💕" ভালোবাসার দুষ্টু - মিষ্টি গল্প "💕 | | আমার বাংলা ব্লগ [ 10 % @shy-fox ] | ০৭| ০১| ২৩ ইং | |
আমার বাংলা ব্লগে সবাইকে স্বাগতম
বাংলাদেশ,ঢাকা থেকে
🌼 হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম । সবাই কেমন আছেন ? আশাকরি সবাই ভালো আছেন।আমিও আল্লাহ্র অশেষ রহমতে অনেক বেশি ভাল আছি।
সমাপ্তি কি হবে ? |
---|
Canva দিয়ে বানানো
চলুন তবে আজকে ভালোবাসার গল্পটির ইতি টানি ---
ফারহান অফিস আর ঐন্দ্রিলা কে নিয়ে খুব সুন্দর সময় পার করছিলো।শুধু শুক্রবার অফিস বন্ধের দিনগুলোতে মাঝে মাঝে আবিরের সাথে এসে দেখা করে যেত।ফারহান যাতায়াতের সুবিধার জন্য অফিসের কাছে বাসা নেয়াতে আবিরের মা খুব চিন্তিত হয়ে থাকেন এখন ছেলের জন্য। কারন তার ছটফটে ছেলেকে কিছুটা হলেও ফারহান বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত রেখেছিল,এমনটাই ভেবেছিলো আবিরের মা।আবিরের বাসায় আসার পর ফারহান আবিরের মায়ের সাথে মোবাইলে এই কথাগুলোই শুনছিল।ফারহান তাকে বলল,ফারহান মাঝে মাঝেই এখানে আসেন।তারপরেও আবিরের মায়ের কণ্ঠে দুশ্চিন্তার আভাস পেলো ফারহান।বেশ কিছুক্ষন কথা হল আবিরের সাথে ফারহানের।আবির সেই আগের মতই আছে, অনেক অনেক নামের মেয়েদের সাথেই তার কথা হয়।কিন্তু সেই ঐন্দ্রিলা নামের মেয়েটিকে আবির কিছুতেই ভুলতে পারছে না। দুইদিনের কথা বলা সেই মেয়েটির মোবাইল নাম্বার সে কিছুতেই মনে করতে পারছে না।
এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল।ফারহানের অফিসে ব্যস্ততা খুব বেড়ে যাচ্ছিল।তাই বন্ধের দিনগুলোতে ও আবিরের কাছে আসার তেমন সময় হয় না। মোবাইলে টুকটাক কুশল বিনিময় হয় মাঝে মধ্যে। দুই সপ্তাহের জন্য ফারহানকে অফিস থেকে কক্সবাজার পাঠানো হয়। ফারহান খুব কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল।এর মধ্যে আবির হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে যায়। আবিরের মা ফারহানকে ফোন দেয়,জানতে পারে ফারহান ঢাকার বাইরে।তারা প্লেনের টিকিট কাটে দেশে আসবে,এবার আবিরকে বিয়ে দিয়ে যাবে। আর মেয়েকে বিয়ে দেবে।মেয়ের পড়াশুনা শেষ।সবকিছু মিলিয়ে তারা বাংলাদেশে আসছে।মেয়ের জামাই হিসেবে ফারহান কে তাদের খুব পছন্দ।এবার দেশে এসে যা হোক একটা কিছু করবে।
আবিরের মা-বাবা দুদিন পরই দেশে চলে এলো। এসেই ছেলেকে ডাক্তার দেখালো। আবিরকে দেখে বলল,কি হাল করেছ শরীরের।আবিরের কথা বলার মত শক্তিটুকুও নেই । মায়ের যত্নে আবির সুস্থ হতে থাকে।ঢাকায় ফিরেই ফারহান আবিরকে দেখতে আসে।আবিরকে দেখে ফারহান হতভম্ব হয়ে যায়।দুই-তিন সপ্তাহ আবিরের সাথে তার দেখা হয়নি,এর মধ্যে এ কদিনে কি করে এমন হাল হল আবিরের,তা কিছুতেই ফারহান বুঝতে পারছে না।ফারহান জানতে চায় ," কি হয়েছে তোর আবির ?" আবির বলল ,তুই চলে যাওয়ার পর আমি খুব একা হয়ে যাই,খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত করিনি,আর আমি কিছুতেই ঐন্দ্রিলাকে ভুলতে পারছি না।আবিরের মুখে আজ এতদিন পর এই কথা শুনে ফারহান নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছে না।
