💕 ভালোবাসার মিষ্টি গল্প 💕 --" সেই তুমি " --( শেষ পর্ব ) | | আমার বাংলা ব্লগ [ 10 % @shy-fox ] | ২২| ০১| ২৩ ইং | |
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই ? ?
হ্যালো,
" আমার বাংলা ব্লগ" এর সব ভাই ও বোনেরা আশাকরি সবাই বেশ ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক বেশি ভালো আছি। এখন মাঘ মাস চলছে। শীত সহনীয় অবস্থাতেই আছে। সবাই শীতের বাড়তি যত্ন নিয়ে শীত ঋতুকে খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করছেন তো ? সবাই সাবধানে থেকে শীতকে উপভোগ করবেন আশাকরি।প্রতিদিনের মত আজ ও আমি নতুন আর একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আমার লেখা গল্প "সেই তুমি " গল্পের শেষ পর্ব নিয়ে আজ হাজির হয়েছি।আশা করছি আমার সঙ্গেই থাকবেন।
চলুন তবে গল্পের শেষ পর্বটি পড়ে আসি--
Canva দিয়ে বানানো
শেষ পর্বঃ
নিশি একটি স্কুলে টিচারের জব পেলো। বেশ ভালোই স্যালারি পাবে নিশি। নিশি অনিককে ভুলতে সব সময় বাচ্চাদের মাঝে নিজেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিশির রাত থেকে দিন,দিন থেকে রাত কিভাবে কেটে যাচ্ছে তা একমাত্র নিশিই বুঝতে পারছে। আজকাল মনের কথা সবটাই বান্ধবী লিমার কাছে শেয়ার করে নিশি। আজ তো নিশির পাশে কেউ নেই। যে অনিকের হাত ধরে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছিল,সেই অনিক ই যখন ছেড়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে তখন কাকে আর বিশ্বাস করবে নিশি। আজ তার মা -বাবার কাছেও যাওয়ার মুখ নেই। এভাবেই স্কুল, বাসা করে সময় কেটে যাচ্ছিল নিশির।
অন্য দিকে অনিককে লিমন আমেরিকা নিয়ে সব রকমের পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে যাচ্ছিল। লিমনের মা - বাবা অনিককে খুব ভালোই জানে। এই বয়সে অনিকের এই মরনব্যাধি ক্যান্সারের কথা শুনে তাদের মন অনিকের জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। তারা অনিক কে প্রতিদিন সাহস দিচ্ছিল।আর তাছাড়া অনিককে দেখে কেউ বলবে না অনিক শরীরে এমন একটি রোগ নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে। অনিক লিমন কে বলল ওর বাবাকে বলে একটি জব যোগাড় করে দিতে। লিমন তার বাবাকে বলেও ছিল । লিমনের বাবা বলল, " ছেলেটি অসুস্থ, আগে সুস্থ হোক পরে দেখা যাবে।" কিন্তু অনিক বসে থাকতে থাকতে নিশিকে আরও বেশি অনুভব করতে থাকে,যা কিনা তাকে প্রতিমিয়ত কষ্ট দিচ্ছে।অনিক কাজের মধ্যে থাকলে হয়ত নিশিকে ভুলে থাকতে পারবে।তাই সে জব করবে। লিমনের বোঝানোতে তার বাবা অনিককে বেশ ভাল একটা স্যালারির জব ম্যানেজ করে দিলেন। এভাবেই অনিক জবের মাঝে থেকে নিশিকে ভুলে থাকার,মা-বাবা ,বোনকে ভুলে থাকতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জব আর ট্রিটমেন্ট দুটোই সমান তালে চলছিল অনিকের। বেশ ভাল টাকা অনিক সেভিংস করছিল। দিন যায়,মাস যায়,বছর যায়। অনিক জানে সে আর বাঁচবে না। কিন্তু তার ইচ্ছে নিশির পছন্দের ফ্ল্যাটটি তাকে দিয়ে যাবে। আর এই কারনেই তার জব করা। জবে গিয়েও অনিক নিশিকে কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছে না। অনিকের