" ফেলা আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি "।।"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা-২৪ || @shimulakter | | ১২/১০/২০২২ ইং ।।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আসসালামু আলাইকুম,আদাব

হ্যালো,

“আমার বাংলা ব্লগ” এর ভারতীয় ও বাংলাদেশী সকল ভাই ও বোনেরা সবাই কেমন আছেন।আশাকরি ভালো আছেন।আমিও আপনাদের শুভকামনা ও ভালোবাসায় ভালো আছি।আমি শিমুল আক্তার,আমার ইউজার আইডি @shimulakter বাংলাদেশ,ঢাকা থেকে আমি আপনাদের সাথে যুক্ত আছি।আমার ভালো লাগা আর ভালোবাসার জায়গা “আমার বাংলা ব্লগ”।আমি প্রতিনিয়ত আপনাদের সাথে কোন না কোনভাবে যুক্ত আছি।

বন্ধুরা,আমার আজকের ব্লগ কিছুটা ভিন্ন।আমি আজ “আমার বাংলা ব্লগ” এর ২৪ তম প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে “ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি " নিয়ে হাজির হয়েছি।আশাকরি আমি আমার ফেলে আসা স্মৃতি আপনাদের মাঝে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারব।অনেক স্মৃতির মধ্যে থেকে আমি একটা স্মৃতি তুলে ধরছি।

ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি.jpg
Canva দিয়ে তৈরি

ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি

আমি আমার ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি থেকে আজ একটি স্মৃতি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।আশাকরি আমার ফেলে আসা গল্পটি আপনাদের ভাল লাগবে।আমি আমার স্কুল জীবন থেকে আমার গল্পটি শুরু করি। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন থেকে আমার এই ফ্রেন্ড মিনুর সাথে আমার পরিচয়। আমি চুপচাপ আর ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ।তাই আমার ফ্রেন্ড ও খুব কম।তবে মিশতাম সবার সাথেই।যাদের সাথেই বন্ধুত্ব হয়েছিল,এখনও তাদের নিয়েই আছি।আমার স্কুল কলেজ মিলিয়ে ফ্রেন্ড মোট ৬ জন কিন্তু আজ শুধু মিনুর গল্প নিয়েই আপনাদের মাঝে হাজির হলাম।আগে বলে নেই আমার ফ্রেন্ডদের সাথে আমার কেমন সম্পর্ক ছিল,সত্যি কথা বলতে আমাদের ফ্রেন্ডদের মধ্যে কখনও খারাপ কোন ঘটনা হয়নি। ফ্রেন্ড দের মধ্যে কখনও ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি ও হয়নি।লেখাপড়ার বিষয়ে ওরা সবাই আমার উপর নির্ভর করত।কারন আমি সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারতাম বলে।কলেজে উঠার পর ওরা সবাই আলাদা আলাদা লেখকের বই আমাকে দিত, লিখতে পারতাম গুছিয়ে তাই সব নোট আমি ই করতাম।ওরা সবাই তা কপি করে নিত।

আমি শুধু শান্তই ছিলাম না ,ঘরকুনো ও ছিলাম।এখনও তাই।খুব প্রয়োজন না হলে আমি বাইরে পা দেই না।আর কারো বাসায়ও যাওয়ার প্রবনতা কম।ফ্রেন্ড হয়ে ফ্রেন্ডদের বাসায় হাতে গোনা কদিন গিয়েছি খুব প্রয়োজনে।সে জন্য আমি ভাল মেয়ে হিসেবেই সব ফ্রেন্ডদের বাবা-মা এর কাছে ছিলাম।এবার মূল গল্পে আসি --আমার ৬ জন ফ্রেন্ড হলেও,ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত মিনুই আমার সাথে ছিল।বাসা অন্য এলাকায় শিফট হওয়ার জন্য বাকিদের আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।আমরা যখন আই এ এক্সাম শেষ করি তার আগে থেকেই মিনু ওর কাজিনকে পছন্দ করত ,তা আমাকে বা বাকি ফ্রেন্ডদের সাথেও কখন ও শেয়ার করেনি।আমরা আই এ পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে দুজন একসাথেই ভর্তি হই।একসাথে উঠা বসা,পরাশোনা করলেও ওর এই রিলেশনের কথাটা মিনু আমাকে কখনই বলেনি।

Screenshot_102.jpg
সোর্স
মিনু এই প্রথম সব আমাকে খুলে বলল

আমরা যখন ফাস্ট ইয়ার শেষ করি ,একদিন হঠাৎ মিনু ওর কাজিনকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসে।তখন প্রথম আমি ওর কাজিনকে দেখি।আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে , সেদিন আমাকে সবকিছু খুলে বলে।ভাইয়ার সাথে ওর সম্পর্ক বেশ কয়েক বছরের।বাসা থেকে বিয়ের চাপ আসাতে মিনু বিয়ে করে নেয়।ওর শ্বশুর বাড়ি খুলনা।মিনু আমার বাসায় এসেছে,আমি যাতে ওর বাসায় গিয়ে আন্টির হাতে ওর লেখা চিঠিটা দিয়ে আসি।সেদিনই মিনু খুলনা চলে যাবে।