ফারহান বাসায় গিয়ে কিছুতেই আর মন বসাতে পারছিল না। তার জন্য আবিরের আজ এই অবস্থা এমনটাই ভাবছিল ফারহান।ফারহান কাজে কিছুতেই মন দিতে পারছিল না।এমনকি ঐন্দ্রিলাকেও এড়িয়ে যাচ্ছিল কাজের অজুহাত দেখিয়ে।ফারহান অফিসে এক মাসের ছুটি নিল।এরপর আবিরের বাসায় গিয়ে খুব সাবধানে জানালা দিয়ে মোবাইলটাকে টেবিলে রেখে চলে গেল।এরপর তার নিজের মোবাইলের সিম বন্ধ করে নতুন সিম অন করে গ্রামে চলে গেল।ফারহান এই শহরে আর স্বস্তি পাচ্ছিল না,তাই গ্রামে চলে গেল।এদিকে আবির নিজের রুমে এসে টেবিলে মোবাইলটা দেখতে পেয়ে চোখে মুখে তার হাসি ফুটে উঠে।আবির তাড়াতাড়ি ফোনটা চার্জে দেয়।আবিরের মা আবিরকে বলে ফারহান কে ফোন দিতে,আর আবিরকে তার ইচ্ছের কথাটা জানায়।মেয়ের সাথে ফারহানের বিয়ে আর আবিরের বিয়ে এবার দেবেন তিনি। আবির বার বার ফোন দিয়েও ফারহানের ফোন বন্ধ পাচ্ছিল।আবির ছটফট করছিলো ফারহানকে জানাতে অবশেষে চোর এসে তার ফোনটা দিয়ে গেছে,এখন সে ঐন্দ্রিলাকে আবার ফিরে পাবে,এই খুশিতে আবির অনেকটাই শক্তি ফিরে পেলো। আবির তার নিজের মোবাইল অন করে ঐন্দ্রিলাকে কল দিল।ঐন্দ্রিলা ফোন ধরে বলল," আবির তোমার ফোন বন্ধ কেন ?" আবিরের কণ্ঠ শুনে বলল ," তোমার কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন ?" তোমার এই সিম নাকি তোমার কোন এক ছোট ভাইকে দিয়েছ ?" এত সব কথা শুনে আবির ঐন্দ্রিলাকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে।দেখা হলে সবকিছু সামনা সামনি বোঝা যাবে।
যথা সময়ে আবির পৌঁছে গেলো ঐন্দ্রিলার সাথে দেখা করতে।ঐন্দ্রিলা আবিরকে দেখে থতমত খেয়ে যায়।ঐন্দ্রিলা বলে, আপনি কে? আবির তখন বলে তোমার সাথে এই আমিই কথা বলতাম।তখন ঐন্দ্রিলা বলে,তবে আমার ফোনে যার ছবি সে কে? আবির বলে ," দেখি ছবি।" ফারহানের ছবি ঐন্দ্রিলার মোবাইলে দেখে আবিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না।এতে ফারহানের উপর রাগ করেও,রাগ করতে পারল না আবির।কারন আবিরকে ফারহান বলেছিল,এত জনকে না নিয়ে একজনকে ভালবাসতে,কিন্তু আবির তো তখন কাউকেই ভালবাসেনি।যাই হোক আবিরের কাছে তার বন্ধু ফারহানের কথা শুনে খুব কষ্ট পায় ঐন্দ্রিলা।তার সাথে এমন কেন করা হল,এটা ভেবে কষ্ট পায় ঐন্দ্রিলা। ঐন্দ্রিলা তখন বলে,তাদের দুজনের কাউকেই সে গ্রহন করবে না,এই বলে ঐন্দ্রিলা সেখান থেকে চলে যায়।
বাসায় গিয়ে নিজের সাথে অনেক বোঝাপড়া করে আবির।ফারহান খুব ভাল একটি ছেলে,কখনও কোন মেয়েকে ভালোবাসা তো দুরের কথা,কারো দিকে মুখ তুলে তাকায়নি।আর আবির তো এর উল্টো।তাই ফারহান কে ফোনে না পেয়ে,ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে আবির ফারহানের অফিসে চলে যায়।সেখানে গিয়ে জানতে পায় ফারহান ছুটি নিয়েছে গ্রামে চলে গেছে।তখন আবির ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে ফারহানের গ্রামে যায়।গ্রামে গিয়ে খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে দেখে ফারহান তার মা-বাবার কবরের পাশে বসে কাঁদছে। আবির নিজেকে আর সামলাতে পারল না।আবির এই ক মাসে বুঝেছে না দেখে ভালবাসার কত কষ্ট আর দেখার ভালবাসা তো আরও বেশি কষ্টের। আবির ফারহান কে বুকে জড়িয়ে নিল।এরপর ঐন্দ্রিলার হাতে তার হাতটি দিয়ে বলল," ঢাকা চল মা তোদের দুজনের বিয়ে দেবে।" এই কথা শুনে ফারহান আবিরকে বলল," আমি ভুল করেছি,শাস্তি দে আমায়।" আবির বলল," দুর, আমি কি কাউকে ভালবাসি নাকি, জীবনটা শুধুই চিললল।