কেবলই মনে হচ্ছিল, তার দিন যেন এক দিন এক দিন করে শেষ হয়ে আসছে। অন্য দিকে নিশি ও ভাল নেই। তার একটাই ভাবনার বিষয় যে অনিককে সে এতদিন ধরে চিনতো সেই অনিক এটা নয়। সে কি করে পারলো নিশিকে ছেড়ে অন্য কাউকে গ্রহন করতে। এসব ভাবনা নিশিকে ভাল থাকতে দেয় না। নিশি অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনিকের বোনকে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে জানতে চায় ,কোন খবর পেলো কিনা। নিশি নিরাশ হয়ে ফিরে আসে।
এভাবে ৫ টি বছর কেটে যায়। নিশির সাথে জব করে শুভ্র ।নিশিকে সে খুব পছন্দ করে। কিন্তু নিশি শুভ্রকে অনিকের কথা,তার বিয়ের কথা সবই বলেছে। তারপরেও ছেলেটি নিশিকে খুবই পছন্দ করে ফেলেছে। একদিন শুভ্র নিশিকে বলল, " ৫ টি বছর হয়ে গেলো অনিক কোথাও বিয়ে করে সংসার করছে,আর তুমি একা একা অনিকের কথা ভেবে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছ,কিন্তু কেন ? " নিশি এ কথা শুনে কোন উত্তর দিল না। শুভ্র বলল, তুমি অনিকের বাসায় ডিভোর্স লেটার পাঠাবে,অনিক যদি আসে তো ভাল।নয়ত আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে।" এই কথা শুনে নিশি বাসায় চলে গেলো।
আজ ৫ বছর পর অনিক দেশে ফিরেছে। অনিক ধারনা করছে এই ৫ বছরে শহরের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। নিশিও হয়ত সুখে আছে। এবার নিশির সাথে দেখা করে তবেই সে আমেরিকায় চলে যাবে। অনিক সেই ফ্ল্যাটে উঠল। বোনকে ফোন দিল দেখা করতে। বোন অনন্যা চলেও এলো ভাইয়ের সাথে এত বছর পর দেখা করতে। এসেই ভাইকে ধরে হাউ-মাউ করে কেঁদে ফেললো। অনিক কোথায় ছিল এতদিন তা জানতে চাইলো। নিশি ফোন দিয়ে অনিকের কথা জানতে চাইতো তাও বলল। সব শুনে অনিক তার বোনকে সব খুলে বলল। অনন্যা বলল, " তুমি ভাবিকে কেন জানাওনি ? কেন তাকয়ে দূরে ঢেলে দিয়ে চলে গেলে ?" তখন অনিক বলল, " আমি বাঁচবো না, তাই মায়া বাড়াতে চাইনি।আমি চেয়েছি নিশি আমাকে ঘৃণা করে ভুলে থেকে সুখে থাকুক।" সব কথা শুনে অনন্যা বলল," ভাইয়া কাজটা তুমি ঠিক করনি। ভাবি তোমার বিয়ে করা বউ,তাকে সবকিছু তোমার খুলে বলার দরকার ছিল। যাই হোক এখন কি করবে ? অনিক বলল ," তোর ভাবির খোঁজ এনে দে ,আমি এক পলক দেখে চলে যাব।"
অনন্যার দেয়া ঠিকানা মত গিয়ে দূর থেকে নিশিকে অনিক দেখতে পেলো। তার আর কষ্ট নেই। এখন কাজ শুধু ফ্ল্যাটের দলিলটা নিশির হাতে দেয়া।কারন এই ৫ বছর কাজ করে অনিক লিমনের কাছ থেকে এই ফ্ল্যাটটি নিশির জন্য কিনে নিয়েছে।পরের দিন বোনকে বলল, " নিশির হাতে দলিলটি পোঁছে দিতে,তবেই অনিকের কাজ শেষ।" অনন্যা পরের দিন নিশির সাথে দেখা করে ফ্ল্যাটের দলিলটি দেয়।আর সব কথা নিশিকে জানিয়ে দেয়।নিশি সব শুনে হতবাক হয়ে যায়।
