সব কথা চাপিয়ে রাখতে নেই কিছু কথা আছে মানুষ কে বলাই মঙ্গল।

in আমার বাংলা ব্লগlast month

হ্যালো,

আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।
আজ আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো কিছু কথা আছে চেপে না রেখে মানুষকে বলা ভালো তাহলে মঙ্গল।

pexels-rdne-6935985.jpg
ইমেজ সোর্স
গত বছরের কথা আমার বাড়ির সামনের এক মুসলিম পরিবারের বসবাস। এক ছেলে এক মেয়ে সুখী দম্পতি।গরিব পরিবার হলেও পরিশ্রমী এজন্য বেশ ভালোই চলে সংসার। ছেলেটি বড় মেয়েটি ছোট। ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সবে মাত্র। অনেক মেধাবী। উচ্চতা ও বেশ ভালো। ওর মায়ের স্বপ্ন ছিল এসএসসি পাস করার পর পুলিশ কিংবা আর্মিতে চাকুরীর চেষ্টা করবে। গরিব পরিবার কখনো ছেলেটি ড্রয়িং শেখেনি কিন্তু যে কিছু দেখলে হুবাহু সেরকমই বানিয়ে ফেলে।

এসএসসি পাস করেছিল সাফল্যতার সাথে। মা বাবা তো মহা খুশি কলেজে ভর্তি হয়নি তখন একটি মেয়ের সাথে পরিচয়। খুব বেশি দিনের পরিচয় নয় কি হবে হয়তো দু-এক মাস। কম বয়সী প্রেম হলে যা হয়। সর্বক্ষণ মেয়েটির বাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। এদিকে মেয়ের পরিবার আবার ডাকাতো চোরের বংশ। পরিবারের প্রতিটি সদস্যর নামে চুরি এবং ডাকাতি কেস রয়েছে। উনারা এই ছেলের ঘোরাঘুরি দেখে তলে তলে ছেলের ফ্যামিলি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয় এবং দেখে যে উঠতি পরিবারের ছেলে একমাত্র ছেলে একে হাতছাড়া করা যাবে না। তারা নানা ভাবে বুদ্ধি আটতে থাকে কি করে ছেলেটিকে পাকড়াও করবে।

ডিসেম্বর মাস কনকনে শীত ছেলেটি মেয়েটির বাড়ির আশপাশে বন্ধুদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করে এবং মেয়েটিকে নিয়ে কোথাও একটি ঘুরতে যায়। সন্ধ্যা লেগে গেলেও মেয়েটি নাকি বাড়িতে আসেনি ওদের ভাষ্য অনুযায়ী। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় ওরাই মেয়েকে লুকিয়ে রেখেছিল। যাইহোক আমাদের ডিসেম্বর মাসে প্রতিবছর পারিবারিক পিকনিক হয়।
সেই পিকনিকে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। বাড়িতে ছিলাম না কেউই। যে কোন প্রয়োজনে বারবার যাওয়া আসা হচ্ছিল। সেজন্য বিষয়টি আন্দাজ করতে পারিনি আমরা।

এদিকে ছেলের বাড়িতে মেয়ের পরিবারের কয়েকটি ছেলে এসে অভিযোগ করেছে আমাদের মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না তোমাদের ছেলে কোথায়। ছেলেটি ঘরেই ছিল তখন ওর মা বলেছে যে কি সমস্যা বাবা খুলে বলো।বলেছে আপনার ছেলেকে ডেকে দেন সব বলবো।এদিকে ছেলের ছোট চাচা এবং বড় ফুফু ছেলের মাকে বলে কাউকে বিষয়টা না জানাতে চুপিচুপি যেন সমাধান করে। এজন্য ছেলেটির মা আর কাউকে জানাইনি বিষয়টি। ছেলেটি যখন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলেছে যে সন্ধ্যার আগেই সে বাড়িতে গেছে তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বলেছে চলো তুমি বের করে দিয়ে আসো কোথায়। অল্প বয়সী সহজ সরল ছেলে তাই সে বলেছে আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি ওর মানে তো এত কিছু ছিল না যেগুলো সব ষড়যন্ত্র।

ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়ার পর মেয়ের বাড়ির লোকজনেরা আটকিয়ে রেখেছে এবং বাড়িতে খবর দিয়েছে আপনারা আসেন আমাদের মেয়ের সম্মান নষ্ট করেছে তাই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। এ কথা শোনার পর তখন ছেলের মা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে এবং ছেলের বাবা এসে আমাদের বাড়িতে ডাকাডাকি করে সব গ্রামের মানুষ এক জায়গায় করেছে। তখন প্রতিটি গ্রামের মানুষ এর কথা আমাদেরকে ডাকলেন না কেন এখান থেকে কোনভাবেই ছেলেকে নিয়ে যেতে পারতো না।যা হবার কালকে সালিশের মাধ্যমে হতো। কিন্তু বাড়ি থেকে ছেলেকে তুলে নিয়ে যেতে কিছুতেই দিতাম না আমরা।এ কথা শুনে ছেলের মা কান্না করতে করতে বলছিল যে ওর চাচাও ফুফু আমাকে নিষেধ করেছে আমি সবাইকে ডাকতে চেয়েছিলাম। কিছু কিছু কথা আছে চাপিয়ে রাখতে নেই। এরপর ছেলের বাবা মেয়ের বাড়িতে গেছে এবং বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। ছেলের মায়ের কান্না আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গেছে। সারাক্ষণ শুধু কান্নার কান্না।