Screenshot_100.jpg
সোর্স
আন্টি অনেককিছু আমাকে বলে যাচ্ছিল

সেদিন আমি কোন কিছু না ভেবে,ফ্রেন্ডের দায়িত্ব পালন করার জন্য মন স্থির করলাম।সেদিন আমি ওর বাসায় যেতে পারিনি,কারন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল।পরের দিন সকালবেলা মিনুদের বাসায় যাই। বাসায় ঢুকেই বুঝতে পারলাম, ঘরের পরিবেশ খুব থমথমে। দেখি বাবা-মা দুজনই খুব দুঃশ্চিন্তায় আছেন।দুজনের ই মুখ কালো হয়ে আছে। তারা প্রথমে ভেবেছিল,আমি মিনুর সাথে দেখা করতে এসেছি।তাই তারা কিছুই বলছিল না।কিছু সময় পর আমি চিঠিটা বের করে দেই।আন্টি চিঠিটা পড়ে। পড়া শেষ করেই,আমাকে খুব কথা শুনাতে শুরু করল,আমি কেন জানাইনি? আমি কেন মিনুকে বুঝাইনি? আমরা দুজন একসাথে চলি ঠিকই সব জানি আমি,আমি মিনুকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছি।আমি তাদের না জানালেও মিনুকে বুঝাতে পারতাম,এ কাজটা না করতে আরও অনেক কিছু।কাল রাত থেকে চাপানো যে কষ্ট তার ভেতর ছিল সবটাই আন্টি আমার উপর ঝাড়ল। আমি তার কষ্ট টা তখন অনুভব করছিলাম।একজন মা সন্তানকে কত যত্ন করে বড় করে,সেই সন্তান যদি এভাবে চলে যায়,তখন মায়ের মন কেমন করে সেটাই তখন আমি অনুভব করছিলাম।মেয়ের জন্য টেনশনে তারা সারা রাত ঘুমায়নি,ঠিক বুঝতে পারছিলাম আমি।আমি আন্টির কথায় একদম মন খারাপ করিনি।বরং তখন তাদের অসহায় মুখদুটো দেখে আমার মায়াই লাগছিলো।

Screenshot_103.jpg
সোর্স
অনেককিছুই সেদিন শুনতে হয়েছিল

তখন মিনুর বাবা (আংকেল) আন্টিকে বলছিল,এই মেয়েকে কেন কথা শুনাও?ওর কি দোষ ? ও তোমার মেয়ের খবর দিতে এসেছে,নয়ত কি করে জানতে কোথায় আছে তোমার মেয়ে ? এভাবে অনেক কথার পর আমি বাসায় চলে আসি।এরপর বেশ কিছুদিন পর মিনু ঢাকা আসে,এসে আমার সাথে ইউনিভার্সিটিতে দেখা হয়।ওর ছোটবোনের কাছে মিনু সব শোনে।মিনু এসেই আমার পাশে বসে হাত ধরে বলে,আমার জন্য তুই এত কথা শুনলি,সত্যিটা তো আমি জানি,তুই এ ব্যাপারে কিছুই জানতি না।তারপরেও চুপ করে ছিলি কেন ? বলতে ত পারতি তুই কিছুই জানিস না।মিনু খুব অনুতপ্ত হল।আমাকে বলল,আমার জন্য তুই এত কথা শুনেছিস।আমার খুব খারাপ লাগছে।আমি মিনুকে বুঝালাম,সেদিন আমি কিছু বলতে পারিনি।কারন সেদিন আমি একজন অসহায় মায়ের মুখ দেখেছিলাম।যে মানুষটি মেয়ের কিছুই জানতে পারছিল না,কাউকে বলতেও পারছিল না লোকলজ্জার ভয়ে।সেদিন অসহায় মায়ের বুক ফাটা কষ্ট চেপে রাখা মানুষটিকে আমি অনুভব করছিলাম।

Screenshot_101.jpg
সোর্স
সেদিন একজন মায়ের অসহায় মুখটি দেখছিলাম

সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত মিনু আর ভাইয়া দুজনেরই আমার প্রতি ভালোবাসা তাদের বেড়ে গেল।এর বেশ কয়েক মাস পর মিনুর বাসা থেকে ওদের দুজনকে মেনে নিয়েছিল।আজ আর মিনুর বাবা-মা বেঁচে নেই। কিন্তু তারা মেয়ের সুখ দেখেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিল। তারা দুজন সুখে থাকুক পরপারে গিয়েও,এই কামনা করি।সেদিন চিঠিটা নিয়ে যাওয়া আমার কাছে সামান্য ব্যাপার হলেও,আজ বুঝতে পারছি মা হয়ে,সেদিনের চিঠিটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।আজ ও মিনু অপরাধীর কণ্ঠেই আমার সাথে কথা বলে।এখন ও সব ফ্রেন্ড এর মধ্যে আমাকেই ও খোঁজে বেশি। যে কোন বিষয়ে আমার কথার মূল্যায়ন করে বেশী।