তুই খুব ভাল একজন মানুষ আর ঐন্দ্রিলা ও খুব ভাল মেয়ে,তোদের দুজনকে খুব মানাবে।আমি চাই তোরা সুখী থাকবি।আমি মন বসাতে পারিনি কোন মেয়ের মনে,তাতো তুই ভালোই জানিস।চল তাড়াতাড়ি ঢাকা চল,মা অপেক্ষা করছে।" এই কথাগুলো শুনে ফারহান ঠিক বুঝতে পারল,আবিরের খুব কষ্ট হচ্ছিল।বন্ধুর কথা ভেবে সে নিজের ইচ্ছেকে ত্যাগ করল। ফারহান কখনও আবিরকে রিলেশন নিয়ে সিরিয়াস হতে দেখেনি,তবে কি করে বুঝবে আবির ঐন্দ্রিলাকে পছন্দ করে। যাই হোক তারা তিনজন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
এক ভালোবাসার জয় হল আর আবিরের মনের মধ্যে সত্যিকারের ভালোবাসার অনুভূতি জন্ম নিল ওদের দুজনের ভালোবাসা দেখে।এভাবে ই আমার ভালোবাসার গল্পটি শেষ হল।
আশাকরি আমার ভালোবাসার দুষ্টু -মিষ্টি গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।আজ এ পর্যন্তই আবার কোন নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। সবাই সুস্থ থাকবেন,ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে
🎀 আমার দ্বিতীয় বারের মত লেখা এই ভালোবাসার দুষ্টু মিষ্টি গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।🎀
আমি শিমুল আক্তার।আমার ইউজার আইডি @shimulakter,আমি একজন বাঙালী।বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করেছি বলে,অনেক বেশি গর্ববোধ করি।আমি একজন গৃহিনী।আমি পড়তে, লিখতে ও শুনতে ভালবাসি।নিজেকে সব জায়গাতে অ্যাক্টিভ রাখার চেষ্টা করি।সব সময় চেষ্টা করি আলাদা কিছু উপস্থাপন করতে। গতানুগতিক কোন কিছুতে আমাকে টানে না।অন্যের মতামতের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি।মানুষকে ভালোবাসি।তাই সব সময় চেষ্টা করি অন্যের উপকার হয় ,এমন কিছু করতে।বাংলাকে ভালোবেসে " আমার বাংলা ব্লগ " এর সাথে আজীবন থাকতে চাই।
শেষ পর্যন্ত তাহলে ফারহান এবং ঐন্দ্রিলার মিল হলো এটা জেনে ভীষণ খুশি হলাম আর আবির তার ভালোবাসাকে ত্যাগ করেছে তাহলে শেষে আবির ভালোবাসার মর্ম বুঝলো। এতদিন তো সে শুধু অন্যান্য মেয়েদের সাথে কথা বলতো। কিন্তু কখনো কাউকে ভালবাসিনি। কিন্তু নিজের অজান্তে ঐন্দ্রিলা কে ভালবেসে ছিল। যাইহোক খুবই ভালো লাগলো এই গল্পটি পড়ে। ধন্যবাদ পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপু।
গল্পটি অসাধারণ ছিল আপু।কিন্তু আমার সেই প্রথম থেকেই ফারহান কে স্বার্থপর মনে হয়েছে।আবিরের সাথে বেইমানি করাটা তার উচিত হয়নি। সে ঐন্দ্রিলা কে আবিরের সত্যতা জানাত পারত। সে তা না করে তার সাথে প্রেম করেছে আবির হয়ে।যা ২জন কেই ঠকানো। ধন্যবাদ আপু সুন্দর গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম আবির এবং ফারহানের বন্ধুত্ব ভেঙে যাবে হয়তো। কিন্তু এখন তো দেখছি দুইজনে একজনকে ভালোবেসে একজন তার ভালোবাসাকে ত্যাগ করেছে। ফারহান যখন তার বাবা মায়ের কবরের সামনে বসে কান্না করছিল তখন আবির বুঝতে পারে, না দেখা ভালোবাসা আর দেখা ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু। তারা দুইজন তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এটা জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকেও।