আত্মহত্যা -৩
হ্যালো,
তো চলুন দেখা যাক গল্পটি কেমন।
আত্মহত্যা টু এর ছেলেটির পিসির আত্মহত্যার গল্প আজকে। বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন নুপুর। জোরদা ছিল নুপুরের বাবা, কিন্তু বর্তমানে মানবতের জীবন যাপন করছে তাদের ফ্যামিলির বেশিভাগ সদস্যই। এক সময় অনেক ধনসম্পদ থাকলেও এখন আর নেই।
নুপুরের বাবার দুই বউ। প্রথম বউ মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন নুপুরের বাবা। প্রথম বউয়ের ঘরের তিন ছেলে তিন মেয়ে।প্রথম বউ মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করে নুপুরের বাবা। দ্বিতীয় বউয়ের ঘরে চার ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। নুপুর সেই আদরের ছোট মেয়ে। ভাইদের চোখের মনি।নুপুর খুব ছোট বেলায় বাবাকে হারায়। ভাইয়েদের সংসারে বেড়ে ওঠে নূপুর। বিয়ের উপযুক্ত হলে নুপুরকে বিয়ে দেয়ার জন্য সুপাত্র খুঁজতে থাকে নুপুরের দাদারা। নুপুরের দুই দাদা বিয়ে করার পর আর বোনকে এবং মাকে তেমন দেখেন না। নুপুরের আর দুই ভাই ছিল অবিবাহিত তারা নূপুরকে ও তার মাকে দেখাশোনা করতেন। নুপুরের যে ছোট ভাই ছিল দুজন তাদের মাঝে যে ছোট ছিলো সে খুব ভালবাসতেন নুপুরকে সব আবদার মেটাতেন বোনের।
বোনের জন্য ছেলে খুঁজে পান কুড়িগ্রাম শহরে বাড়ি ছেলের। দেখাশুনা হওয়ার পর মেয়ে পছন্দ হয়ে যায় ছেলেটির। মেয়ে পছন্দ হওয়ারই কথা দেখতে সুন্দর সুলক্ষণা কাজে কর্মে পারদর্শী মেয়ে নুপুর।শুভ দিনক্ষণ শুভ লগ্নে দাদারা বিয়ে দেয় নুপুরকে।ভালোই চলছিল নুপুরের সংসার। নুপুরের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা একটু অন্যরকম ছিল গাইয়া টাইপের। রান্নাঘরে চটি পড়ে ঢোকা যাবেনা। বিছানায় শুলে বড়দের কে ছোঁয়া যাবে না। বিছানায় দিনের বেলা শোয়ার পর রান্নাঘরের হাড়ি পাতিল আর ছোঁয়া যাবেনা কাপড় না ছাড়া পর্যন্ত এরকম আরো অনেক কিছু সহ্য করতে হতো নুপুরকে।নুপুর তার বরকে খুব ভালবাসত বরও নুপুরকে অনেক ভালবাসতো। তবে পরিবারের কোনো সদস্যের মুখের উপর কিছু বলতে পারত না মা-বাবার বাধ্য ছেলে ছিল সম্মান করতেন মা-বাবাকে তাই অন্যায় আবদার গুলো মেনে নিত নুপুরের বর।
এরকম চলতে চলতে এক বছরের মাথায় নুপুর গর্ভবতী হয়ে পড়ে।দশ মাস ১০ দিন পর সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় নুপুর। বাচ্চাটি একটু পুষ্টি হীনতায় ভোগে কারণ ওর মায়ের যত্ন হয়নি তেমন বাচ্চাটি পেটে থাকতে। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো খেতে পারেনি কারণ বাড়ির বড়রা সবাই খাওয়ার পর বাড়ির বউদের কে খেতে হতো ইচ্ছে করলেই কিছু খেতে পারতো না নুপুর। শাশুড়ি যখন নিজ হাতে খাবার বেড়ে দিত তখন এই খেতে পারতো। মূলত এজন্যেই বাচ্চাটি পুষ্টিহীন হয়েছে।নুপুরের দাদারা আনতে গেলেও আসতে দিত না। নুপুরের ছেলের যখন ৬ মাস বয়স তার মুখে ভাত মানে অন্নপ্রাশন দেয়ার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। নিমন্ত্রণও দিয়েছে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন এবং নুপুরের বাবার বাড়ির লোকজনদেরকে। নুপুরের বরদের পানের বরজ ও সুপারির বাগান ছিলো।
যেহেতু ছেলের মুখে ভাতের অনুষ্ঠান অনেক মানুষ নিমন্ত্রণিত তাই সুপারি দরকার। গ্রামের রেওয়াজ যে কোন অনুষ্ঠানে প্রধান খাবার পান। আশেপাশের যদি কেউ নিমন্ত্রিত নাও হয় এবং ঘুরতে আসলেই তাদেরকে পান দিতে হয়। নুপুরের ছেলের নাম রেখেছে জয়। নুপুরের বর সুপারি পাড়ার জন্য সুপারি গাছে উঠেছিল আর হঠাৎ কিভাবে যেন পা ফসকে একদম সুপারির গাছের আগা থেকে গোড়ায় পড়ে গেছে। সুপারিবাগান চোরের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশ দিয়ে বিশেষ কায়দায় ঘিরে রেখেছিলো।নুপুরের বর এসে পড়েছে সেই ঘেরের উপরে এবং প্রচন্ডভাবে মেরুদন্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলো।