বিয়ে দেয়ার পর বউ সহ বাড়িতে তুলে দিয়ে গিয়েছে। ছেলের মা আজ অব্দি ওই বউকে মেনে নিতে পারছে না নানান ভাবে সমস্যা লেগেই আছে। এজন্যই সব কথা গোপনে রাখতে নেই।কিছু কথা আছে মানুষজনকে বললে সমাধান হয় এবং বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ছেলে টি কে যখন তুলেন নিতে এসেছিল তখন যদি ছেলের মা চিৎকার চেঁচামেচি করতো গ্রামের মানুষজনকে ডাকতো তাহলে আর নাবালক ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিতে পারতো না।

গ্রামের মানুষ অবশ্যই ঠেকাতো পরে সালিশ বৈঠকে যা হবার হতো।যেহেতু দুজনেই নাবালক নাবালিকা তাই সালিশের মাধ্যমে তারা সাবালক সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাতে পারত এবং সাবালক সাবালিকা হলে বিয়ের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে যে ছেলেটির জীবন নষ্ট হতো না আর মায়ের বুকফাটা তোমার করতে হতো না। কষ্ট সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে ছেলেটির মাকে। মা এখন আর্তনাদ করে কেন যে আমি ওর চাচা ফুফুর কথা শুনলাম কেন যে সবাইকে ডাকলাম না। এখনো চোখের জল ফেলে। ছেলেটি এখন আর মায়ের কথা শোনে না মাকে পছন্দ পারে না।কিন্তু একটি সময় ছিল যখন মা ছাড়া কিছুই বুঝতো না । পরিবার টিতে৷ এখন সব সময় ঝামেলা লেগেই থাকে।

এজন্যই সব কথা চাপিয়ে রাখতে নেই কিছু কথা আছে সবার মাঝে বললেই সমাধান ও মঙ্গল হয়।ছেলের মায়ের এখনো আপসোস ইস যদি আমি ঘটনাটি সবাইকে জানাতাম কিংবা ডাকতাম তাহলে আজ আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে এমন করে বিয়ে দিয়ে দিয়ে দিতে পারতো না।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি আবারো দেখা হবে অন্য কোন পোষ্টের মাধ্যমে সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20240709_202211.png

Sort:  
 last month 

আপনার লেখা এ গল্পটি কৈশোরের প্রেম ও সমাজের ভেতরের বাস্তবতাকে প্রতিনিধিত্ব করে। কত কিছু, কত ঘটনা আছে যা আমরা এখনো জানি না, ঘটে যায় চোখের অগোচরে, কিন্তু তার থেকে উপলব্ধি জন্মাতে পারি না।

কখনো দেখা যায় একটি ছেলে যখন একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায়, দুটি পরিবার নানারকম ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। সেখানে দ্বন্দ্ব থাকে, বৈপরীত্য থাকে, মতের অমিলও অনেকাংশে ফুটে ওঠে।
এ বাস্তবের গল্পে ছেলেটির পরিবার অসহায় ছিল, নিজেদের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে হলো শুধু কিছু ভুলের কারণে।

যা হোক, গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো। বেশ গুছিয়ে লিখেছেন।

 last month 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last month 

ঠিক বলেছেন আপু কিছু কথা আছে নিজের মধ্যে না রাখাই ভালো। ছেলেটির পরিবার যদি সবাইকে বলতো তাহলে ছেলেটিকে কোনো ভাবেই নিয়ে যেতে পারতো না।ছেলে মেয়ে দুইজনেই নাবালক নাবালিকা কারো বিয়ের উপযুক্ত বয়স ছিল না।সকলকে ব্যাপারটা জানালে বিচারের মাধ্যমে সমাধান করা যেত।পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 last month 

হ্যাঁ আপু নাবালক নাবালিকা তাই সালিশির মাধ্যমে সমাধান করা যেতো বিষয় টি।

 last month 

ছেলের মায়ের জন্য খারাপ লাগছে। আসলে প্রেম মানুষকে অন্ধ করে দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কট খেয়ে ফেলে। দোয়া করি মায়ের কষ্ট যেন লাঘব হয়। তবে উনারও মেনে নেয়া উচিৎ। হয়ত এতেই ভালো কিছু রয়েছে।

 last month 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58167.06
ETH 2592.42
USDT 1.00
SBD 2.44