সেদিনের সেই চিঠিটা নিয়ে যাওয়াতে আমি মিনুর মনের মধ্যে চিরজীবনের জন্য ভাল লাগা স্মৃতি হয়েই রয়ে যাব,তা আমি জানি।আমার স্মৃতিতেও মিনু সবার থেকে আলাদাভাবে মনের স্মৃতিতে থেকে যাবে।মিনু সুখে আছে,তাই আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে রবে সব সময়।নিজে অপরাধ না করে ও অপরাধী হতাম,যদি মিনু সুখে না থাকত।সুখে আছে মিনু তাই সেদিনের সেই চিঠি নিয়ে যাওয়া,কথা শোনা কোনকিছুই আমার খারাপ লাগাতে পারেনি।সেই দিনের সেই ছোট চিঠিটির যে এত গুরুত্ব ছিল,তা আজও বুঝতে পারছি।আজ ও মিনুর মনের মাঝে স্মৃতি হয়ে আমি ই আছি।সব সময় দুজন দুজনের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকব,এটাই জানি।

আজ এ পর্যন্ত।" ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি " এই গল্পটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম।কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি তা আপনারাই ভাল বলতে পারবেন।সবাই সুস্থ থাকবেন,ভাল থাকবেন।আবার কোন নতুন ব্লগ নিয়ে হাজির হব।

ধন্যবাদ সবাইকে

@shimulakter

4i88GgaV8qiFU89taP2MgKXzwntUGAvkoQiKU7VxyD37q94i8e38qvF9HBknYTWLbKs3wg1cbtfZvU44CUYbBqLEEX6YDgQznQURMvBExn7FCAPjAUKLwJ1kpe.png

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjde1F6oRaKDis6eFNTqaET8soo8NYdtJXnEayXsg3Fx95TFkgLt1et4cn3GmnVYtjFNxZRGLRKBwPC4mkXt1HjDw6sEDbwuKeQYrzDXujdBwKMc7ipy83CZxYcA3X1hGanCutbX3r76uRabPq5SiaAGwK9jj4FjHEDvVGb5GzUg.gif

Sort:  
 2 years ago 

আপু, ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপু আপনার বান্ধবী মিনু যদিও বা তার বিবাহিত জীবনে খুবই সুখী তবুও যখন তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা-মার ভীষণ চিন্তা হয়েছিল। আসলে এরকম পরিস্থিতিতে পরলে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। আর এজন্যই হয়তো আপনাকে অনেক কথা শুনিয়েছে মিনুর মা। কিন্তু মিনু তার মায়ের হয়ে আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে এটা প্রকৃত বন্ধুর কাজ। আপু আপনার ফেলে আসা বন্ধুত্ব স্মৃতিটুকু প্রতিযোগিতায় সফল হোক এই কামনা করছি। ধন্যবাদ

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। সুন্দর মন্তব্য করে সাপোর্ট করার জন্য। অনেক অভিনন্দন ভাইয়া আপনাকে ও।

Hi, @shimulakter,

Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.

Your post was picked for curation by @rex-sumon.


Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP

 2 years ago 

ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি না আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে বন্ধুত্বে মাঝে ভুল বোঝা বুঝি অনেক সময় থাকে। এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো। অনেক অভিনন্দন আপনাকে।

 2 years ago 

আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনের বন্ধুটি খুব ভালমনের মানুষ। নাহলে এখনো তার অপরাধের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইত না। আপনাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হোক এ কামনা করি।

 2 years ago 

শুধু আমার বন্ধুই নয়, আমরা ৬ জন বান্ধবীই ভাল মনের। আমাদের ৬ জন ফ্রেন্ডের জন্য ই দোয়া কামনা করবেন আপু। 😍অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে ও।

 2 years ago 

আপনার বন্ধুটি খুব ভাল ছিল আপু। তাই সে তার মায়ের হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। যদিও আপনার বান্ধবী মিনু বিবাহিত জীবনে খুবই সুখী। তবে তার বাবা মা তার জন্য খুব চিন্তা করেছিল। আপনার পুরনো দিনের বন্ধুত্বের গল্পটি খুব সুন্দর ছিল। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার পুরনো দিনের বন্ধুত্বের গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপু আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আমার ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি আপনার ভালো লেগেছে জেনে অনেক ভাল লাগলো। অনেক শুভকামনা আপু আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64373.04
ETH 2775.53
USDT 1.00
SBD 2.66