নিমিষেই সেই আনন্দঘন মুখে ভাত বিষাদে পরিণত হয়ে গেছে। নুপুরের বর হাঁটতে পারতো না। কোন অনুভূতি ছিল না হাত-পায়ের। এদিকে নুপুর সদ্যপ্রসতি মা অন্যদিকে বর গাছ থেকে পড়ে শয্যাশায়ী। নুপুর রাত জেগে বাচ্চা এবং বরের সেবা যত্ন করতে করতে একদম রোগা হয়ে গিয়েছিলো।এক মাস পর নুপুরের বর সকল মায়া-মমতা ত্যাগ করে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।নুপুর স্বামীর শোকে পাগল প্রায়।খেতো না কারো সঙ্গে কথা বলত না আবোলতা বকতো।যে বাচ্চাকে সে জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো সে বাচ্চার যত্ন নিতো না বাচ্চাকে কাছে নিতো না দুধ খাওয়াতো না যত্ন করত না। আসলে নুপুর তার বরের শোখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলো।এরকম অবস্থা দেখে নুপুরের ছোট দাদা গিয়ে নুপুরকে নিয়ে আসে বাচ্চা সহকারে।
বাবার বাড়িতে এসেও নুপুর কারো সঙ্গে কথা বলত না আনমনে চুপচাপ থাকতো মাঝে মাঝে একা একা বিড়বিড় করে কথা বলত সবাইকে ডেকে ডেকে শুধু তার বরের কথা বলতো। এক কথায় সে পুরাপুরি ভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলো।এদিকে ভাইদের অভাবের সংসার বৌদিদের অবহেলা অযত্ন এসব যেন নুপুরকে আরো বেশি অসুস্থ করে তুলেছিলো।তাই নিজের জীবনের উপর বিতৃষ্ণা থেকেই এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলানোর কারণে আত্মহত্যা করে। বড়দাদার বউকে বলে আমার ছেলেটাকে একটু দেখো তো আমি আসি।
১০ মিনিট ২০ মিনিট ৩০ মিনিট হয়ে যায় কিন্তু রুপা ছেলেকে নিতে আসে না। রুপার বৌদি তখন রুপার মাকে বলে রুপা কোথায় গেল ওর ছেলেকে আমার কাছে রেখে বলল একটু দেখো আমি আসছি এখনো দেখা নেই। তখন রুপাদের বাড়ির সামনে একটি কাচারি ঘর ছিলো।কেউ একজন খুঁজতে খুঁজতে কাচারি ঘরে গিয়ে দেখে রুপার ঝুলন্ত লাশ। রুপার ছোট দাদা যে দাদা রুপাকে খুব ভালোবাসতো সে তখন চাকরির জন্য বাইরে ছিল রুপার ঐ দাদা বাড়িতে থাকলে রুপার করুন পরিণতি অবশ্যই হতো না।রুপার শ্বশুরবাড়ি থেকে জা, শাশুড়ি, দেওর, ভাসুর আসে এবং রুপার সৎ কাজ হওয়ার পর রুপার ছেলেকে নিয়ে চলে যায়।
এক মাস পর রুপার শ্রাদ্ধের পর রুপার ছোট দাদা ভাবে যে ভাগ্নেকে একটু দেখতে যাবে সে। রুপার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে যা দেখে তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না রুপার ছোট দাদা। কি অবস্থা রুপার আদরের ছেলে জয়ের। খানিকটা মাটি খুঁড়ে গর্ত করে দাঁড়িয়ে রেখেছে রুপার ছেলেকে। জরাজীর্ণ শরীর উলঙ্গ অবস্থা দেখেই রুপার দাদার চোখ দিয়ে জল ঝড়তে থাকে। রুপার শশুর বাড়ির সবাইকে প্রশ্ন করে এই অবস্থা কেন তখন সবাই বলে যে যদি পুকুরে চলে যায় এখানে ওখানে চলে যায় তাই এভাবে রেখেছি কিছু সময়ের জন্য ।
সুপার দাদা তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় আর কোন কথা না বলে উঠানে একটি গামছা ছিলো গামছা দিয়েই রুপার ছেলের জয় কে জড়িয়ে নিয়ে চলে আসে বাড়িতে।বাচ্চা টি অপুষ্টি এবং রক্তশূন্যতায় ভুগছিল। এক বছর বাচ্চার বয়স তার ওজন ছিলো ৫ কেজি। দেখলে বলতো না যে এক বছরের বাচ্চা মনে হতো যেন দু থেকে তিন মাসের বাচ্চা হাঁটার কোন শক্তি ছিল না রুপার আদরের সন্তানের। বাঁচার কথা ছিল না জয়ের।রুপার দাদা হাসপাতাল এবং বাড়ি করতে করতে বাচ্চাটিকে সুস্থ করে তোলে। রুপার দাদা মায়ের মত স্নেহ আদর ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করতে থাকে জয় কে। জয়ের জন্য রুপার দাদা বিয়ে অব্দি করেনি সঠিক বয়সে। জয়ের যখন বয়স ১৫ বছর তখন রুপার দাদা বিয়ে করে।