অনিক এয়ারপোর্টে যাবে বলে গেইট খুলে দেখে সামনে নিশি দাঁড়িয়ে। অনিক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। নিশি তার পাশ দিয়ে ঘরের ভেতর চলে গেলো। অনিক ও নিশির পেছন পেছন গেলো। নিশি এবার বলতে শুরু করল । " এই ফ্ল্যাটের দলিল কেন দিয়েছ আমাকে ? এর কি জীবন আছে ? এই কাগজ কি ভালবাসতে পারে ? আমি সবকিছু ছেড়ে তোমার হাত ধরে বের হয়ে এসেছি। আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি ছাড়া আমার কিন্তু কেউ নেই। সেই তুমি আমাকে একলা ফেলে চলে গেলে। এই কাগজ কি আমার ফেলে আসা ৫ টি বছর ফেরত দিতে পারবে ? " এবার অনিক নিশিকে থামিয়ে দিয়ে বলে , " নিশি আমার ক্যান্সার হয়েছিল,আমি যে বেঁচে ফিরব তা ভাবিনি। তাই তোমাকে মুক্ত করে দিতে চেয়েছি। ছেয়েছিলাম তুমি অন্তত ভাল থাকো। " নিশি অনিক কে বলে , অনন্যা সবকিছু তাকে জানিয়েছে।তুমি কাজটি ঠিক করনি আমাকে একলা ফেলে চলে গিয়ে। নিশি তখন অনিক কে বলে, " তুমি আমাকে ঠিক আগের মত ভালোবাসো তার প্রমান দিতে পারবে ?" অনিক তখন কোন কিছু না ভেবে দলিলটিকে ছিঁড়ে ফেলল।এভাবেই দুজন দুজনের আবার খুব কাছাকাছি চলে এলো। এভাবেই গল্পের সমাপ্তি হল। তারা দুজন আবার ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো।
আশাকরি আমার ভালোবাসার মিষ্টি গল্প " সেই তুমি " আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।ভাল লেগে থাকলে আমি পরবর্তী গল্প লেখার উৎসাহ পাব।আজ এ পর্যন্তই আবার কোন নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। সবাই সুস্থ থাকবেন,ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে
🎀আমার লেখা এই ভালোবাসার মিষ্টি গল্পটি "সেই তুমি" পড়ার জন্য সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।🎀
আমার পরিচয়
আমি শিমুল আক্তার।আমার ইউজার আইডি @shimulakter,আমি একজন বাঙালী।বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করেছি বলে,অনেক বেশি গর্ববোধ করি।আমি একজন গৃহিনী।আমি পড়তে, লিখতে ও শুনতে ভালবাসি।নিজেকে সব জায়গাতে অ্যাক্টিভ রাখার চেষ্টা করি।সব সময় চেষ্টা করি আলাদা কিছু উপস্থাপন করতে। গতানুগতিক কোন কিছুতে আমাকে টানে না।অন্যের মতামতের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি।মানুষকে ভালোবাসি।তাই সব সময় চেষ্টা করি অন্যের উপকার হয় ,এমন কিছু করতে।বাংলাকে ভালোবেসে " আমার বাংলা ব্লগ " এর সাথে আজীবন থাকতে চাই।
আমি কখনো ভাবিনি অনিক এবং নিশির আবার দেখা হবে। সেই সাথে তারা আবার ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবে। আমার মনে হয় শুরু থেকেই নিশিকে সব কথা বলে দিলে ভালো হতো। যাইহোক অবশেষে তারা আবার একত্রিত হয়েছে সেজন্য ভীষণ ভালো লেগেছে। আপনি সবসময় খুবই সুন্দর সুন্দর গল্প শেয়ার করেন। যেগুলো আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। আপনার কাছ থেকে এরকম আরো গল্প দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।
অনিক আবার নিশির কাছে ফিরে এসেছে এটা জেনেই আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। হয়তো অনিক ভেবেছিল সে আর বাঁচবে না কিন্তু অবশেষে সে এই মরণব্যাধি রোগ থেকে বের হয়ে নিশির কাছে ফেরত এসেছে ভাবতেই কেমন জানি ভালো লাগছে। অবশেষে তারা আবার ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। পুরো গল্পটি পড়ে সত্যি ভীষণ ভালো লেগেছে আমার কাছে।
আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারও খুব ভাল লাগলো আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।