মোটাসোটা। তাকে বাগানে ঢুকানো খুবই কষ্টের হয়ে দাঁড়ালো। অবশেষে অনেক পরিশ্রমের পর আমরা তাকে বাগানে ঢুকাতে সক্ষম হলাম। এরপর শুরু হল আমাদের লিচু খাওয়ার মিশন। আমরা যে যার মতো করে মনের আনন্দে লিচু খেতে শুরু করলাম। পাকা পাকা লিচু দেখে যেন লোভ সামলানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যে যার মতো করে লিচু খাওয়া শুরু করলাম। আসলে তখন মনে হয়েছিল একটি ব্যাগ কেন সঙ্গে আনিনি। ছোট ছোট পকেটে কতইবা লিচু ঢুকানো যায়। একদিক দিয়ে ঢুকাই অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে পড়ে এমন হচ্ছে অবস্থা। অবশেষে একজনকে বললাম তার গায়ে যে শার্ট পরা আছে তার শার্টটি খুলে দিতে। এবার শার্টের উপর লিচু নিয়ে শার্ট বেঁধে নিলাম। সবাই মনের আনন্দে তৃপ্তি করে লিচু বাগানে পাকা পাকা লিচু খেলো। খাওয়ার পরে যখন আমরা বুঝতে পারলাম ভোরের আলো প্রায় পরিষ্কার হয়ে আসছে তখন আমাদের মাঝে যে বড় ভাই ছিলেন সেই বললেন যে এবার একে একে সবাই বেড়া পার হয়ে ওই পাশে চলে যাও। আমরা কয়েকজন বেড়া পার হয়ে ঐ পাশে চলে গেলাম। কিন্তু বিপত্তি বাধল যখন আমাদের সেই মোটাসোটা চাচাতো ভাইকে নিয়ে। সে আর উঠতে পারছেনা। আসলে সে এতটাই লিচু খেয়েছিল যে তার পেটের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছিল। একেতো ঝোঁকের মাথায় অনেক লিচু খেয়ে ফেলেছিল তার উপর আবার বাগানের বেড়া টপকানো তার কাছে যেন অসহ্যকর হয়ে গিয়েছিল। এবার আমরা সকলেই বিপত্তির মধ্যে পড়ে গেলাম। তাকে টানতেও যেন উঠছে না। ভয় আমাদের চারপাশে এসে ভিড় করলো। এখন যদি আমাদের সেই ভাইকে সেখানে রেখে আসি তাহলে সকালবেলায় সবাই ঘটনাটি জানতে পেরে যাবে। এবার সবাই মিলে তাকে তোলার চেষ্টা করলাম। সে যেন আর যেতে চাচ্ছে না। বলছে আমি একটু জিরিয়ে নেই এরপর সকালে যাব। অবশেষে তাকে বলে কয়ে যখন আমরা সেখান থেকে বের করার চেষ্টা করলাম তখন সে বলল তার পেটের মধ্যে বার বার মোচড় দিচ্ছে। তাকে নিয়ে আমরা সবাই বিপাকে পড়ে গেলাম। অবশেষে তাকে টেনে হিচড়ে যেভাবেই হোক লিচু বাগান থেকে বের করে নিয়ে আসলাম। আসার পর আমরা যে যার মতো করে ভদ্র ছেলে হয়ে হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসে গেলাম। কিন্তু সমস্যা একটাই আমাদের সেই মটু ভাইটি বারবার বাথরুমে যেতে লাগলো। আসলে সে সহ্য ক্ষমতার অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেছিল। আমরা সবাই চেষ্টা করছিলাম বিষয়টি যেন বাড়ির মানুষের কাছে জানাজানি না হয়। কারণ বাড়ির মা বাবা, চাচা চাচিরা যদি এই ঘটনাটি জানতে পারে তাহলে আমাদের সবাইকে পিটিয়ে একেবারে তক্তা বানিয়ে ফেলবে।
অবশেষে তাকে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকতে বললাম। সেও ভদ্র ছেলের মতো আবারো ঘুমিয়ে পড়ল। তখন আমরা যেন মনের মাঝে স্বস্তি ফিরে পেলাম। কারণ বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে বাবা-মায়ের লাঠিপিটার হাত থেকে মোটেও রক্ষা ছিলনা। আর আমার দাদু ছিলেন আমাদের গ্রামের নাম করা একজন মানুষ। এই বিষয়গুলো যদি অন্য কেউ তার কাছে এসে বলতেন তাহলে আমাদের সবার অবস্থা কি হতো তাহলে তো বুঝতেই পারছেন আপনারা। অবশেষে আমরা সব পরিস্থিতিকে সামলে নিয়ে আমাদের মিশন সাকসেসফুল করেছিলাম। এরপর আমরা ভদ্র ছেলের মত নির্দিষ্ট সময়ে যে যার মতো স্কুলে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে আবারো সেই লিচুবাগান দেখছিলাম আর অন্যদিকে তাকিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। কথায় আছে না "চোরের মন পুলিশ পুলিশ"। আমাদের অবস্থা হয়েছিল সেই রকম। যখন সবাই