এখন জয় ঢাকায় একটি কোম্পানি নিতে চাকরি করে।জয়ের মামা বিবাহিত হলেও দাম্পত্য অসুখী ব্যক্তি।জয়ের মামার কোন সন্তান নেই। জয়কে নিয়ে ঢাকায় থাকে বেশি সময় জয় চাকরি করে এবং জয়ের মামা জয় কে রান্নাবান্না করে আদর যত্ন করে খাওয়া এখনো মায়ের মতো।জয় এখন যুবক হয়ে গেছে। মামা জয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছে বিয়ে দেবে তাই।আসলে জয়ের বাবা মা হারিয়েছে কিন্তু জয়ের ছোট মামা কে জয়ের বাবা এবং মা হিসেবে সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছে। ভালো থাকুক জয় ভালো থাকুক জয়ের ভালোবাসার মানুষগুলো এই কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবারও দেখা হবে অন্য কোন পোষ্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন।
টাটা
পোস্ট | বিবরণ |
---|---|
পোস্ট তৈরি | @shapladatta |
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
ডিভাইস | OppoA95 |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।
আত্মহত্যা তিন, গল্পটা শুনে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। রুপা সবার কতই না আদরের ছিল। কিন্তু তার শাশুড়িদের এরকম আচরণের কথা শুনে তো অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। আর তার স্বামীর মৃত্যুর কথা শুনে আরও বেশি খারাপ লেগেছে। এই ধরনের আজব নিয়মের কথা শুনে তো, তার শাশুড়ির প্রতি আমার অনেক বেশি রাগ হচ্ছে। এরকম নিয়মের কথা শুনলে আমার এমনিতেই অনেক রাগ হয়। রুপা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছিল নিজের স্বামীর শোকে। আর তার ছেলেরও খেয়াল রাখত না তার শাশুড়ি। কিন্তু জয়ের ছোটমামা তাকে বাবা মায়ের মত মানুষ করেছে এবং বাবা মায়ের মত করেই ভালোবাসে শুনে খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ আপু সাবলীল মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
নুপুরের জীবনের কথা শুনে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লেগেছে আমার কাছে। বিশেষ করে তার হাজবেন্ডের মৃত্যুর কথাটা শুনে একটু বেশি খারাপ লেগেছে আমার কাছে। যে কোনরকমেই নিজের স্বামীর মৃত্যু টা মেনে নিতে পারেনি। তাই তো পাগলের মত হয়ে গিয়েছিল। আর একসময় আত্মহত্যা করে ফেলেছে। জয়ের ছোটমামা জয় কে নিজের কাছে নিয়ে এসে ভালোই করেছে। না হলে তো খুবই খারাপ ভাবে তাকে মানুষ করতো। আর অবহেলার কারণে হয়তো সে নিজেও মারা যেতো। তবে এখন সে নিজের মামার সাথে ভালো আছে জেনে খুব ভালো লাগলো।
হ্যাঁ ভাইয়া বরের মৃত্যু শোক কাটাতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে তবে জয় ভালো আছে এখন।ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
নুপুরের জীবনের আত্মকাহিনী পড়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে। একটা সময় ছিল মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে খুব নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। ভালোবাসার মানুষ থাকা সত্ত্বেও বাবা-মায়ের মুখের উপর কোন কথা বলতে পারতো না নুপুরের স্বামী। তাই শ্বশুরবাড়ির অন্যায় আবদার গুলো মানতে হয়েছিল নুপুরের। স্বামীর শোকে সে পাগল হয়ে যায়। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নুপুর আত্মহত্যা করে। নুপুরের ছোট দাদা ছিল বলেই জয় তার উপযুক্ত আদর যত্ন ভালোবাসা পেয়েছে। জয় ভালো আছে জেনে খুব ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করে নেয়ার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আমার পুরা পোস্টটি ধৈর্য সহকারে ভিজিট করে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।