বিষয় - ৪ || আমার ছেলেবেলা (বিশ্বস্ততার গল্প) || @shimulakter
আজ ৬ই শ্রাবন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামু আলাইকুম , আদাব
“আমার বাংলা ব্লগ” এর সকল বাংলাদেশী ও ভারতীয় সদস্যদের জানাই আমার অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা । সবাই ভাল আছেন আশাকরি । আমিও আপনাদের ভালবাসায় ভাল আছি ।আজ আমি আমার ছেলেবেলার একটা ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি ।ছেলেবেলার এ ঘটনাটা আজ ও আমার মনে দাগ কেটে আছে । আমি আজও ভুলতে পারিনি ।
Copyright Free Image source
আমার যখন জন্ম হয় , তখন আমার আব্বু আমার জন্য খুব ভারী করে স্বর্ণের কানের দুল বানিয়ে দেন । ছোট তাই আমার আম্মু আমাকে তা কখনও পরায়নি। কিন্তু আমি যখন একটু বড় হলাম ,তখন আমাকে তা পরিয়ে দিলেন ।কারন মেয়ে ত এখন বড় হয়েছে ,ভারী দুল পরতেই পারবে ।
আমার বয়স তখন ৪/৫ হবে । আমরা তখন পুরান ঢাকায় থাকতাম । দুই চাচা , তাদের ছেলেমেয়ে আর আমরা যৌথ পরিবারে সবাই এক ই সাথে থাকা আর আমার বেড়ে ওঠা এভাবেই । সবাই মিলে মিশে একসাথে বাস করতাম । একদিন সকালবেলা আমার ছোট চাচা আমার বড় খালামনির বাসায় যাবেন । আমাকে বলল , তুমি যাবে ? আমি রাজী হয়ে গেলাম ।খালামনির বাসা বেশি দূরে ছিল না ।বাসা থেকে ১৫/ ২০ টাকা হবে রিকশাভাড়া । আমি আমার চাচার সাথে হেঁটেই যাচ্ছি ।কারন বাসা খুব কাছেই আগেই বললাম ।
Copyright Free Imagesource
খালামনির বাসা আর আমাদের বাসার মাঝামাঝিতে টেইলার্স এর দোকান । এলাকার এই দোকানটাতেই আম্মু সব সময় আমাদের সব বোনদের কাপড় বানাতে দিত ।সেই সুবাদে টেইলার্স আঙ্কেল আমাকে চিনতো । আর আমার চাচাকেও খুব ভাল করে চিনতো ।এলাকার দোকান,আর উনি আমাদের পরিবারের টেইলার্স এক কথায় বলা যায় । আমার ছোট চাচা হঠাৎ পথে তার এক ফ্রেন্ড এর দেখা পায় । উনি কথা বলেই চলেছে । চাচা সামনের দিকে তার বন্ধুর সাথে এগিয়ে যাচ্ছিল , তখন টেইলার্স আঙ্কেল কে বলল, আমাকে যেন খেয়াল রাখে ।এই বলে দোকানের সামনে দাঁড় করেয়ি , চাচা একটু এগুলো । এর কিছুক্ষনের মধ্যে টেইলার্স দোকানে কিছু আপুরা এলো ড্রেস বানাতে ,এর মধ্যেই অল্প সময়ে ঘটনা যা ঘটার, ঘটে গেলো ।
চাচা বন্ধুর সাথে কিছুটা সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল কথা বলতে বলতে । আর যে টেইলার্স আঙ্কেল কে আমায় দেখতে বলে গেলো , উনিও কাপড়ের মাপ নিতে ব্যস্ত । এই সুযোগে একজন পথচারী ,তার মুখ আমার মনে নেই । উনি এলুমুনিয়ামের একটা টিফিন কেরিয়ার হাতে , এটা মনে আছে ।
উনি আমাকে দোকানের এক পাশে ডেকে বলল , তুমি এখানে কি করছো ? কার সাথে এসেছো ? আমি বললাম , আমি আমার চাচার সাথে এসেছি । চাচা সামনেই, চলে আসবে । তখন উনি বলল, তুমি কানের দুল কেন পরেছ ? তুমি জানো না ছেলেধরা আছে ? আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম । বুঝলাম, হে ছেলেধরা ত আছে ই । আমি খুব সহজ সরল ছিলাম । কথা কম বলতাম ।যাই হোক , উনি তখন বলল , খুকি তুমি তোমার কানের দুল খুলে হাতে নাও ।নয়ত কেউ নিয়ে যাবে ।পথচারী আমার কানের দুল খুলে তার পকেট থেকে দিয়াশলাই এর একটা বক্স বের করে , তার ভেতর কানের দুল রেখে আমার হাতে দিয়ে চলে গেলো । আমি খুব বিশ্বাস নিয়ে দিয়াশলাই এর বক্সে সোনার কানের দুল নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম চাচার জন্য । ৪-৫ মিনিটের মাথায় চাচা এলো । এসেই দেখে ,আমার কান খালি হাতে কি জানতে চাইলো । আমি সব বললাম , চাচা যা বোঝার তাতো বুঝেই গেলো । চাচা তখন খুব রেগে গেলো , দোকানে গিয়ে টেইলার্স আংকেলের উপর খুব রাগ দেখালো। বলল ৫ টা মিনিট দেখতে পারলেন না । চাচা সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল । তার বেশি খারাপ লাগছিল, আমাকে যদি হারিয়ে ফেলতো এই ভয়ে খুব বেশি রেগে যাচ্ছিল ।এরপর চাচা বক্স খুলে দেখায় আমাকে, কানের দুল পথচারী আসলে নিয়ে এই বক্সটা আমার হাতে দিয়ে গেছে ।
হয়ত আপনাদের কাছে গল্প মনে হচ্ছে ,কিন্তু ঘটনাটি সত্যি । আমার এই ছোট মনের বিশ্বস্ততার গল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লাগলো ,জানাবেন । আজ এ পর্যন্তই । সবাই সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন ।
আল্লাহ্ হাফেজ
আমি শিমুল আক্তার
বাংলাদেশ, ঢাকা থেকে
আপনার গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগতেছে।আমিও আমার মেয়েদের এই ভয়ে স্বর্ণ পরায় না।ধন্যবাদ গল্প টি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু।
প্রথমেই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এই জন্য যে, এ জাতীয় পোস্টগুলো অনেক ইউজারের জন্য ভবিষ্যতে উপকারে আসবে। কারণ সহজ সরল মানুষগুলো এভাবে ধোকাবাজের কবলে পড়ে। তবে এই জাতীয় ঘটনাগুলো অনেকের মাঝে শেয়ার করলে হয় কি অনেকে উপকৃত হয়। খুবই ভালো লেগেছে আপনার এই গল্পটা পড়ে, নতুন করে এসব বিষয়ে সচেতন হতে পারলাম।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।