বলাবলি করছিল লিচু গাছের এই অবস্থা কেন তখন আমরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম কারণ আমরা মনে মনে ঠিকই বুঝে গিয়েছিলাম এই কাণ্ড আমাদের। তাই আমরাও চুপিচুপি ঘরে ফিরে এসেছিলাম লক্ষ্মী ছেলের মত। আসলে শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে এখনও আলাদা এক রকমের অনুভূতি হয়। সেই স্মৃতিগুলো কতইনা মজার ছিল। আসলে শৈশবের দুষ্টুমিগুলো মনে পড়লে নিজের মনের অজান্তেই অনেক হাসি পায়। তাই আমি আমার শৈশবের গ্রীস্মকালীন ফলের গল্পের সুন্দর একটি গল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করলাম।
গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানিনা। তবে আজকে আমি যখন আমার এই গল্পটি লিখেছিলাম তখন বারবার শৈশবের স্মৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। আসলে আমার বাংলা ব্লগ এমন একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সকলেই তাদের শৈশবের সোনালী দিনগুলোর মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। আমিও আমার গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প সকলের মাঝে উপস্থাপন করলাম।
আপনার এই গল্পটি পড়ে আমার সত্যি অনেক ভালো লাগলো। আসলে আমাদের শৈশব অনেক সুন্দর ছিল শৈশব আসলে অনেক সুন্দর হয়। অনেক বন্ধুবান্ধব পাশে থাকে কিন্তু আমরা বড় হওয়ার পাশাপাশি তাদেরকেও সময় পরিক্রমা হারিয়ে ফেলি আমরা। কে হয়তোবা ভিন্ন শহরে কি হতে পারে কার সাথে এতক্ষণ নানান ব্যস্ততার কারণে এবং তার সাথে যোগাযোগ করার কোন উপায় থাকেনা। আপনার গল্পটি আসলে অনেক সুন্দর ছিল ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। সেই সাথে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। 💝💝💝
মোটা মানুষ নিয়ে কখনও চুরিতে যাবেন না। না পারবে গাছে উঠতে না পারবে দেয়াল বা বেড়া টপকাতে। হা হা হা। দারুন ছিল গল্প টি। তবে আমি লিচু কম খাই কারন লিচুর বোটার কাছে কেচো টাইপ একটা পোকা থাকে। । ধন্যবাদ সুন্দর একটি বাস্তবিক জীবনের গল্প শেয়ার করার জন্য।
একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া বর্তমান লিচুর বোঁটার সাথে কেঁচোর মতো এক প্রকারের পোকা থাকে। বর্তমান আমিও লিচু খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ। ❣️❣️❣️
ভাই আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। কারণ আপনি চুরি করতে সফল হয়েছিলেন। যদি চুরি করে ধরা পড়তেন তাহলে আপনার কপালে দুঃখ ছিল, কারণ আপনার দাদু ছিল গ্রামের প্রভাবশালী লোক। তার মান সম্মান শেষ হয়ে যেত এবং আপনার অবস্থা খারাপ করে দিত। যাই হোক সেটা সফল হয়েছে এটা জেনে ভালো লাগলো। আসলে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এরকম চুরির ঘটনা রয়েছে। যা আমাদের এখন সেই ঘটনাগুলো মনে করে অনেক আনন্দ পাই। ভালো লাগলো আপনার গল্পটি।
আমার গল্পটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হয়েছি ভাইয়া। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই সাথে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।💗💗💗
আপনার দেওয়া গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনার গল্পটি পড়ে আমার শৈশবের দিনগুলো খুব মনে পড়ে গেল। আপনি চমৎকার ভাবে গল্পটি উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ধরনের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
জেনে খুবই খুশি হলাম ভাইয়া আমার গল্পটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ। সেইসাথে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❣️❣️❣️